রমজান মাসে যাকাত দিতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। তবে যেহেতু রমজান মাসে যেকোনো এবাদতের ক্ষেত্রেই মর্যাদা বেশী পাওয়া যায় তাই রমজান মাসে এই সদক্বা করলে সাওয়াব বেশী পাওয়া যায় বিধায় রমজান মাসে যাকাত দেয়াটাই উত্তম।
কেউ যদি দীর্ঘদিন যাকাত আদায় না করে সে ক্ষেত্রে পূর্বের যাকাত দেয়ার কোনো বিধান নেই। যাকাতের জন্য এক বছরের হিসাবই প্রযোজ্য !
রিপ্লাইয়ের জন্য অনেক ধন্যবাদ, মামা।
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহে যাকাত আদায়কারীদের জন্য যেমন মহা পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে, তেমনি যাকাত আদায় না করারও ভয়াবহ শাস্তির কথা বিধৃত হয়েছে। নিম্নোক্ত আয়াত ও হাদীছ থেকে যা পরিস্কারভাবে জানা যায়। আল্লাহ বলেন, وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْ هَـذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُواْ مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ- ‘যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য সঞ্চয় করে রাখে, তা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও। সেদিন ঐগুলোকে জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে এবং তদ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে (আর বলা হবে) এটা সেই মাল, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে। অতএব তোমরা এর স্বাদ আস্বাদন কর’ (তওবা ৩৪-৩৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيْبَتَانِ يُطَوِّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ، يَعْنِى شِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ثُمَّ تَلاَ وَلاَ يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَا آتَاهُمُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْراً لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُواْ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন অথচ সে তার যাকাত দেয়নি, ক্বিয়ামতের দিন তার সমস্ত মাল মাথায় টাক পড়া সাপের আকৃতি ধারণ করবে। যার চোখের উপর দু’টি কালো চক্র থাকবে। ঐ সাপটি তার গলা পেচিয়ে ধরে শাস্তি দিতে থাকবে আর বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন, ‘আল্লাহ যাদেরকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু তারা কৃপণতা করল, তারা যেন ধারণা না করে যে, এটা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং এটি তাদের জন্য ক্ষতিকর। ক্বিয়ামতের দিন ঐ মালকে বেড়ি আকারে তার গলায় পরানো হবে’।(আলে ইমরান ১৮০; বুখারী, মিশকাত হা/১৭৭৪; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৬৮২ ‘যাকাত’ অধ্যায়।)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক অথচ তার হক (যাকাত) আদায় করে না, ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য তা আগুনের পাত্ররূপে পেশ করা হবে এবং জাহান্নামের আগুনে তা গরম করে তার কপালে, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে সেক দেয়া হবে। যখন উহা ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন পুনরায় গরম করা হবে। এ অবস্থা ক্বিয়ামতের পুরো দিন চলতে থাকবে, যার দৈর্ঘ্য পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান হবে। অতঃপর বান্দাদের মাঝে বিচার করা হবে, তখন সে দেখবে তার পথ কি জান্নাতের দিকে, না জাহান্নামের দিকে’।(মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৭৩; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৬৮১ ‘যাকাত’ অধ্যায়।) অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, عَنْ أَبِى ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ رَّجُلٍ يَّكُوْنُ لَهُ إِبِلٌ أَوْ بَقَرٌ أَوْ غَنَمٌ لاَّ يُؤَدِّيْ حَقَّهَا إلاَّ أُتِيَ بِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْظَمَ مَا يَكُوْنُ وَأَسْمَنَهُ تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَنْطَحُهُ بِقُرُوْنِهَا كُلَّمَا جَازَتْ أُخْرَاهَا رُدَّتْ عَلَيْهِ أُوْلاَهَا حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ- আবু যর (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তির উট, গরু, ছাগল বা ভেড়া থাকবে, অথচ সে উহার হক আদায় করবে না (অর্থাৎ যাকাত দিবে না), ক্বিয়ামতের দিন ঐগুলোকে তার নিকট অতি বিরাটকায় ও অতি মোটাতাজা অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। ঐগুলো দলে দলে তাকে মাড়াতে থাকবে নিজেদের ক্ষুর দ্বারা এবং আঘাত করতে থাকবে এদের শিং দ্বারা। যখনই এদের শেষ দল অতিক্রম করবে, পুনরায় প্রথম দল এসে তার সাথে এরূপ করতে থাকবে, যতক্ষণ না মানুষের মধ্যে বিচার-মীমাংসা শেষ হবে’।(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭৫; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৬৮৩; তাহক্বীক্ব তিরমিযী হা/৬১৭।) অতএব সাবধান হে মুছল্লীগণ! যাকাত আদায় না করার এই করুণ পরিণতি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য সময় থাকতেই প্রস্ত্ততি গ্রহণ করুন। মালের মুহাববত চূর্ণ করে আপনার মালের উপর আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ হকদারদের নিকটে পৌঁছে দিয়ে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে সার্বিকভাবে চেষ্টিত হউন।
যে সকল মালে যাকাত ফরয :
প্রধানত চার প্রকার মালে যাকাত ফরয হয়ে থাকে। যেমন-
১. স্বর্ণ-রৌপ্য ও সঞ্চিত টাকা পয়সা।
২. ব্যবসায়িক সম্পদ।
৩. উৎপন্ন ফসল।
৪. গবাদী পশু।
উল্লেখ্য যে, উৎপন্ন ফসল ব্যতীত অন্যান্য সকল বস্ত্তর যাকাত এক বছর পূর্ণ হ’লে ফরয হয়। অপরদিকে উৎপন্ন ফসল যেদিন হস্তগত হবে, সেদিনই যাকাত ফরয হয়। এর জন্য বছরপূর্তি শর্ত নয়।
যাকাতের নিছাব : ‘নিছাব’ শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎস, মূল, প্রত্যাবর্তনস্থল, শুরু, কোরাম (সভার ক্ষেত্রে) ইত্যাদি। ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায়, যে পরিমাণ সম্পদের মালিক হ’লে যাকাত ফরয হয়, তাকে ‘নিছাব’ বলা হয়। নিম্নে বিভিন্ন বস্ত্ততে যাকাতের নিছাব উল্লেখ করা হ’ল- (১) স্বর্ণ-রৌপ্য : স্বর্ণ সাড়ে ৭ তোলা বা ৮৫ গ্রাম এবং রৌপ্য পাঁচ উকিয়া বা ২০০ দিরহাম বা সাড়ে ৫২ তোলা হ’লে বছর শেষে বাজার দর হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা যাকাত দিতে হবে। (তাহক্বীক্ব তিরমিযী হা/৬২০, সনদ ছহীহ।) (২) উৎপাদিত ফসল : জমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফলমূল যেমন- ধান, গম, যব, কিসমিস, খেজুর ইত্যাদির ন্যূনতম নিছাব হচ্ছে পাঁচ ওয়াসাক্ব, হিজাযী ছা‘ অনুযায়ী যা ১৯ মন ১২ সেরের সমান। উক্ত ফসল যদি বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন হয়, তাহ’লে ‘ওশর’ বা এক দশমাংশ যাকাত দিতে হবে। আর সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হ’লে ‘নিছফে ওশর’ বা বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৯৪; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৭০২ ‘যে সব মালে যাকাত ফরয’ অনুচ্ছেদ; বুখারী, মিশকাত হা/১৭৯৭; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৭০৫।)
(৩) গবাদি পশু : যেমন উট, গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি।
(ক) উট ৫টি হ’লে ১টি ছাগল, ১০টিতে ২টি, ১৫টিতে ৩টি, ২০টিতে ৪টি ছাগল এবং ২৫টি হ’লে ১টি ‘বিনতে মাখায’ বা পূর্ণ এক বছর বয়সের একটি মাদী উট যাকাত দিতে হবে। এই সীমা ৩৫ পর্যন্ত। অতঃপর ৩৫-৪৫ পর্যন্ত উটে একটি ‘বিনতে লাবূন’ বা পূর্ণ দু’বছরের একটি মাদী উট, ৪৬-৬০ পর্যন্ত একটি ‘হিক্কাহ’ বা তিন বছর বয়সী মাদী উট, ৬১-৭৫ পর্যন্ত একটি ‘জাযআ’ বা চার বছর বয়সী মাদী উট, ৭৬-৯০ পর্যন্ত দু’টি বিনতে লাবূন, ৯১-১২০ পর্যন্ত দু’টি ‘হিক্কাহ’ এবং ১২০ এর অধিক হ’লে প্রতি ৫০টি উটে একটি করে ‘হিক্কাহ’ এবং প্রতি ৪০ টিতে একটি করে ‘বিনতে লাবূন’ যাকাত দিতে হবে। (তাহক্বীক্ব তিরমিযী হা/৬২১। ) (খ) গরু-মহিষ প্রত্যেক ৩০টিতে ১টি দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী বাছুর এবং প্রত্যেক ৪০টিতে ১টি তৃতীয় বছরে পদার্পনকারী বাছুর যাকাত দিবে। (আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হ/১৮০০; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৭০৮; তাহক্বীক্ব তিরমিযী হা/৬২২।) (গ) ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ৪০টি হ’লে ১টি ছাগল বছর শেষে যাকাত হিসাবে প্রদান করতে হবে। এই সীমা ১২০ পর্যন্ত। এর অধিক হ’লে ২০০ পর্যন্ত ২টি ছাগল। এর অধিক হ’লে ৩০০ পর্যন্ত ৩টি ছাগল প্রদান করতে হবে। অতঃপর প্রতি একশ’ তে ১টি করে ছাগল বছরান্তে যাকাত দিতে হবে। (তাহক্বীক্ব তিরমিযী হা/৬২১।) (৪) ব্যবসায়িক পণ্য : ব্যবসায়িক সম্পদের নিছাব স্বর্ণ-রৌপ্যের নিছাবের সমপরিমাণ। অর্থাৎ কারও ব্যবসায়িক মূলধন, মুনাফা ও সঞ্চিত টাকা একত্রিতভাবে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপার বর্তমান বাজার মূল্যের সমপরিমাণ হ’লে তাকে বছরান্তে ২.৫% যাকাত দিতে হবে।
যাকাত বণ্টনের খাত সমূহ : আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে যাকাত বণ্টনের আটটি খাতের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন- ১. ফক্বীর : নিঃসম্বল ভিক্ষাপ্রার্থী। ২. মিসকীন : যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না, মুখ ফুটে চাইতেও পারে না। বাহ্যিকভাবে তাকে স্বচ্ছল বলেই মনে হয়। ৩. আমেলীন : যাকাত আদায়ের জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। ৪. মুআল্লাফাতুল কুলূব : ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তিগণ। নও মুসলিম বা কোন অমুসলিমকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য এই খাতটি নির্দিষ্ট। ৫. দাস মুক্তির জন্য : এই খাত বর্তমানে শূন্য। তবে অনেকে অসহায় কয়েদী মুক্তিকে এই খাতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন। ৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি : যার সম্পদের তুলনায় ঋণের অংক বেশী। কিন্তু যদি তার ঋণ থাকে ও সম্পদ না থাকে, এমতাবস্থায় সে ফক্বীর ও ঋণগ্রস্ত দু’টি খাতের হকদার হবে। ৭. ফী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। এই খাতটি ব্যাপক। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাসহ আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠাদান ও বিজয়ী করার জন্য যেকোন ন্যায়ানুগ প্রচেষ্টা এই খাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। দ্বীনী সংগঠন, মাদরাসা, ইয়াতীমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং ইত্যাদি এর পর্যায়ভুক্ত। ৮. দুঃস্থ মুসাফির : পথিমধ্যে কোন কারণবশতঃ পাথেয়শূন্য হয়ে পড়লে পথিকগণ এই খাত হ’তে সাহায্য পাবেন। যদিও তিনি নিজ দেশে বা বাড়ীতে সম্পদশালী হন (তওবা ৬০)। উল্লেখ্য যে, যাকাতের অর্থ আদায় হওয়ার সাথে সাথেই তা বিতরণ বাঞ্ছনীয়। কারণ যাকাত গ্রহীতারা অভাবী ও দরিদ্র। আর এটি তাদের প্রাপ্য। সুতরাং তাদের অভাব দ্রুত মোচনের চেষ্টা করা আশু কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের উপর যাকাত ফরয করা হয়েছে, যা ধনীদের নিকট হ’তে গ্রহণ করা হবে এবং দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭২; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৬৮০ ‘যাকাত’ অধ্যায়।)
যাকাতুল ফিতর : অন্যান্য ফরয ছাদাক্বার ন্যায় ‘ফিতরা’ও একটি ফরয ছাদাক্বা। যা রামাযানের শেষ দিকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্বে আদায় করতে হয়। এমনকি ঈদের মাঠে যাওয়ার প্রাক্কালে কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হ’লে তারও ফিতরা দিতে হয়। এক ছা‘ বা আড়াই কেজি পরিমাণ খাদ্যবস্ত্ত দ্বারা ফিতরা দেওয়া ফরয। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِّنْ تَمَرٍ أَوْ صَاعًا مِّنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ وَالذَّكَرِ وَالْأُنْثَى وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ وَ أَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুসলমান ক্রীতদাস-আযাদ, পুরুষ-নারী এবং ছোট-বড় সকলের উপর ছাদাক্বায়ে ফিতর এক ছা‘ খেজুর বা যব নির্ধারণ করেছেন এবং মানুষ ঈদগাহে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে তা আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন’।(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৮১৫; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৭২৩ ‘ফিতরা’ অনুচ্ছেদ।) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِّنْ طَعَامٍ أَوْ صَاعًا مِّنْ شَعِيْرٍ أَوْ صَاعًا مِّنْ تَمَرٍ أَوْ صَاعًا مِّنْ أَقِطٍ أَوْ صَاعًا مِّنْ زَبِيْبٍ- ‘আমরা এক ছা‘ খাদ্য, এক ছা‘ যব, এক ছা‘ খেজুর, এক ছা‘ পনির অথবা এক ছা‘ আঙ্গুর যাকাতুল ফিতর আদায় করতাম’।(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৮১৬; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৭২৪।) উল্লেখ্য যে, অর্ধ ছা‘ ফিতরা দেওয়ার কোন ছহীহ দলীল নেই। অনুরূপভাবে টাকা-পয়সা দিয়ে ফিতরা দেওয়ারও কোন ভিত্তি নেই। বরং রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় দীনার-দিরহাম থাকা সত্ত্বেও তিনি ও ছাহাবায়ে কেরাম খাদ্যবস্ত্ত দ্বারাই ফিতরা আদায় করতেন। সুতরাং আমদেরও টাকা-পয়সার পরিবর্তে প্রধান খাদ্যবস্ত্ত দ্বারা ফিতরা আদায় করা উচিত। এই সাথে যাকাত-ফিৎরা এককভাবে বণ্টন না করে সকলের যাকাত-ফিৎরা একত্রিত করে তা বণ্টন করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে যাকাত-ফিৎরা জমা করা হ’ত অতঃপর তা হকদারদের মধ্যে বণ্টন করা হ’ত। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এটি সম্ভব না হ’লে সামাজিক বা সাংগঠনিক উদ্যোগেও তা করা যাবে। [.color]