What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other নায়করাজ রাজ্জাক : কবরীর আত্মজীবনীতে (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
rHqXD5z.jpg


বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় জুটি 'রাজ্জাক–কবরী'।

ময়নামতি ছবিটি রিলিজের আগেই 'রাজ্জাক-কবরী' জনপ্রিয় জুটি হিসেবে এতটাই পরিচিতি পায় যে গ্রামে শুটিং দেখতে প্রচুর লোক ভিড় করত। আমি আর রাজ্জাক প্রেমিক-প্রেমিকা। ময়নামতির পরিচালক কাজী জহীর ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান এবং বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও দর্শক নন্দিত একজন পরিচালক। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে এই ছবির শিল্পী বাছাই করেন। নিখুঁতভাবে কাজ করা পছন্দ করতেন। লোকেশন বাছাই, ত্রু-দের নির্দেশনা সবকিছুই টিপটপ।

তখন শেখ মুজিবের 'ছয়দফা আন্দোলন চলছে। মাঝে মাঝে মিছিল, মিটিং, হরতাল, ছাত্রদের জটলা চলছে। যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। হরতালে গাড়ি বার করা যাবে না। ময়নামতির লোকেশন সাভারের নয়ারহাট, গুলশান থেকে বেশ দূরে। সেখানে টিম পৌঁছানোর আগেই কাক ডাকা ভোরে আমি আর রাজ্জাক গাড়িতে রওনা হতাম। গাড়ি ছুটছে। দুপাশে শূন্য রাস্তা।

p4Nywih.jpg


শুধু গাছগুলো গাড়ির সাথে সাথে ছুটে চলেছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরই পাইনি। হঠাৎ হৈচৈয়ে চোখ মেলে দেখি, আমি লোকেশনে। তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে ঝটপট মেকআপ করতে গেলাম।

মেকাপম্যান কাদরী ভাই আমাদের অত্যন্ত আপনজন। তাঁর হাতের জাদু আমাদের আরও গ্ল্যামারাস করে তুলত। আবার চরিত্রের প্রয়োজনে সুন্দর মুখকে অসুন্দর করতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সুতরাং ছবির আশুকাকা ছিলেন মেকাপম্যানদের পথিকৃৎ। তিনি মারা যাবার পর কাদরী মেকাপম্যান হিসেবে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছিলেন। এখন যারা ফিল্ম কিংবা টিভি নাটকে সাজসজ্জার কাজ করেন তাদের বেশিরভাগই কাদরীর উত্তরসূরি।

শুটিংয়ের জন্য আমরা তৈরি হয়ে গেলাম। চুলে আলগা আরেকটা চুল লাগিয়ে লম্বা বেণি করি। গ্রামের মেয়ের মতো এক প্যাঁচে গোড়ালির উপর শাড়ি পরে রাজ্জাকের আগে আগে হাঁটা দিলাম।

ওমা! এত সকালে ছেলে-মেয়ে-আন্ডা-বাচ্চা চিড়া-মুড়ির পোঁটলা নিয়ে বসে আছে। যতক্ষণ শুটিং চলবে ততক্ষণ বসে বসে শুটিং দেখবে। আনন্দও লাগছে সঙ্গে খানিকটা লজ্জা ও বিরক্তি। রাজ্জাক আমার পেছনে পেছনে যাচ্ছে। হঠাৎ শুনি হাসির রোল। কী ব্যাপার, লোকজন হাসছে কেন?

fcmtWt5.jpg


ভাবলাম রাজ্জাককে বোধ হয় খেপাচ্ছে। খুব ভালো হয়েছে! আমি খুশি খুশি মুখে ঘুরে দেখি রাজ্জাকও হাসছে! কী ব্যাপার! তার হাতে সাপের মতো আমার আলগা চুলের বেণিটা ঝুলছে আর সে হি হি করে হাসছে। এক মুহূর্তে আমার হাসি মিলিয়ে গেল। এমন রাগ হচ্ছিল, যদি সম্ভব হতো রাজ্জাককে একটা ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতাম। ভীষণ রেগেছি বুঝতে পেরে কাছে এসে আমার হাত ধরে চুপি চুপি রাজ্জাক বলল 'এমন করে চুল বাঁধে।'

অভিমানে আমার চোখে পানি চলে এলো। বললাম, 'তাই বলে লোকদের সাথে আপনিও হাসবেন?' 'স্যরি স্যরি' বলে আলতো করে গালে আদর করে দিল রাজ্জাক। তখন এতটুকুতেই অনেক প্রেম। চোখে পানি, মুখে মিষ্টি হাসি। মনে হলো পৃথিবীটা এখন হাতের মুঠোয়। 'আপনি একটা ফাজিল অসভ্য' গালি দিয়ে একা একা হেসে ফেললাম। তখন কিন্তু আমি বড় হয়ে গেছি আর পিচ্চি নই। ভালোবাসার কাঙাল ছিলাম আর রসে টইটম্বুর।

XtqZOrw.jpg


নিজের অজান্তে এই ফিল্ম লাইনে হারিয়ে গেলাম আমি। ফিল্মই আমার ধ্যান-জ্ঞান। ধীরে ধীরে অনেক ছবি সাইন করি। নিজের পছন্দের জায়গা তৈরি হতে থাকে। বিভিন্ন চরিত্র রূপদানের চেষ্টা করছি। তাই বলে সব ছবি বাজিমাৎ করে তা নয়। কোনো ছবি ফ্লপ করলে খুব মন খারাপ হতো। তবে দর্শকদের কাছে কবরী-রাজ্জাক জুটি ততদিনে অপরিহার্য হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছে।

ছয়দফা আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের ছোঁয়া ফিল্ম পাড়ার বাসিন্দাদের গায়েও লাগতে শুরু করে। নরম গরম বক্তৃতা চলছে। শেখ মুজিব আশার বাণী শোনাচ্ছেন, অভয় দিচ্ছেন। পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের সব সম্পদ পাকিস্তানে পাচার করছে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ভাষা, রাজনীতি, বাণিজ্য সব কিছুই বিজাতীয়করণ হচ্ছে। সব কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করছি। ঝানু ঝানু আমলা, বুদ্ধিজীবী প্রত্যেকে ভালো-মন্দ বিচার করছে কতটুকু সত্য, কতটুকু রাজনীতি যাচাই করছে। মানুষের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শেখ মুজিব বজ্রকণ্ঠে বক্তৃতা করছেন আর আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছি। বাংলার মানুষের জন্য দুর্বার ভালোবাসা তাঁর অসম্ভব আবেগময় ভাষণে কানায় কানায় পূর্ণ থাকত। একবার তাঁর সাথে যে কথা বলেছে, সেই-ই মুগ্ধতায় তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। শিশুর মতো অনাবিল হাসি আর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষটিকে ভালোবেসে ফেলি। আমাদের ভালোবাসার ঋণ মেটাতে শেষমেশ সপরিবারে তাঁকে প্রাণও দিতে হয়।

Yfq0krU.jpg


৬৯-৭০ সালে আন্দোলনের সময় আমার সিনেমা তুঙ্গে। তা সত্তে¡ও ২১শে ফেব্রæয়ারিতে শুটিং করতে মন চাইত না। কারণ শহীদ মিনারে আমরা ফুল দিতে যাব। তাই নো-শুটিং। 'ফুলে ফুলে ঢ'লে ঢ'লে বহে কিবা মৃদু বায়', আনন্দ বেদনার দোলাচলে মন যেন তখন প্রজাপতির মতো পাখায় ভর দিয়ে উড়ে শহীদদের কপালে চুম্বন করে বলে আমিও তোমাদের সাথে আছি। তেমন করে এখন আর ২১শে ফেব্রুয়ারি মনে তাগিদ দেয় না। এখন একুশ যেন শুধু রাজনীতি যারা করে তাদের জন্য। চাটুকারদের দখলে শহীদ মিনার।

দিনে দিনে অনেক নায়কের সাথে আমার জুটি গড়ে। রাজ্জাক-কবরী জুটি তো আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পায়। এক সাথে কাজ করেছি অনেক ছবিতে বন্ধুত্ব হবারই কথা, হয়েওছে। কিন্তু রাজ্জাক সাহেব বরাবরই আমাকে হিংসে করেন। আমি করতাম কি না জানি না। আমি তাকে বন্ধুর পরও আরও এক ধাপ এগিয়েই রেখেছিলাম পরম হিতৈষী মনের দিক থেকে হতেই পারে।

মেয়েরা সাধারণত পুরুষের ব্যাপারে বেশি সিন্সিয়ার হয়, যদি পুরুষটি নারীটিকে প্রাধান্য দেয়। সে যতই আমার চাইতে ইনফেরিয়র হোক না কেন, যদি মনের মিল হয় তাকে বন্ধু বলেই ভাবি। কিন্তু যে কারণেই হোক না কেন, রাজ্জাক সাহেবকে কোনো কাজে ডাকলে তার অনীহা প্রকাশ পাবেই। অথচ রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের প্রথম ছবি 'রংবাজ'-এ আমি কোনো সম্মানী নিইনি বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার সম্মানে। রাজ্জাকও আমার ছবিতে কাজ করেছেন তবে সম্মানী দিয়েছিলাম, নিয়েওছে। যাক সেটা বড় কথা না। (তাই কি?)

'আমার নায়ক' শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেট ডিরেকশন থেকে শুরু করে সব কিছু নিজেই করি। চ্যানেল ওয়ানে সম্প্রচারিত হয়। ওটা সে বছর 'শ্রেষ্ঠ প্রোগ্রাম' হিসেবে স্বীকৃতিও পায়। সুভাষ দত্ত দাদা, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানা, ক্যামেরাম্যান মাহফুজ, ইলিয়াছ কাঞ্চন অনুষ্ঠানটিতে অংশ নেন। আরও কারা কারা মনে পড়ছে না এখন। রাজ্জাক কথা দিয়েও ঐ অনুষ্ঠানে আসেননি। অগত্যা চাষী নজরুলকে দিয়ে সেদিনের শুটিং করি। ভাবলাম চাষী নজরুলও এক হিসেবে নায়ক। তিনি তো ছবিতে নায়ক তৈরি করেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রথম ছবি বানিয়েছেন চাষী নজরুল'ওরা এগারজন।' তাকে দিয়ে কাজ সারলাম। অথচ আমার প্রায় সব ছবির নায়ক, বন্ধু রাজ্জাক, তিনিই এলেন না।

YrtU51l.gif


আবার 'চ্যানেল আই' একবার সিনেমার মতো নাটক বানিয়ে দেবার ফরমায়েশ করল। আমার চিন্তা-ভাবনার একটি গল্প দিয়ে। সংলাপ-স্ক্রিপ্ট আমার। চ্যানেল আইয়ের 'আবদার' রাজ্জাককে নিয়ে কাজ করতে হবে। তখন রাজ্জাক সাহেব কিছুটা অসুস্থ। তবুও তাকে ফোন করে গল্পে তার চরিত্র বুঝিয়ে দিলাম। শুটিংয়ের দিনক্ষণ ঠিকঠাক। স্ক্রিপ্টের কপি, আর সম্মানী পাঠালাম। বিধিবাম, টাকা-স্ক্রিপ্ট ফেরত পাঠালেনÑকাজ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিলেন।

কাজী জহীর পরিচালিত 'অবুঝ মন' ও 'মধুমিলন' আমার সাইন করা ছবি ছিল। যতই প্রযোজকদের না করি না কেন, তারা মানবেনই না। হাতে এত ছবি, সময় বার করতে পারছিলাম না। সকাল থেকে শুরু করে ১নং ফ্লোর, ২নং ফ্লোর এভাবে সারা স্টুডিওতে কাজ চলছেই। কোনো কোনো দিন আমার সেক্রেটারিকে পটিয়ে 'সাইনিং মানি' রেখেও যেত। এত পরিশ্রম করতে হতো যে একদিন সেটে কাজ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। ডাক্তারের পরামর্শে পাকিস্তানের 'মারি' নামে পরিচিত স্বাস্থ্যকর স্থানে সপ্তাহখানেকের জন্য ঘুরতে যাই। ফিরে দেখি মহা পলিটি· হয়ে গেছে। আমার বদলে শাবানা ঢুকে পড়েছে। পরে জানতে পারি পলিটিশিয়ানটা কে। যাক, 'দিন যায় কথা থাকে।'

আরেকটি মজার ঘটনা বলি আমরা কজন ঠিক করলাম ছবির প্রযোজক হব। ক্যামেরাম্যান বেবী ইসলাম, পরিচালক মিতা, নায়ক রাজ্জাক আর আমি নায়িকা। আরেকজন আলতাফ মাহমুদ (সঙ্গীত), কৌতুক অভিনেতা হাবা হাসমত। আমাদের সবারই সুনাম তখন তুঙ্গে। 'ক, খ, গ, ঘ, ঙ' ছবিটির প্রযোজনায় আমাদের সবার অংশীদারিত্ব সমান। আমি রাজি, সবাই রাজি। শুটিং করতে যাব চুয়াডাঙ্গায় রাজ্জাকের সাথে খুনসুটি হবে প্রেম প্রেম খেলা জমবে, খুব মজা হবে। মান অভিমানের জায়গা তো রয়েইছে। ওমা! হঠাৎ শুনি রাজ্জাক প্রযোজনার সাথে থাকবেন না। কেন, কেন? তিনি নগদে বিশ্বাসী 'যাই পাই, তাই হাত পেতে নিই।' ছবি ফ্লপ হলে তো সেটাও মাঠে মারা যাবে!

আমার যা রাগ হয়েছিল! ইচ্ছে হচ্ছিল বলি 'কবরীর মুখের দিকে চেয়ে রোমান্টিক কত সংলাপই না বলেছিলেন। অন্তত ওসব আবেগ ভরপুর দৃশ্যের কথা মনে করেই না হয় রাজিই হতেন! আরও সহজ রাস্তা বলে দিই মিথ্যে মিথ্যে না হয় প্রেমের অভিনয় করে কবরীর কাছে নায়কোচিতভাবে যুক্তি প্রমাণ করতেন। হুঁ, আপনি কেমন যেন!কী এমন হারাতেন? আমাকে যদি বলতেন, তাহলে আমার শেয়ার থেকে হলেও আপনাকে কিছু টাকা দিতাম!'

8UHi2QZ.jpg


তখন আমার মনটা ছিল কচি কলাপাতার মতো। রাজ্জাকের সাথেই তখন আমার সব ছবির কাজ। তাহলে বুঝতেই পারছেন পাঠক আমার মনের অবস্থা। যা-ই হোক, অভিনয় করেছিলেন শেষ পর্যন্ত। আবার চুয়াডাঙ্গা গিয়েও ডাবল অভিনয় হুঁ! এ ধরনের কাজের জন্যই রাজ্জাকের সাথে আমার সব সময় খোঁচাখুঁচি লেগেই থাকত।

'ক, খ, গ, ঘ, ঙ'-র পুরো শুটিং হয় বেবী ইসলামের মামা-বাড়িতে। চুয়াডাঙ্গার গ্রামে পুরো ইউনিট খুব মজা করে। ছবির গল্পটা এক যৌথ পরিবারকে ঘিরে। ওই বাড়িতে রাজ্জাক আমার বোনের দেবর, আর আমি মাকে নিয়ে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসি। রাজ্জাকের সাথে পরিচয় এবং চার চোখেন মিলন। আগুনের কাছে ঘি গলবেই প্রেম তো হতেই হবে। সিনেমায় আমার বোনের ছেলে আমাদের চিঠিপত্র চালাচালি করে। তার বদলে বাচ্চাটাকে আমি পুকুর থেকে শাপলা ফুল তুলে দিই। ওই বাচ্চাটা সত্যিকার অর্থে আমার বাচ্চা। এখন অবশ্য সে অনেক বড় হয়ে আমেরিকায় থাকে। ছবিতে ও আমাকে খালা বলে ডাকত। ওই ছবিতে মজার একটি গানে আমরা মা-ছেলে অংশ নিয়েছিলাম

‌'শালুক শালুক ঝিলের জলে
ভ্রমর বাউল দোলে
দোদুল দোদুল মনময়ূরী
পেখম পেখম খোলে।'

প্রখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদের সুরে গানটি এতই জনপ্রিয় হয় যে মানুষ এখনও মনে রেখেছে। আরও একটি সুন্দর প্রেমের গান ছিল। আসলে তো মনের অভিব্যক্তি বোঝানোর জন্য সিনেমায় দৃশ্যায়নের সাথে গান ব্যবহার করা হতো।

casF1Np.jpg


আমরাই প্রথম চুয়াডাঙ্গার ওইএলাকায় শুটিং করি। তাই এত লোক দেখতে আসত খুব বিরক্ত হতাম। দিনের বেলায় শুটিং। আমরা লোকেশনে পৌঁছানোর আগেই শত শত মানুষ চিড়া-মুড়ির পোঁটলা নিয়ে শুটিং দেখার জন্য জায়গা দখলের প্রতিযোগিতায় নামত। আনোয়ার হোসেন এই ছবিতে বড় ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনিও আমাদের সাথে শুটিং করতে যান। একসময় এত লোক ভিড় করে শুটিং করায় সমস্যা হচ্ছিল। বারবার লোকজনকে সরতে বললেও কাজ হচ্ছিল না, উল্টো আরও কাছে এসে দেখতে চাচ্ছে। এক সময় আনোয়ার ভাই খুব রেগে গেলেন। বলেই ফেললেন, 'অ্যাই শুটিং করতে দিবা? তা না হলে তোমাদের সামনে কাপড় খুইল্লা দৌড় দিব।' লোকজন সব হেসে উঠল। আমরাও হেসে কুটিকুটি।

সন্ধ্যায়, রাতেও লোকজন উঁকিঝুঁকি মারত। 'আজ শুটিং নাই' বলা হতো লোকজন চলে যেত রাত গভীর হলে আমরা কাজ শুরু করতাম। ছাদে শুটিং চলত। বাড়ির সবাই ঘুম; নায়িকা, মানে আমি, পা টিপে টিপে ছাদে চলে আসতাম। রাজ্জাক তো অপেক্ষায় আছেই।

9HXAunE.jpg


যেমন নায়িকার রোমাঞ্চকর প্রেমের অনুভ'তি, তেমনি নায়ক রাজ্জাকের প্রেমের প্রতীক্ষা সময় বড় দীর্ঘ। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড উত্তেজনা সবার মধ্যে। চারদিকে নিস্তব্ধতা। চার চোখের মিলন। সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে দেবার তীব্র আকর্ষণ। বুকে জড়িয়ে ধরে দুটি হৃদয় ঐশ্বরিক অনুভূতিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

এখন মনে হয় আসলে কি ঐ ভালোলাগার মধ্যে ভালোবাসা ছিল না? শুধুই কি অভিনয়? ভালো লাগতে লাগতেই তো ভালোবাসা হয়, অভিনয় করতে করতে যদি ভালোবাসা না-ই হয় তাহলে মানুষের মনে ভালোবাসা তৈরি হবে কী করে? সিনেমামোদী যারা এসব সিনেমা দেখেছেন তারাও হয়ে যেতেন রাজ্জাক আর অপরপক্ষ নিজেকে ভাবত কবরী, তাই না?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top