What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other আমাদের আছেন আলমগীর (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
RaTYhd1.jpg


সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা দেখার সোনালি দিনগুলোতে আলমগীর ছিলেন অসংখ্য ব্যবসাসফল ও দর্শক নন্দিত চলচ্চিত্রের অভিনেতা। তিনি আমার খুব প্রিয় একজন অভিনেতা বা প্রথম পছন্দের অভিনেতা। আলমগীরের অভিনয় ও সংলাপ বলার ধরন এতোটাই স্মার্ট যে কোন চরিত্রে তার অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করতো।

বলিউডের চলচ্চিত্রে যেমন বিগবি-খ্যাত একজন অমিতাভ বচ্চন আছেন আমার কাছে আলমগীর হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের অমিতাভ বচ্চন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের যে কজন জীবন্ত কিংবদন্তী আছেন তাদের মধ্যে আলমগীর নামটি শীর্ষ তালিকায় থাকা একটি নাম। বাংলা চলচ্চিত্রের এক অসাধারণ অভিনেতা ও কোটি কোটি দর্শকের পছন্দের অভিনেতা হিসেবে আজো আলমগীর আছেন ও থাকবেন চিরকাল।

১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল আলমগীর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দুদু মিয়া, যিনি সেই সময়ের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। ১৯৫৬ সালে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র 'মুখ ও মুখোশ' এর সহযোগী প্রযোজক ছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই সিনেমার সাথে ছোটবেলা থেকেই আলমগীরের পরিবারের জানাশোনা।

'আমার জন্মভুমি' ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে আলমগীর এর বাংলা চলচ্চিত্রে আগমন। এরপর ৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে ৯০ দশকের প্রথম পর্যন্ত একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। অমিতাভের মতো আলমগীর তার সমসাময়িক অভিনেতাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পর্দায় দাপুটের সাথে অভিনয় করে গেছেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের নায়করাজ রাজ্জাক তার সমসাময়িক অভিনেতাদের মাঝে আলমগীরের সাথে সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্রে একসাথে কাজ করেছেন। রাজ্জাকের সাথে আশার আলো, কাপুরুষ, কেউ কারো নয়, লাইলি মজনু, স্বামী স্ত্রী, ন্যায় বিচার, অন্ধ বিশ্বাস, সমর-সহ আরও অনেক ছবিতে। শুধু রাজ্জাক নয় বুলবুল আহমেদ, জসিম, ওয়াসিম, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চন, জাফর ইকবাল সবার সাথেই আলমগীরের আছে অসংখ্য দর্শকননন্দিত চলচ্চিত্র। একই সাথে ৯০ দশকের রুবেল, মান্না, সালমান শাহ, ওমর সানীদের সাথেও আছে একাধিক দর্শকনন্দিত চলচ্চিত্র।

মাল্টিস্টার ধারার চলচ্চিত্রে প্রযোজক পরিচালকদের কাছে আলমগীর ছিলেন অন্যতম পছন্দের অভিনেতা। আলমগীর শুধু চলচ্চিত্রে একজন অভিনেতা হিসেবেই থেমে থাকেননি তিনি একাধারে একজন প্রযোজক, পরিচালক ছিলেন। সেই সময় সকল প্রযোজক, পরিচালক এর কাছে আলমগীর ছিলেন সবচেয়ে আস্থাশীল ও নির্ভরশীল অভিনেতা।

সামাজিক অ্যাকশন, পারিবারিক টানাপোড়ন, রোমান্টিক অ্যাকশন, ফোক ফ্যান্টাসি-সহ সব ধারাতেই আলমগীর ছিলেন সফল। যার ফলে সব ধরনের চরিত্রে আলমগীর ছিলেন মানানসই। বাংলাদেশের সর্বাধিক (৬৭টি) ছবির পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ৪০টি ছবিতেই আলমগীর অভিনয় করেন। শুধু তাই নয় সোনালি যুগের বাংলা চলচ্চিত্রের মাস্টার মেকার এ জে মিন্টু, ক্লাসিক পরিচালক আমজাদ হোসেন, জহিরুল হক, কামাল আহমেদ, শিবলী সাদিক, মোতালেব হোসেন, দেওয়ান নজরুল, আলমগীর কুমকুম, শহিদুল ইসলাম খোকন, কাজী হায়াৎ, দিলীপ বিশ্বাস, আজিজুর রহমান, ইবনে মিজান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মোস্তফা মেহমুদ, কাজী জহির, আজহারুল ইসলাম খান, দিলীপ সোম, মতিন রহমান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, কবির আনোয়ার, সাইফুল আজম কাশেমের মতো রথি-মহারথীদের একাধিক চলচ্চিত্র ছাড়াও নুর হোসেন বলাই, মোহাম্মদ হান্নান, সোহানুর রহমান সোহান, মালেক আফসারী, মমতাজুর রহমান আকবর, ইস্পাহানি আরিফ জাহানের মতো ৯০ দশকের পরিচালকদের একাধিক চলচ্চিত্রেও কাজ করেন এই গুণী অভিনেতা। এতেই বুঝা যায় যে আলমগীরের উপর নির্মাতারা কী পরিমাণ আস্থা রাখতেন।

DM2QYvv.jpg


কলেজ পড়ুয়া, পুলিশ অফিসার, মাস্তান, গ্রাম্য যুবক, সহজ সরল বোকা যুবক, ব্যর্থ প্রেমিক, রাজকুমার, বড় ভাই, পিতা-সহ সব ধরনের চরিত্রে আলমগীর ছিলেন সফল। চলচ্চিত্রে আলমগীর এমনই আস্থাশীল ছিলেন যে কিছু পরিচালক শুধু আলমগীর ছাড়া তাদের ছবিতে অন্য কাউকে চিন্তা করতে পারতেন না। এছাড়া স্বাধীন পরবর্তী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এমন পরিচালক পাওয়া দুঃসাধ্য যার সাথে আলমগীর কাজ করেনি। ৭০ দশকের শেষ প্রান্তে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত 'জিঞ্জির' ছবিতে প্রথম একই ছবিতে নায়করাজ রাজ্জাক ও সোহেল রানা'র সাথে সমান তালে অভিনয় করে তিনি নিজের অভিনয়ের দক্ষতা দেখিয়ে সবার কাছে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন।

এরপর ৯০ দশকের শুরুতে নায়করাজ রাজ্জাক ও অভিনেত্রী শাবানার সাথে মতিন রহমানের 'অন্ধ বিশ্বাস' ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। জুটি বেঁধে কাজ করেছেন শাবানা, ববিতা, কবরী, সুচরিতা, অলিভিয়া, রোজিনা, অঞ্জু ঘোষ, দিলারা, দিতি, চম্পা সহ অসংখ্য অভিনেত্রীর সাথে যার মধ্যে আলমগীর শাবানা জুটি বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য রেকর্ড স্থাপন করে ইতিহাস হয়ে আছে।

শাবানার সাথে প্রায় দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলা চলচ্চিত্রের যে কোন জুটির সর্বাধিক চলচ্চিত্রের রেকর্ড আজো অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। মজার ব্যাপার হলো চিত্রনায়িকা চম্পার সাথে জুটি বেঁধে নিস্পাপ চলচ্চিত্রে যেমন সফল হয়েছিলেন ঠিক তেমনি কাজী হায়াতের 'দেশপ্রেমিক' চলচ্চিত্রে চম্পার বাবার চরিত্রেও অভিনয় করে সফল হয়েছিলেন এই অসাধারণ অভিনেতা। আবার বুলবুল আহমেদের 'আকর্ষণ' চলচ্চিত্রে জাফর ইকবালের সাথে সহ-নায়ক হিসেবে যেমন সফল হয়েছিলেন ঠিক তেমনি একই সময়ে দিলীপ বিশ্বাসের 'অপেক্ষা' চলচ্চিত্রে জাফর ইকবালের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেও সফল হয়েছিলেন ।

৭০ দশকের শেষ প্রান্তে গীতিকার খোশনূর আলমগীরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। আলমগীর -খোশনূর দম্পতির এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। আলমগীর খোশনূর দম্পতির কন্যা আঁখি আলমগীর (সঙ্গীত শিল্পী) ১৯৮৪ সালে 'ভাত দে' ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। আলমগীর আরও একাধিক ছবির গানে কণ্ঠও দিয়েছিলেন । ১৯৯৮/৯৯ সালে কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লাকে বিয়ে করে আলাদা সংসার গড়েন আলমগীর।

১৯৮৫ সালে 'মা ও ছেলে' ছবির জন্য আলমগীর প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর অপেক্ষা, ক্ষতিপূরণ, অন্ধ বিশ্বাস, মরণের পরে, পিতা মাতা সন্তান, দেশপ্রেমিক ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন যা ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কোন অভিনেতার সর্বাধিকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাওয়ার বিরল ও একমাত্র ঘটনা। এছাড়া আলমগীর ১৯৮৯-৯২ সাল পর্যন্ত একটানা ৪ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার (ক্ষতিপূরণ, মরণের পরে, পিতা মাতা সন্তান ও অন্ধ বিশ্বাস) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে এক অনন্য রেকর্ড করেন যা এখনও কেউ ভাঙতে পারেনি। শুধু ১৯৯৩ সাল বাদ দিয়ে ১৯৯৪ সালে কাজী হায়াৎ এর 'দেশপ্রেমিক' ছবির জন্য আবারও শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন । সর্বাধিক ৭ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার সহ ২০১০ সালে 'জীবন মরণের সাথী' ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে পুরস্কার নিয়ে সর্বমোট ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অভিনেতাদের মধ্য এখন পর্যন্ত আলমগীরই হলেন সর্বাধিক বার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া অভিনেতা।

প্রায় ৩ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা আমার দেখা আলমগীর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো- আমার জন্মভুমি, দস্যুরানী, মণিহার, দেনা পাওনা, জিঞ্জির, মাটির মানুষ, মধুমিতা, বাসর ঘর, মনিহার, আগুনের আলো, লুটেরা, ঘরের বউ, ভালোবাসা, দিওয়ানা, মেহেরবানু, চণ্ডীদাস রজকিনী, কেউ কারো নয়, কাপুরুষ, আশার আলো, সৎপথে হলো দেখা, আঘাত, ভরসা, লাইলি মজনু, বড় বাড়ির মেয়ে, ঘরের বউ, ছক্কা পাঞ্জা, মধু মালতী, নির্দোষ, মানে না মানা, আওলাদ, আকর্ষণ, মান সম্মান, শ্রীমতী ৪২০, বিচ্ছেদ, শশিপুন্না, সোনার নাও পবনের বৈঠা, সাথী, আক্রোশ, মায়ের দোয়া, স্বামীর আদেশ, নান্টু ঘটক, ওস্তাদ সাগরেদ, সবুজ সাথী, প্রতিজ্ঞা, ভাত দে, মা ও ছেলে, হালচাল, অস্বীকার, অপেক্ষা, লাল বেনারসী, ছেলে কার, আওয়াজ, বৌমা, সমর, ঘরের সুখ, জেলের মেয়ে, লাখে একটা, ব্যথার দান, জেল হাজত, ভাই আমার ভাই, জলপরী, আইন আদালত, অবহেলা, স্ত্রীর স্বপ্ন, ন্যায় বিচার, অমরসঙ্গী, অপরাধী, নিস্পাপ, অশান্তি, স্বামী স্ত্রী, সত্য মিথ্যা, বিদায়, বিশ্বাসঘাতক, দোলনা, চেতনা, অমর, ন্যায় অন্যায়, বিসর্জন, বউ শাশুড়ি, ক্ষতিপুরণ, রাঙা ভাবী, গরীবের বউ, সান্ত্বনা, ননদ ভাবী, মরণের পরে, অচেনা, অর্জন, গরীবের বন্ধু, অন্ধ বিশ্বাস, ক্ষমা, অবুঝ সন্তান, বাংলার বধূ, পিতা মাতা সন্তান, শাসন, বুকের ধন, দেশপ্রেমিক, স্নেহ, দুর্জয়, রাক্ষস, নির্মম, নরপিশাচ, অজান্তে, সংসারের সুখ দুঃখ, জজ ব্যারিস্টার, রাগ অনুরাগ, ঘাতক, বন্ধন, বুকের ধন, ঘর দুয়ার, বাংলার মা, নির্মম, সত্যবাদী, অগ্নিস্বাক্ষর, কন্যাদান, আসামি বধূ, ঘাতক, স্নেহের বাঁধন, বাপের টাকা ও আমি সেই মেয়ে।

নিচে সিনেমা হলে দেখা আলমগীর অভিনীত সেরা তিনটি ( ব্যক্তিগত বিচার) সিনেমার বিস্তারিত দেয়া হলো।

AZ4ngRF.jpg


ক্ষতিপূরণ: এফডিসির চলচ্চিত্র মানেই যে ৭টা ফাইট, ৫টা গান, যাত্রার ঢংয়ে অ্যাকটিং, কানের পর্দার ফাটানো চিৎকার, আজগুবি গল্প নয় এই কথাটার আরেকটি প্রমাণ দিচ্ছি, শুনুন। আমাদের মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে গতানুগতিক ধরনের বাহিরে অসংখ্য দর্শকনন্দিত ছবি আছে যা অনেকেরই অজানা। ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'ক্ষতিপূরণ' ছবিটি তারই একটি প্রমাণ যে ছবিটি সাধারন সিনেমা দর্শক থেকে সমালোচক সবার প্রশংসা কুড়িয়েছিল এবং যে ছবিটা জাতীয় চলচ্চিত্রের একাধিক শাখায় পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। সম্প্রতি সালমান খানের 'বজরঙ্গি ভাইজান' ছবিটি দেখে যারা কাঁদেন তাঁদের বলবো দয়া করে আমাদের স্বল্প বাজেটে নির্মিত 'ক্ষতিপূরণ' ছবিটি একবার দেখুন ।

১৯৮৯ সালের কোন এক বিকেলে সপরিবারে গিয়েছিলাম সিলেটের 'মনিকা' সিনেমা হলে যথারীতি মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন ছবি ''ক্ষতিপূরণ'' দেখতে। ছবিটির নায়ক ছিলেন আলমগীর ও নায়িকা রোজিনা। কিশোর বেলার সেই সময় আলমগীর আমার সবচেয়ে প্রিয় একজন নায়ক যার ছবি মানেই অসাধারন কিছু। সেদিন ছবিটি দেখার আগ পর্যন্ত ভাবতে পারিনি কি চমক অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য ও সিনেমা হল ভর্তি সকল দর্শকদের জন্য। যাই হোক , টেলিসামাদ ও আবুল খায়েরের অলিম্পিক ব্যাটারি ও গোল্ডলিফের বিজ্ঞাপন দুটো শেষে জাতীয় পতাকা প্রদর্শন শেষে ছবি শুরু হলো ।

ছবির গল্পটি সংক্ষেপে এমন- আলমগীর একজন চিত্রশিল্পী যার স্ত্রী ও সন্তান মারা গেছে। সন্তান মারা যাওয়ায় প্রিয়তমা স্ত্রী সন্তানের শোকে একদিন আত্মহত্যা করেন। স্ত্রী'র মৃত্যু নিয়ে আলমগীরকে পুলিশও সন্দেহ করে। বিশাল বাড়ীতে আলমগীর একাই থাকেন। শোকে দুখে আলমগীর প্রতিরাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ীতে ফেরে। একদিন মাতালবস্থায় বাড়ী ফেরার পথে রাস্তার ধারে একটি ৫/৬ বছরের বয়সী শিশুকন্যাকে কুড়িয়ে পায়। বাসায় নেয়ার পর আলমগীর জানতে পারে মেয়েটি বোবা। মেয়েটিকে নিজের মেয়ে 'কবিতা' নাম দিয়েই লালন পালন করতে শুরু করে কিন্তু এই মেয়েটিকে বাড়ী আনার পর থেকেই ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। কারা যেন মেয়েটিকে ছল বলে কৌশলে আলমগীরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চায় মেয়েটিকে খুন করতে চায়। আলমগীর নিজেও ভেবে পায়না কেন এই নিস্পাপ শিশুটির পেছনে এতো শত্রু। ঘটনাক্রমে একদিন মেয়েটির ছোট খালা রোজিনার সাথে আলমগীরের পরিচয় হয়। রোজিনা মেয়েটিকে গাড়ীতে একা বসে থাকতে দেখে মায়ায় পড়ে যায় এবং কবিতাকে নিয়ে শপিংমলে ঘুরে বেড়ায় যেভাবে রোজিনার সাথে আলমগীরের পরিচয়। রোজিনাও জানে না যে এই শিশুটি তার মেঝো বোনের মেয়ে যাকে বিদেশ থেকে আসার পর রোজিনা ও তার বড় বোন রোজী আফসারি খুঁজছে। শিশুটিকে নিতে ছদ্মবেশে দিলদার ও তাঁর স্ত্রী আলমগীরের বাড়ীতে হানা দেয় এবং নিজেদের শিশুটির মা বাবা দাবী করে। কিন্তু দিলদার যখন মেয়েটিকে বাবা বলে ডাকতে বলে তখনই আলমগীরের সন্দেহ হয়। অর্থাৎ খুনি চক্র দিলদারকে টাকার বিনিময়ে মেয়েটিকে অপহরণ করতে পাঠায়। একদিন খুনি চক্রের সাজানো নারী অপহরণ ঘটনায় সন্দেহে জেলে যায় আলমগীর। মেয়েটির দায়িত্ব নেয় রোজিনা এবং আলমগীর রোজিনাকে বলে যেন যে ভাবেই হোক কবিতার দিকে যেন খেয়াল রাখে। রোজিনা কবিতাকে নিজেদের বাড়ীতে নিয়ে আসার পর রোজী কবিতাকে চিনে ফেলে এবং রোজিনাকে জানায় এই সেই তাদের মেঝো বোন দিলারার মেয়ে।

মেঝো বোনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় আগেই জিডি করে রেখেছিল রোজী।রোজী কবিতাকে খুঁজে পাওয়ার ঘটনা পুলিশকে জানায় এরপর বের হয়ে আসে অন্য রোমহর্ষক ঘটনা। কে বা কারা কবিতার মা ও বাবাকে মেরে নিজেদের বাড়ীর বাগানের পেছনে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিল যাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সন্দেহ করে আলমগীরকে কিন্তু বোবা শিশুটির আচরণে বুঝিয়ে দেয় আলমগীর খুনি নয় বরং আলমগীরের কাছে সে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।

আলমগীরও সেদিন প্রথম জানতে পারে কুড়িয়ে পাওয়া বোবা শিশুটিকে কেন বারবার একটি চক্র ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল আলমগীরের কাছ থেকে। আলমগীর পুলিশের জেলে যাওয়ার পথে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। কামারের ঘরে হাতকড়া খুলতে এসে দেখা পেয়ে যায় কামাররুপী দিলদার'কে যে একদিন কবিতার বাবা সেজে আলমগীরের বাড়ী থেকে কবিতাকে অপহরণ করতে গিয়েছিল। আলমগীর দিলদারের কাছ থেকে জানতে পারে যে এক দাঁড়িওলা লোক তাঁকে টাকার বিনিময়ে এই কাজ করতে বাধ্য করেছিল। অভাবে পরে দিলদার সেদিন রাজী হয়েছিল।

দিলদারের কাছ থেকে ধারণা পেয়ে আলমগীর একজন লোকের একটি ছবি আঁকে যাকে সে একদিন রাস্তায় দেখেছিল এবং যে লোকটিকে দেখামাত্রই শিশু কবিতা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। রাতের আঁধারে রোজিনার সাথে দেখা করতে এসে সব খুলে বলে কেন সে পালিয়েছে এবং সাদা একটি কাগজে একজন দাঁড়িওয়ালা লোকের ছবি এঁকে স্ক্রেচটি রোজিনার হাতে তুলে দিয়ে বলে 'তুমি কবিতাকে এই ছবিটা দেখিয়ে জানার চেষ্টা করবে কবিতা এই লোকটিকে চিনে কিনা?' আলমগীরের কথামতো রোজিনা হাতে আঁকা ছবিটি কবিতাকে দেখাতেই কবিতা ভয় পেয়ে যায় যাতে বুঝতে বাকী নেই কবিতা আলমগীরের হাতে আঁকা ছবির মানুষটিকে চিনে যাকে একদিন রাস্তায় দেখে আলমগীরের সাথে থাকা শিশু কবিতা আঁতকে উঠেছিল।

এরপর শুরু হয় কবিতার মা বাবাকে খুন করার রহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিদের ধরার আলমগীরের অভিযান যে নিষ্পাপ শিশুটির মা বাবা হারানোর 'ক্ষতিপূরণ' বুঝিয়ে দিতে চায় এবং অবশেষে খুনি ড্যানি সিডাক ও আহমেদ শরীফের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ছবিটি শেষ হয় এবং চাঞ্চল্যকর একটি খুনের রহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিদের জীবন বাজী রেখে ধরিয়ে দেয়ার পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়া ফেরারি আসামী আলমগীরকে পুলিশ বিভাগ ক্ষমা করে দেয়। শিশু কবিতা আলমগীর ও রোজিনার মাঝে তাঁর হারানো মা বাবাকে খুঁজে পায় । এভাবেই সেদিন রুদ্ধশ্বাস এক গল্পের সহজ সরল কিন্তু অসাধারন নির্মাণের ছবি 'ক্ষতিপূরণ' ছবিটি দেখে তৃপ্তি নিয়ে দর্শক সিনেমা হল থেকে বের হয়েছিল। যে ছবিটির টাইটেলের শুরুতে পরিচালক মালেক আফসারি 'একটি বিদেশী ছবির ছায়া অবলম্বনে' লিখে না দিলে কেউ সহজে বুঝতেই পারতো না ছবিটি বাংলাদেশের গল্প নয় কারণ বিদেশী ছবির গল্প হলেও পুরো ছবিটি ছিল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ছবি। সেদিন কিশোর বয়সে ছবিটি দেখলেও আজো ছবিটির স্মৃতি বারবার চোখে ভাসে কারণ বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সিনেমার ব্যতিক্রমধর্মী ছবিটি দেখে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top