![OUzv9zf.jpg](https://i.imgur.com/OUzv9zf.jpg)
স্বাধীনতা তখনো আসেনি। বাংলাদেশ তখনো পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত, পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা শোষিত একটি দেশ। ঠিক সেসময় বিজয়ের গান শোনা গেল। চারপাশে একটু একটু করে জমে ওঠা ক্ষোভ। সবাই তখন নতুন দেশ, বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর। এর ভেতরেই জন্ম নেয় বাংলাদেশের পতাকা।
বাংলাদেশ : একটি পতাকার জন্ম
১৯৭০ সালের ৬ই জুন। বাংলাদেশের পতাকার নকশা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের ১০৮ নম্বর কক্ষে একত্রিত হন ছাত্ররা। বর্তমানে যেটি সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নামে পরিচিত। সেসময় সেখানে ছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আব্দুর রব, কাজী আরেফ আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ, মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি), স্বপন কুমার চৌধুরী; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু, ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, কামরুল আলম খান (খসরু) সহ আরো অনেকে।
সিদ্ধান্ত অনুসারে দর্জিদের কাছে পতাকা বানানোর জন্য রাতের আঁধারে কাপড় নিয়ে যাওয়া হয়। পতাকার কথা শুনে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে দেন দর্জিরা। তাদের কাছে কাপড় নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেন কামরুল আলম খান এবং বজলুর রহমান লস্কর। পতাকা তৈরি করেন শিবনারায়ণ দাস। ব্যস? শেষ? পতাকা নিয়ে আমাদের যত ইতিহাস, যত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা- সেসব কি এটি বানানোর পরপরই শেষ হয়ে গিয়েছিল? একদম নয়।
![D8bW5D6.png](https://i.imgur.com/D8bW5D6.png)
মানচিত্র কথন-
পতাকা নির্মাণের সময় একটি ব্যাপারে দ্বন্ধ লেগে যায়। বাঙালিরা তখন বাংলা চাচ্ছে। স্বাধীন বাংলা। কিন্তু অনেকেই ব্যাপারটাকে পশ্চিম বাংলার সাথে গুলিয়ে ফেলছিল। আর তাই ব্যাপারটিকে খোলাসা করতেই স্বাধীনতার আগ অব্দি মানচিত্রে লাল বৃত্তের মাঝখানে হলুদ রঙয়ের মানচিত্র বসানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে, স্বাধীনতার পর এই মানচিত্র সরিয়ে ফেলা হয়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নির্দেশে নতুন পতাকা আসে পটুয়া কামরুল হাসানের হাত ধরে। আর অন্যদিকে বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি বোঝানোর জন্য সবুজ রঙ ও সূর্য বোঝাতে লাল রঙ তো আছেই।
১৯৭১ সালের ২রা মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের এই পতাকা উত্তোলিত হয়। 'ডাকসু'র তদানীন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আ স ম আবদুর রব এই পতাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে ২৩শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নং বাসায় এই পতাকা উত্তোলিত হয়।
পতাকার মাপ
![zFA6ns6.jpg](https://i.imgur.com/zFA6ns6.jpg)
কেমন হবে বাংলাদেশের পতাকার মাপ-
১। পতাকাটি গাঢ় সবুজ হবে এবং চারকোনা (১০:৬) পতাকাটির মধ্যে একটি লাল বৃত্ত থাকবে।
২। লাল বৃত্তটি পতাকার এক-পঞ্চমাংশ হবে।
৩। সবুজ অংশটিতে ব্যবহার করা হবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রীন এইচ-২ আর এস ৫০ পার্টস রং এবং লাল বৃত্তটি হবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২ আর এস ৬০ পার্টস রঙের।
বিভিন্ন স্থানে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রে মাপ নির্ধারন করা হয়েছে-
ভবনে ব্যবহার্থে ১০ বাই ৬ ফুট (৩.০ বাই ১.৮ মিটার) কিংবা ৫ বাই ৩ ফুট (১ দশমিক ৫২ বাই শূন্য দশমিক ৯১ মিটার) কিংবা ২ দশমিক ৫ বাই ১ দশমিক ৫ ফুট (৭৬০ বাই ৪৬০ মিলিমিটার)।
মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপের মধ্যে বড় গাড়ীর জন্য- ১৫ বাই ৯ ইঞ্চি (৩৮০ বাই ২৩০ মিলিমিটার) এবং ছোট ও মাঝারী গাড়ীর জন্য ১০ বাই ৬ ইঞ্চি (২৫০ বাই ১৫০ মিলিমিটার)।
আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে যে সব টেবিল পতাকা ব্যবহৃত হয় সেগুলোর জন্য ১০ বাই ৬ ইঞ্চি (২৫০ বাই ১৫০ মিলিমিটার)।
সাধারণত বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং সরকার প্রজ্ঞাপিত যেকোনো দিন পতাকা সরকারি, বেসরকারি ও বৈদেশিক কূটনৈতিক স্থানসমূহে উত্তলিত হবে। শোক দিবসগুলো পতাকা অর্ধনির্মিত করে রাখতে হবে।
১৯৭২ সালের ১৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় পতাকা সম্পূর্নভাবে জাতীয় পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের মানুষের মনে ঠিক আগের মতোই সম্মান ও ভালোবাসার জায়গাটি দখল করে আছে।
তথ্যসূত্র : VirtualBangladesh, TheWorldFlag, উইকিপিডিয়া