মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
প্রায় দুই বছর পরে ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে গেছে । ম্যাডাম ক্লাস শুরু করলেন,
পরমাণু হলো ...
ম্যাডাম আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছে ।
এক ছাত্র দাঁড়িয়ে বললো ।
কি ভুল ?
ম্যাডাম আপনি যে বললেন পরমাণু ঐটা মনে হয় পরিমনি হবে ।
মানে?
ম্যাডাম অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ।
না ম্যাডাম অনেকদিন তো স্কুলে আসি নাই । এই সময়টায় টিভি, সংবাদপত্র, ফেসবুক এমনকি আব্বা, আম্মাও তো সব সময় পরিমনি নিয়ে কথা বলতেন । তাই আমার মনে হয় আপনিও পরিমনি নিয়ে কথা বলতে চাইছেন ।
এই কৌতুকটা আসলে কৌতুক না, মেল শোভিনিজমের নগ্ন প্রকাশ । কিন্তু কৌতুকটা ভালো না লাগলেও এটা শুনে পিছনে ফেলা সময়ের কথা মনে পড়ে গেলো ।
ছেলেবেলায় সিনেমা হলে গিয়ে যতগুলো ছবি দেখেছি তার একটা বড় অংশ দেখেছি বড় আপার সাথে । বড় আপা অবশ্য সিনেমা বলতেন না, বলতেন বই । ঐ সময়ে অনেকেই বই বলতেন, কেনো বলতেন তখন ভাবি নাই কিন্তু এখন ভাবনাটা মনে আসছে । যাই হোক কেউ যদি জানেন তাহলে জানাবেন ।
থাকতাম তখন মহাখালী হাজারিবাড়ি পাড়ায় । কাছের সিনেমা হল ছিলো ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল । শাহীন হল অবশ্য আরো একটু কাছে ছিলো কিন্তু ওখানে বেশী যাওয়া হয় নাই । হল ছোট তার চাইতেও বড় কারণ মনে হয় নতুন ছবি কম আসতো শাহীন হলে ।
মহাখালী থেকে পাঁচ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে আনন্দ সিনেমা হলে যেতাম । টিকিটের দাম ছিলো সর্বোচ্চ দশ টাকা আর সর্বনিম্ন চার টাকা । তবে বেশীরভাগ দিনেই ব্লাকে টিকিট কাটতে হয়েছে । কারণ আমরা যে ছবিগুলো দেখতে যেতাম তার সবগুলোই হাউজফুল থাকতো । এখনকার মানুষের মতো দুনিয়ার সমস্ত বিনোদন মোবাইলের অল্প কয়েক ইঞ্চির মধ্যে তখনো ঢুকে যায় নাই । মানুষ তখনো সিনেমা হলে যেতো ।
যেসব ছবি দেখেছি তার কাহিনীগুলো তেমন মনে নাই । এর মাঝে একটা ছবির কথা কিছুটা মনে আছে । শাবানা নায়িকা আর বুলবুল নায়ক । ছবি শুরু হবার দশ মিনিট পর থেকে শাবানা কান্নাকাটি শুরু করলো আর শেষ দৃশ্য পর্যন্ত সেই কান্না চলতেই থাকলো । শাবানা অভিনীত অনেক ছবিই তখন এরকম ছিলো । আমার মনে হয় শাবানা অন স্ক্রিন যতটুকু সময় কেঁদেছেন এ যুগের কোনো নায়িকা তাদের সমগ্র জীবনে অতটা সময় অভিনয়ও করেন না । ঐ ছবিতে শাবানা ছিলেন শ্বশুর, শ্বাশুরি, ননদ এমনকি স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত এক নারী । ছবি শুরু হবার কিছুক্ষণ পর থেকেই আশে পাশে ফোঁপানোর শব্দ পাচ্ছিলাম । সময় যত যায় ফোঁপানোর শব্দ ততো বাড়তেই থাকে । তীব্র ফোঁপানোর শব্দের মাঝেই ছবি শেষ হয় । লাইন ধরে যখন হল থেকে বের হচ্ছি তখন আমার সামনের দুইজন আলাপ করছে ।
শাবানা আফায় বেহেশতে যাইবেই যাইবে ।
শুনে পাশেরজন মাথা নাড়তে নাড়তে বলেন
ঠিকই কইছোস, এরকম মানুষ বেহেশতে যাইবেই ।
আরো একটা ছবির কথা মনে আছে । এই ছবিটার নামটাও মনে আছে; নদের চাঁদ । এই ছবিটা যেদিন দেখতে যাই সেই দিনটা আমার কুফা দিন ছিলো । সকালে মার্বেল খেলতে গিয়ে রংধনু রং এর বড় ডেঙ্গাটা জলিলের কাছে হারলাম । ( ডেঙ্গা কি সেটা ভেঙ্গে বলতে পারবো না, আমাদের সময়ের মানুষরা ডেঙ্গা, চুই এসব বললেই বুঝতে পারবে) । আরো একটু পরে সিগারেটের প্যাকেটের তাস খেলতে গিয়ে রাজুর কাছে দুইটা দামী ব্রিগেড হারাইছি । দুংখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ছবি দেখতে গেলাম । ছবির কাহিনী হলো নায়ক ফারুক কঠিন এক মন্ত্র জানে । সেই মন্ত্র পড়ে পানি ফারুকের গায়ে ছিটালে সে কুমির হয়ে যায় । আবার একই পানি ছিটালে সে কুমির থেকে মানুষ হয়ে যেতে পারে । মন্ত্র পড়া ছিটানো পানিতে ফারুক কুমির হয়ে গেলো । কিন্তু এরপরেই ভিলেন মন্ত্র পড়া বাকি পানিটুকু ফেলে দিলো । ব্যস ফারুক আর কুমির থেকে মানুষ হতে পারে না । কুমির হয়ে নদ-নদীতে ঘুরে বেড়ায় । জমজমাট গল্প । সে রাতেই স্বপ্ন দেখলাম আমিও ঐ মন্ত্র শিখে ফেলেছি আর মন্ত্র দিয়েই জলিল আর রাজুকে কুমির বানিয়ে ফেলেছি ।
মজার ব্যাপার হলো এই স্বপ্নটা হঠাৎ হঠাৎ এখনো দেখি । তবে স্বপ্নে কাদের কুমির বানাই সেটা বলতে পারবো না । ৫৭ ধারার ভয় তো আছেই তার চাইতেও বড় কারণ দেশের শোল, বোয়াল, টাকি পুটি মাছের প্রতি মায়া । এরা কুমির হলে দেশের পানিতে আর কোনো প্রানীই তো থাকতে পারবে না । অবশ্য আমি বলি আর না বলি এরা এমনিতেও গোটা দেশটাই এক সময় কুমিরের মতই গিলে খাবে ।
প্রায় দুই বছর পরে ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে গেছে । ম্যাডাম ক্লাস শুরু করলেন,
পরমাণু হলো ...
ম্যাডাম আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছে ।
এক ছাত্র দাঁড়িয়ে বললো ।
কি ভুল ?
ম্যাডাম আপনি যে বললেন পরমাণু ঐটা মনে হয় পরিমনি হবে ।
মানে?
ম্যাডাম অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ।
না ম্যাডাম অনেকদিন তো স্কুলে আসি নাই । এই সময়টায় টিভি, সংবাদপত্র, ফেসবুক এমনকি আব্বা, আম্মাও তো সব সময় পরিমনি নিয়ে কথা বলতেন । তাই আমার মনে হয় আপনিও পরিমনি নিয়ে কথা বলতে চাইছেন ।
এই কৌতুকটা আসলে কৌতুক না, মেল শোভিনিজমের নগ্ন প্রকাশ । কিন্তু কৌতুকটা ভালো না লাগলেও এটা শুনে পিছনে ফেলা সময়ের কথা মনে পড়ে গেলো ।
ছেলেবেলায় সিনেমা হলে গিয়ে যতগুলো ছবি দেখেছি তার একটা বড় অংশ দেখেছি বড় আপার সাথে । বড় আপা অবশ্য সিনেমা বলতেন না, বলতেন বই । ঐ সময়ে অনেকেই বই বলতেন, কেনো বলতেন তখন ভাবি নাই কিন্তু এখন ভাবনাটা মনে আসছে । যাই হোক কেউ যদি জানেন তাহলে জানাবেন ।
থাকতাম তখন মহাখালী হাজারিবাড়ি পাড়ায় । কাছের সিনেমা হল ছিলো ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল । শাহীন হল অবশ্য আরো একটু কাছে ছিলো কিন্তু ওখানে বেশী যাওয়া হয় নাই । হল ছোট তার চাইতেও বড় কারণ মনে হয় নতুন ছবি কম আসতো শাহীন হলে ।
মহাখালী থেকে পাঁচ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে আনন্দ সিনেমা হলে যেতাম । টিকিটের দাম ছিলো সর্বোচ্চ দশ টাকা আর সর্বনিম্ন চার টাকা । তবে বেশীরভাগ দিনেই ব্লাকে টিকিট কাটতে হয়েছে । কারণ আমরা যে ছবিগুলো দেখতে যেতাম তার সবগুলোই হাউজফুল থাকতো । এখনকার মানুষের মতো দুনিয়ার সমস্ত বিনোদন মোবাইলের অল্প কয়েক ইঞ্চির মধ্যে তখনো ঢুকে যায় নাই । মানুষ তখনো সিনেমা হলে যেতো ।
যেসব ছবি দেখেছি তার কাহিনীগুলো তেমন মনে নাই । এর মাঝে একটা ছবির কথা কিছুটা মনে আছে । শাবানা নায়িকা আর বুলবুল নায়ক । ছবি শুরু হবার দশ মিনিট পর থেকে শাবানা কান্নাকাটি শুরু করলো আর শেষ দৃশ্য পর্যন্ত সেই কান্না চলতেই থাকলো । শাবানা অভিনীত অনেক ছবিই তখন এরকম ছিলো । আমার মনে হয় শাবানা অন স্ক্রিন যতটুকু সময় কেঁদেছেন এ যুগের কোনো নায়িকা তাদের সমগ্র জীবনে অতটা সময় অভিনয়ও করেন না । ঐ ছবিতে শাবানা ছিলেন শ্বশুর, শ্বাশুরি, ননদ এমনকি স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত এক নারী । ছবি শুরু হবার কিছুক্ষণ পর থেকেই আশে পাশে ফোঁপানোর শব্দ পাচ্ছিলাম । সময় যত যায় ফোঁপানোর শব্দ ততো বাড়তেই থাকে । তীব্র ফোঁপানোর শব্দের মাঝেই ছবি শেষ হয় । লাইন ধরে যখন হল থেকে বের হচ্ছি তখন আমার সামনের দুইজন আলাপ করছে ।
শাবানা আফায় বেহেশতে যাইবেই যাইবে ।
শুনে পাশেরজন মাথা নাড়তে নাড়তে বলেন
ঠিকই কইছোস, এরকম মানুষ বেহেশতে যাইবেই ।
আরো একটা ছবির কথা মনে আছে । এই ছবিটার নামটাও মনে আছে; নদের চাঁদ । এই ছবিটা যেদিন দেখতে যাই সেই দিনটা আমার কুফা দিন ছিলো । সকালে মার্বেল খেলতে গিয়ে রংধনু রং এর বড় ডেঙ্গাটা জলিলের কাছে হারলাম । ( ডেঙ্গা কি সেটা ভেঙ্গে বলতে পারবো না, আমাদের সময়ের মানুষরা ডেঙ্গা, চুই এসব বললেই বুঝতে পারবে) । আরো একটু পরে সিগারেটের প্যাকেটের তাস খেলতে গিয়ে রাজুর কাছে দুইটা দামী ব্রিগেড হারাইছি । দুংখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ছবি দেখতে গেলাম । ছবির কাহিনী হলো নায়ক ফারুক কঠিন এক মন্ত্র জানে । সেই মন্ত্র পড়ে পানি ফারুকের গায়ে ছিটালে সে কুমির হয়ে যায় । আবার একই পানি ছিটালে সে কুমির থেকে মানুষ হয়ে যেতে পারে । মন্ত্র পড়া ছিটানো পানিতে ফারুক কুমির হয়ে গেলো । কিন্তু এরপরেই ভিলেন মন্ত্র পড়া বাকি পানিটুকু ফেলে দিলো । ব্যস ফারুক আর কুমির থেকে মানুষ হতে পারে না । কুমির হয়ে নদ-নদীতে ঘুরে বেড়ায় । জমজমাট গল্প । সে রাতেই স্বপ্ন দেখলাম আমিও ঐ মন্ত্র শিখে ফেলেছি আর মন্ত্র দিয়েই জলিল আর রাজুকে কুমির বানিয়ে ফেলেছি ।
মজার ব্যাপার হলো এই স্বপ্নটা হঠাৎ হঠাৎ এখনো দেখি । তবে স্বপ্নে কাদের কুমির বানাই সেটা বলতে পারবো না । ৫৭ ধারার ভয় তো আছেই তার চাইতেও বড় কারণ দেশের শোল, বোয়াল, টাকি পুটি মাছের প্রতি মায়া । এরা কুমির হলে দেশের পানিতে আর কোনো প্রানীই তো থাকতে পারবে না । অবশ্য আমি বলি আর না বলি এরা এমনিতেও গোটা দেশটাই এক সময় কুমিরের মতই গিলে খাবে ।