"পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নেই।" হুমায়ূন আহমেদের এই উক্তিটি খুবই জনপ্রিয়। একটা সময় পর্যন্ত আমাদের অনেকেরও এই উক্তিটি ভীষণ পছন্দের ছিল। কেননা দুই-একটি ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই রয়েছে, তবু আমাদের আশেপাশে আমরা কিন্তু সারাজীবন ভালো বাবাদেরই দেখে এসেছি। আমরা দেখেছি, একজন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে যেমনই হোক না কেন, বাবা হিসেবে সবসময় দশে দশ। তাই হুমায়ূন আহমেদের এই উক্তিটিকে ভালো না লেগে কি উপায় আছে!
![14.jpg](https://img.nirjonmela.net/2020/06/18/14.jpg)
কিন্তু এখন যেহেতু আমাদের টিনেজ বয়সের সেই উথালপাথাল আবেগ আর নেই, যেকোনো বিষয় নিয়ে আমরা একটু-আধটু গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি, তাই স্রেফ হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন বলেই কোনো কথা ধ্রুব সত্য, তা কি চোখ বন্ধ করে মেনে নেয়া সম্ভব? বরং এখন কি নিজেদেরও একটু তলিয়ে দেখা উচিত না? সূক্ষ্মভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে তারপরই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত না?
![15.jpg](https://img.nirjonmela.net/2020/06/18/15.jpg)
সন্তানের সাথে বাবার সম্পর্কের অনন্য রূপায়ন ঘটেছে হুমায়ূন আহমেদের লেখনীতে
ভালো বাবা বলতে কী বুঝায়? আমরা সাধারণভাবে যেটি বুঝে থাকি তা হলো, যিনি শুধু জন্মই দেন না, বরং ছোটবেলা থেকে এমনকি পঁচিশ-ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্তও যিনি বিনা আপত্তিতে সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে যান। সন্তানের কোনো আবদার মাটিতে পড়ার আগেই যিনি সেটি পূরণ করেন। দরকার হলে রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টা যিনি সন্তানের ইচ্ছাপূরণের লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান। সন্তানের জন্য যিনি নিজের জীবনের ছোট-বড় সকল সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দিতেও কার্পণ্য করেন না। সন্তানকে সুখী রাখতে যিনি জগতের কঠিনতম কাজটি করতেও পিছপা হন না। সন্তানকে যিনি সারাজীবন বুকে আগলে রাখেন। কখনো তার গায়ে ফুলের আঁচড়টুকুও লাগতে দেন না।
হ্যাঁ, আমাদের সমাজের বেশিরভাগ বাবাই এমন, যারা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত সন্তানের মাথার উপর শীতল ছায়াদায়ী বটবৃক্ষের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তাই বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতাবোধ যে মানুষটির মনে রয়েছে, সে স্বীকার করতে বাধ্য হয়, "হ্যাঁ, আমার বাবা মানুষ হিসেবে যেমনই হোন না কেন, বাবা হিসেবে তিনি সবার সেরা।"