টিউলিপ যেন হল্যান্ডের সমার্থক। অথচ এর আদি নিবাস মধ্য এশিয়ায়। একে জনপ্রিয় করেন অটোমান সম্রাটরা। অথচ সেটা আজ সবাই ভুলতে বসেছে। তবে প্রতিবছর ইস্তাম্বুলের এমিরগান পার্কে অনুষ্ঠিত হয় টিউলিপ উৎসব। সেই টিউলিপ দেখার অভিজ্ঞতা অনির্বচনীয়। এর সঙ্গে যোটক হয় ইউরোপ অংশে বসে এশিয়া অংশের ইস্তাম্বুল দেখার অভিজ্ঞতা।
এমিরগান পার্কের প্রবেশদ্বার
জার্মানির হামবুর্গ এয়ারপোর্ট থেকে আমি ও আমার স্ত্রী জিনাত চড়ে বসলাম টার্কিশ এয়ারলাইনসের প্লেনে। গন্তব্য সুলতান সুলেমানের দেশ, তুরস্ক। এক সপ্তাহের এই সফরে আমরা আনাতোলিয়া, ইস্তাম্বুল ও কাপাডোসিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা করি। ভ্রমণে এমনিতেই মন প্রফুল্ল থাকে। তার ওপর এবার যাচ্ছি ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশে। প্লেনের জানালা দিয়ে মেঘেদের ভেসে বেড়ানো দেখতে বেশ ভালোই লাগছিল। জানালার বাইরেই দৃষ্টি স্থির হলো, হঠাৎই চোখ পড়ল সামনের সিটের পেছনে থাকা পকেটে। ভেতর থেকে একটা ম্যাগাজিন উঁকি দিচ্ছে।
এই লেখাটিই উদ্বুদ্ধ করে লেখককে
এই ম্যাগাজিনগুলো সাধারণত এয়ারলাইনসের ডিউটি ফ্রি প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে ভর্তি থাকে। ফ্লাইটে তেমন কোনো কেনাকাটার ইচ্ছা না থাকায়, অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ম্যাগাজিনটা হাতে নিলাম। খুলতেই চোখ ধাঁধানো সব ঘড়ি, পারফিউমসহ নানা ধরনের লোভনীয় পণ্যের রঙিন বিজ্ঞাপন। প্রায় চার ঘণ্টার ফ্লাইট তাই সময় কাটানোর জন্য অলস হাতে পাতা উল্টে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর একটা আর্টিকেলের শিরোনাম দেখে থামলাম। যেখানে লেখা ইস্তাম্বুলের টিউলিপ পার্ক নিয়ে।
টিউলিপ নামটা শুনলে, ইউরোপে বসবাসকারী যে কারও, প্রথম যে দেশটির কথা মনে পড়বে তা হলো নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড। আমারও মনে পড়ল কয়েক বছর আগের কথা। সেবার ঠান্ডায়, আমরা বন্ধুরা মিলে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম গিয়েছিলাম ঘুরতে; কিন্তু জানুয়ারি মাসের সে সময়টা টিউলিপের সিজন না হওয়ায়, দেখা হয়নি কিউকেনহফের বিশ্বখ্যাত টিউলিপ বাগান। পরে আরও কয়েকবার যাব যাব করেও যাওয়া হয়নি। মনের কোণে লুকিয়ে থাকা সে আক্ষেপ থেকেই হয়তো খুব আগ্রহের সঙ্গে পড়া শুরু করলাম টিউলিপ পার্কের আর্টিকেলটা। জানতে পারলাম, প্রতিবছর এপ্রিলে ইস্তাম্বুলেও টিউলিপ ফেস্টিভ্যাল হয়। বসন্তের সেই সময়টায় নাকি পুরো শহর ছেয়ে যায় নানা রঙের লাখ লাখ টিউলিপে। পড়তে না পড়তেই মস্তিষ্কের আলস্য কেটে গিয়ে কিছুটা উত্তেজনা ভর করল। জিনাতকে বললাম ব্যাপারটা, শোনার পর সে–ও আগ্রহী হয়ে উঠল। হাতের ম্যাগাজিনটা গুটিয়ে দুজনে একমত হলাম, এবার আর মিস করা যাবে না, টিউলিপের বাগান এ যাত্রায় দেখবই দেখব।
তুরস্কে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল সাগরকন্যা আনাতোলিয়া। মোটামুটি সকালের দিকে আমরা ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে নামি। আমাদের হোটেল ছিল তাকসিম স্কয়ারের কাছে। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার জন্য একটা ট্যাক্সি নিই এবং প্রতারণার শিকার হই। এ নিয়েও বিস্তারিত লিখব হয়তো কোনো দিন। যাহোক, ট্যাক্সি বিদায় করে আমরা হোটেলে চেকইন করি। ইস্তাম্বুল তো এসে পড়লাম এবার টিউলিপ বাগান দেখার পালা। তবে আগে কিছু খেয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম অন্নের সন্ধানে। তাকসিম স্কয়ারে চকচকে দেখতে একটা রেস্টুরেন্টে বেশ আয়েশ করেই মধ্যাহ্নভোজ সারলাম। এরই মধ্যে জেনে নিলাম, ইস্তাম্বুলের বৃহত্তম টিউলিপ পার্ক এমিরগান পার্কে যাওয়ার উপায়।
বসফরাসের তীর ঘেঁসে জনবসতি, ছবি: উইকিপিডিয়া
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এমিরগান যাওয়ার বাস খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। বাসে উঠেই বেশ ফুরফুরে লাগছিল। সকালের বাজে অভিজ্ঞতা যেন একেবারেই ভুলে গেলাম। বাস ছুটে চলল জগদ্বিখ্যাত বসফরাস প্রণালির তীর ঘেঁষে। কী সুন্দর আর বিশাল এই গাঢ় নীল প্রণালি! এটার ঠিক যে পাশটায় আমাদের বাস চলছে, ইস্তাম্বুলের এই অংশটিকে বলা হয় ইউরোপের শেষাংশ আর বসফরাসের অপর প্রান্ত থেকে এশিয়ার শুরু। ইস্তাম্বুল পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম শহর। এবং অন্যতম ট্রান্সকন্টিনেন্টাল শহর। যে শহরগুলো একাধিক মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত, তাদের ট্রান্সকন্টিনেন্টাল শহর বলা হয়।
বেশির ভাগ মসজিদের নকশায় অটোমান শাসনামলের ছাপ বিদ্যমান, ছবি: উইকিপিডিয়া
এ রকম শহর পৃথিবীতে কেবল পাঁচটিই আছে। এদিকে বাস ছুটে চলছে আর আমরা বাসের জানালা দিয়ে উপভোগ করছি ইস্তাম্বুলের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। ইস্তাম্বুলের সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ বলা যায় এখানকার নজরকাড়া মসজিদগুলো। বেশির ভাগ মসজিদের নকশায় অটোমান শাসনামলের ছাপ বিদ্যমান। অটোমান নির্মাণশৈলীর মসজিদগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, মসজিদের মধ্যখানে একটা অর্ধচন্দ্রাকার গম্বুজ থাকে, যার চার কোনায় থাকে চারটা সুউচ্চ মিনার। পৃথিবীর যেখানেই আপনি এমন মসজিদ দেখতে পাবেন, নিঃসন্দেহে ধরে নেবেন সেখানে হয় অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল নতুবা ওটা টার্কিশদের হাতে গড়া।
প্রায় ৪০ মিনিট বাসযাত্রার পর আমরা এমিরগান পার্কের সামনে নামলাম। পার্কের গেট দিয়ে ঢুকতেই আমাদের স্বাগত জানায় একটা সবুজ ঘাসে নকশা করা দেয়াল, যাতে টার্কিশ ভাষায় লেখা EMIRGAN KORUSU। দেয়ালটির গায়ে একটি বিশাল আকৃতির টিউলিপের কারুকাজ দেখে পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যে ঠিক জায়গাতেই এসে পৌঁছেছি আমরা।
চলছে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি
পার্কে প্রবেশের পর যতই ভেতরের দিকে যাই, ততই মুগ্ধ হতে থাকি আমরা। প্রায় ১১৭ একরের ওপর নির্মিত এই বিশাল পার্কটিতে রয়েছে প্রচুর পাইনগাছসহ বিচিত্র প্রজাতির বিভিন্ন গাছগাছালি, স্বচ্ছ পানির লেক, ঝরনা ইত্যাদি। সঙ্গে লাখ লাখ রংবেরঙের টিউলিপ। শেষ বিকেলের আলোয় সারিবদ্ধ লাল, হলুদ, সাদা, বেগুনিসহ আরও কত শত রঙের টিউলিপগুলো অনেকটা রঙিন কার্পেটের মতো দেখাচ্ছিল। ক্যামেরায় ছবি তুলেই যাচ্ছি কিন্তু কোনো ছবিই যেন মনমতো হচ্ছে না। চোখের সামনের মায়াবী দৃশ্য কিছুই যেন ফ্রেমবন্দী করতে পারছিলাম না।
এমিরগান পার্ক থেকে দেখা রসফরাস; এর এপারে ইউরোপ, ওপারে এশিয়া
বসফরাসের নীল পানি ছুঁয়ে আসা বাতাসে আন্দোলিত হয়ে যাচ্ছিল বাগানের সব গাছগাছালি, যেন তারা সব মনের সুখে আনন্দে দুলে যাচ্ছে এদিক–সেদিক। আহা কী সুন্দর সেই দৃশ্য! বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম টিউলিপ উৎপাদনকারী দেশ নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক নেদারল্যান্ডসের শহর কিউকেনহফে আয়োজিত টিউলিপ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। কিন্তু ইস্তাম্বুলে এসে আমরা জানতে পারলাম এপ্রিলের শেষ তিন সপ্তাহজুড়ে এখানেও বসে টিউলিপের মন মাতানো উৎসব। আমরা যেদিন এমিরগান পার্কে গেলাম, সেদিন ছিল এপ্রিলের ২৭ তারিখ, উৎসবের একদম শেষের দিকে তাই আমেজটাও কমে এসেছিল। তারপরও যা দেখতে পেয়েছি, আমরা তাতেই মুগ্ধ। এখানে না এলে জানাই হতো না টিউলিপের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কটা আসলে কতটা গভীর।
টিউলিপের আদি জন্মস্থান মধ্য এশিয়ায়, বিশেষ করে তিয়ান শাহ ও হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশের দেশগুলোতে। যেমন কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, ইরান ইত্যাদি। শীতকালের তীব্র শীত পড়ে আবার গরমকালের প্রখর শুষ্ক আবহাওয়াকে টিউলিপের জন্য আদর্শ বলা চলে। ওই দুর্গম এলাকায় এভাবেই বছরের পর বছর লোকালয় থেকে দূরে বহু দূরে পাহাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন করে আসছিল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুল টিউলিপ। সময়টা প্রায় এক হাজার বছর আগে, এই দিকটায় তখন অটোমানদের জয়জয়কার। শোনা যায়, পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অটোম্যান সৈন্যদলের চোখে পড়ে শত শত টিউলিপের বর্ণিল সমারোহ। টিউলিপের রূপে বিমোহিত সৈন্যদল তাদের সুলতানের জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে যায় বেশ কিছু ফুল।
টিউলিপের মতেই আকর্ষক এর জন্ম ইতিহাস
সুলতান এত সুন্দর উপহার পেয়ে মুগ্ধ হয়ে যান এবং ইচ্ছা প্রকাশ করেন যেন এই ফুলগাছগুলো তাঁর বাগানে শোভা পায়। ইতিহাস বলে, ষোড়শ শতকের দিকে সুলতান সুলেমানের শাসনামলে প্রথম টিউলিপের চাষাবাদ শুরু হয়। সেই থেকে লোকালয়ে বিস্তার শুরু হয় টিউলিপের। খুব অল্প সময়েই টিউলিপ হয়ে ওঠে আভিজাত্য, রাজকীয় এমনকি পবিত্রতার প্রতীক। টিউলিপের মর্যাদা এতটাই উচ্চমুখী ছিল যে সুলতানরা তাঁদের মিত্র ইউরোপীয় রাজ্যগুলোতে উপহার হিসেবেও টিউলিপ পাঠানো শুরু করেন। অনেক রাজ্যেই বেশ সমাদৃত হয় এই ফুল। এর মাঝে ডাচরা এই ফুল একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেন। এ ভালোবাসা দিনে দিনে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। তখন কেবল উপহারে আর পোষাচ্ছিল না। অচিরেই নেদারল্যান্ডসেও শুরু হয়ে যায় টিউলিপের চাষাবাদ।
বণিক হিসেবে ডাচদের আছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি, মূলত তারাই টিউলিপকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। এদিকে চাহিদার লাগাম যেন কোনোভাবেই টেনে রাখা যাচ্ছিল না, ফলে টিউলিপের দামও ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। এমনও দিন ছিল যখন সোনার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল টিউলিপের কন্দ বা বাল্ব। কিছু কিছু দুর্লভ জাতের টিউলিপের মূল্য দিয়ে নাকি বাড়িঘরও কেনা যেত। ইতিহাসে এই উন্মাদনাকে ‘টিউলিপ ম্যানিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সে সময়ের একটি ঘটনা ছিল অনেকটা এমন, অতিরিক্ত লাভের আশায় দেখা গেল, সদলবলে লোকজন টিউলিপ ব্যবসায় নেমে পড়ল। পথেঘাটে, রাস্তায় বাজারে সবখানে কেবল টিউলিপ বিক্রেতা কিন্তু এবার আর ক্রেতার দেখা মিলে না। অতঃপর যা ঘটার তাই ঘটল, নিমেষেই ধসে পড়ল টিউলিপ নিয়ে যত সব বাণিজ্য।
নানা রঙের টিউলিপ দেখে মুগ্ধ লেখকের স্ত্রী জিনাত
কিন্তু বণিক ডাচরা হাল ছাড়েনি বরং কীভাবে আরও সুন্দর ও বিচিত্র টিউলিপ উৎপাদন করা যায়, তারা সে গবেষণা করতে লেগে গেল। এদিকে ইউরোপের আনাচকানাচে টিউলিপ ছড়িয়ে পড়লেও তারা বুঝতে পেরেছিল বহির্বিশ্বে এর আকর্ষণ ও চাহিদা বাড়বে। এর মূল কারণ টিউলিপ চাষ করার জন্য যে ধরনের আবহাওয়া প্রয়োজন, তা বিশ্বের সবখানে নেই। আস্তে আস্তে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের প্রিয়তমা টিউলিপ সময়ের স্রোতে স্থান করে নেয় ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে। দুর্গম পাহাড়ের দুষ্কর ও অদ্ভুত সুন্দর এই ফুলটিকে আমাদের মতো সাধারণের দৃষ্টিসীমানায় নিয়ে আসার জন্য অটোমান ও ডাচদের প্রতি একটা জোরালো ধন্যবাদ দেওয়াই যায়। নিজেদের ভ্রমণের গল্প করতে এসে দেখি টিউলিপের ভ্রমণ কাহিনিও বলে গেলাম। আমার মনে হয়, একটা নতুন জায়গায় গিয়ে সে জায়গার ইতিহাস, সংস্কৃতি জানার মধ্যেই রয়েছে ভ্রমণের সর্বোচ্চ আনন্দ।
শেষ বিকেলের আলোয় এমিরগান পার্কের টিউলিপগুলো যেন আরও জ্বলজ্বল করছিল। নানা রঙের বিচ্ছুরণে আর হালকা বাতাসে দোদুল্যমান সারি সারি রংবেরঙের ফুল গাছগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন আজ তাদের প্যারেড হচ্ছে, ঠিক যেমন কার্নিভালে হয়। টিউলিপ বাদেও হরেক রকমের গাছপালায় ভর্তি এই পার্ক। আছে বাচ্চাদের খেলার জায়গা, ফোয়ারা, পিকনিক স্পট, রেস্টুরেন্ট, টেরেস ভিউ পয়েন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। পার্কের একটা বিশাল অংশ শুধুই বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা, যেখানে ট্রি হাউস থেকে শুরু করে রয়েছে খেলাধুলার নানা আয়োজন। এত এত দর্শনীয় স্থান থাকায় পার্কটি ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জন্যও বেশ জনপ্রিয়। আমাদের অল্প সময়ের ভ্রমণেই আমরা দেখেছি বেশ কয়েকটি সুসজ্জিত যুগলের ফটোগ্রাফি দলের ফটোসেশন।
টিউলিপদের সান্নিধ্যে লেখক
কেউ যদি কোথাও না থেমে হেঁটে হেঁটে পুরো পার্কটি চক্কর দিতে চায়, তারও বোধ হয় ঘণ্টা দুই লেগে যাবে। হাঁটতে গিয়ে ক্লান্তি ভর করলে সে জন্যও আছে বিশ্রাম নেওয়ার আয়োজন। পছন্দমতো যেকোনো বেঞ্চিতে বসে অবলোকন করুন সুবিশাল বসফরাসের ওপর ব্যস্ত নৌযানের ছোটাছুটি। দৃষ্টি আরেকটু দূরে নিলেই দেখা যাবে বসফরাসের ওপারের ইস্তাম্বুল, যা এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। ইউরোপে বসে এশিয়া দেখার যে অনুভূতি, তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
* লেখক: চৌধুরী মিরাজ মাহমুদ ছগীর, ডেন্টাল সার্জন
এমিরগান পার্কের প্রবেশদ্বার
জার্মানির হামবুর্গ এয়ারপোর্ট থেকে আমি ও আমার স্ত্রী জিনাত চড়ে বসলাম টার্কিশ এয়ারলাইনসের প্লেনে। গন্তব্য সুলতান সুলেমানের দেশ, তুরস্ক। এক সপ্তাহের এই সফরে আমরা আনাতোলিয়া, ইস্তাম্বুল ও কাপাডোসিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা করি। ভ্রমণে এমনিতেই মন প্রফুল্ল থাকে। তার ওপর এবার যাচ্ছি ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশে। প্লেনের জানালা দিয়ে মেঘেদের ভেসে বেড়ানো দেখতে বেশ ভালোই লাগছিল। জানালার বাইরেই দৃষ্টি স্থির হলো, হঠাৎই চোখ পড়ল সামনের সিটের পেছনে থাকা পকেটে। ভেতর থেকে একটা ম্যাগাজিন উঁকি দিচ্ছে।
এই লেখাটিই উদ্বুদ্ধ করে লেখককে
এই ম্যাগাজিনগুলো সাধারণত এয়ারলাইনসের ডিউটি ফ্রি প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে ভর্তি থাকে। ফ্লাইটে তেমন কোনো কেনাকাটার ইচ্ছা না থাকায়, অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ম্যাগাজিনটা হাতে নিলাম। খুলতেই চোখ ধাঁধানো সব ঘড়ি, পারফিউমসহ নানা ধরনের লোভনীয় পণ্যের রঙিন বিজ্ঞাপন। প্রায় চার ঘণ্টার ফ্লাইট তাই সময় কাটানোর জন্য অলস হাতে পাতা উল্টে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর একটা আর্টিকেলের শিরোনাম দেখে থামলাম। যেখানে লেখা ইস্তাম্বুলের টিউলিপ পার্ক নিয়ে।
টিউলিপ নামটা শুনলে, ইউরোপে বসবাসকারী যে কারও, প্রথম যে দেশটির কথা মনে পড়বে তা হলো নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড। আমারও মনে পড়ল কয়েক বছর আগের কথা। সেবার ঠান্ডায়, আমরা বন্ধুরা মিলে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম গিয়েছিলাম ঘুরতে; কিন্তু জানুয়ারি মাসের সে সময়টা টিউলিপের সিজন না হওয়ায়, দেখা হয়নি কিউকেনহফের বিশ্বখ্যাত টিউলিপ বাগান। পরে আরও কয়েকবার যাব যাব করেও যাওয়া হয়নি। মনের কোণে লুকিয়ে থাকা সে আক্ষেপ থেকেই হয়তো খুব আগ্রহের সঙ্গে পড়া শুরু করলাম টিউলিপ পার্কের আর্টিকেলটা। জানতে পারলাম, প্রতিবছর এপ্রিলে ইস্তাম্বুলেও টিউলিপ ফেস্টিভ্যাল হয়। বসন্তের সেই সময়টায় নাকি পুরো শহর ছেয়ে যায় নানা রঙের লাখ লাখ টিউলিপে। পড়তে না পড়তেই মস্তিষ্কের আলস্য কেটে গিয়ে কিছুটা উত্তেজনা ভর করল। জিনাতকে বললাম ব্যাপারটা, শোনার পর সে–ও আগ্রহী হয়ে উঠল। হাতের ম্যাগাজিনটা গুটিয়ে দুজনে একমত হলাম, এবার আর মিস করা যাবে না, টিউলিপের বাগান এ যাত্রায় দেখবই দেখব।
তুরস্কে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল সাগরকন্যা আনাতোলিয়া। মোটামুটি সকালের দিকে আমরা ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে নামি। আমাদের হোটেল ছিল তাকসিম স্কয়ারের কাছে। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার জন্য একটা ট্যাক্সি নিই এবং প্রতারণার শিকার হই। এ নিয়েও বিস্তারিত লিখব হয়তো কোনো দিন। যাহোক, ট্যাক্সি বিদায় করে আমরা হোটেলে চেকইন করি। ইস্তাম্বুল তো এসে পড়লাম এবার টিউলিপ বাগান দেখার পালা। তবে আগে কিছু খেয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম অন্নের সন্ধানে। তাকসিম স্কয়ারে চকচকে দেখতে একটা রেস্টুরেন্টে বেশ আয়েশ করেই মধ্যাহ্নভোজ সারলাম। এরই মধ্যে জেনে নিলাম, ইস্তাম্বুলের বৃহত্তম টিউলিপ পার্ক এমিরগান পার্কে যাওয়ার উপায়।
বসফরাসের তীর ঘেঁসে জনবসতি, ছবি: উইকিপিডিয়া
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এমিরগান যাওয়ার বাস খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। বাসে উঠেই বেশ ফুরফুরে লাগছিল। সকালের বাজে অভিজ্ঞতা যেন একেবারেই ভুলে গেলাম। বাস ছুটে চলল জগদ্বিখ্যাত বসফরাস প্রণালির তীর ঘেঁষে। কী সুন্দর আর বিশাল এই গাঢ় নীল প্রণালি! এটার ঠিক যে পাশটায় আমাদের বাস চলছে, ইস্তাম্বুলের এই অংশটিকে বলা হয় ইউরোপের শেষাংশ আর বসফরাসের অপর প্রান্ত থেকে এশিয়ার শুরু। ইস্তাম্বুল পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম শহর। এবং অন্যতম ট্রান্সকন্টিনেন্টাল শহর। যে শহরগুলো একাধিক মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত, তাদের ট্রান্সকন্টিনেন্টাল শহর বলা হয়।
বেশির ভাগ মসজিদের নকশায় অটোমান শাসনামলের ছাপ বিদ্যমান, ছবি: উইকিপিডিয়া
এ রকম শহর পৃথিবীতে কেবল পাঁচটিই আছে। এদিকে বাস ছুটে চলছে আর আমরা বাসের জানালা দিয়ে উপভোগ করছি ইস্তাম্বুলের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। ইস্তাম্বুলের সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ বলা যায় এখানকার নজরকাড়া মসজিদগুলো। বেশির ভাগ মসজিদের নকশায় অটোমান শাসনামলের ছাপ বিদ্যমান। অটোমান নির্মাণশৈলীর মসজিদগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, মসজিদের মধ্যখানে একটা অর্ধচন্দ্রাকার গম্বুজ থাকে, যার চার কোনায় থাকে চারটা সুউচ্চ মিনার। পৃথিবীর যেখানেই আপনি এমন মসজিদ দেখতে পাবেন, নিঃসন্দেহে ধরে নেবেন সেখানে হয় অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল নতুবা ওটা টার্কিশদের হাতে গড়া।
প্রায় ৪০ মিনিট বাসযাত্রার পর আমরা এমিরগান পার্কের সামনে নামলাম। পার্কের গেট দিয়ে ঢুকতেই আমাদের স্বাগত জানায় একটা সবুজ ঘাসে নকশা করা দেয়াল, যাতে টার্কিশ ভাষায় লেখা EMIRGAN KORUSU। দেয়ালটির গায়ে একটি বিশাল আকৃতির টিউলিপের কারুকাজ দেখে পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যে ঠিক জায়গাতেই এসে পৌঁছেছি আমরা।
চলছে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি
পার্কে প্রবেশের পর যতই ভেতরের দিকে যাই, ততই মুগ্ধ হতে থাকি আমরা। প্রায় ১১৭ একরের ওপর নির্মিত এই বিশাল পার্কটিতে রয়েছে প্রচুর পাইনগাছসহ বিচিত্র প্রজাতির বিভিন্ন গাছগাছালি, স্বচ্ছ পানির লেক, ঝরনা ইত্যাদি। সঙ্গে লাখ লাখ রংবেরঙের টিউলিপ। শেষ বিকেলের আলোয় সারিবদ্ধ লাল, হলুদ, সাদা, বেগুনিসহ আরও কত শত রঙের টিউলিপগুলো অনেকটা রঙিন কার্পেটের মতো দেখাচ্ছিল। ক্যামেরায় ছবি তুলেই যাচ্ছি কিন্তু কোনো ছবিই যেন মনমতো হচ্ছে না। চোখের সামনের মায়াবী দৃশ্য কিছুই যেন ফ্রেমবন্দী করতে পারছিলাম না।
এমিরগান পার্ক থেকে দেখা রসফরাস; এর এপারে ইউরোপ, ওপারে এশিয়া
বসফরাসের নীল পানি ছুঁয়ে আসা বাতাসে আন্দোলিত হয়ে যাচ্ছিল বাগানের সব গাছগাছালি, যেন তারা সব মনের সুখে আনন্দে দুলে যাচ্ছে এদিক–সেদিক। আহা কী সুন্দর সেই দৃশ্য! বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম টিউলিপ উৎপাদনকারী দেশ নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক নেদারল্যান্ডসের শহর কিউকেনহফে আয়োজিত টিউলিপ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। কিন্তু ইস্তাম্বুলে এসে আমরা জানতে পারলাম এপ্রিলের শেষ তিন সপ্তাহজুড়ে এখানেও বসে টিউলিপের মন মাতানো উৎসব। আমরা যেদিন এমিরগান পার্কে গেলাম, সেদিন ছিল এপ্রিলের ২৭ তারিখ, উৎসবের একদম শেষের দিকে তাই আমেজটাও কমে এসেছিল। তারপরও যা দেখতে পেয়েছি, আমরা তাতেই মুগ্ধ। এখানে না এলে জানাই হতো না টিউলিপের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কটা আসলে কতটা গভীর।
টিউলিপের আদি জন্মস্থান মধ্য এশিয়ায়, বিশেষ করে তিয়ান শাহ ও হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশের দেশগুলোতে। যেমন কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, ইরান ইত্যাদি। শীতকালের তীব্র শীত পড়ে আবার গরমকালের প্রখর শুষ্ক আবহাওয়াকে টিউলিপের জন্য আদর্শ বলা চলে। ওই দুর্গম এলাকায় এভাবেই বছরের পর বছর লোকালয় থেকে দূরে বহু দূরে পাহাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন করে আসছিল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুল টিউলিপ। সময়টা প্রায় এক হাজার বছর আগে, এই দিকটায় তখন অটোমানদের জয়জয়কার। শোনা যায়, পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অটোম্যান সৈন্যদলের চোখে পড়ে শত শত টিউলিপের বর্ণিল সমারোহ। টিউলিপের রূপে বিমোহিত সৈন্যদল তাদের সুলতানের জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে যায় বেশ কিছু ফুল।
টিউলিপের মতেই আকর্ষক এর জন্ম ইতিহাস
সুলতান এত সুন্দর উপহার পেয়ে মুগ্ধ হয়ে যান এবং ইচ্ছা প্রকাশ করেন যেন এই ফুলগাছগুলো তাঁর বাগানে শোভা পায়। ইতিহাস বলে, ষোড়শ শতকের দিকে সুলতান সুলেমানের শাসনামলে প্রথম টিউলিপের চাষাবাদ শুরু হয়। সেই থেকে লোকালয়ে বিস্তার শুরু হয় টিউলিপের। খুব অল্প সময়েই টিউলিপ হয়ে ওঠে আভিজাত্য, রাজকীয় এমনকি পবিত্রতার প্রতীক। টিউলিপের মর্যাদা এতটাই উচ্চমুখী ছিল যে সুলতানরা তাঁদের মিত্র ইউরোপীয় রাজ্যগুলোতে উপহার হিসেবেও টিউলিপ পাঠানো শুরু করেন। অনেক রাজ্যেই বেশ সমাদৃত হয় এই ফুল। এর মাঝে ডাচরা এই ফুল একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেন। এ ভালোবাসা দিনে দিনে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। তখন কেবল উপহারে আর পোষাচ্ছিল না। অচিরেই নেদারল্যান্ডসেও শুরু হয়ে যায় টিউলিপের চাষাবাদ।
বণিক হিসেবে ডাচদের আছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি, মূলত তারাই টিউলিপকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। এদিকে চাহিদার লাগাম যেন কোনোভাবেই টেনে রাখা যাচ্ছিল না, ফলে টিউলিপের দামও ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। এমনও দিন ছিল যখন সোনার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল টিউলিপের কন্দ বা বাল্ব। কিছু কিছু দুর্লভ জাতের টিউলিপের মূল্য দিয়ে নাকি বাড়িঘরও কেনা যেত। ইতিহাসে এই উন্মাদনাকে ‘টিউলিপ ম্যানিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সে সময়ের একটি ঘটনা ছিল অনেকটা এমন, অতিরিক্ত লাভের আশায় দেখা গেল, সদলবলে লোকজন টিউলিপ ব্যবসায় নেমে পড়ল। পথেঘাটে, রাস্তায় বাজারে সবখানে কেবল টিউলিপ বিক্রেতা কিন্তু এবার আর ক্রেতার দেখা মিলে না। অতঃপর যা ঘটার তাই ঘটল, নিমেষেই ধসে পড়ল টিউলিপ নিয়ে যত সব বাণিজ্য।
নানা রঙের টিউলিপ দেখে মুগ্ধ লেখকের স্ত্রী জিনাত
কিন্তু বণিক ডাচরা হাল ছাড়েনি বরং কীভাবে আরও সুন্দর ও বিচিত্র টিউলিপ উৎপাদন করা যায়, তারা সে গবেষণা করতে লেগে গেল। এদিকে ইউরোপের আনাচকানাচে টিউলিপ ছড়িয়ে পড়লেও তারা বুঝতে পেরেছিল বহির্বিশ্বে এর আকর্ষণ ও চাহিদা বাড়বে। এর মূল কারণ টিউলিপ চাষ করার জন্য যে ধরনের আবহাওয়া প্রয়োজন, তা বিশ্বের সবখানে নেই। আস্তে আস্তে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের প্রিয়তমা টিউলিপ সময়ের স্রোতে স্থান করে নেয় ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে। দুর্গম পাহাড়ের দুষ্কর ও অদ্ভুত সুন্দর এই ফুলটিকে আমাদের মতো সাধারণের দৃষ্টিসীমানায় নিয়ে আসার জন্য অটোমান ও ডাচদের প্রতি একটা জোরালো ধন্যবাদ দেওয়াই যায়। নিজেদের ভ্রমণের গল্প করতে এসে দেখি টিউলিপের ভ্রমণ কাহিনিও বলে গেলাম। আমার মনে হয়, একটা নতুন জায়গায় গিয়ে সে জায়গার ইতিহাস, সংস্কৃতি জানার মধ্যেই রয়েছে ভ্রমণের সর্বোচ্চ আনন্দ।
শেষ বিকেলের আলোয় এমিরগান পার্কের টিউলিপগুলো যেন আরও জ্বলজ্বল করছিল। নানা রঙের বিচ্ছুরণে আর হালকা বাতাসে দোদুল্যমান সারি সারি রংবেরঙের ফুল গাছগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন আজ তাদের প্যারেড হচ্ছে, ঠিক যেমন কার্নিভালে হয়। টিউলিপ বাদেও হরেক রকমের গাছপালায় ভর্তি এই পার্ক। আছে বাচ্চাদের খেলার জায়গা, ফোয়ারা, পিকনিক স্পট, রেস্টুরেন্ট, টেরেস ভিউ পয়েন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। পার্কের একটা বিশাল অংশ শুধুই বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা, যেখানে ট্রি হাউস থেকে শুরু করে রয়েছে খেলাধুলার নানা আয়োজন। এত এত দর্শনীয় স্থান থাকায় পার্কটি ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জন্যও বেশ জনপ্রিয়। আমাদের অল্প সময়ের ভ্রমণেই আমরা দেখেছি বেশ কয়েকটি সুসজ্জিত যুগলের ফটোগ্রাফি দলের ফটোসেশন।
টিউলিপদের সান্নিধ্যে লেখক
কেউ যদি কোথাও না থেমে হেঁটে হেঁটে পুরো পার্কটি চক্কর দিতে চায়, তারও বোধ হয় ঘণ্টা দুই লেগে যাবে। হাঁটতে গিয়ে ক্লান্তি ভর করলে সে জন্যও আছে বিশ্রাম নেওয়ার আয়োজন। পছন্দমতো যেকোনো বেঞ্চিতে বসে অবলোকন করুন সুবিশাল বসফরাসের ওপর ব্যস্ত নৌযানের ছোটাছুটি। দৃষ্টি আরেকটু দূরে নিলেই দেখা যাবে বসফরাসের ওপারের ইস্তাম্বুল, যা এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। ইউরোপে বসে এশিয়া দেখার যে অনুভূতি, তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
* লেখক: চৌধুরী মিরাজ মাহমুদ ছগীর, ডেন্টাল সার্জন