চৌষট্টি দিন ধরে ড্র করে ঠেকিয়ে রেখেছিলাম।আজ পেনাল্টি কিকে হেরে গেলাম!"
আসছি সে কথায় পরে।
মানুষটি ছিলেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক, ব্যঙ্গ লেখক। হাস্যরসের আড়ালে সমাজের অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সেই মানুষটির কলম সবসময় গর্জে উঠত।
তিনি মুখে মুখে ছড়া কবিতা রচনা করতেন।
তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ছিল বিস্ময়কর!
পোশাকআশাক ছিল খুবই সাধারণ।
ধুতি, খালি গায়ে একটা উড়ুনি, খালি পা।
জীবিত অবস্থায় তাঁর জীবন নিয়ে সিনেমা " দাদাঠাকুর" হল।
ছবি বিশ্বাস সেই চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেলেন।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গাইলেন সেই গান,
" ভোট দিয়ে যা আয় ভোটার।"
তাঁর রসিকতা নিয়ে কত কথা ছড়ানো আছে তা বলে শেষ করা যাবে না।
তিনি রেডিও অফিসে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন।
একবার রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা শেষ করে বললেন, আজ তাহলে আসি।
এমন সময় তাঁকে প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইশারায় জানালেন, এখনও এক মিনিট বাকি আছে।
একটু ম্যানেজ করে দিন।
এবার তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশে আবার বললেন,
যাবার আগে আর একবার মনে করিয়ে দিই, একটু পরেই আটটার নিউজ শুরু হবে।
আর " NEWS" কথাটার অর্থ জানেন তো?
নর্থ - ইস্ট - ওয়েস্ট - সাউথ সব দিকের খবর আকাশবাণী প্রতিদিন আপনাদের পরিবেশন করে।
এই কথা বলে তিনি প্রোগ্রাম শেষ করলেন এক মিনিটের মধ্যে।
নিউজ নিয়ে তাঁর এই অসাধারণ ব্যাখ্যা সংবাদ জগতে ইতিহাস হয়ে গেল।
বিখ্যাত সংগীত শিল্পী রামকুমার চট্টোপাধ্যায় তখন যুবক।
সবে আকাশবাণীতে গান গাইতে এসেছেন।
দাদাঠাকুর একদিন হঠাৎ রামকুমারকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন,
" তুমি কি কর?
রামকুমার বললেন,"আমি গাই।"
তিনি তখন বললেন,
তা তুমি 'ক সের' করে দুধ দাও?"
একবার সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে দেখে সম্বোধন করলেন,
" আপনিই তাহলে বিদূষক শরৎচন্দ্র পণ্ডিত?" ("বিদূষক" ছিল দাদাঠাকুরের কাগজের নাম)
সঙ্গে সঙ্গে দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে জবাব দিলেন,
" আপনিই তাহলে " চরিত্রহীন " শরৎচন্দ্র?"
(" চরিত্রহীন " হল শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাসেের নাম)
একেই বলে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি।
শেষ করি তাঁর নিজের জীবনের একটি করুণ ঘটনা দিয়ে।
তাঁর একমাত্র ছেলে মারা গেল।
সেদিন বিকেলে কল্লোল সাহিত্য পত্রিকার সভায় তাঁর আমন্ত্রণ ছিল।
ছেলেকে শ্মশানে দাহ করে বিকেলে সভায় গেলেন।
সভায় বক্তব্য রাখার আগে তিনি বললেন, চৌষট্টি দিন ধরে ড্র করে ঠেকিয়ে রেখেছিলাম।
আজ পেনাল্টি কিকে হেরে গেলাম!
সভা নিঃস্তব্ধ।
জীবনের চরম দুঃখের দিনেও রসিকতা করে গেলেন!
*হাসি কান্নায় ভরা সেই মানুষটি হলেন জঙ্গিপুরের বিখ্যাত দাদাঠাকুর।*
*প্রকৃত নাম হল শরৎচন্দ্র পণ্ডিত ( ১৮৮১- ১৯৬৮)*
সংগৃহীত :