What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ভাঁড়ামি-সুড়সুড়ি ছাড়াও অসাধারণ কমেডি - সংসারের সুখ দুঃখ (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
BdfdtNM.jpg


আজকের ডিজিটাল পরিচালকেরা কমেডি সিনেমার নামে যেভাবে ভাঁড়ামি করেন সেটা তাদের অজ্ঞতার পরিচয় দেয়। ভাঁড়ামি ছাড়া, সুড়সুড়ি ছাড়াও যে অসাধারণ কমেডি সিনেমা বানানো যায় তার নমুনা এই দেশের চলচ্চিত্রের ইন্ডাস্ট্রিতে আছে। যে সিনেমাগুলোর কথা দর্শকরা আজও ভুলেননি, কোনদিন ভুলতে পারবে না। অথচ আমাদের মেধার ভান্ডার পরিচালকরা আজ জোর করেও দর্শকদের হাসাতে পারেনা । কমেডি সিনেমার নামে সব অখাদ্য কুখাদ্য বানিয়ে দর্শকদের বিরক্তির কারণ হয়ে গেছে। সিনেমা হল থেকে আজ দর্শক বেরোনোর পর ভুলে যায় এতক্ষণ সে কি দেখেছে ??? অথচ ২৪ বছর আগে একবার দেখা সিনেমার কথা সেদিনের দর্শকরা আজও ভুলেনি।

১৯৯৫ সালের ঈদুল আযহায় মুক্তি পেয়েছিল একাধিক দারুন দারুন সব চলচ্চিত্র। সালমান শাহ, সানী, মান্না, রুবেল, কাঞ্চন, জসিম, আলমগীর , শাবানা, মৌসুমী,শাবনুর কারো ছবিই বাদ যায়নি। কোনটা রেখে কোনটা আগে দেখবো সেটাই বড় সমস্যা ছিল । যাই হোক, একদিন বিকেলে সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে তেমনই একটি ঈদের ছবি দেখতে গেলাম।

সিনেমার গল্পে শিল্পপতি আলমগীর একজন প্রতিষ্ঠিত সৎ ব্যবসায়ী। স্ত্রী শাবানা ও একমাত্র শিশু সন্তান অপুকে নিয়ে আলমগীরের সুখের সংসার। সেই সংসারে একদিন হাজির হয় গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল ওমর সানী যে আলমগীরের চাচাতো ভাই। সহজ সরল সানীকে পেয়ে আলমগীর শাবানা ও অপু দারুণ খুশি। ওমর সানীও তাঁদের খুব আপন করে নেয়।

ওমর সানী গ্রাম্য সহজ সরল হলেও শিক্ষিত। আলমগীরের প্রতিবেশী হিসেবে আছে মৌসুমীর পরিবার। মৌসুমী সানীকে দেখে গ্রাম্য ক্ষ্যাত বলে উপহাস করে কিন্তু সানীর বুদ্ধিমত্তা ও মজার মজার সব ঘটনায় বারবার কুপোকাত হয় এবং সানী মৌসুমির খুনসুটি লেগেই থাকে।

একদিন আলমগীর সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে যায়। কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে একটি রেলসেতুর উপর দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় সবাইকে খুঁজে পাওয়া গেলেও শাবানাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। নদীতে শাবানার পরনের শাড়িটা শুধু ভেসে থাকতে দেখা যায়। আলমগীর, অপু ও সানী মনে করে শাবানা হয়তো মারা গেছে। শাবানাকে হারিয়ে পুরো পরিবার শোকে কাতর। এই শোক কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে আলমগীর চেষ্টা করে। অপুকে দেখাশোনার দায়িত্ব সানী নেয়।

শিশু অপু মাকে হারিয়ে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। এই সুযোগে আলমগীরের পিএস রিনা খান শিশু অপুকে মাতৃস্নেহ দেয়ার অভিনয় করে শিশু অপুর মন জয় করে। শিশু অপুর জন্য সানী আলমগীরকে দ্বিতীয় আরেকটি বিয়ে করানোর জন্য রাজী করায়। আলমগীর রিনা খানকে বিয়ে করে। আলমগীর রিনা খানের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। ধীরে ধীরে রিনা খানের আচরণ পরিবর্তন হতে থাকে যা সানী লক্ষ্য করে। একদিন রিনা খানের ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে 'আমি থাকতে আসিনি, চলে যাবো বলে' বলে গ্রাম থেকে হাজির হয় হুমায়ূন ফরীদি আর শুরু হয় অন্য এক গল্প…

ফরীদি কথায় কথায় 'আমি থাকতে আসিনি, চলে যাবো বলে' বললেও যাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় না বরং ফরীদির বুদ্ধিতে সানীকে চোর বানিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। অপু হয়ে যায় একেবারে নিঃসঙ্গ। অপুকে ভূতে ধরেছে বলে মানুষিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয় আলমগীরের অবর্তমানে।

একদিন রাস্তায় চলার পথে দূর থেকে শাবানাকে দেখে সানী 'ভাবী, ভাবী' বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকে, শাবানা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সানীকে চিনে ফেলে। দুর্ঘটনায় শাবানা সেদিন মারা যায়নি, শাবানা স্রোতে ভেসে গিয়েছিল এবং জ্ঞান ফেরার পর শাবানা কিছু মনে করতে পারছিল না। শাবানাকে যিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনিই চিকিৎসার জন্য শাবানাকে ঢাকায় এনেছিলেন এবং সানীকে দেখেই শাবানা চিনে ফেলে। শাবানা তাঁর সংসারে ফিরতে চায় কিন্তু সানী তাকে সব ঘটনা খুলে বলে। শাবানা, সানী ও মৌসুমী এবার বুদ্ধি করে কিভাবে সেয়ানা শয়তান ফরীদি ও তার লোভী বোন রিনা খানের পাতানো ফাঁদ থেকে আলমগীর ও তাঁর সন্তান অপুকে মুক্তো করে সংসারে আবার সুখ ফিরিয়ে আনা যায়।

rLRvXXf.jpg


এরপর ঘটতে থাকে দারুন মজার মজার সব ঘটনা যার মধ্য দিয়ে ফরীদির সব কুটচাল ব্যর্থ হয়ে যায় । শাবানার প্রেমে পড়ে যায় ফরীদি ।শাবানাকে দেখলেই ফরীদির 'প্রেম নগরের জংশনে দেখা হলো দুজনে' গানটি মনে পড়ে যায়। শাবানার মুখোমুখি হলেই ফরীদির অভিব্যক্তি ও আবহে 'প্রেম নগরের জংশনে' গানটি বাজতে থাকে যা দেখে দর্শকদের হাসতে হাসতে পেট ব্যথার উপক্রম হয়েছিল। ফরিদি একের পর এক নাস্তানাবুদ হতে থাকে।

অবশেষে শাবানা আবার তার সংসারে ফিরে আসার মাধ্যমে ছবিটি সমাপ্ত হয়। ছবিটির গল্প যেমন চমৎকার ছিল ঠিক তেমনি মনিরুজ্জামান মনিরের লিখা ও আলম খানের সুর করা সবগুলো গানই ছিল দারুন শ্রুতিমধুর যে 'চলার নাম তো জীবন / জীবনের নাম তো চলা', 'দুনিয়াটা উল্টা পাল্টা চলছে / সবকিছু কেমন কেমন লাগছে', 'তুমি আমার জীবন প্রিয়া / আমি তোমার পাগল প্রেমিক', 'হইয়াছে হইয়াছে খবর ভুতের হইয়াছে / আমড়া গাছের তামড়া ভুতে তোরে পাইয়াছে'সহ সব গানগুলো আজো মুখস্ত হয়ে আছে, আজো গুনগুন করে গাই ।

বাংলা চলচ্চিত্রের মাস্টার মেকার এ জে মিন্টু শুধু যে একজন প্পরিচালক হিসেবে নয় প্রযোজক হিসেবেও অসাধারন তা 'সংসার সুখ দুঃখ' চলচ্চিত্রটি আবারো প্রমাণ করেছিল ।

ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন মনোয়ার খোকন যিনি বাংলা চলচ্চিত্রের 'মাস্টারমেকার' এ জে মিন্টুর একজন ছাত্র বা সহকারি পরিচালক ছিলেন। ৯০ দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে যে কজন তরুণ পরিচালক সফল হয়েছিলেন মনোয়ার খোকন তাদের অন্যতম একজন। আমার দেখা মতে মনোয়ার খোকনের সবচেয়ে সুনির্মিত চলচ্চিত্র হলো 'সংসারের সুখ দুঃখ' চলচ্চিত্রটি যার মতো আর একটি চলচ্চিত্রও তিনি নির্মাণ করতে পারেননি। পুরো পরিবার সহ ছবিটি দেখতে আসা মহিলা দর্শকরাসহ সব শ্রেণী পেশার ও সব বয়সী দর্শকদের ছবিটি মুগ্ধ করেছিল।

সিনেমাটির প্রযোজক ছিলেন এ জে মিন্টু কিন্তু আমরা তখন পোষ্টারে খেয়াল করিনি। 'সংসারের সুখ দুঃখ' চলচ্চিত্রটির গল্প, সংলাপ, নির্মাণশৈলী দেখেই সন্দেহ হয়েছিল এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে যা ছবির শেষে পূর্ণাঙ্গ টাইটেল সত্যি প্রমাণ করে । ছবির টাইটেলে দেখতে পেলাম 'প্রযোজনা, বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালক এ জে মিন্টু এবং সানফ্লাওয়ার মুভিজ' …… ব্যস কারোরই আর বুঝতে বাকি থাকেনি যে এই 'সংসারের সুখ দুঃখ' চলচ্চিত্রের সাথে মিন্টু ছায়ার মতো ছিলেন যার ফলে মনোয়ার খোকনের আগের চলচ্চিত্রগুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

একটি সার্থক কমেডি সিনেমা কিভাবে বানাতে হয় সেটা আজকের ডিজিটাল পরিচালকদের মনোয়ার খোকনের 'সংসারের সুখ দুঃখ' সিনেমা দেখে শেখা উচিৎ। আজকের ডিজিটাল পরিচালকরা যেখানে সুড়সুড়ি দিয়ে, ভাঁড়ামি করে দর্শকদের হাসাতে পারেনা সেখানে সংসারের সুখ দুঃখ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। পুরো সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাসতে হাসতে দর্শকের হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাবে। যৌন সুড়সুড়ি দেয়া আইটেম গান নেই, নেই খলনায়কের চিরচেনা অভিব্যক্তি ও সংলাপ, নেই কোন ধর্ষণ দৃশ্য, নেই ঢিসুম ঢিসুম টাইপ আকশন তবুও সিনেমাটি বিরক্তিহীন ভাবে পুরো সিনেমা হল ভরপুর দর্শকেরা সিনেমাটি উপভোগ করে মনে তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরেছিল। আজও খুব খুব ইচ্ছে করে সিনেমাটি আরেকটাবার দেখতে!!!!

চলচ্চিত্রটির প্রতিটি দৃশ্য বাস্তব সম্মত ভাবে তুলে ধরার এতো চেষ্টা যা এ জে মিন্টুর চলচ্চিত্র ছাড়া পাওয়া যায় না। একটি পরিবারের ও ৬/৭ টি চরিত্রের ভেতর পুরো গল্পটিকে প্রাণবন্ত করে তোলার দক্ষতা এ জে মিন্টু ছাড়া এমন অসাধারন ভাবে কেউ পারে না এবং মনোয়ার খোকন এই কারণেই সম্পূর্ণ সফল হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ছবিটির গল্প, চিত্রনাট্য ও গানগুলোকে এক সুতোয় মনোয়ার খোকন এমনভাবে বেঁধেছিলেন যে দর্শকদের মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য ছবিটিতে কে যেন আছেন? কাকে যেন খুঁজে পাওয়া যায়???? এমন আরেকটা সার্থক পারিবারিক কমেডি নির্ভর গল্পের সিনেমা এইদেশে আর হবে না, আর কেউ বানাতে পারবে না এটাই আজ সত্যি।।

মোঃ মনিরুজ্জামানের লিখা ও আলম খানের সুর করা সংসারের সুখ দুঃখ সিনেমার দারুন দারুন গান.....
 

Users who are viewing this thread

Back
Top