ফ্যাটি লিভারের রোগীরা রোজা রাখলে বরং উপকৃতই হবেন। কারণ, রোজায় খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওজন কমে।
যকৃত আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। যকৃতের প্রধানতম কাজ হলো বিপাকক্রিয়া বা মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়া যকৃত আমাদের শরীরে প্রোটিনসহ আরও অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করে। যকৃতের নানা ধরনের রোগের মধ্যে হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার, সিরোসিস, সিস্ট, অ্যাবসেস, ক্যানসার অন্যতম। জন্ডিস যকৃতের রোগের একটি উপসর্গ। তবে জন্ডিস নানা কারণে হতে পারে। তা ছাড়া যকৃতের কিছু বিরল রোগও হয়ে থাকে।
বিপাকক্রিয়ার সঙ্গে যকৃতের সুস্থতা সম্পর্কিত। তাই রোজায় যকৃতের রোগীরা চিন্তায় পড়েন, কীভাবে রোজা রাখবেন কিংবা আদৌ রোজা রাখতে পারবেন কি না। রোজা রাখলে কী ধরনের খাবার খেতে হবে, তা নিয়েও চিন্তিত থাকেন এই রোগীরা। যকৃতের যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
● ফ্যাটি লিভারের রোগীরা রোজা রাখলে বরং উপকৃতই হবেন। কারণ, রোজায় খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওজন কমে।
● হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বাহক, তবে এটি সক্রিয় রোগ নয়, এমন ব্যক্তিদের রোজা করতে কোনো সমস্যা নেই।
● ক্রনিক হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসে সংক্রামিত রোগীরাও রোজা করতে পারবেন।
● সিরোসিস একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে এই রোগীদের রোজা করায় কোনো সমস্যা নেই।
● যকৃতের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদেরও প্রাথমিক অবস্থায় রোজা করলে সমস্যা হয় না।
● লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা সম্পূর্ণ সুস্থ রোগীরাও রোজা করতে পারবেন।
দরকার বাড়তি সতর্কতা
নিম্নোক্ত যকৃতের রোগীদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোজা করার ব্যাপারে অবশ্যই এই রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
● জন্ডিসের রোগী।
● যকৃতের সিরোসিসের রোগী, যাদের পেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি এসেছে, রক্তবমি হয়।
● যেসব সিরোসিসের রোগীর কালো আলকাতরার মতো পায়খানা বা রক্ত পায়খানা হয়।
● যেসব সিরোসিসের রোগীর খাদ্যনালির শিরায় ইভিএলের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়েছে।
● যেসব সিরোসিসের রোগীর অ্যানসেফালোপ্যাথি বা অচেতন হয়ে পড়ার ইতিহাস আছে।
● যকৃতের ক্যানসারের যেসব রোগী রোগের জটিল পর্যায়ে রয়েছেন।
● সিরোসিসের যেসব রোগীর ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত।
খাদ্যাভ্যাস
এবার আসুন জেনে নিই, রোজায় যকৃতের রোগীদের খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে কী ধরনের সতর্কতা জরুরি।
● সাধারণত যকৃতের রোগীদের অতিরিক্ত প্রোটিন–জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। তবে শর্করা, চর্বিজাতীয় খাবার, শাকসবজি ও ফলমূল পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।
● সহজপাচ্য খাবার খেলে ভালো। ভাজাপোড়া ও বাইরের খাবার এড়াতে হবে।
● নির্দিষ্ট কিছু অবস্থা ছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
এ ছাড়া যাদের যকৃতের সমস্যার সঙ্গে অন্যান্য সমস্যা আছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।
* ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা