মাদকবিরোধী টানা ২৩ দিনের সাঁড়াশি অভিযানে রাজধানীসহ সারা দেশে ৭ হাজারের বেশি আটক করা হয়েছে। আজ সোমবার পর্যন্ত ১০১ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। র্যাব, পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এতদিন অভিযানের জালে চুনোপুটি ধরা পড়ছিল। এখন আটকা পড়ছে রাঘব বোয়ালরা। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক পরিচিতি থাকায় মাদক সংশ্লিষ্ট অনেকে নিজেদের নিরাপদ ভাবলেও এবার জালে আটকা পড়ছেন তারাও। এরই মধ্যে ইয়াবার উৎসপথ টেকনাফ থেকে শুরু হয়েছে রাঘব বোয়াল ধরা অভিযান। বৃহস্পতিবার গুলিতে মারা গেছেন কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বেয়াই আখতার কামাল (৪১)। শনিবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরামুল হক (৪৬)। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গতকাল বিকেলে বলেছেন, মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। সহসাই থামবে না। যতদিন পর্যন্ত মাদক পুরোপুরি নির্মূল না হবে ততদিন এ অভিযান চলবে। তিনি বলেন, মাদক নির্মূলে অলআউট যুদ্ধে নেমেছি, এ যুদ্ধে বিজয়ী হতেই হবে। জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এ অভিযান চলছে, এতে কেউ ছাড় পাবে না। ইতোমধ্যেই তার দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, কেউ ছাড় পাবে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, ইয়াবা ব্যবসার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে নতুন আইন আসছে। বর্তমান মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী হেরোইন, প্যাথেড্রিন, মরফিন, এবং কোকেনসহ আরো কিছু মাদকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তবে এটা নির্ভর করে মাদকের পরিমাণ ও ব্যবহারের ওপর। ইয়াবা ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর। ফেনসাইক্লিফাইন, মেথাকোয়ালন এল. এস. ডি. বারবিরেটস অ্যামফিটামিন (ইয়াবা তৈরির উপাদান) অথবা এগুলোর কোনটি দিয়ে তৈরি মাদকদ্রব্যর পরিমাণ অনূর্ধ্ব ৫ গ্রাম হলে কমপক্ষে ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। আর মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ৫ গ্রামের ঊর্ধ্বে হলে কমপক্ষে ৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদন্ডের বিধান আছে। মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেছেন, প্রচলিত মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের সমস্যা হলো কোনো ব্যক্তির কাছে মাদকদ্রব্য সরাসরি পাওয়া না গেলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা যায় না। ফলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীকে ধরা বা আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। তাই আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। আর নতুন আইনে ইয়াবার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হচ্ছে। বাকিটা সংসদের হাতে। তিনি বলেন, প্রচলিত আইনে মাদক ব্যবসায়ী, পাচারকারী, সরবরাহকারী এবং ব্যবহারকারী আলাদা করা নেই। যার কাছে মাদক পাওয়া যায় শুধু তাকেই আইনের আওতায় আনা যায়। ফলে সরবরাহকারী ও ব্যবহারকারীরাই প্রধানত আইনের আওতায় আসে। ব্যবসায়ী ও পাচারকারীরা আইনের বাইরে থেকে যায়। প্রস্তাবিত নতুন আইনে এই বিষয়গুলোকে আলাদা করে, শাস্তির বিধানও আলাদা রাখা হয়েছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ৪ মে অভিযান শুরু হলেও শুক্রবার থেকে রাজধানীতে ঘটা করে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। সবকটি বস্তিতে অভিযান চলছে। গত দুদিনে র্যাব-পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছে দুই শতাধিক। তবে বড় মাপের কোনো মাদক ব্যবসায়ী এখনো ঢাকায় আটক হয়নি। তালিকা ধরে ডিলারদের আটকের অভিযান চলছে বলে দাবি করেছে র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে ধারাবাহিক অভিযানে ভয়ে চিহ্নিতদের অনেকেই সটকে পড়েছে। তবে র্যাব, পুলিশের এবারের অভিযানে মাদক ব্যবসায় সরাসরি জড়িত বা নেপথ্যে থাকা রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। যার সঙ্গেই মাদকের যোগসূত্র মিলবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের একাধিক কোম্পানি কমান্ডার।
এদিকে মাদকবিরোধী অভিযানে থাকা র্যাব ও পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, মাদক মামলায় আটককৃতদের নিয়ে তদবির কমে আসতে শুরু করেছে। 'ফেঁসে' যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই এড়িয়ে যাচ্ছেন মাদক প্রসঙ্গ।