What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

উত্তম সমাজ (2 Viewers)

arn43

Co-Admin
Staff member
Co-Admin
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,618
Messages
122,285
Credits
313,977
DVD
Whiskey
SanDisk Sansa
SanDisk Sansa
Computer
Glasses sunglasses
উত্তম সমাজ

عَنْ أَبِى مُوسَى عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّ الْمُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ، يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا. وَشَبَّكَ أَصَابِعَهُ- متفق عليه-

অনুবাদ : হযরত আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘এক মুমিন আরেক মুমিনের জন্য একটি গৃহের ন্যায়। যার একাংশ অপরাংশকে মযবূত করে’। অতঃপর তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলি পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করলেন।
(বুখারী হা/৪৮১, মুসলিম হা/২৫৮৫, মিশকাত হা/৪৯৫৫ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায় ১৫ অনুচ্ছেদ।)

হযরত নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الْمُسْلِمُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ وَإِنِ اشْتَكَى رَأْسُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ ‘সকল মুমিন একজন ব্যক্তির মত। যদি তার চোখে কষ্ট হয়, তাহ’লে সারা দেহে কষ্ট বোধ হয়। আর যদি মাথায় ব্যথা হয়, তাহ’লে সারা দেহ ব্যথাতুর হয়’।
(মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৪।)

একই রাবী থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ فِى تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى ‘তুমি ঈমানদারগণকে পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়াশীলতার ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোন অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন সমস্ত দেহ নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়’।
(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯৫৩।)

উপরোক্ত হাদীছগুলিতে উত্তম সমাজের চিত্র অংকিত হয়েছে। এখানে কেবল মুমিনদের কথা বলা হয়েছে। কেননা তারাই আল্লাহর নিকট ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ (আলে ইমরান ৩/১১০)। আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে একই লক্ষ্যের অনুসারী হওয়ায় মুমিন সমাজে এটা সহজেই সম্ভব। তবে কোন সমাজে কেবল মুমিন বাস করে না। বরং কাফির-মুশরিকরাও সেখানে বসবাস করে। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে মুমিনদের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে ইসলামের সুন্দর নির্দেশনা রয়েছে। যদি তারা মুমিনদের বিরুদ্ধে শত্রুতা না করে, তাহ’লে তাদের প্রতি সর্বোচ্চ মানবিক আচরণ করা হবে। কারণ সবাই এক আদমের সন্তান। আদম ছিলেন প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী। কিন্তু কাফের-মুশরিকরা তাদের আদি পিতা-মাতার ধর্ম ত্যাগ করে পথভ্রষ্ট হয়েছে। উত্তম উপদেশ ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তাদেরকে জান্নাতের পথ দেখানো মুমিনের কর্তব্য। এর জন্য সে নেকী পাবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত হবে।
 
মানব সমাজ মূলতঃ দু’ভাগে বিভক্ত। একদল আল্লাহকে স্বীকার করে ও তাঁর বিধান মেনে চলে। আরেক দল নিজেদের সীমিত জ্ঞান তথা প্রবৃত্তিরূপী শয়তানের পূজা করে ও যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলে। উভয় দল পৃথকভাবে বা একত্রিতভাবে সমাজে বসবাস করে। উভয় দলের মধ্যেই রয়েছে কট্টরপন্থী, মধ্যপন্থী ও শৈথিল্যবাদী। সবাইকে নিয়েই সমাজ। আর সমাজ নিয়েই মানুষ। প্রত্যেকে একে অপরের মুখাপেক্ষী। তাই সমাজ গঠনের ও তা পরিচালনার জন্য মানুষকে সর্বদা উচ্চতর জ্ঞানী ও শক্তিমানের অনুসারী হ’তে হয়। আর এটা আল্লাহরই চিরন্তন ব্যবস্থাপনা। যখন কোন সমাজ ও সমাজ নেতা আল্লাহর দাসত্ব করে ও তাঁর বিধান মতে চলে, তখন সেই সমাজ হয় উত্তম সমাজ। আর যখন তার বিপরীত হয়, তখন সেটি হয় নিকৃষ্ট ও শয়তানী সমাজ। তবে যেকোন সমাজে যেকোন সময় একই ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্ব ও শয়তানের দাসত্ব দু’টিই করতে পারে। সমাজের দায়িত্ব হবে তখন শয়তানী তৎপরতাকে রুখে দেওয়া ও মানবতাকে অক্ষুণ্ণ রাখা। এভাবে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের মাধ্যমে উত্তম সমাজ গঠিত হবে। আর উত্তম সমাজ কাঠামোর মধ্যেই উত্তম ব্যক্তি ও পরিবার গড়ে ওঠা সহজ হয়। সমাজের বৃহত্তম রূপ হ’ল রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্র সমূহের ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর রূপ হ’ল বিশ্বরাষ্ট্র। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বরাষ্ট্র সবই উত্তম হবে যদি উত্তম নীতিমালা ও উত্তম ব্যক্তি সমষ্টি দ্বারা তা পরিচালিত হয়। আর যদি অনুত্তম নীতিমালা ও অনুত্তম ব্যক্তিসমষ্টি দ্বারা তা পরিচালিত হয়, তবে সেই পরিবার ও সমাজ নষ্ট সমাজে পরিণত হবে। ঐ রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্রে পর্যবসিত হবে। যেমন বর্তমান শতাব্দীতে অধিকাংশ রাষ্ট্র কার্যতঃ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

এখানে সমাজকে গুরুত্ব দিচ্ছি একারণে যে, রাষ্ট্র বলি বা বিশ্বরাষ্ট্র বলি, সমাজই তার ভিত্তি। সমাজ যে আক্বীদা-বিশ্বাস ও রীতি-নীতিতে অভ্যস্ত হবে, রাষ্ট্র সেভাবে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। কিন্তু এ রাষ্ট্র ইসলামী নীতিতে পরিচালিত হয় না। এর কারণ এখানকার মুসলিম সমাজের অধিকাংশ নেতা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ। আবার আলেমগণ ইসলামের আনুষ্ঠানিক ইবাদত সমূহের মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে শত দলে বিভক্ত এবং অনেকে যিদ ও অহংকারে অন্ধ। সেই সাথে সমাজও বিভক্ত। ইসলামের মূল তাওহীদী রূহ, যা পরস্পরকে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ রাখে, তা শিথিল হ’তে হ’তে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন মুসলমানেরা তাওহীদের উপরে কুফরীকে স্থান দিচ্ছে। ফলে এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে শয়তান। সে তার যাবতীয় উপায়-উপাদান নিয়ে জান্নাতের রাস্তায় প্রতিরোধ বসিয়েছে আছহাবুল উখদূদের কাহিনীতে রাস্তা বন্ধকারী বিশাল জন্তুটির ন্যায়। শান্তিপ্রিয় অধিকাংশ মানুষ চায় আল্লাহর উপর নিখাদ ভরসাকারী একদল তরুণ ও তাদের পরিচালনাকারী দৃঢ় ঈমানদার নেতা। আমরা একনিষ্ঠ হৃদয়ে চাইলে আল্লাহ অবশ্যই আমাদেরকে তা দিবেন। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থেই আমাদেরকে উত্তম সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। আর তা অবশ্যই হ’তে হবে আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত বিধান অনুযায়ী। আমরা সেই আলোকে উত্তম সমাজের রূপরেখা নিম্নে তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
 
উত্তম সমাজের ভিত্তি :

১. উত্তম সমাজের ভিত্তি হবে নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাসের উপরে। কেননা দৃঢ় ও নিখুঁত ভিত্তি ব্যতীত নিখুঁত ও মযবূত ইমারত দাঁড় করানো যায় না। ভিত বাঁকা বা দুর্বল হ’লে ইমারত ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। সেকারণ সর্বাগ্রে এই বিশ্বাস মযবূত করতে হবে যে, আমরা স্বেচ্ছায় দুনিয়াতে আসিনি। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন নির্দিষ্ট মেয়াদ, কর্ম ও রিযিক দিয়ে। যেমন কারখানায় ঔষধ তৈরী হয় নির্দিষ্ট উপাদান, মেয়াদ ও কার্যকারিতা দিয়ে। নিয়ম মাফিক ঔষধ সেবন না করলে ও তার আনুষঙ্গিক বিধান না মানলে যেমন সুস্থ দেহ আশা করা যায় না, তেমনি আল্লাহর বিধান যথাযথভাবে না মানলে সুস্থ সমাজ আশা করা যায় না। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ তাই সর্বাগ্রে আক্বীদা সংস্কার করেছেন এবং শিরকী আক্বীদার স্থলে তাওহীদী আক্বীদার বীজ বপন করেছেন। যাতে মানুষ মানুষের গোলামী ছেড়ে আল্লাহর গোলামীর অধীনে সকলে সমানাধিকার ভোগ করে।

স্বার্থপর সমাজনেতা ও তাদের সাথী কায়েমী স্বার্থবাদীরা সকল যুগে সর্বশক্তি নিয়ে নবীদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেযুগে ছিল সামন্ততন্ত্র, এ যুগে এসেছে গণতন্ত্র। যার চাইতে বড় প্রতারণা এখন আর নেই। অতীত ও বর্তমানের সকল মন্ত্র-তন্ত্রের সারকথা হ’ল সমাজ বা রাষ্ট্রনেতাই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সংসদীয় গণতন্ত্রে দলনেতা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সবকিছু। জনগণের নামে তিনিই স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা ভোগ করেন। সে যুগে গোত্রীয় নেতা ও সামন্ত প্রভুদের স্বেচ্ছাচারিতা তাদের গোত্রের ছোট গন্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন সারা দেশে সরকারী দল ও দলীয় প্রশাসন একচেটিয়া যুলুম চালিয়ে থাকে তথাকথিত ভোটের লাইসেন্স নিয়ে। ইসলামী বিধানে আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। এখানে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, আইনসভার সদস্য, আদালতের বিচারপতি সবাই আল্লাহর বিধানের দাসত্ব করতে বাধ্য। আল্লাহ বিরোধী কোন আইন মানতে কোন মানুষ বাধ্য থাকবে না। ফলে সরকারের যুলুম ও শোষণ থেকে এবং আদালতের অন্যায় বিচারের হাত থেকে মানুষ বেঁচে যাবে।

প্রকৃত অর্থে ইসলামী শাসনই হ’ল জনগণের শাসন। এর বিপরীত সবই হ’ল শয়তানী শাসন। যেখানে জনগণের কেবল শোষণ ও বঞ্চনাই লাভ হয়। যে উদ্দেশ্যে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন, তা থেকে তারা চিরবঞ্চিত থাকে। আধুনিক বিশ্বের অভিজ্ঞতাই তার বড় প্রমাণ। অতএব জনগণকে নিজেদের স্বার্থেই ইসলামী শাসন নিয়ে আসতে হবে। এজন্য তাদের সামনে মাত্র একটাই পথ খোলা রয়েছে। আর তা হ’ল নিজেদের মধ্যে ইসলামী নেতৃত্ব সৃষ্টি করা ও তাঁর মাধ্যমে সামাজিক অনুশাসনে অভ্যস্ত হওয়া। অতঃপর এভাবে সাংগঠনিক ইমারতের মাধ্যমে ক্রমে রাষ্ট্রীয় ইমারত কায়েম করা। এরূপ ইমারত একাধিক হ’লে সর্বাধিক আল্লাহভীরু ও যোগ্য ব্যক্তিকে ইসলামী বিধি অনুযায়ী দল ও প্রার্থীবিহীনভাবে সর্বসম্মত নেতা নির্বাচন করতে হবে। যাতে নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়ার সুযোগ না ঘটে। অতঃপর আমীর তার মনোনীত আল্লাহভীরু ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে মজলিসে শূরা গঠন করবেন। তাদের পরামর্শক্রমে এবং প্রয়োজনে অন্যদের পরামর্শ নিয়ে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।

গণতন্ত্রের ধোঁকাবাজি ও স্বৈরাচারী শাসনে অতিষ্ঠ জনগণ অবশ্যই নিজেদের দুনিয়াবী কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামী খেলাফতের দিকে ফিরে আসবে। যেমন বিগত দিনে সিরিয়ায় খৃষ্টানরা মদীনা থেকে আগত মুসলিম বাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং স্বধর্মীয় রোমক শাসনকে অগ্রাহ্য করেছিল। এ যুগে ইহূদী-খৃষ্টানদের চালান করা তন্ত্র-মন্ত্রকে অগ্রাহ্য করে মানুষ আবারও ইসলামী শাসনকে স্বাগত জানাবে নিজেদের স্বার্থেই। আর তা অবশ্যই হবে কুরআন ও সুন্নাহর শাসন। ইসলামের নামে নিজেদের রচিত মাযহাবী শাসন নয়।
 
২. ইসলামী শরী‘আত :
সমাজ গঠিত ও পরিচালিত হবে ইসলামী শরী‘আতের আলোকে, যার ভিত্তি হবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর উপরে। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উম্মতকে সেই নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার থেকে হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখে নাও। কেননা আগামী বছর আমি তোমাদের সাথে মিলিত হ’তে পারব কি-না জানি না’। (নাসাঈ হা/৩০৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৮২।) আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা উক্ত দু’টি বস্ত্ত অাঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ’ (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৩৩৮, মিশকাত হা/১৮৬।)
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের আমীরের। অতঃপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। এটাই উত্তম ও সুন্দরতম সমাধান’ (নিসা ৪/৫৯)। শরী‘আত মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্য প্রযোজ্য এবং তা সকলের জন্য কল্যাণকর। ইসলামী নেতা তার সমাজের অমুসলিম সদস্যের প্রতি ইসলামী বিধান অনুযায়ী আচরণ করবেন। নিঃসন্দেহে তাতে উক্ত ব্যক্তি অধিকতর উপকৃত হবেন। এরপরেও ধর্মীয় বিষয়ে তিনি স্বাধীন থাকবেন।
৩. শরী‘আতের ব্যাখ্যা হবে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী :
ছাহাবায়ে কেরাম ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর শিক্ষাগারের সরাসরি ছাত্র। কোন অবস্থায় কোন পরিস্থিতিতে তিনি কোন কথা বলেছেন ও কোন কাজ করেছেন, সে ব্যাপারে তাঁরাই বড় সাক্ষী। অতএব কুরআন ও হাদীছের ব্যাখ্যায় তাঁদের ব্যাখ্যাই সর্বাগ্রগণ্য। অতঃপর জ্যেষ্ঠ তাবেঈন ও মুহাদ্দেছীনের ব্যাখ্যা অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। উক্ত মূলনীতি অনুসরণে যেকোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সামাজিক ঐক্য ও সংহতি এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হ’তে পারে। যতদিন মুসলিম উম্মাহ উক্ত নীতি মেনে চলেছে, ততদিন তারাই ছিল পৃথিবীর সেরা জাতি। কিন্তু পরে তারা উক্ত নীতি থেকে বিচ্যুত হওয়ায় অধঃপতিত হয়েছে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ব মানবতা। সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে গেলে ফেলে আসা নীতিতেই ফিরে যেতে হবে। যুগে যুগে আহলেহাদীছ আন্দোলন মানুষকে উক্ত পথেই আহবান জানিয়েছে। আজও জানিয়ে যাচ্ছে।
 
বৈশিষ্ট্য সমূহ :
১. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব :
উত্তম সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে এই সমাজের লোকেরা সকল কাজে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারু দাসত্ব করবে না। জীবনের সকল দিক ও বিভাগে কিতাব ও সুন্নাতের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিশ্চিত করবে। আর এটাই হ’ল তাওহীদে ইবাদত। মানুষের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব আল্লাহ প্রেরিত বিধানের অধীনস্ত থাকবে। মানব রচিত আইন কোন অবস্থায় আল্লাহর আইনকে চ্যালেঞ্জ করবে না। করলে সেটা হবে শিরক। যার পাপ হবে অমার্জনীয়।
 
২. নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য :
উত্তম সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল আনুগত্যশীলতা। আনুগত্যহীন সংগঠন বা অবাধ্য সমাজ কখনোই উত্তম সমাজ হ’তে পারে না। রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেন,
السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ، فِيْمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ-
‘মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য হ’ল পসন্দনীয় ও অপসন্দনীয় সকল কর্মে আদেশ শ্রবণ করা ও মান্য করা। যতক্ষণ না কোন পাপকর্মে আদেশ করা হয়। যদি কোন পাপকর্মে আদেশ করা হয়, তাহ’লে কোন আনুগত্য নেই’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৬৪ ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়।)
তিনি বলেন, যদি কেউ তার আমীরের কাছ থেকে অপসন্দনীয় কিছু দেখে, তাহ’লে সে যেন তাতে ছবর করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ পৃথক হ’ল, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, সে জাহেলী হালতে মৃত্যুবরণ করল’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৬৮।)
বস্ত্ততঃ আনুগত্যহীন সমাজ একটি বিশৃংখল ও জংলী সমাজ। আধুনিক যুগের গণতান্ত্রিক সমাজ যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এরই দুর্গন্ধে ইসলামী সংগঠনগুলিও ক্রমে দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের মধ্যে এখন আনুগত্যের বদলে অবাধ্যতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বদলে অশ্রদ্ধা ও আত্মম্ভরিতার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। যার ফলে ইসলামী সমাজের মূল রূহ হারিয়ে যাচ্ছে। অতএব সংশ্লিষ্টরা সাবধান!
 

৩. পরামর্শ গ্রহণ :

সমাজ পরিচালনায় যোগ্য ও উত্তম ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ অপরিহার্য। আল্লাহর বিধান অপরিবর্তনীয়। সেখানে কোন পরামর্শ নেই। তবে তা বাস্তবায়নে পরামর্শ প্রয়োজন। যেমন বদর, ওহোদ, খন্দক প্রভৃতি যুদ্ধসমূহ ছাড়াও দুনিয়াবী প্রায় সকল কাজে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোগ্য ছাহাবীদের নিকট থেকে পরামর্শ নিতেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি প্রয়োজনীয় বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি দৃঢ়কল্প হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’
(আলে ইমরান ৩/১৫৯)।

পরামর্শ গ্রহণের বিষয়টি কেবল সংগঠন ও সমাজ পরিচালনায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং পরিবার পরিচালনায়ও যরূরী। একক পরিবার হৌক বা যৌথ পরিবার হৌক পরিবার প্রধানকে পরিবারের সদস্য-সদস্যাদের সাথে পরামর্শ করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া কর্তব্য। তাতে পরিবারের শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি হবে। যদি নেকীর কাজে সিদ্ধান্ত হয়, তবে ঐ পরিবারে আল্লাহর পক্ষ হ’তে বিশেষ রহমত ও বরকত নাযিল হবে। একইভাবে উক্ত সমাজের উপরেও আল্লাহর রহমত নাযিল হবে, যেখানে সর্বদা নেকী ও আল্লাহভীরুতার কাজে পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
 

৪. দায়িত্বশীলতা :

উত্তম সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল পারস্পরিক দায়িত্বশীলতা। এই সমাজের প্রত্যেক সদস্য পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করবে। তারা কেউ কাউকে অসম্মান করবে না, যুলুম করবে না, লজ্জিত করবে না। এই সমাজের প্রত্যেকের জন্য পরস্পরের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান নিষিদ্ধ। এ সমাজে কেউ অসুস্থ বা পীড়িত হ’লে অন্যের দায়িত্ব পড়ে যায় তাকে সুস্থ করার ও চিকিৎসা করার। প্রাথমিক দায়িত্ব নিজ পরিবারের হ’লেও মূলতঃ এ দায়িত্ব সমাজের। এমনকি একটা পশু বিপদে পড়লেও এ সমাজের মানুষের কর্তব্য হ’ল তাকে উদ্ধার করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বিগত যুগে একজন বেশ্যা মহিলা রাস্তা দিয়ে যাবার সময় একটা তৃষ্ণার্ত কুকুরকে দেখতে পায়। তখন সে গভীর কূয়ায় নেমে নিজ চামড়ার মোযায় পানি ভরে এনে তাকে খাওয়ায়। তাতে প্রচন্ড দাবদাহে মৃত্যুর কোলে পৌঁছে যাওয়া কুকুরটি বেঁচে যায়। এতে খুশী হয়ে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন ও সে জান্নাতবাসী হয়’। (বুখারী হা/৩৩২১, মিশকাত হা/১৯০২।) এর বিপরীতে আরেকজন মহিলা একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে না খেতে দিয়ে কষ্ট দিলে সে মারা যায়। এর ফলে ঐ মহিলা জাহান্নামী হয়। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯০২।) উত্তম সমাজে পশুর যখন এত সম্মান ও জবাবদিহিতা, সে সমাজে শ্রেষ্ঠতম জীব মানুষের কেমন মর্যাদা হওয়া উচিত, তা অবশ্যই অনুধাবনযোগ্য। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি। তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে চলাচলের বাহন দিয়েছি। তাদেরকে পবিত্র রূযী দান করেছি এবং আমরা যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (ইসরা ১৭/৭০)।

বস্ত্ততঃ উপরোক্ত দায়িত্বশীলতা থেকেই ইসলামে বিধান দেওয়া হয়েছে মযলূমের প্রতিকারে যালেমের জন্য শাস্তি, ধনীর সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টননীতি, তার সঞ্চিত সম্পদে শতকরা আড়াই টাকা যাকাত ও অন্যান্য নফল ছাদাক্বার বিধান। এতদ্ব্যতীত মানত, কাফফারা, হাদিয়া, আকীকা, কুরবানী ইত্যাদি নানাবিধ দানের ব্যবস্থা।

বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বড়দের মর্যাদা বুঝে না ও ছোটদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করে না, সে মুসলমানের দলভুক্ত নয়’।
(আবুদাঊদ হা/৪৯৪৩।) বলা হয়েছে, ‘তোমরা যমীনবাসীর উপর রহম কর, আসমানবাসী আললাহ তোমাদের উপর রহম করবেন’। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৯৬৯।) বলা হয়েছে, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৮৫।)

এভাবে উত্তম সমাজে প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি দায়িত্বশীল হবে এবং একে অপরের জান-মাল ও ইয্যত রক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে। এর বিনিময় সে আল্লাহর কাছে কামনা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা কিছু সৎকর্ম অগ্রিম প্রেরণ করবে, তা তোমরা আল্লাহর নিকট পেয়ে যাবে। আর সেটাই হ’ল উত্তম ও মহান পুরস্কার’ (মুযযাম্মিল ৭৩/২১)।
 

৫. উত্তম চরিত্র :

উত্তম সমাজের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হ’ল এ সমাজের সদস্যরা হবেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাদের কাছে পরস্পরের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। তারা একে অপরের নিকট বিশ্বস্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় সর্বাধিক ভারী হবে তার উত্তম চরিত্র। আর আল্লাহ ক্রুদ্ধ হন অশ্লীলভাষী ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তির প্রতি’। (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮১ ‘শিষ্টাচারসমূহ’ অধ্যায়।) ব্যক্তি জীবনে তারা চরিত্রবান, ধৈর্যশীল, বিনয়ী ও মিষ্টভাষী হবে। পারিবারিক জীবনে সে পিতা-মাতার প্রতি অনুগত হবে। স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি সদাচরণ করবে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যব্যবহার করবে। পুরুষ ও নারী পরস্পরে দৃষ্টি অবনত রাখবে। যথাযথ পর্দা রক্ষা করে চলবে। মায়ের জাতিকে সর্বোচ্চ সম্মান দিবে। সকল কাজে লজ্জাশীলতা বজায় রাখবে। সামাজিক জীবনে সে পরস্পরকে সালাম করবে, হাসিমুখে কথা বলবে, ওয়াদা ও চুক্তি রক্ষা করবে। পারস্পরিক লেনদেনে বিশ্বস্ত থাকবে। ঝগড়ার বিষয়ে আপোষকামী থাকবে। হক্কুল্লাহ আদায়ের ব্যাপারে সদা যত্নশীল থাকবে। ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, ছাদাক্বাহ ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করবে। তার প্রতি সর্বদা ভরসাকারী থাকবে এবং যে কাজ করলে তিনি খুশী হন, সর্বদা সে কাজে অগ্রণী থাকবে। সামাজিক বা রাজনৈতিক দায়িত্ব পেলে সর্বদা অধীনস্তদের প্রতি দয়াশীল থাকবে। পরামর্শের মাধ্যমে কাজ করবে। অন্যের জান-মাল ও ইয্যতের হেফাযতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। চুক্তি রক্ষা করবে এবং জনকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করবে। সবকিছুর বিনিময় আল্লাহর কাছে চাইবে। ইনশাআল্লাহ এর মাধ্যমে উত্তম সমাজ কায়েম হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top