What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review এ এক মহাবিরক্তিকর যাত্রা (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
jTa8yDM.jpg


রাত্রির যাত্রী
ধরন : রোড-ড্রামা
পরিচালক : হাবিবুল ইসলাম হাবিব
প্রযোজনা : ব্যাংক অফ অডিও ভিজুয়াল আর্টস.
কাস্ট : মৌসুমী (ফরিদা পারভীন ময়না), আনিসুর রহমান মিলন (আশিক), মারজুক রাসেল (মেহেদী), এটিএম শামসুজ্জামান (আশিকের বাবা), রেবেকা রউফ (ময়না'র মা), সম্রাট (ডাক্তার), অরূণা বিশ্বাস (ঝাড়ুদার), শহীদুল আলম সাচ্চু (পুলিশ ইন্সপেক্টর), সালাউদ্দীন লাভলু (আগন্তুক), শিমুল খান (আগন্তুক), কালা আজিজ (চেয়ারম্যানের লোক), চিকন আলী (হিরোইনখোর), নায়লা নাঈম (বিশেষ চরিত্র) প্রমুখ।
শুভমুক্তি : ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

নামকরণ : ছবিটি মূলত ঢাকার শহরে নিয়মিত ঘটতে থাকা রাতের ঘটনাবলী নিয়ে আবর্তিত হয়েছে। তাই ছবির মূল থিম অনুসারে এর নাম হয়েছে "রাত্রির যাত্রী"। নামটি আমার কাছে সুন্দর এবং মানানসই লেগেছে।

কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ : মধ্যরাতে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে ফরিদা পারভীন ময়নার পা দেওয়ার মাধ্যমে কাহিনী শুরু হয়। ঢাকা শহরে তিনি একদমই নতুন, সুদূর রংপুর থেকে এসেছেন। তার এক চাচাতো ভাই ছাড়া এশহরে আর পরিচিত কেউ নেই। পরবর্তীতে রেলস্টেশনে এক অসহায় দম্পতির উপকার করতে গিয়ে নিজেই বিপদে পড়ে যান; তিনি তার সঙ্গে থাকা কাপড়ের ব্যাগ এবং মোবাইল হারিয়ে বসেন। ফলে তিনি তার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় একটি নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার চেষ্টায় থাকেন, যেন কোনোরকমে সারারাত পার করে দেওয়া যায়। এই এক রাতের মধ্যেই ঢাকার অন্ধকার রূপটি তিনি অক্ষরে অক্ষরে টের পান। সময় যত এগোয়, তিনি ততই ঘটন-অঘটনের সম্মুখীন হতে থাকেন। এর পাশাপাশি ময়না কেন একা একা এই অচেনা ঢাকায় এলেন তার পেছনের গল্পও দেখা যায়। সবমিলিয়ে ময়নার কী পরিণতি হয় সেটাই এ ছবিতে দেখতে পাওয়া যায়।

কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পরিচালক হাবিবুল ইসলাম হাবিব নিজেই। গল্পের আইডিয়া ভালো লেগেছে। রাতের ঢাকা আসলেই সাধারণ কোনো মানুষের জন্য নিরাপদ না। যেখানে দিনে-দুপুরেই নানারকম অনৈতিক কার্যকলাপ হয়, সেখানে রাতের রাস্তা দিয়ে ভালো মানুষেরা ঘুরে বেড়াবে, এই আশা করা নিতান্তই বোকামি।

1BHtq7g.jpg


তবে অনেকগুলো জায়গায় এ ছবি চরম মার খেয়েছে। তার অন্যতম দুইটি হলো এর একেকটি চরিত্র ও তাদের সংলাপ লেখার ধরনে। এতো বেশি অতিরঞ্জিত এবং বিরক্তিকর সংলাপ এই জনরার ছবিতে খুব একটা দেখা যায় না। মৌসুমৗর চরিত্রে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার ছিল, এই একটাই ভালো দিক। বাকি সব চরিত্রগুলো কেমন যেন নিজেরা নিজেরা কথা বলছিল, কোনো মিল-তাল নেই। মনে হচ্ছিল তারা একটি মঞ্চনাটক মঞ্চস্থ করছে, কোনো সিনেমা নয়। খারাপ লাগার আরো বেশ কয়েকটি কারণ আছে, ধীরে ধীরে সবগুলি বলার চেষ্টা করবো।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৩৫

পরিচালনা এবং অভিনয় : ছবির পরিচালনাতেই সবথেকে বড় দুর্বলতা চোখে পড়েছে। একটা ভালো গল্পকে একদমই লজিকবিহীন এবং বাজেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। চরিত্রগুলো ভালভাবে লেখার ঘাটতি তো ছিলই, এর পাশাপাশি তিনি কারো কাছ থেকে ভালো অভিনয়টাও বের করতে পারেননি। এটা তো বলার প্রয়োজন নেই, এছবির অভিনয়শিল্পীরা প্রায় সবাই একাধিক জায়গায় অভিনেতা হিসেবে সুপরিচিত। এটা পরিচালক হাবিবুল ইসলাম হাবিবের প্রথম ছবি, অভিষেক ছবিতে নানারকম ভুলত্রুটি হয়েই থাকে। কিন্তু একটি ভালো গল্পকে বাজে নির্মাণদক্ষতায় নষ্ট করার বেশিরভাগ দায়ভার একজন পরিচালকের ওপরই বর্তায়।

ছবিটি শুরু থেকে শেষ অব্দি মৌসুমৗকে ঘিরেই এগিয়েছে। তার অভিনয়ের তো কোনো জুড়ি নেই, এই বয়সে এসেও তার সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটাও কমেনি। তবে তার স্থুলদেহ অনেক বেশি চোখে লেগেছে, যদিও এটি গল্পে তেমন প্রভাব ফেলেনি। একজন তরুণীর চরিত্রে আরেকটু চিকন হলেই বেশি ভালো লাগতো। এ ছবির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রধান চরিত্রে ভবিষ্যতে তাকে আরো দেখতে চাই, তবে এ ক্ষেত্রে ছবির আদ্যোপান্ত ধারণা রেখে তবেই কাজ করা উচিত।

মৌসুমীর পর ছবিতে ভালো স্ক্রিনটাইম পেয়েছেন আনিসুর রহমান মিলন, মারজুক রাসেল এবং বর্ষীয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। তারা যথাক্রমে ময়নার প্রেমিক, ময়নার চাচাতো ভাই এবং ময়নার হবু শশুরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

আনিসুর রহমান মিলন আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম আন্ডাররেটেড নায়ক। সুঅভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও কেন যেন তিনি কোনো ছবিতেই সফল হতে পারছেন না। আবার তাকে নিয়ে কেউ বড় কোনো প্রজেক্টেও হাত দিচ্ছে না। দুইবছর আগে "রাজনীতি" ছবিতেই তো তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ভালো চরিত্র এবং বড় ছবি পেলে তিনি কি করতে পারেন। এ ছবিতে তার অভিনয় করার সুযোগ কম ছিল, আশাকরি পরবর্তীতে বড় কোনো ছবিতে তাকে দেখতে পাবো। তার সাথে মৌসুমীর জুটি মোটামুটি লেগেছে, বেমানান লাগেনি।

ছোটবেলা হতেই মারজুক রাসেলের অভিনয় ছোটপর্দায় দেখলাম, তার অভিনয় আমার কাছে ভালোই লাগে। কিন্তু ছবিতে এসে কেন তিনি উচ্চস্বরে ডায়ালগ দেওয়ার চেষ্টা করলেন সেটা বোধগম্য হলো না। পুরো ছবিতেই তিনি যত জোরে পেরেছেন তত জোরে কথা বলেছেন। এখন এটা তিনি নিজ ইচ্ছাতেই করেছেন নাকি পরিচালকের দিকনির্দেশনা এমন ছিল তা জানি না।

এটিএম শামসুজ্জামানের চরিত্রে অতিরিক্ত সিনেমাটিক ফ্লেভার দিতে গিয়ে এক্ষেত্রেও বিরক্তিকর করা হয়েছে। ছবির অন্যতম প্রধান নেগেটিভ চরিত্রে তিনি ছিলেন, এক্ষেত্রে তাকে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থাপন করা যেতো, যেমনটা আমরা কয়েকদশক ধরে দেখে আসছি।

সালাহউদ্দীন লাভলু, অরূণা বিশ্বাস, শহীদুল আলম সাচ্চু, রেবেকা রউফ, শিমুল খান, কালা আজিজসহ বাকি যারা আছেন তারা সবাই ছিলেন অনেকটা অতিথি চরিত্রের মতো। তাদের নিয়ে আলাদাকরে বলার কিছুই নেই।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ২০

FpNOhSR.jpg


কারিগরি : ছবিটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে, শেষ হয় ২০১৬ সালে। এরপর পোস্ট প্রডাকশনের কাজ এবং সেন্সর জটিলতা পেরিয়ে ছবি মুক্তি পেলো ২০১৯ এ। এই পাঁচ বছরে আমরা টেকনিক্যালি অনেক উন্নত হয়েছি, একথা স্বৗকার করতেই হবে।

যেহেতু ছবিটি প্রায় ৫ বছর আগের তাই স্বাভাবিকভাবেই এর সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, কালার কালেকশন কোনোটাই ভালো লাগেনি। অত্যন্ত বাজে লেগেছে গল্পের সিচ্যুয়েশন অনুযায়ী এর লোকেশন দেখে। একটা মেয়ে কীভাবে ৪০/৫০ মিনিটের মধ্যে কমলাপুর থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান পায়ে হেটে চলে আসলো সেটা ঠিক কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারলাম না, দুরত্ব প্রায় ৭.৫ কি.মি। এরকম নানা অসঙ্গতি আছে ছবিতে, চেষ্টা করবো ব্যক্তিগত অংশে লেখার।

ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও চরম বেমানান লেগেছে, সেই কমন তামিল মুভি "থেরি" এর মিউজিক এখানেও পেয়েছি। গতানুগতিক বাংলা ছবি দেখে আমার কখনোই বোধগম্য হয়নি, দিনশেষে যদি ইউটিউব থেকেই ডাউনলোড করে মিউজিক বসানো লাগে, তবে কেন প্রযোজক একজন বাজে মিউজিশিয়ানকে কাড়ি কাড়ি টাকা দিচ্ছে? আমাদের দেশে যে পরিমাণে ভালোমানের মিউজিক কম্পোজার আছে তা দিয়ে দশ-পনের বৎসর অনায়াসে পার করে দেওয়া যাবে।

ছবিতে মোট গান রয়েছে দুইটি। এর মধ্যে আসিফ এবং লেমিসের গাওয়া গানটি ভালো লেগেছে। নায়লা নাঈমের আইটেম সং টির কোনো প্রয়োজন ছিল বলে মনে করিনা, জোর করে সিচ্যুয়েশনের সাথে মিলিয়ে বসানো হয়েছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫

বিনোদন এবং সামাজিক বার্তা : সামাজিক বার্তার বিষয়টি আগে বলেছি, ঢাকার রাস্তায় রাতে সবসময় খারাপ মানুষেরাই ঘোরে। ভালো মানুষেরা কখনোই রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় না, তাদের পরিবার আছে, সংসার আছে। তাই সমাজে যেন কেউ ময়নার মতো পরিস্থিতির স্বৗকার না হয় সেব্যাপারে অবশ্যই সবাইকে সচেতন হতে হবে।

4vhg3DT.jpg


এই বার্তাটি পাওয়া যায় ছবির একদম শেষ প্রান্তে এসে। কিন্তু এর আগ অব্দি যে পরিমাণে যন্ত্রণাদায়ক, ম্যাড়মেড়ে, বিরক্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে, দর্শকের ঐ ভালো জিনিসের প্রতি কোনো আকর্ষণই থাকবে না। স্পয়লার হয়ে যাবে তাই গল্পের উদ্ভট অংশগুলি রিভিউতে তুলে আনছি না। পর্দায় দেখলে মনে হবে যেন সবকিছুই জোর করে করানো হচ্ছে, এর পেছনে কোনো যুক্তি নেই।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ০

ব্যক্তিগত : ছবিটি আমি দেখেছি মুক্তির দ্বিতীয় দিন মিরপুরের এশিয়া হলে, বিকেল ৩ টার শো। দর্শক ছিল প্রায় ৩৫/৪০ জনের মতো। এ ছবির ট্রেইলার কিংবা গান তো ইউটিউবেই খুজেঁ পাওয়া যায় না, তাই বলাই যায় বেশিরভাগ দর্শক এসেছে নান্দনিক পোস্টার দেখে।

ছবির প্রথম ৪০ মিনিট বাদেই ৫/৬ জন হল থেকে বেরিয়ে গেলো। এরপর দ্বিতীয় অংশ শুরুর পর দেখি আরো ১৫/২০ জন গায়েব! ছবির শেষ ক্লাইম্যাক্সটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমিসহ মোট ৪ জনের। এখন বলেন, কার ঠেকা পড়েছে সময় নষ্ট করে এই সামাজিক বার্তা গ্রহণ করবে? ছবিতে তো সেসব উপাদান থাকা লাগবে, যেগুলো আপনাকে শেষ অব্দি পর্দার সামনে বসিয়ে রাখবে। ছবি যদি শুরু থেকে শেষ অব্দি এতো ম্যাড়মেড়ে লজিকহীনভাবে এগোতে থাকে, কেউ তো এর পেছনে সময় নষ্ট করতে চাইবে না। উল্টো তারা টিকেটের টাকা দিয়ে দর্শকদের প্রতারিত করছেন।

সবমিলিয়ে বলবো একটা ভালো গল্পকে অযাচিত নষ্ট করা হয়েছে এ ছবিতে। এতোটা বাজেভাবে না দেখালেও হতো, গল্প সাজানোতে বিশালাকারের গর্ত ছিল। যার দরুণ ছবিটি আমি একদমই উপভোগ করতে পারিনি।

রেটিং : ১.৫/১০

ছবিটি কেন দেখবেন : মৌসুমী ভক্তদের এরছবি অনেক ভালোলাগবে। বহুদিন পর তাকে প্রধান চরিত্রে বড়পর্দায় দেখা গেছে। তারা চাইলে একবার এ ছবিটি দেখতে পারেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top