জাজ মাল্টিমিডিয়ার রক্ত বেশ বড় বাজেটের মুভি তাতে কোন সন্দেহ্ নেই। ছবির নায়ক, নায়িকাও দেখতে বেশ সুন্দর। কিন্তু ছবিটির গল্প রীতিমত বস্তাপচা। তারপরও আমার মতে, ছবিটি বাণিজ্যিক মুভি হিসেবে একেবারে খারাপ না। অন্তত বর্তমান বস্তাপচা ছবির ভিড়ে এ ছবিটি অনেক দিক থেকেই অন্য সাধারণ ছবি থেকে ভালো।
রক্তের গল্প সানিয়াকে (পরী মনি) নিয়ে। সানিয়া ৪ বছর আগের এক দুর্ঘটনায় নিজের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে নূরি পরিচয়ে থাকে। নূরি সানিয়া থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন এক মেয়ে। বাবা ও স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে নিয়ে নূরির ছোট্ট একটা পরিবার আছে। আরেক দূর্ঘটনায় নূরি আবিষ্কার করে যে তার অতীতের কিছু ঘটনা আছে যা সে ভূলে গেছে। নূরির অতীতের রহস্যময় স্বত্বাকে আবিষ্কার করতে তাকে সাহায্য করতে চায় ভবঘুরে সাংবাদিক রোশান।
প্রথমত, স্মৃতিশক্তি হারানোর মতো জঘন্য সাবজেক্ট আর এই মূহূর্তে দ্বিতীয়টি নাই। তবু বাংলা সিনেমার উম্মাদ গল্পকাররা সেই জঘন্য জিনিস বারবার নিয়ে আসে। (নিজেদের ব্রেইন বলে কিছু নেই তো, তাই সকল চরিত্রের মধ্যেই স্মৃতিহীনতা খুঁজে)
এছাড়া ছবির গল্পের ট্রিটমেন্টও একেবারেই বিস্বাদপূর্ণ। এমন একটা গল্পের পিছনে কেবলমাত্র পাগলেই এতো টাকা ঢালবে।
চিত্রনাট্যকার পরিচালক নিজেই। আর পদে পদে তাই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশী চিত্রনাট্যকাররা কতটা বিস্বাদ চিত্রনাট্য লিখতে পারেন। সংলাপগুলোও ম্যাড়ম্যাড়ে।
তবে ঠিক উল্টোটি ঘটেছে ছবির লোকেশন ও সিনেমাটোগ্রাফির ক্ষেত্রে। এতো সুন্দর সব শট বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমায় খুব কমই দেখা যায়। প্রতিটা শট ঝকঝকে, স্মার্ট। যেমন সুন্দর লোকেশন, তেমনি সিনেমাটোগ্রাফি। এডিটিং দারুন কিছু হয়নি, মোটামুটি হয়েছে। এই জায়গায় আরেকটু সময় ও যত্ন অনেক ভালো ফলাফল দিতো।
ছবির সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে নতুন জুটি রোশন-পরী মনি। এতো সুন্দর জুটি শেষ কবে দেখেছি মনে করতে পারছি না। সম্ভবত সালমান শাহ্–শাবনূর অথবা রিয়াজ-শাবনূরের পর এতো সুন্দর রোমান্টিক জুটি দেখলাম।
রোশান সত্যিই দারুণ। যেমন সুন্দর চেহারা তেমনি পুরুষালী ভয়েস্। নাচে জঘন্য, তবে অভিনয়ে বাংলা সিনেমার গতানুগতিক নায়কদের চেয়ে অনেক অনেক ভালো। তার চোখের এক্সপ্রেশন অসাধারণ। জাজ মাল্টিমিডিয়ার এখন পর্যন্ত সেরা সৃষ্টি বলাই চলে।
তবে তাকে রোমান্টিক ছবিতে অভিনয়ের সূযোগ দেওয়া উচিত। অ্যাকশনের চেয়ে রোমান্টিক ছবিতে তিনি অনেক অনেক বেশি ভালো করতে পারবেন। রক্ত ছবিতে অল্প কিছু রোমান্টিক মূহূর্ত আছে যেগুলো এ ছবির প্রাণ। আর রোশান রোমান্টিক মূহূর্তগুলোতে অসম্ভব রকম উপভোগ্য। নির্মাতা হয়তো রোশানকে দেব ও শাকিব খানের ইমেজে তুলে ধরতে চাইছিলেন। কিছু কিছু দৃশ্যে তাই মনে হচ্ছিল রোশান যেন দেব ও শাকিব খানকে ফলো করছে। তবে যে সব জায়গায় স্বতন্ত্র রোশান এসেছে। সে সব জায়গায় সে অসাধারণ।
একটা দৃশ্য আছে এমন যে রোশান রাস্তায় শুয়ে চাঁদের সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর সে কল্পনা করে পরী মনিও তার পাশে এসে শুয়েছে। ঐ দৃশ্যটাই এ ছবির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য!!
পরী মনি রূপে একেবারে ডানা কাটা পরী। এতো সুন্দর চেহারা বড়পর্দায় বহুদিন দেখি না। শাবনূরকে দেখে ঠিক যেমনিভাবে মনে মনে বলতাম আহা্ কি সুন্দর! পরীকে দেখেও বার বার বলেছি বাংলার পরিণীতি চোপড়া (অবশ্য পরিণীতি চোপড়ার চেয়েও বেশি ভালো লেগেছে)।
অ্যাকশন দৃশ্যে পরী মনি দুর্বল তবে রোমান্স বা আবেগের দৃশ্যে সে এক কথায় অসাধারণ।
রোশান আর পরী মনিকে নিয়ে সুন্দর গল্পের রোমান্টিক ছবি হলে কেমেস্ট্রি ময়রার ঘরে গিয়ে জমে ক্ষীর হবে।
ছবির চারটি গানই সুন্দর। তবে নাচের গানগুলোতে নায়ক-নায়িকা দুজনেই একেবারেই বোরিং নাচ দেখিয়েছেন। তারপরও 'জানতে যদি চাও' ও 'ডানাকাটা পরী' উপভোগ্য ছিল বেশ।
সবমিলিয়ে, রক্ত বেশ বড় বাজেটের বাণিজ্যিক ছবি। বেশ ভালোভাবেই বানানো হয়েছে। তবে দুর্বল গল্প ও চিত্রনাট্য একেবারে বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছে। ছবিটি অ্যাকশন ছবি তো হতেই পারেনি, রোমান্টিক ছবি হওয়ার সূযোগ থাকলেও দুর্বল চিত্রনাট্যের কারণে তাও পারেনি। রোমান্টিক সিনগুলো দারুন, অ্যাকশন সিনগুলো ফালতু।
তারপরও বেশ সুন্দর লোকেশন, সিনেমাটোগ্রাফি ও খুব সুন্দর এক জুটি রোশান-পরী মনির কারণে ছবিটি আমার কাছে মোটামুটি ছবি হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
বস্তাপচা নির্মাণের ছবি না দেখে সুনির্মিত ছবি দেখুন এমনকি যদি সে সুনির্মিত ছবির গল্পটি বস্তাপচাও হয়।
আমার রেটিং ৬/১০ অর্থাৎ ৩/৫