What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review যুদ্ধশিশুদের বরণ করার আকুতি ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (1 Viewer)

‘ওরা ১১ জন’ এর পর স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক দ্বিতীয় ছবির নাম ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’। পরিচালকের নাম সুভাষ দত্ত।

প্রথম ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’ থেকেই তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই ছবির পোস্টার ডিজাইন করেছিলেন তিনি। সুভাষ দত্ত এরপর চলচ্চিত্রের ব্যানার ও পোস্টার ডিজাইন এবং আঁকার কাজ, শুটিং হাউসের ডেকোরেশন ও আর্টের কাজ করতেন। এভাবেই জড়িয়েছিলেন অভিনয়ে। এরপর ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমেই তার পরিচালক হিসেবে আগমন।

fiIcjiT.jpg


অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী ছবির পোস্টার ডিজাইনও ছিল অভিনব। পোস্টারে লেখা ছিল-‘লাঞ্ছিত নারীদের মর্যাদা দাও’! ধর্ষিত হয়ে যে সব নারী মা হতে বাধ্য হয়েছিলেন, পৃথিবীতে আসা সেই সব যুদ্ধ শিশুদের বরণ করে নেয়ার তীব্র আকুতি ছিল এই ছবিতে!

কুসুমপুর গ্রামের রোমেনা ও কৃষক আসাদের ভালোবাসার কথা অনেকেই জানতো। জানতো বদরুদ্দিনের কথাও যে আসাদের মতো ভালোবাসতো রোমেনাকেই, অনেকটা নীরবে! এই গ্রামে একদিন শুটিং দল আসে যার নায়ক আনোয়ার হোসেন যিনি কিনা নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবিতে অভিনয় করে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছেন। আসাদ, রোমেনা বা বদরুদ্দিনদের সঙ্গে আনোয়ার হোসেনের পরিচয় হয়। এরপর একদিন আসে পঁচিশ মার্চ,আসে ট্যাংক, মেশিন গান ও পাকিস্তানি মিলিটারি। চলে অত্যাচার,গ্রামের পর গ্রামে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। কুসুমপুরে এমন তাণ্ডবলীলার পর প্রাণ হারান রোমেনার বাবা ও মা, আহত হয় রোমেনার ছোট ভাই ও বোন আর আসাদ। মিলিটারি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় রোমেনাকে!

আনোয়ার হোসেনও গ্রেপ্তার হন। তার সামনে নির্যাতন করা হয় সাধারণ মানুষ ও নারীদের। এসব দেখে তিনি ভয়ে শিউরে ওঠেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবির নায়ক হওয়াতে তাকে ছেড়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা। দেশ থেকে ভারতে পালানোর সময় দেখা হয় একদল মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। কোন রকমে খাবার জোগাড় করে তাদের খেতে দেখে মন খারাপ করেন আনোয়ার হোসেন। যুদ্ধের মধ্যে নিজেকে অক্ষত রেখে পালানোর পথে তার মনে হয় ছবির নায়ক হওয়া অনেক সহজ কিন্তু যুদ্ধের নায়ক হওয়া অনেক কঠিন।

pzjOpol.jpg


আনোয়ার হোসেন কলকাতা যান, খাওয়ার সময় তার মনে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সামান্য খাবার ভাগ করে খাবার কথা। রেডিও শোনেন, আশায় থাকেন দেশ একদিন স্বাধীন হবে। এর ভেতর একদিন মুক্তিযোদ্ধারা খবর পায় কয়েকজন নারীকে বিবস্ত্র করে পুকুরে নামিয়ে সেটা ঘিরে রেখেছে খানসেনারা। আসাদ ও বদরুদ্দিনদের একটা দল আসে নারীদের উদ্ধারে কিন্তু শহীদ হয় আসাদ, রোমেনাকে যে খুব ভালোবাসতো। রোমেনাকে উদ্ধার করে বদরুদ্দিন কিন্তু পরে মিলিটারি ও রাজাকারদের অত্যাচারে প্রাণ হারায় সেও। আত্মহত্যা করতে চায় অন্তঃসত্ত্বা রোমেনা। ছোট ভাইবোনের কথা চিন্তা করে সে মরতে পারে না।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ফিরে আসেন আনোয়ার হোসেন। লাঞ্ছিত নারীদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন, রোমেনার পাশে দাঁড়ান,যুদ্ধ শিশুদের যেন মানুষ বরণ করে নেয় সেই আহ্বান জানাতে থাকেন।

‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭২ সনের ১০ নভেম্বর। ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন সত্য সাহা। মোমেনার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন ববিতা আর আসাদের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উজ্জ্বল। আপেল মাহমুদের গাওয়া স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সেই অবিস্মরণীয় গান ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ এই ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

দিন যায় মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো স্বাধীনতার স্মৃতি হয়ে যেন ফিরে ফিরে আসে। জয় হোক বাংলা ছবির।

* লিখেছেন: আহসান কবির | লোডিং জোন, ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ, পান্থপথ, ০৫ ডিসেম্বর ২০২১
 
মুভিটা দেখতে হবে।।দেখা হয় নাই এখনো।।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top