What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review পুত্র : পূর্ণ হয়নি প্রত্যাশা (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
enpQDcD.jpg


পুত্র
পরিচালনা : সাইফুল ইসলাম মান্নু
অভিনয়ে : জয়া আহসান, ফেরদৌস, সেঁওতি, লাজিম, অতিথি চরিত্রে আজিজুল হাকিম, শর্মীমালা, লায়লা হাসান, ডলি জহুর, মনির খান শিমুল, শামস সুমন, ফাহমিদা নবী, মিল্টন খন্দকার, বাপ্পা মজুমদার।
রেটিং : ২/ ৫

২০১৮ সালের প্রথম চলচ্চিত্র 'পুত্র' দর্শন করতে গিয়েছিলাম মুক্তির প্রথম দিন। সরকারী অনুদানে নির্মিত বেশিরভাগ ছবিই বড় আকারে সাধারণত মুক্তি পায়না। অথচ তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রযোজিত চলচ্চিত্র 'পুত্র' ১০৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। বিষয়টি আনন্দের। তাছাড়া আমাদের চারপাশের বিশেষ গুণের অধিকারী বিশেষ শিশু-কিশোরদের নিয়ে যে তথ্য মন্ত্রণালয় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে-এটি ভেবেও ভেতরে ভেতরে আন্দোলিত হয়েছি।

'পুত্র' মানবিক গল্পের একটি মৌলিক ছবি। সমাজে বিশেষ শ্রেণীর শিশুরা শুধু ঘরের বাইরেই নয়, নিজ পরিবারেও যে কতটা অবহেলার শিকার হয়-সেই অনাকাঙ্খিত বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে বড় পর্দায়। সামান্য স্নেহ, সামান্য আদর-ভালোবাসা যে এই বিশেষ শিশুদের শূণ্য থেকে কতটা অনন্য অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে, এই বার্তাটিই কাহিনীকার হারুন রশীদ ও চিত্রনাট্যকার-পরিচালক সাইফুল ইসলাম মান্নু চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। উদ্দেশ্য মহৎ। তথ্য মন্ত্রণালয়কেও সাধুবাদ জানাই এরকম একটি মহতী উদ্যোগ নেবার জন্য। শুনেছি শিল্পী কলাকুশলীরাও এ ছবিতে নাম মাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। এ বিষয়টিও মুগ্ধ করার মত। তবে 'পুত্র' ছবির মূল প্রতিবন্ধকতা গল্প বলায়।

এটা ঠিক, প্রথম দৃশ্য থেকেই নির্মাতা ভণিতা করেননি। বুঝিয়ে দিয়েছেন 'পুত্র' আবর্তিত হয়েছে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে। 'সুপ্ত' (লাজিম) এবং তার বাবা-মা'ই (ফেরদৌস-সেঁওতি) ছিলেন ছবির প্রথমার্ধে মূল চরিত্র। শুরুতে বাপ্পা মজুমদারের 'তুমি একটু ছুঁয়ে দিলে আমার কান্না গুলো' গানের সঙ্গে আমিও আবেগতাড়িত হয়েছি। তবে এরপর সুপ্ত'র জগতে আমি যতই ডুব দিতে চেয়েছি, ততই নির্মাতা আমাকে টেনে নিয়ে এসেছেন বাস্তবে। পর্দা জুড়ে বার বার দর্শকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন: A film based on autistic children. ছবির শুরুতে এবং শেষে দর্শকদের অবগত করা যেতেই পারে। তাই বলে গল্প থেকে দর্শকদের বের করে এনে বার বার একই তথ্য জানাবার যৌক্তিকতা কি? ছবির দ্বিতীয় ধাক্কা সুপ্ত'র মা 'সাদিকা', যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেঁওতি। যদিও নেপথ্যে সেঁওতির হয়ে এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন (ডাবিং করেছেন) গুণী অভিনেত্রী সাবেরী আলম। তরুণী সেঁওতির মুখে সাবেরী আলমের কণ্ঠ বার বার কানে লেগেছে। ছবির তৃতীয় ধাক্কা, ৪২ মিনিটের প্রথমার্ধে ছবির অন্যতম প্রধান অভিনেত্রী জয়া আহসানের প্রবেশ ৩৩ মিনিটে। শুধু তাই নয়, বিরতির আগে তার মুখে কোনো সংলাপও নেই। জয়ার কণ্ঠ শোনা যায় বিরতির প্রায় ৭ মিনিট পর। তবে উদ্দেশ্য মহৎ বলেই সব অনুযোগ সরিয়ে বারবারই মন ডোবাতে চেয়েছি 'পুত্র'র মূল বক্তব্যে। যদিও দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই বক্তব্য যে কারণেই হোক আমার মন ছুঁয়ে যেতে পারেনি। বার বার-ই অনুভব করেছি আমরা ক্লাসরুমে বসেছি। শিক্ষক জ্ঞান দিচ্ছেন। যে করেই হোক আমাকে এই জ্ঞান আহরণ করতে হবে। অথচ আফসোস, হারুন রশীদ যে গল্প রচনা করেছিলেন তার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। তবে সব সম্ভাবনা ভেস্তে গিয়েছে দুর্বল চিত্রনাট্য ও সংলাপে। এই গল্পে একজন অটিস্টিক শিশুকে শিক্ষিকা প্রথম দর্শনেই বড়দের মত করে বলেন, 'যখন কেউ চলে যায় তখন বুকের ভেতরটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে'। শিশুদের সঙ্গে তাদের বয়স উপযোগী করে সংলাপ বলার প্রয়োজন ছিল। কারণ আমরা যে বার্তাটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাইছি, সেটি যদি গুরুগম্ভীর বক্তৃতার মত শোনায়, সে বার্তাটি কতটা হৃদয়ে অনুরণন তৈরি করতে পারে-প্রশ্ন থেকে যায়। ছবির শেষাংশে মিসেস মালিহার (জয়া আহসান) মঞ্চে দাঁড়িয়ে কয়েক পৃষ্ঠার সংলাপ শুনতে শুনতে একসময় ঘুমিয়েও পড়েছিলাম। কষ্ট হচ্ছিল, তথ্য মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, হারুন রশীদ যে গল্প লিখেছিলেন, তা একজন কুশলী নির্মাতার হাতে পড়লে কিংবা একজন সংবেদনশীল চিত্রনাট্যকারের মায়ার স্পর্শে অসাধারণ কিছু হতে পারতো।

SxpS85m.jpg


সাইফুল ইসলাম মান্নু ছোট পর্দার অভিজ্ঞ পরিচালক। তবে বড় পর্দায় তার কাজ আমাকে হতাশ করেছে। বারবারই মনে হয়েছে, এ ছবির স্ক্রিপ্ট আরো সংবেদনশীল, আরো হৃদয়গ্রাহী, আরো বাস্তবিক, আরো গোছানো হতে পারতো। ছবির অনেকগুলো দৃশ্য এবং সংলাপই আরোপিত মনে হয়েছে (পার্টিতে ওয়েটারের সংলাপ, সেখান থেকে বেরিয়ে সামিনের সংলাপ, মিসেস মালিহার কাজিনের সঙ্গে কথোপকথন ইত্যাদি)। তবে এটাও সত্যি, বেশ কিছু দৃশ্য আমাকে মুগ্ধও করেছে (মিসেস মালিহার রাতের বেলা নৌকা চালিয়ে সুপ্ত'কে খুঁজে ফেরা, নিজের সন্তানকে যখন শাশুড়ি রাস্তায় ফেলে আসে, সে খবর জানতে পেরে মালিহার বৃষ্টির রাতে সন্তানকে ফিরে পাওয়া, যার ওপর কোনো আশা ভরসা ছিলনা সে সন্তান যখন মাইক্রোফোন হাতে গান করে তখন বাবা-মা'র আবেগ ইত্যাদি)।

'পুত্র' ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছে লাজিম। বয়স বিবেচনায় লাজিম তার চরিত্রে বেশ আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। পুরো ছবি জুড়ে অটিস্টিক শিশুর চরিত্রে অভিনয় করা লাজিমের জন্য চ্যলেঞ্জিং ছিল। তবে চ্যলেঞ্জে এই ক্ষুদে অভিনেতা উতরে গিয়েছে। যদিও চিত্রনাট্য আরেকটু শক্তিশালী হলে, নির্মাতা আরেকটু সুকৌশলী হলে লাজিমের 'সুপ্ত' চরিত্রটি বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসের স্মরণীয় কোনো চরিত্র হয়ে থাকতে পারতো। তবে তা হয়নি। লাজিমের বাবার চরিত্রে এ ছবিতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সম্পূর্ণ সততার সাথে এ চরিত্রকে পর্দায় রূপ দিয়েছেন তিনি। একজন অটিস্টিক শিশুর বাবার চরিত্রে ফেরদৌসের অসহায়ত্ব আমি অনুভব করেছি। শুরু থেকে শেষ ফেরদৌস তার চরিত্রে ছিলেন-এ বিষয়টি প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ফেরদৌস যখন বলেন, What is my fault? মুগ্ধ হয়েছি তার অভিনয়ে।

ফেরদৌসের স্ত্রীর চরিত্রে সেঁওতিও চোখে পড়েছেন। বিশেষ শিশুর মায়ের আকুতি সেঁওতির অভিব্যক্তিতে পেয়েছি আমি। তবে সাবেরী আলম ডাবিং করায় সেঁওতির চরিত্রটি বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। যে কারণে 'সাদিকা' চরিত্রটি মন ছুঁয়েও যেতে পারেনি।

জয়া আহসান বর্তমানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী। স্বাভাবিকভাবেই তার কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা আকাশ ছুঁই ছুঁই। যদিও সে প্রত্যাশা এবার পূর্ণ হয়নি। 'পুত্র' ছবিতে জয়া আহসানকে আমি পাইনি। ছবির শুরুতে জয়া আহসানের নামের ভুল ইংরেজি বানান থেকে শুরু করে তার অভিনীত মিসেস মালিহা চরিত্রটির দুর্বল উপস্থাপন আমাকে ভাবিয়েছে। দেশের বাইরের নির্মাতারা এই একই অভিনেত্রীকে কত অসাধারণ ভাবে পর্দায় হাজির করেন! অথচ নিজ দেশের চলচ্চিত্রে খুব কম চলচ্চিত্রেই তার মেধার সঠিক ব্যবহার করতে পেরেছি আমরা। শুনেছি 'পুত্র' ছবির কাজ শেষ হয়েছিল ২০১৫ সালে। অথচ তিন বছর পর আমরা সে চলচ্চিত্র পর্দায় দেখলাম। আমাদের অভিনেত্রীকে দিয়ে অন্য দেশের নির্মাতারা নিয়মিত কাজ করিয়ে কম সময়ের মধ্যে টাটকা ছবি উপহার দেবে আর আমরা তিন বছর আগের ছবি নিয়মিতভাবে গুদামঘর থেকে বের করবো-এই ব্যর্থতা আসলে কার? তবে আগেই বলেছি 'পুত্র' ছবিতে বেশ কিছু দৃশ্যে জয়া অসাধারণ কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন। তাকে দেখতেও ভালো লেগেছে। তবে ভবিষ্যতে সুঅভিনেত্রী জয়াকে আমরা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ কিছু চরিত্রেই দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো।

'পুত্র' ছবিতে বেশ ক'জন গুণী অভিনয়শিল্পী অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন: লায়লা হাসান, ডলি জহুর, আল মামুন, মুনিরা বেগম মেমী, আজিজুল হাকিম, মনির খান শিমুল, শামস সুমন, শর্মীমালা, ফাহমিদা নবী, মিল্টন খন্দকার, বাপ্পা মজুমদার ও মেহরীন। তবে কারো চরিত্রের প্রতিই যতœ নেয়া হয়নি। যে কারণে কারো অভিনয়ই মনে দাগ কাটতে পারেনি। ছবিতে এক পর্যায়ে লায়লা হাসান সেঁওতিকে 'ভাবী', ফেরদৌসকে 'ভাই' বলে সম্বোধন করেন। এ বিষয়টি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে?-নির্মাতার কাছে প্রশ্ন থাকলো।

সামাজিক বক্তব্যনির্ভর এ ছবিতে ৬টি গানও রয়েছে। এর মধ্যে 'তুমি একটু ছুঁয়ে দিলে' এবং 'যদি দুঃখ ছুঁয়ে দেখো' মন ছুঁয়েছে। তবে ছবির শব্দগ্রহণ ভালো লাগেনি। গাজীপুরের রিসোর্টটি দেখতে ভালো লেগেছে। চিত্রগ্রহণে নাভিদ খান চৌধুরীর চেষ্টা চোখে পড়েছে। নির্মাতার দিক থেকে যে চেষ্টাটি দেখতে পেলে সার্বিকভাবে বছরের প্রথম চলচ্চিত্রকে নিয়ে সন্তোষজনক কিছু বলা যেত। তবে সব হতাশার মাঝেও আশার কথা, তথ্য মন্ত্রণালয় সমাজের একটি অন্যতম দিক নিয়ে, শিশুদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের জণ্য উদ্যোগী হয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে শুধু উদ্যোগে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না, সঠিক পরিচালক ও চিত্রনাট্য নির্বাচন, বাজেটের সঠিক ব্যবহার ও সঠিক সময়ে মুক্তি, যথাযথ বিপণন-এসব নিয়েও ভাবতে হবে। যে ছবির পোস্টারে অবহেলার ছাপ স্পষ্ট, যে ছবির কথা সাধারণ মানুষের কান পর্যন্ত পৌছায় না, সে ছবি ১০৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিলেই দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়বে-এমনটি ভাবার দিন শেষ। আর তাই, 'পুত্র'র মত চলচ্চিত্র ভবিষ্যতে এমনভাবে নির্মিত হোক যা আমাদের মনে 'রাজপুত্র' হয়ে থাকতে পারে। এমন সম্ভাবনাময় গল্পের করুণ পরিণতি একজন দর্শক হিসেবে কখনোই আমার কাম্য নয়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top