What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

লালমনিরহাটের হারানো মসজিদ | তাহলে কি আমরা যা জানি সব ভুল? (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
nUvno6d.jpg


সেদিন কুড়িগ্রাম যাচ্ছিলাম রংপুর-কুড়িগ্রাম হাইওয়ের উপর দিয়ে। আমার আবার একটা অভ্যাস আছে, নতুন কোন জায়গায় গেলে গুগল সার্চ করে দেখি। লালমনিরহাট অতিক্রম করছি, আশেপাশে কি আছে সার্চ দিয়ে দেখলাম। হঠাৎ একটা আর্টিকেল চোখে পড়ল, টাইটেল 'হারানো মসজিদ'। আমি তো মাননীয় স্পীকার হয়ে গেলাম! ভাই মসজিদ হারাবে কেন?

কৌতূহলটা মেটাতে গাড়ি থেকে নামলাম। কোথায় হারাল এই মসজিদ? জানা গেল আমাকে যেতে হবে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামে। একে ওকে জিজ্ঞেস করি। সহজেই রাস্তা জানা গেল। চলে গেলাম। গিয়ে যা খুঁজে পেলাম তাতে শুধুই আশ্চর্য হয়েছি, ভেবেছি ইতিহাস কত ফাঁকি দিলো সারা জীবন আমাকে, আপনাকে।

এলাকার স্কুল মাস্টার সেলিম সাহেবের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, লালমনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামের 'মজেদের আড়া' নামের এই জঙ্গলে একটা প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় ১৯৮৬ সালের দিকে। যার অনেকাংশ এখনো মাটির নিচে বলে ধারণা করা হয়। জঙ্গলটি খনন করে একটা মসজিদের অনেকগুলো ইট পাওয়া যায়, যেগুলোতে কালেমা তাইয়্যেবা আর ৬৯ হিজরি লেখা আছে।

v9Ddb0I.jpg


হারানো মসজিদের ইটের গায়ে নির্মাণকাল আর ডিজাইনের ছবি দেখাচ্ছেন এক স্থানীয় ব্যক্তি

৬৯ হিজরি? মানে কি! ৬৯ হিজরি মানে ৬৯০ সাল। কিন্তু বখতিয়ার খলজী তো বাংলায় আসলেন ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে। তাহলে এই মসজিদ কে বানাল? আমি একদম হা হয়ে গেলাম।

সেলিম সাহেব একটা বই দেখালেন। বইয়ের নাম 'রংপুরে দ্বীনি দাওয়াত'। লেখক মতিউর রহমান বসনীয়া। বইতে এই মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, লালমনিরহাট জেলার এ প্রাচীন মসজিদ ও এর শিলালিপি দেখে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে, বখতিয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের (১২০৪ খ্রিস্টাব্দ) ৬০০ বছর আগেই বাংলা অঞ্চলে কোন এক সাহাবি এসে ইসলাম প্রচার করেছিলেন।

কে সেই সাহাবী? কেন তিনি বাংলাদেশে আসলেন? কোথা থেকে আসলেন? আর আসলেও শুধু কি লালমনিরহাটেই ছিলেন? বইটা থেকে জানা যায়, রাসূেলর (সা.) এর মামা বিবি আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস (রা.) ৬২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬২৬ খ্রিস্টাব্দ বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন। (পৃ. ১২৬)।

qEsAU2p.jpg


হারানো মসজিদের ইট যার গায়ে হিজরি ৬৯ সন লিখাসহ ফুলের ডিজাইন করা

লালমনিরহাট শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং রংপুর-কুড়িগ্রাম রোডের বড়বাড়ি পয়েন্ট থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার ভিতরে হারানো মসজিদের অবস্থান। বর্তমানে হারানো মসজিদের স্থানে একটি মসজিদ পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটি আকারে আড়াআড়িভাবে ২১ ফুট এবং লম্বায় ১০ ফুট এবং এর দেয়াল প্রায় ৪ ফুট মোটা। প্রায়ই বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এই মসজিদটিকে দেখতে আসেন এবং তাদের মোটামুটি সবারই এটা বিশ্বাস যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবদ্দশায় কিংবা তার ইন্তেকালের অল্পসময় ব্যবধানেই উপমহাদেশ এবং বিশেষত চীনে ইসলাম প্রচারে আসা সাহাবী (রা.)গণ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।

এজন্য স্থানীয় মানুষজনের কাছে এটি 'সাহাবায়েকরাম মসজিদ' নামেও পরিচিত। বহু ঐতিহাসিক এবং গবেষকের মতে, 'হারানো মসজিদ' এর নির্মাণকাল ছিল চীনের বন্দর নগরী ক্যান্টনে অবস্থিত কোয়ানটা মসজিদের নির্মাণের প্রায় ৬১ বছর পর। উল্লেখ্য যে কোয়ানটা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরে কোয়ানটা মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় হিজরি ৮ সালের দিকে।

স্থানীয় মানুষজনের ভাষ্যমতে, ১৯৮৬ সালে 'মজেদের আড়া' নামক জঙ্গলটি পরিষ্কার করতে গিয়ে এই প্রাচীন নিদর্শনটি আবিষ্কৃত হয়। আর 'মজেদের আড়া' নামটির উৎপত্তিও হয়েছে এই ধারনা হতে যে, ঘন জঙ্গলের ভিতর একটি প্রাচীন মসজিদ আছে। এখানে ধারণা বলার কারণ, স্থানীয় সবাই মসজিদটি আবিষ্কার হবার আগে কখনো দেখেনি এমন কি তাদের কাছাকাছি পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

ব্যাপারটা এরকম হবার কারণ হচ্ছে, ওই স্থানটি শত শত বছর ধরেই গভীর, ঘন এবং গা ছমছমে জঙ্গল রূপেই ছিল, যেখানে শিয়াল ও অন্যান্য বন্য প্রাণী তো বটেই, বাঘ এবং বিষাক্ত সাপের বসবাসেরও প্রমাণ মিলেছে। মূলত এসব কারণেই কেউ মজেদের আড়ায় প্রবেশ করার সাহস পেত না। কালের পরিক্রমায় মসজিদটি মাটির নিচে হারিয়ে যেতে থাকে এবং একটা ভূমিকম্পের পর সেখানে একটি দানবাকৃতির শ্যাওড়া গাছের নিচে একটা উঁচু ঢিবির মত তৈরি হয়।

মসজিদের ইমাম হাফেয মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ এবং আরও কিছু স্থানীয় প্রবীণদের কাছ থেকে আরেকটি চমৎকার তথ্য পাওয়া গেল। প্রায় এক একর জায়গা জুড়ে একটা বিশাল পাইকর গাছ মসজিদের চারপাশ ঘিরে ছিল বহুকাল ধরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন ব্রিটিশরা লালমনিরহাট বিমানবন্দর তৈরির কাজ শুরু করে তখন বিপুল সংখ্যক স্থানীয় মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়। যারা পরবর্তীতে মজেদের আড়ার আশেপাশের গ্রামগুলোতে বসবাস শুরু করে। এভাবে আস্তে আস্তে সেই ঘন জঙ্গল হারিয়ে যেতে থাকে জনবসতির ভিড়ে।

তো যখন মজেদের আড়া পরিষ্কার করা শুরু হল, আইয়ুব আলি নামে এক লোক ৬ টুকরা বিশেষ পোড়ামাটির ইট খুঁজে পান। এরপর মানুষের হাত হাতে এরকম বহু ইটের টুকরা হারিয়ে যায়। আইয়ুব আলির সংগ্রহে থাকা টুকরো গুলোতে কালিমা তাইয়্যেবা ও ৬৯ হিজরি খোদাই করা ছিল এবং বেশকিছু টুকরাতে ফুলের ছবি খোদাই করা।

১৯৮৭ সালের দিকে স্থানীয় মানুষ জনের মাধ্যমে সাংবাদিক ও গবেষকরা যখন জানতে পারলেন, শত শত ইসলামী গবেষক, ইতিহাসবেত্তা ও প্রত্নতাত্ত্বিকের মিলন মেলা হয়ে গেলো মজেদের আড়া। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু একটাই, ৬৯ হিজরি (৬৯০খ্রিঃ) তে স্থাপিত এই মসজিদটিকে একবার দেখা,এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা, উপমহাদেশে ইসলামের আলোর আবির্ভাব সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা সেই সাথে ইতিহাসের কিঞ্চিৎ পরিবর্তনের সাক্ষী হওয়া।

oRivRaC.jpg


হারানো মসজিদের সংগৃহীত ইট

২০১২ সালের ১৭ আগস্ট প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল-জাজিরা এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে একজন অপেশাদার প্রত্নতত্ত্ববিদ টিম স্টিল সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন। এই প্রত্নতত্ত্ববিদ আল-জাজিরার প্রতিবেদক নিকোলাস হককে উদ্ধারকৃত ইটটি দেখিয়ে এটি কোন সময়কার তা ব্যাখ্যা করেন। অনুসন্ধানে এটি দক্ষিণ এশিয়ায় নির্মিত প্রাচীনতম মসজিদ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।

আমি মসজিদটার দিকে তাকাই আর ভাবি। কিছুই তো জানি না। কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলাম। নিজেকে অনেক ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে। ৬৯০ সাল থেকে ১২০৪ সালের দূরত্ব ৫১৪ বছর। এই ৫১৪ বছরে ইসলামের ইতিহাস আমরা কেউ জানি না। হয়ত কেউ জানে না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top