![2HGCitv.jpg](https://i.imgur.com/2HGCitv.jpg)
অনেকের ধারণা বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে স্টাইলিশ নায়ক জাফর ইকবাল, সালমান শাহ, সোহেল চৌধুরী। কিন্তু দেশের চলচ্চিত্রের প্রথম স্টাইলিশ নায়ক ছিলেন রহমান। তাঁর স্মার্টনেস দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ পর্যন্ত তিনি নায়ক ছিলেন।
তাঁর স্টাইলিশ বিষয়টা বুঝতে লুক, গেটআপ, কস্টিউম সিলেকশন, হাঁটাচলা, কথা বলার ধরণ এগুলো পর্যবেক্ষণ করলে উত্তরটা মিলবে।
পরিচালক এহতেশাম যখন তাঁকে 'এদেশ তোমার আমার' ছবির জন্য কাস্ট করেন একটা ঘটনা ঘটেছিল প্রথম দিন শ্যুটিং করতে এসে। তিনি সিঁড়ি বেয়ে পরিচালকের রুমে যাচ্ছিলেন তখন সিঁড়িতে থাকা দুটি মেয়ের একজন তাঁকে দেখে বলে ওঠে-'ইয়া আল্লাহ, ইয়ে তো বিলকুল উত্তম কি তারা লাগতা হ্যায়।' উত্তম বলতে উত্তম কুমার-কে বুঝিয়েছিল। সত্যিই তিনি উত্তম কুমারের মতো দেখতে ছিলেন প্রথমদিকে।
![XMbhZch.jpg](https://i.imgur.com/XMbhZch.jpg)
মূল নাম আবদুর রহমান। তিনি অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। জন্ম ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭, পঞ্চগড় জেলার অটোয়ারী থানার রসেয়া গ্রামে।
ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৫৩ সালে। হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন। রাজশাহীর 'কল্পনা' ও 'অলকা' সিনেমাহলে ছবি দেখতেন। প্রমথেশ বড়ুয়া ও অসিত বরণের সিনেমা তাঁর খুব পছন্দ ছিল। উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেনের ছবিরও ভক্ত ছিলেন। নিজেও দেখতে উত্তম কুমারের মতো হওয়ায় কাছের মানুষরা মজা করত। ইডেন কলেজের ছাত্রী কুমকুমের সাথে তাঁর বিয়ে হয়।
![bE9az3b.jpg](https://i.imgur.com/bE9az3b.jpg)
জগন্নাথ কলেজ পড়ার সময় ১৯ বছর বয়সে তাঁর জীবনে প্রথমবার সুযোগ আসে নায়ক হওয়ার। ফজলুল হক পরিচালিত 'আজান' সিনেমার জন্য তাঁকে নির্বাচন করা হয়। যদিও প্রথমে উচ্চারণজনিত সমস্যার জন্য অভিনেতা ইনাম আহমেদ বিরোধিতা করেছিলেন। 'আজান' এর শ্যুটিং দেরিতে শুরু হওয়ায় খলনায়কের সুযোগ আসে তাঁর জন্য। সেময়ের বিখ্যাত পরিচালক এহতেশামের 'এদেশ তোমার আমার' ছবিতে তিনি খলনায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৫৯ সালে। ছবিতে তাঁর অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়। 'রাজধানীর বুকে' ছবির প্রস্তাব ঐ ছবির শ্যুটিং সেটেই পান।
১৯৬৩ সালে উর্দু ছবি 'প্রীত না জানে রীত' এর শ্যুটিং-এর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি পা হারান। শেষরক্ষা হয়নি তাঁর একটা পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। কৃত্রিম পা দিয়েই পরে অভিনয় ও পরিচালনা করে গেছেন। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এটা একটা রেকর্ড ছিল যে তিনি কৃত্রিম পা দিয়ে একজন সফল নায়ক, পরিচালক হয়েছেন। অধ্যবসায়, মনের জোর ছাড়া সম্ভব ছিল না।
![I13uZms.jpg](https://i.imgur.com/I13uZms.jpg)
তিনি একাধারে বাংলা, উর্দু ও পশতু ভাষায় চলচ্চিত্রে অভিনয় ও পরিচালনা করেছেন। পাকিস্তানি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি সেই সময়ের বিগেস্ট সুপারস্টার। শবনমের সাথে তাঁর বিখ্যাত জুটি তৈরি হয়ে যায়। তাঁর সাথেই সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এমনকি তাঁদের ছবিই পাকিস্তানি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথমবার ইতিহাস গড়ে ব্যবসায়িকভাবে।
তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত ছবি : দরশন, মিলন, চলো মান গ্যায়া, চাহাত, চান্দা, লগন, বাহানা, তালাশ, গোরি, প্যায়সা, প্রীত না জানে রীত, কঙ্গন, দোস্তি, নাদান। তাঁর পরিচালিত বাংলা ছবি নিকাহ। তাঁর অভিনীত বাংলা ছবি : এদেশ তোমার আমার, তালাশ, রাজধানীর বুকে, হারানো দিন, যে নদী মরুপথে, এইতো জীবন, নতুন সুর, নতুন দিগন্ত, জোয়ার ভাটা, দেনা পাওনা, স্বর্গ নরক, মেঘের পরে মেঘ, অংশীদার, দেবদাস, পাহাড়ি ফুল, অবদান। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি আমার সংসার।
![z60Mnrb.jpg](https://i.imgur.com/z60Mnrb.jpg)
রহমান পাকিস্তানের উর্দু ছবিতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন অভিনয় ও পরিচালনাসহ। বাংলায় 'নিকাহ' ছবিটি তাঁর পরিচালিত প্রশংসিত একটি ছবি। ছবির গল্প ও নির্মাণ দর্শকের মন স্পর্শ করেছিল। তিনি একজন মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাতাও ছিলেন। শাবানার বিপরীতে 'অবদান' ছবিতে ছিলেন। এছাড়া 'পাহাড়ি ফুল' ছবিটিও তাঁর চমৎকার একটি ছবি। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে 'দেবদাস' ও 'অংশীদার' ছবি দুটিতে তাঁর অভিনয় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। 'দেবদাস'-এ চুনিলালের চরিত্রে ছিলেন। 'অংশীদার' ছবিতে আনোয়ারার বিপরীতে 'তোমারই পরশে জীবন আমার ওগো ধন্য হলো' গানটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নিগার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলাদেশে 'দেবদাস' চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য বাচসাস পুরস্কার পান।
শেষের দিকে তিনি চলার শক্তি হারিয়েছিলেন। হুইল চেয়ারে বসেই চলাফেরা করতেন। ২০০৫ সালের ১৮ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। পাকিস্তানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এত নাম করার পরেও তাঁর খোঁজখবর রাখেনি তারা। তাঁর মৃত্যুর পরে নায়করাজ রাজ্জাক বলেছিলেন, দুর্ঘটনায় পা না হারালে তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রাজত্ব করতেন এবং তাঁরসহ তাঁর প্রজন্মের অনেকেরই কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতেন। এতেই বোঝা যায় তিনি কত বড় প্রতিভা ছিলেন।
![4uRQk65.jpg](https://i.imgur.com/4uRQk65.jpg)
নায়ক, অভিনেতা রহমান তাঁর কাজ দিয়েই কিংবদন্তি হয়ে আছেন, থাকবেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা। সেইসাথে তাঁকে প্রথম স্টাইলিশ নায়ক বলার প্রচলনটাও শুরু করা উচিত এ প্রজন্মের।