![MzrxX3R.jpg](https://i.imgur.com/MzrxX3R.jpg)
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এক বছর পরও আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশও। সারা বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। এই আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বয়স্ক, নানা ধরনের কোমরবিডিটি বা সহরোগে ভুগছিলেন। অনেকে ভাবছেন, তবে কি শিশু-কিশোরেরা করোনার সংক্রমণ থেকে ঝুঁকিমুক্ত? শিশু-কিশোরদের সংক্রমণ, জটিলতা ও মৃত্যুহার কম হলেও একদম ঝুঁকিমুক্ত নয়। বরং নিউ ভ্যারিয়েন্ট বা নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে কম বয়সীদের নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন আশঙ্কা।
করোনাভাইরাসের আগের জাতগুলোর (স্ট্রেইন) গতিবিধি, আচার-আচরণ, জটিলতা, চিকিৎসা, প্রতিরোধ, টিকা ইত্যাদি নিয়ে বিশ্ববাসী যখন উৎকণ্ঠিত, ঠিক তখনই এ ভাইরাসের নতুন জাত ভয়ের কারণ হয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যসহ দুনিয়ার প্রায় ৩৫টি দেশে ভাইরাসের এ নতুন জাতের উপস্থিতি জানা গেছে। বাংলাদেশেও কয়েক ধরনের মিউটেশন (পরিবর্তিত রূপ) শনাক্ত হয়েছে। নতুন এসব জাতের আচার-আচরণ গতিবিধি কেমন হবে, শিশু-কিশোরদের প্রতি কেমন আচরণ করবে, তা এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশা। তথ্য-উপাত্ত দেখাচ্ছে, যে পূর্ব লন্ডন ও কেন্ট এলাকায় নতুন জাতের ভাইরাসে অপেক্ষাকৃত কম বয়স্করাও অধিক হারে সংক্রমিত হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ, এর উপসর্গ ও জটিলতা শিশুদের মধ্যে কম হলেও তারা কিন্তু সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নয়। কখনো কখনো জ্বরের সঙ্গে তারাও তীব্র কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগে। তবে ইতিমধ্যে করোনার কারণে কারও কারও মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম নামে এক বিশেষ ধরনের মারাত্মক জটিলতা হতে দেখা গেছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোর পাওয়া গেছে, যাদের এই জটিলতা হয়েছে। এতে আক্রান্ত শিশুর যকৃৎসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয় এবং সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে শিশুমৃত্যু ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এ ছাড়া যেসব শিশু আগে থেকেই অন্য আনুষঙ্গিক অসুস্থতা যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হাঁপানি বা ফুসফুসের সমস্যা, ক্যানসার, হার্টের জন্মগত ত্রুটি, কিডনির সমস্যা, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ঘাটতি ইত্যাদিতে ভুগছে, তাদের করোনা হলে রোগের জটিলতা বা মৃত্যুঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যেতে পারে। এক বছরের কম বয়সী শিশুরাও মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। সুতরাং শিশুদের করোনা হয় না বা হলেও জটিলতা হয় না, এটা ভেবে বসে থাকলে চলবে না।
শিশুরা আক্রান্ত হলে বড়দের মতো জটিলতা কম দেখা গেলেও শিশুরা মাল্টি স্প্রেডার হিসেবে কাজ করেছে বিভিন্ন জায়গায়। মানে তারা ভাইরাস নীরবে বহন করেছে আর অন্যদের সংক্রমিত করেছে। বিশেষ করে বাড়ির বয়স্ক ও অসুস্থ সদস্যদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তারা। তাই শিশুরা সংক্রমিত হলে অন্যদেরও ঝুঁকি বাড়ে।
করোনা প্রতিরোধে সারা বিশ্ব করোনার টিকা নিয়ে শোরগোল চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে যে ১৮ বছরের নিচে শিশুদের করোনা প্রতিরোধে টিকার প্রয়োজনীয়তা বা ট্রায়াল নিয়ে আলোচনা হয়নি। এমনকি যাদের আগে থেকে আনুষঙ্গিক অন্য অসুস্থতা আছে, তাদের বিষয়েও না। তার মানে শিশুদের সুরক্ষার একমাত্র আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে প্রতিরোধ। শিশুদের করোনা থেকে দূরে রাখতে যা যা করা দরকার, যত রকম স্বাস্থ্যবিধি আছে, তার সবকিছুই করতে হবে।
শিশুদের করোনামুক্ত রাখতে
- মহামারির সময় কোনো শিশু-কিশোরের জ্বর, কাশি, অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে তাকেও যথাসম্ভব আইসোলেশনে রাখতে হবে আর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দরকার হলে করোনা পরীক্ষাও করতে হবে।
- দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী টিকার আওতায় না আসা পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে অকারণে যত্রতত্র বেড়ানো, সামাজিক অনুষ্ঠানে বা ভিড়ের মধ্যে মেলামেশা থেকে বিরত থাকুন।
- প্রয়োজনে শিশুদের নিয়ে বাইরে যেতে হলে স্বাস্থ্যবিধি যেমন মাস্ক পরা, বারবার হাত ধোয়া, নাকে–মুখে হাত স্পর্শ না করার অভ্যাস চর্চা করুন।
- অপ্রয়োজনে শিশুদের নিয়ে হাসপাতাল ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না যাওয়াই ভালো।
- অসুস্থ শিশুকে নিয়ে বয়স্ক ও রোগাক্রান্ত আত্মীয়স্বজনকে দেখতে যাবেন না।
- মহামারির মধ্যেও শিশুকে অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে যথানিয়মে সব টিকাদান সম্পন্ন করুন।