একাকী বালক
Member
লিওনেল মেসি তখন ১৬ বছরের একজন প্রতিভাবান লা মাসিয়ান। ক্লাবের অর্থনৈতিক দূরাবস্থায় বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেইসময়ের সেরা দুই লা মাসিয়ান এর একজনকে বিক্রি করে দেওয়ার। দুজনের মধ্যে একজন লিওনেল মেসি এবং অপরজন সেস্ক ফাবরেগাস! ফাবরেগাস যেহেতু স্প্যানিশ ছিলেন সেহেতু লিওনেল মেসির বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা'ই বেশি ছিল। কিন্তু টিটো ভিলানোভা নামের একজন ভদ্রলোক সেইসময় বার্সেলোনা বি দলের কোচ ছিলেন। যিনি লিওনেল মেসিকে বিক্রি করার পক্ষে ছিলেন না। মেসি'তে তিনি বিশ্বাস রাখতে চান। বোর্ড কে বলেছিলেন মেসি বিক্রির জন্য না। আমরা অনেকেই বলাবলি করি যে লিওনেল মেসিকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছিলেন পেপ গার্দিওলা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মেসিকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছিলেন টিটো ভিলানোভা।
টিটো ভিলানোভার মাধ্যমে লা মাসিয়ায় ফাবরেগাস, জেরার্ড পিকে এবং লিওনেল মেসির মতো প্রোমিসিং ট্যালেন্ট রা টেকনিকালি বুস্ট পেয়েছিল। এবং টিটো ভিলানোভা'ই প্রথম কোচ যিনি লিওনেল মেসিকে সর্বপ্রথম ফলস্ নাইন হিসেবে খেলিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মূল দলে গার্দিওলা মেসি'কে এই রোলে খেলিয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন।
স্যার ক্রুইফ এর পর তার ফিলসফি বহনকারী কাউকে খুঁজছিল বার্সেলোনা। ক্রুইফ এরই ছাত্র জোসেফ পেপ গার্দিওলার মাধ্যমে আবারো মডার্ন ফুটবলে ক্রুইফের টোটাল ফুটবল ফিলসফি বিশ্ব ফুটবলে শাসন করতে শুরু করে। তখন অনেকেই গার্দিওলা পরবর্তী ক্রুইফ ডিএনএ বহনকারী কারো খুঁজে ছিলেন। এবং সেই লোকটি গার্দিওলার'ই সহকর্মী ছিলেন৷ যার ফুটবলীয় ধ্যান জ্ঞান সবকিছুই গার্দিওলার মতো ছিল। প্রায় সময়ই দেখা যেতো সাইড লাইনে দাড়িয়ে গার্দিওলার সঙ্গে প্লেয়ার দের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। দুজনের চিন্তাভাবনা ছিল একইরকম।নাম ছিল তার টিটো ভিলানোভা। গার্দিওলার সহকারী থাকা অবস্থায় ই যার ফুটবলীয় ধ্যান জ্ঞান মানুষ এর মন জয় করে নিয়েছিল।
বোর্ড এর সাথে বনিবনা না হওয়ায় গার্দিওলা বার্সেলোনা ত্যাগ করার পর টিটো ভিলানোভা বার্সেলোনা দলের দায়িত্ব পান। বার্সেলোনার হেড কোচ হওয়ার পর গার্দিওলার চেয়ে আরো আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলাতে শুরু করেন টিটো ভিলানোভা। ১০০ পয়েন্ট সংগ্রহ করে লিগ জিতলেন টিটো। দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করা রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ১৫ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। টিটোর বার্সেলোনা সেবার লিগে ১১৫ টি গোল করেছিল। বার্সেলোনার লিগে এক সিজনে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড গড়েছিল টিটো ভিলানোভার দল। গার্দিওলার অনুপস্থিতি টিটো ভিলানোভার ম্যাজিকে বুঝাই যাচ্ছিল না!
প্রত্যেক মানুষ'ই মরনশীল। মৃত্যুর স্বাদ সবারই একদিন গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যু'কে আজ পর্যন্ত কেউই পাস কাটিয়ে যেতে পারেনি। টিটো ভিলানোভার ক্ষেত্রে ও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। যার নৈপূন্যে বার্সেলোনা তার আপন গতিতে উড়ছিল সেই লোকটাকে হানা দিল ক্যান্সার। এবার ক্যান্সরারের সঙ্গে লড়াই করতে হবে টিটোর!
দিনটা ছিল ২০১৪ সালের ২৫শে এপ্রিল, খবর আসলো ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে পরাজিত হলেন বার্সেলোনার হেড কোচ টিটো ভিলানোভা! বার্সেলোনার আকাশ কালো রঙ ধারণ করলো! সবাইকে কাঁদিয়ে টিটো ভিলানোভা নিজের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
টিটো ভিলানোভার বিদায় এর সাথে ক্রুইফ ডিএনএ বহনকারী আর কেউ আসেনি বার্সেলোনার ড্রাগ আউটে! বার্সেলোনা তাদের নিজস্ব স্টাইলে ফুটবলটা টিটো ভিলানোভার অধীনেই শেষ খেলেছিল! তারপর বিভিন্ন ম্যানেজার আসছেন, এবং বিভিন্ন ফিলসফি এপ্লাই করেছেন। কিন্তু ক্রুইফ, গার্দিওলা কিংবা টিটো ভিলানোভা রা যেই ফুটবল টা খেলিয়েছিলেন সেটা আর কেউ খেলাতে পারেন নি!
২০১৪ সালে টিটো ভিলানোভা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন।
লিখেছেন : Tayebur Rahman
পোস্টার৷ : Daud Sabbir
#সংগ্রহীত#সংগ্রহীত