What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected যে টেলিফোন আসার কথা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
lZnpAR7.jpg


এক পাড়ায় দুই জিনাত (ছদ্মনাম) থাকতেই পারে। পাথরঘাটায় সে রকমই ছিল দুজন। কিন্তু দুজনই যদি হয় সমবয়সী আর বন্ধু, তাহলে ঝামেলার শঙ্কা থাকবেই। হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের একাদশ শ্রেণিতে দুজনকে বিজ্ঞান আর কলা হিসেবে আলাদা করা হয়। কিন্তু পাড়ায় এ দুজনকে পৃথকভাবে চেনার পদ্ধতি একটু অভিনব। মতিনের জিনাত আর ছালেহার জিনাত। মানে, এক জিনাত থাকে মতিন কলোনিতে, আরেক জিনাতের বাসা ছালেহা মঞ্জিলে।

ফাহিমের (ছদ্মনাম) ভালো লাগত ছালেহার জিনাতকে। আরেঠারে সে কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু মেয়েটার ভাবগতিক বোঝা সহজ নয়। চোখে চোখ পড়লে সেই চোখে সম্মতি আছে বলে মনে হয়, কিন্তু গম্ভীর, ঠোঁটে একটুও হাসি নেই। ফাহিম নিশ্চিত হতে পারে না।

রসায়ন অনার্সের ছাত্র ফাহিম অবশেষে বাংলা বিভাগের এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে ‘হৃদয়বিদারক’ এক চিঠি লিখে ফেলল। দীর্ঘ চিঠির শেষ দিকে ‘একবার মন দিলে যায় না ফেরানো তারে, মোহনায় এসে নদী আর কি ফিরিতে পারে? …’–এর মতো আবেগে থরথর গীতিকবিতাও যুক্ত করা হলো।

এই চিঠির দায়িত্ব তো ডাক বিভাগের হাতে দেওয়া যায় না, নগদ ১০ টাকার বিনিময়ে একজন অকালপক্ব শিশুকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু শুরুতে যে ‘ঝামেলা’র কথা হয়েছিল, সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। ইঁচড়েপাকাটি মতিনের জিনাতের হাতে গোপনে চিঠিটা পৌঁছে দিয়ে ফাহিমের সামনে এসে দাঁত কেলাতে লাগল। ইচ্ছা করছিল কান ধরে গালে সশব্দে একটা চড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু উপায় নেই। এই ছেলে ভ্যাঁ কান্না জুড়ে দিলে কেউ না কেউ কারণ অনুসন্ধানে এগিয়ে আসবে। তখন বিপদ বরং বাড়বে। নিজেকে নিজে ভর্ৎসনা করে জানে-মানে বাঁচার পথ খুঁজতে থাকে ফাহিম।

একদিক থেকে বলতে গেলে এই চিঠিটা ছিল একটা টার্নিং পয়েন্ট। আগে দূর থেকে তাকালে চোখে চোখ পড়ত, এখন তা-ও পড়ে না। দূর থেকে তাকে দেখলেই কোনো দিকে দৃকপাত না করে কঠিন চেহারা নিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় ছালেহার জিনাত। কিন্তু তার ভুলটা তো ভাঙানো দরকার। এত দিনের সমস্ত আড়ষ্টতা দূর করে একদিন কলেজে যাওয়ার সময় সামনে দাঁড়িয়ে গেল ফাহিম। ভ্রুকুঞ্চিত চেহারার দিকে তাকিয়ে একেবারে সরাসরি বলে ফেলল, ‘আপনারে, মানে তোমারে আমার ভালো লাগে।’

‘কিন্তু এত্ত বড় চিঠি একখান তো লিখছেন মতিনের জিনাত রে...।’

‘ভুল হয়া গেছে, মাসুমের হাতে দিছিলাম তোমারে দিতে, পিচ্চিটা ওই জিনাতরে দিয়া আসছে।’

‘তাইলে কী আর করবেন, মতিনের জিনাত তো দেখলাম সুন্দর কইরা চিঠির উত্তরও লিখ্যা ফেলছে। ভাগ্য যারে যেখানে নিয়া যায়...’ বলে চুল ঝাঁকিয়ে, ঘাড় বাঁকিয়ে চলে যাচ্ছিল।

আবার ছুটে গিয়ে সামনে দাঁড়াল ফাহিম, ‘কী কও, এটা কি লটারির খেলা নাকি, আমার এক কথা আমি ভালোবাসি তোমারে।’

বিপদে পড়ে সাহসী হয়ে উঠেছিল ফাহিম, আর এই সাহসটাই বোধ হয় খুব মনে ধরেছিল জিনাতের। উপায় বাতলে দিয়েছিল সে। মতিনের জিনাতের ফোন নম্বরটা দিয়ে তাকে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছিল। কথা বলেছিল ফাহিম, পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলেছিল। তাতে মতিনের জিনাতের মনের অবস্থা কী হতে পারে তা একবারও না ভেবে চিঠিটা ছালেহার জিনাতকে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানিয়েছিল।

চিঠি চালাচালির ব্যাপারটা শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল বলে এরপর শুরু হলো টেলিফোনে যোগাযাগে। সেখানেও হ্যাপা কম না। জিনাতের বাসায় ল্যান্ডফোন আছে, ফাহিমের বাসায় নেই। কখনো ফোন-ফ্যাক্সের দোকানে গিয়ে, কখনোবা কয়েনবক্স থেকে ফোন করত। মাঝেসাঝে জিনাতকে পাওয়া গেলেও, বেশির ভাগ সময় ফোন ধরত বাড়ির অন্য কেউ। তখন লাইন কেটে দিতে হতো, ফোনকলের টাকাটা যেত পানিতে। টিউশনির টাকা! কোনো কোনো দিন কথা বলার সুযোগ হলেও ফোন-ফ্যাক্সের দোকানের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হতো খুব নিচু স্বরে। একবার তো দোকানি ঠাট্টা করে বলেছিল, ‘আপনার তো ঠোঁট নড়ে শুধু, কথা কিছু শোনা যায় না, ফোন করেন, না ফ্যাক্স পাঠান?’

উত্তরে সলজ্জ হেসেছিল ফাহিম। এরপর থেকে জিনাতই বলেছিল, ‘তোমার ফোন করার দরকার নাই, কোনো বন্ধুর বাসার বা দোকানের একটা নম্বর জোগাড় করো, সময়-সুযোগমতো আমিই ফোন দিমু।’

বন্ধু আজাদের প্রেসের নম্বরটা দিয়েছিল জিনাতকে। সেই প্রেসে বসে সকাল-সন্ধ্যা অপেক্ষা করত কখন জিনাতের ফোন আসবে। কোনো কোনো দিন আসত, সেই ফোনালাপের প্রতিটি কথা নির্ঘুম রাতে মনের রেকর্ডার থেকে আপনা-আপনিই বেজে উঠত। কখনো আবার সারা দিনের অপেক্ষা বিফলে যেত, ফোন আর আসত না।

আহা, কী দিন ছিল তখন! সুখে-দুঃখে দাম্পত্যজীবনের প্রায় পঁচিশটা বছর পেরিয়ে এসে জিনাত ভাবে, এখনকার মতো যদি মোবাইলে খুদে বার্তা দেওয়া যেত, মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওকলে কথা বলা যেত! তবে আবার সেই প্রথম চিঠিটার কথাও ভুলতে পারে না। কী আবেগ!

আর এখনো ব্যাংকার ফাহিম পুরোনো দিনের কথা ভেবে বিড়বিড় করে কবিতা আওড়ায়—

‘প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে সূর্য ডোবে রক্তপাতে

একান্তে যার হাসার কথা হাসেনি

…যে টেলিফোন আসার কথা, আসেনি।’

তখন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে জিনাত, ‘যত যা-ই কও, সেই প্রতীক্ষার দিনগুলা কিন্তু অনেক ভালা আছিল।’

[FA]pen[/FA] লেখক: বিশ্বজিৎ চৌধুরী, চট্টগ্রাম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top