What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review কণ্ঠ - এ জীবনই পারে মৃত্যুভয় অবজ্ঞা করতে (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
HX9UPSu.jpg


পরিচালনা: নন্দিতা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

অভিনয়: শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, পাওলি দাম, জয়া আহসান, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্রা সেন

খ্যাতনামা উপন্যাসিক বিক্রম শেঠের মর্মস্পর্শী উপন্যাস 'অ্যান ইকুয়াল মিউজিক' মনে পড়ে যাচ্ছিল উন্ডোজ প্রযোজিত শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় পরিচালিত নতুন ছায়াছবি 'কন্ঠ' দেখতে দেখতে। সেই উপন্যাসে সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত নায়ক ধীরে ধীরে বধির হয়ে যান। আর কন্ঠর প্রধান চরিত্র রেডিও জকি অর্জুন মল্লিক(শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)হঠাৎ জানতে পারেন যে তাঁর গলার ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এবং বেঁচে থাকার জন্যে অবিলম্বে অপারেশন করে তাঁর ভয়েস বক্সটি বাদ দিতে হবে। অর্জুনের স্ত্রী পৃথা(পাওলি দাম) একটি টিভি চ্যানেলে সংবাদ পাঠিকা হওয়ার পাশাপাশি নিজে একজন বাচিক শিল্পী হলেও ওদের সাত বছরের ছেলে টুকাই(ইশিক সাহা)-এর মুখ চেয়ে অনিচ্ছুক অর্জুনকে অপারেশনে রাজি করায়। কিন্তু কন্ঠই ছিল যাঁর সম্পদ, সম্বল এবং সম্মান, কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পর সেই মানুষটি কি আদৌ বেঁচে থাকেন? নাকি হয়ে দাঁড়ান এক চলমান অতীত। যাঁর শরীরটা বর্তমানে নিঃশ্বাস নেয় কিন্তু আত্মা দপদপ করে নস্টালজিয়ায়।

SOd7n3A.jpg


কণ্ঠ-এ রেডিও জকি অর্জুন মল্লিকের যা হয় তা কোনও স্কুল শিক্ষক বা অধ্যাপকেরও হতে পারত। হয়নি। ক্যানসার যে কোনওদিন যে কোনও সংসারে ঢুকে পড়তে পারে। আর যে ভাবে নদীর ভাঙন নিশ্চিহ্ন করে দেয় গ্রাম, সে ভাবেই এই রাজরোগের তাণ্ডবে তলিয়ে যায় কত না সংসার। পুলিৎজার জয়ী শিক্ষক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় 'এম্পারার অব ম্যালাডিজ' নামে একটি অসামান্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এই অসুখটি নিয়েই। কিন্তু যখন কোনও মানুষকে এই অসুখ ছোঁয় তখন সে সম্রাট নয় ভিখিরিতে পর্যবসিত হয়। কণ্ঠর অর্জুনও নিজেকে নিঃস্ব হিসাবে আবিষ্কার করে প্রতিটা মুহুর্তে। যখন স্ত্রী পৃথার সঙ্গে ইমোশনালি কানেক্ট করতে পারে না, ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে নিজের একমাত্র সন্তান ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থায় পৌঁছলেও চিৎকার করে সতর্ক করতে পারে না। ডিপ্রেশনের চরম সীমায় পৌঁছে নিজেকে একটা ঘরের মধ্যে বন্দি করে সে কেবল কথা বলতে না পারার বিকল্প হিসাবে জীবন তাঁকে যে স্লেট আর মার্কার কলম ধরিয়ে দিয়েছে তা দিয়ে লিখতে পারে, 'একা থাকতে চাই'। কিংবা, 'লিভ মি অ্যালোন'। তবুও না তার পৃথা না তার দীর্ঘদিনের বন্ধুরা কিংবা রেডিওর সঙ্গীরা তাকে তলিয়ে যেতে দেয়। আর ডুবন্ত মানুষ যে ভাবে খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায় অর্জুনও সে ভাবে হাতটা বাড়ায় একদিন। আর সেই হাতটা ধরে নেয় স্পিচ থেরাপিস্ট রোমিলা চৌধুরী (জয়া এহসান)

কখনও একদিন আত্মহত্যার মুখ থেকে বিবাহবিচ্ছিন্না রোমিলার একমাত্র কন্যা সহেলিকে(সৃজনী মুখোপাধ্যায়) জীবনে ফিরিয়ে এনেছিল অর্জুন। সেই তথ্য জানতে পারার পর অর্জুনকে আবার কথা বলাবার চেষ্টায় নিজের সর্বস্ব পণ করে রোমিলা। মতি নন্দীর 'কোনি'-র জীবনে তার খিদ্দা ছিল, অর্জুনের জীবনে রোমিলা হয়ে দাঁড়ায় ঠিক তাই। যে দুস্তর পারাবার পার হওয়ার সব আশা ছেড়ে বসেছিল অর্জুন, রোমিলার ঐকান্তিক চেষ্টায় সেই পথও হয়ে ওঠে সুগম। পৃথা সারাক্ষণ পাশেই ছিল। তবুও এই সিনেমার প্রথম অর্ধ যদি পাওলির হয়, দ্বিতীয় অর্ধ জয়ার। অভিনয়ের ফটো ফিনিশে পাওলিই এগিয়ে থাকবেন। কারণ, তাঁর চরিত্র স্পেস অনেকটা বেশি পেয়েছে। কিন্তু ফরিদপুরের মেয়ের ভূমিকায় জয়া এমনিই সাবলীল ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল যে দর্শকের মেঘ আর পর্দার মেঘ কেটে যেতে থাকে ওর উপস্থিতিতে। মারণ ব্যাধিটির সঙ্গে লড়াইটাও হয়ে দাঁড়ায় আনন্দের অভিজ্ঞান। যখন কফিশপে বসে কণ্ঠ হারানো অর্জুনকে ঢেঁকুর তুলিয়ে কথা বলতে শেখায় রোমিলা তখন মনে হয় জীবনই পারে মৃত্যুভয়কে অবজ্ঞা করে ঢেঁকুর তোলার সাহস দেখাতে।

7lV1E73.jpg


ছবির দৃশ্যে জয়া আহসান।

ল্যারিংজেকটমি নিয়ে এর আগে আর কোনও সিনেমা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু এই সিনেমা শুধু সেইসব পেশেন্টেদেরই নয়।অনুপ্রেরণা যোগাবে হাল ছেড়ে না দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া প্রত্যেকটি মানুষকে। আর সেই কারণেই খারাপ লাগে যখন বহুদিনের স্টিরিওটাইপ ভাঙতে না পেরে অর্জুনের স্ত্রী পৃথা শেষমেশ সন্দেহই করে বসে রোমিলাকে। নতুন রেডিও শোয়ে নতুন ভাবে জীবনযুদ্ধ জেতার মুহুর্তে অর্জুনের পাশে পৃথা আর রোমিলা দুজন থাকলেই কি আরও ঘন হতো না আনন্দের ভিয়েন? মেয়েদের টিমস্পিরিট কি এতটাই দুর্বল? আজকেও? নাকি মৃত্যুকে জেতার মুহুর্তেও ভালবাসা তার অধিকারবোধ নিয়ে হাজির হয়?

এই প্রশ্নের উত্তর যাইহোক, এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে নিজেকে নির্বাচন করার জন্য পরিচালক নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না। অর্জুনের চরিত্রে কোনও হ্যাণ্ডসাম নায়ক থাকলে সাধারণ মানুষের অসহায়তা এত অব্যর্থভাবে ফুটত না হয়ত। শিবপ্রসাদ তার আটপৌরে উপস্থিতি দিয়েই কণ্ঠকে আমার আপনার জীবনের গল্প করে তুলেছে। বেসিনে যখন তাঁর গলা দিয়ে প্রথম রক্ত পড়ে কিংবা তাঁর গলার অপারেশনের দাগ দেখে যখন ভয় পেয়ে যায় তার নিজের ছেলেও সেই মুহুর্তগুলোয় শিবপ্রসাদের অভিনয় অনবদ্য। অভিনয়ের চমৎকারিত্বের ছাপ রেখেছেন কণীনিকা, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তনিমা সেন এবং অন্যান্যরাও। বিধবা পিসির (চিত্রা সেনের) বরিশালের স্মৃতি উস্কে ওঠে ফরিদপুরের মেয়ে রোমিলার সাহচর্যে। এই ছবি সেই যোগসূত্রও নির্মাণ করে। গান নিয়ে তেমন কিছু বলার না থাকলেও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বর্ণপরিচয় শুনতে বেশ লাগে। অনুপমের থেকে হয়ত আর একটু বেশি প্রত্যাশা ছিল। পাঠক আপনার চারপাশে ক্যানসারের সাথে যুদ্ধে যারা হেরে গিয়েছেন কিংবা ক্যানসারের সাথে লড়াইটা যারা লড়ছেন আগামীতেও লড়বেন তাঁদের প্রত্যেকের সমর্থনে এই ছবিটা আপনি বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে হলে গিয়ে দেখুন। অর্জুনকে যেমন কণ্ঠ-এর খোঁজে রাস্তায় বেরতে হয়েছিল নতুন ধারার বাংলা সিনেমাকে বাঁচানোর জন্য আমারাও একটু পথেই বেরোলাম নাহয়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top