What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মাদাম কুরি: জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার মূর্ত প্রতীক (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,654
Messages
117,056
Credits
1,241,720
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
lCi02Tw.jpg


মারি কুরি বা মাদাম কুরি সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ক্ষেত্র— পদার্থ ও রসায়নে নোবেল পুরস্কার পাওয়া একমাত্র নারী। বিজ্ঞানে নোবেল সম্মাননা পাওয়া প্রথম নারী। তিনি ১৯০৩ সালে হেনরি বেকেরেল ও স্বামী পিয়েরে কুরির সাথে সমন্বিতভাবে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। আবার এককভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ১৯১১ সালে রেডিয়াম ও পলোনিয়াম নামক দুটি তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কার ও রসায়নশাস্ত্রে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর এ অর্জন সাড়া বিশ্বকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ২০১১ সালকে আন্তর্জাতিক রসায়ন বিজ্ঞান বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

কিন্তু কেন? এত বিজ্ঞানী থাকতে মাদাম কুরি কেন? এ পৃথিবীতে এমন অনেক বিজ্ঞানী আছেন যাদের অবদান বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতায় অনন্য। কিন্তু তাদের মধ্যেও যাঁরা জীবনে অনেক সংগ্রাম করে সাফল্যের শীর্ষে পৌছেছেন তাঁরা আমাদের জীবনের প্রেরণাস্বরূপ। মাদাম কুরি তেমনি এক অনুপ্রেরণার নাম। পুরুষশাসিত সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে তাঁকে যেতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। একদিকে সমাজের বৈরিতা অন্যদিকে দারিদ্র্য তাঁর বিজ্ঞান চর্চায় নানা ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। কিন্তু তিনি কখনও দমে যান নি। সমস্ত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছেন।

মাদাম কুরির ছেলেবেলা

তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৮৬৭ সালের ৭ই নভেম্বর পোল্যান্ডের ওয়ারসে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন কুরি। তাই স্বভাবতই মাদাম কুরি ছিলেন সবার আদরের। তাঁর বাবা মা দুজনেই ছিলেন শিক্ষক। সেসময় পোল্যান্ড রাশিয়ার অধীনে ছিল। তাই রাশিয়ান শাসকগোষ্ঠীরা পোল্যান্ডের সাধারণ জনগণকে তাদের সংস্কৃতি চর্চায় বাধা দিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পোলিশ ভাষা শেখানো হতো না। গোটা দেশজুড়ে কোন উন্নত বিজ্ঞানাগার ছিল না। ১৮৬৩ থেকে ১৮৬৫ সালের মধ্যে পোল্যান্ডে জানুয়ারি আপস্প্রিং নামক স্বাধীনতা আন্দোলন হয়। সে আন্দোলনে মারির বাবা ভাদিস্লর যোগ দেওয়ায় তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ও নানাবাড়ির সম্পত্তি বিনষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মাদাম কুরি ও তাঁর ভাইবোনেরা খুব ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের মুখোমুখি হন।

মা-বাবার কষ্ট ও মাদাম কুরির বিজ্ঞানে হাতেখড়ি

মাদাম কুরির বাবা ভাদিস্লর স্কদোভস্কি ছিলেন একজন রসায়ন ও পদার্থবিদ। পাশাপাশি তিনি দুটি ব্যায়ামাগারও চালাতেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় রাশিয়া পোল্যান্ডের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অকেজো হয়ে পড়ে থাকবে দেখে ভাদিস্লর সেগুলো বাড়িতে নিয়ে এসে কাজ করতেন। আর সেগুলো তিনি নিজের সন্তানদের লেখাপড়ার কাজেও ব্যবহার করতেন। মারি কুরি এখানেই প্রথম বাবার হাত ধরে বিজ্ঞানের জগতে পা রেখেছিলেন।

মাদাম কুরির বাবা পোল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী বলে রাশিয়া সরকার তাঁকে আগের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে খুব কম বেতন ও সম্মানের একটি চাকরিতে স্থানান্তর করে। এতে দেখা গেল তাঁদের সংসার আর ঠিকমতো চলছে না। এরই মধ্যে ১৮৭৫ সালে কুরির বড় বোন জোফিয়া জ্বরে ভুগে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান। দেখতে দেখতে অর্থকষ্টে তাঁদের আরও তিনটি বছর কেটে যায়। এরপর কুরির জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। ১৮৭৮ সালে মাত্র এগারো বছর বয়সে কুরি তাঁর মাকে হারান। তাঁর মা যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।

মাদাম কুরির স্কুলজীবন

শিক্ষাজীবনের শুরুতে মারি একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স দশ। পাশাপাশি একটি জিমনেশিয়ামেও ভর্তি হন। ১৮৮৩ সালের এখান থেকেই তিনি স্বর্ণপদকসহ স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। মেয়ে শিক্ষার্থী হওয়ায় তিনি ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। কিন্তু মারি ও তাঁর বড়বোন ব্রোনিয়ার ছিল পড়াশোনার প্রতি প্রবল ইচ্ছে। এখন উপায়?

যদি তাঁরা পড়াশোনা চালিয়ে নিতে চান তাহলে তাঁদেরকে ফ্রান্সের প্যারিসে যেতে হবে। সেখানে মেয়েরা লেখাপড়া করার জন্য অল্প সুযোগ পেত। কিন্তু সেখানে পড়তে গেলে তো বেশ খরচ। তখন মারি ও তাঁর বোনের পক্ষে এত খরচ যোগানো সম্ভব ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা যোগ দিলেন পোল্যান্ডের ভাসমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। গোপনে কয়েকজন তরুণ তরুণী মিলে একসাথে পড়তেন। ধরা পড়লে আর রেহাই নেই। তাই আজ এ বাড়ি কাল ও বাড়ি, এভাবেই চলত তাঁদের জ্ঞানার্জন। তাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল ভাসমান বিশ্ববিদ্যালয়। তবুও মাদাম কুরি ও বোন ব্রোনিয়ার যেন মন ভরছিল না। দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটানো যায়?

প্যারিস গমন

মারির মাথায় একটা আইডিয়া এল। তিনি বড়বোন ব্রোনিয়াকে বললেন, "তুমি প্যারিসে পড়তে যাও। আমি এখানে থেকে কাজ করে তোমাকে খরচ দেব। তুমি যখন সেখানে গিয়ে চাকরি করবে তখন আমিও প্যারিসে যাব।" এটা শুনে ব্রোনিয়া ছোটবোনের কষ্ট হবে ভেবে প্রথমে রাজি হন নি। মারির অনেক পীড়াপীড়িতে অবশেষে তিনি রাজি হলেন এবং প্যারিসে গিয়ে একটি মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হলেন। এদিকে মারি নিলেন গভর্নেসের চাকরি। তিনি একটি বাড়িতে বাচ্চাদের দেখাশোনা করতেন এবং পড়াতেন। পাশাপাশি তিনি গরিব চাষীদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কাজও কিছুদিন করেছেন। এখান থেকে বেতনের টাকা তিনি তাঁর বোনকে পাঠাতেন। এভাবে কেটে গেল আটটি বছর। দীর্ঘ আট বছর পর ১৮৯১ সালে মাদাম কুরি প্যারিসে যান।

প্যারিসে দুঃসহ দারিদ্র্য ও শিক্ষাজীবন

মাদাম কুরি প্যারিসে গিয়ে প্রথমে তাঁর বোনের কাছে যান। বোন এর মধ্যেই এক পোলিশ ডাক্তারকে বিয়ে করেছেন। মারি কুরি ততকালীন ইউরোপের সেরা প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মারি আস্তে আস্তে বুঝতে পারেন তিনি পড়ালেখায় পিছিয়ে আছেন। বিগত আট বছর তিনি ভালোভাবে লেখাপড়াটা চালিয়ে নিতে পারেন নি। তার উপরে পড়তে হয় ফরাসি ভাষায়, যেটা তাঁর মাতৃভাষা নয়। আবার বোনের সঙ্গে থাকায় সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে পড়াশোনাটাও ঠিকমতো হচ্ছিল না। তাই মারি কুরি আলাদা থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই ল্যাটিন কোয়ার্টারের গ্যারেজের একটি ঘর ভাড়া নেন।

এমন অনেকদিন গেছে তিনি না খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়তেন। খবর পেয়ে বোনের স্বামী এসে তাঁকে নিয়ে যেতেন। প্যারিসের প্রচন্ড শীতে তিনি পয়সার অভাবে অনেকসময় আগুন জ্বালাতে পারতেন না। তখন ঘরে যত কাপড় থাকত সব একসাথে পরে নিতেন যাতে শীত একটু হলেও কম অনুভূত হয়। এর মধ্যেই চলছে লেখাপড়া। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি গণিতের উপরেও জ্ঞান অর্জন করেন। ১৮৯৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এর পরের বছর গণিতে দ্বিতীয় হন। এমন ভালো ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বৃত্তি প্রদান করে। এর ফলে তাঁর দারিদ্র্যতা কিছুটা লাঘব হয়েছিল। দয়াশীল মারি কুরি চাকরি পাওয়ার পর প্রথম সুযোগেই তিনি বৃত্তির সমস্ত টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এমন কোন শর্ত দেওয়া ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর মতো অন্য কোন দরিদ্র ছাত্র যেন এই সুবিধাটা পায়।

গবেষণা ও পিয়েরে কুরির সাথে পরিচয়

পড়াশোনার পার্ট শেষ করে এবার গবেষণার পালা। কিন্তু সমগ্র ফ্রান্সজুরে তখনও পর্যন্ত কোনো নারী কোনো বিষয়ে ডক্টরেট করতে পারেন নি। কারণ নারীদের গবেষণা করার কোনো সুযোগ ছিল না। মাদাম কুরির সাথে পিয়েরে কুরির পরিচয় করিয়ে দেন একজন পোলিশ পদার্থবিদ জোসেফ কোভালস্কি। তিনি মাদাম কুরির গবেষণার প্রতি এমন আগ্রহ দেখে চিন্তা করলেন একমাত্র পিয়েরেই পারবেন মাদামকে গবেষণার ব্যবস্থা করে দিতে। পিয়েরে কুরি তখন বেশ নামকরা পদার্থবিদ এবং তিনি প্যারিসের মিউনিসিপ্যাল স্কুলে পড়াতেন। ইতিমধ্যেই তিনি দেখিয়েছেন যে, চৌম্বক পদার্থ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হঠাৎ করেই অচৌম্বক পদার্থে পরিণত হয়। এই তাপমাত্রাকে তাঁর সম্মানার্থে কুরি তাপমাত্রা বলা হয়। পিয়েরের কাছে কোন বড় গবেষণাগার ছিল না ঠিকই কিন্তু কাজ শুরু করার জন্য মারিকে জায়গা দিতে পেরেছিলেন। তখন মারি প্যারিসে দ্য সোসাইটি ফর দ্য এনকারেজমেন্ট অব ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রির সহায়তায় বিভিন্ন পদার্থের চুম্বকত্ব পরীক্ষা করেন।

মাদাম-পিয়েরে জুটি

পিয়েরে ও মাদাম দুজনের মধ্যেই বেশ মিল। দুজনেই ধর্মে বিশ্বাস করেন না। দুজনেই খুব উদার মনের অধিকারী। যে জিনিসটা দুজনকে সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি এনে দিয়েছে তা হলো— বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রতি অগাধ ভালোবাসা। এরই মধ্যে একদিন পিয়েরে মাদামকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মাদাম প্রথমে রাজি হন নি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন পোল্যান্ডে ফিরে গিয়ে গবেষণা করবেন। মাদামের একথা শুনে পিয়েরেও মাদামের সাথে পোল্যান্ডে গিয়ে থাকতে রাজি হয়ে গেলেন। তখন তো আর প্রস্তাবে না করার কোন উপায় ছিল না।

তার কয়েকদিন পর মাদাম পোল্যান্ডে পরিবারের সাথে দেখা করতে যান। গিয়ে দেখেন সেখানে তখনও নারীদের গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈর হয় নি। তখন পিয়েরের অনুরোধে আবার প্যারিসে চলে আসেন। এসে পিয়েরেকে তাঁর পিএইচডির জন্য গবেষণাপত্র জমা দিতে জোরাজুরি করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯৫ সালের মার্চ মাসে পিয়েরে কুরি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ফলে তিনি স্কুলে প্রভাষক পদে উন্নীত হন। পদোন্নতি হলেও তাঁদের গবেষণার সুযোগ বাড়ে নি। ছোট্ট ঘরেই দুজনে গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন।

১৮৯৫ সালের ২৬ জুলাই তাঁদের শুভ পরিণয় সম্পন্ন হয়। প্যারিসের সেকাউক্সে তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়েতে দুজনের কেউই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান তেমন পালন করেন নি। মেরিকে তাঁর এক আত্মীয় বিয়ের সাদা পোশাকটি বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। মারি তখন তাঁকে অনুরোধ করেন কোন গাঢ় রঙের পোশাক বানিয়ে দিতে, যেন পরবর্তীতে তিনি সেটা পরতে পারেন। কারণ তখন মারির বাইরে পরার আর মাত্র একটাই পোশাক ছিল। ঘন নীল রঙের বিয়ের পোশাকটি তিনি বহুদিন ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করেছিলেন। পিয়েরের মধ্যে মারি খুঁজে পেয়েছিলেন নতুন ভালোবাসা, জীবনসঙ্গী ও একজন বৈজ্ঞানিক সহকর্মী— যার উপর নির্ভর করা যায়।

প্রথম নোবেল অর্জন

১৯০৩ সাল। মারি কুরি ডক্টরেট উপাধি পেলেন। ফ্রান্সের প্রথম মহিলা ডক্টরেট। মারির পরীক্ষকরা বললেন যে এই উপাধির জন্য এর আগে কেউ এত ভালো কাজ করেন নি। তাঁরা ভুল কিছু বলেন নি। সে বছরের ডিসেম্বর মাসে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সাইন্স হেনরি বেকেরেল, পিয়েরে কুরি ও মাদাম কুরিকে সমন্বিতভাবে নোবেল পুরস্কার দেয়। তাঁরা মৌলের বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করে সফল হয়েছিলেন।

পিয়েরে কুরির মৃত্যু এবং মাদাম কুরির জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা

১৯০৬ সালের ১৯ এপ্রিল এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় পিয়েরে কুরির মৃত্যু হয়। ভারী বৃষ্টিতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তিনি একটি ঘোড়ার গাড়ির নিচে চাপা পড়েন এবং তাঁর মাথার হাড় ভেঙে যায়। ফলে প্রচন্ড আঘাতে পিয়েরে কুরির মৃত্যু হয়। তখন কুরি দম্পতির সংসারে আইরিন ও ইভ নামের দুই কন্যা সন্তান। স্বামীকে হারিয়ে মারি কুরি অত্যন্ত দুঃখ পেলেও নিজেকে শক্ত করলেন। ফরাসী সরকার তাঁকে পেনশন দিতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কাজ না করে তিনি টাকা নেবেন না। বন্ধুদের অনেক চেষ্টায় তিনি পিয়েরের চাকরিটা ফিরে পান। ফ্রান্সের ইতিহাসে প্রথম অধ্যাপিকা।

দ্বিতীয়বারের মতো নোবেল জয়

স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি গবেষণার কাজ বন্ধ করেন নি। একাই সংগ্রাম করে এগুচ্ছিলেন। এরই মধ্যে অনেক বাঁধা পেরিয়ে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সাইন্স তাঁকে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করে দ্বিতীয়বারের মতো সম্মানিত করে। রেডিয়াম ও পলোনিয়াম আবিষ্কার, রেডিয়াম পৃথকীকরণ এবং এদের প্রকৃতি ও যৌগের উপর সফল গবেষণার মাধ্যমে রসায়নশাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটানোর স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মাদামের অবদান

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আহত সৈনিকদের জন্য মাদামের প্রাণ কেঁদে ওঠে। তিনি তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি তাঁর এক বন্ধুকে চিঠি লিখে জানালেন যে, এই সংকটের মুহূর্তে যেহেতু নিজের দেশ পোল্যান্ডের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না তাই তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্বদেশের সেবায় নিজেকে নিয়োগ করবেন। তাঁর পাশে দাঁড়ান তাঁর দুই মেয়ে। তিনি বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে যুদ্ধাহত সেনাদের এক্সরে করিয়েছেন। এর ফলে যে কত সৈন্যের প্রাণ বেঁচেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

শুধু সেবাই নয়, মাদাম কুরি তাঁর দ্বিতীয় নোবেল পুরস্কাররের সমস্ত টাকা দেশের স্বার্থে গঠিত এক ফান্ডে গচ্ছিত রাখেন, যেন যুদ্ধের সময় তাঁর এ অসামান্য দান কিছুটা হলেও কাজে আসে! তিনি তাঁর নোবেল পদকগুলোও ফ্রান্স সরকারের কাছে জমা রাখতে গিয়েছিলেন। তিনি এগুলোকে গলিয়ে ব্যবহার করার অনুমতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের পরম সৌভাগ্য যে ফ্রান্স সরকার সেগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

মাদাম কুরির চিরবিদায়

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মাদাম কুরি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি তাঁর সারাটা জীবন কাটিয়েছেন তেজস্ক্রিয়তার উপর কাজ করে। তখনও তেজস্ক্রিয়তার ভয়াবহতা সম্পর্কে কেউ জানত না। আজও মাদাম কুরির নোটবই রেডিয়েশন নিরোধী পোশাক পরে নাড়াচাড়া করতে হয়। শেষ পর্যন্ত এই তেজস্ক্রিয়তা থেকে হওয়া রোগ থেকেই তাঁর মৃত্যু হয়। দিনটা ছিল ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই। তাঁকে সেকাউক্সে স্বামী পিয়েরের পাশে শায়িত করা হয়। দীর্ঘ ষাট বছর পর ফ্রান্সের প্যাস্থিয়নে যেখানে বিশিষ্ট মানুষদের সমাহিত করা হয় সেখানে কুরি দম্পতিকে পুনরায় সমাহিত করা হয়। মাদাম কুরিই প্রথম মহিলা যিনি নিজের যোগ্যতায় সেখানে স্থান করে নিয়েছেন।

বিজ্ঞানে মাদাম কুরির অসামান্য অবদান

মাদাম কুরির কাজে অনুপ্রাণিত হয়েই নিউক্লিয় বিজ্ঞানের সম্ভাবনার কথা প্রথম বিজ্ঞানীদের মাথায় আসে। পরমাণু যে বিশাল শক্তির উৎস, তা দেখানোর পাশাপাশি তিনি এর গঠন সম্পর্কেও আমাদের উৎসাহী করে তোলেন। মাদাম কুরিই রেডিওকেমিস্ট্রির পথিকৃৎ। তাঁর আবিষ্কারের হাত ধরেই আজ বহু তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মাদাম কুরির আবিষ্কৃত মৌল রেডিয়াম দিয়েই প্রথম ক্যান্সার চিকিৎসা সম্ভব হয়েছিল।

জার্মান পদার্থবিদ আইনস্টাইন ছিলেন মাদাম কুরির খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি লিখেছেন, তাঁর জানা মতে মাদামই একমাত্র মানুষ যিনি খ্যাতি অর্জনের পরও একবিন্দু পাল্টান নি। আইনস্টাইন পঞ্চাশের দশকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, শুধু বিজ্ঞান বা মানব সভ্যতায় অবদান নয়, মাদামের নৈতিকতা, বিচার শক্তি ও চরিত্রের দৃঢ়তার জন্যও তিনি মাদামকে শ্রদ্ধা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তিনি বলেছেন যে, ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবীরা যদি মাদামের মতো বিনয়ী হতেন, তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top