মিসরের ‘নতুন সাম্রাজ্য’ খ্রিষ্টপূর্ব ১৬ থেকে ১১ শতক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সাম্রাজ্যের অন্যতম ফারাও প্রথম সেতি। এই সেতি আবার প্রথম রামেসিসের পুত্র। প্রথম রামেসিসের হাত ধরেই কিন্তু মিসরের ১৯তম সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন। বলা হয়ে থাকে, প্রথম রামেসিসের সময়ই মিসরের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে শুরু হয় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর পুত্র প্রথম সেতি ও পৌত্র দ্বিতীয় রামেসিস মিসরকে শক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান।
আমাদের আলোচনার কেন্দ্র প্রথম সেতির পুত্র দ্বিতীয় রামেসিস। ধারণা করা হয়, দ্বিতীয় রামেসিস মোট ১৪০ সন্তানের বাবা ছিলেন! মিসরের ১৯তম সাম্রাজ্যের তৃতীয় ফারাও তিনি। ১৩০৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের জুলাই অথবা আগস্টে তাঁর জন্ম। মিসরীয় পুরাণে বর্ণিত সূর্যের দেবতা ‘রা’ থেকে রামেসিস। রামেসিস শব্দের অর্থ ‘সূর্যোদয়’। খ্রিষ্টপূর্ব ১২৭৯ থেকে ১২১৩ পর্যন্ত তিনি শাসন করেছেন।
বাবা সেতি যখন ক্ষমতায়, তখন দ্বিতীয় রামেসিসের বয়স কম। বাবার শাসনামলের প্রথম ১০ বছরের মধ্যেই কিশোর রামেসিস কমপক্ষে ১০ পুত্র এবং ১০ কন্যাসন্তানের জনক বনে যান! রামেসিসের জীবনকাল কম লম্বা নয়। এই লম্বা সময়ে তাঁর ছয় থেকে আটজন প্রধান স্ত্রী, বহু অপ্রধান স্ত্রী এবং অসংখ্য উপপত্নী ছিলেন। সব মিলিয়ে ৮০ পুত্র এবং ৬০ কন্যাসন্তান ছিল তাঁর! এদিক থেকে অন্যান্য ফারাওদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
শাসক হিসেবে খারাপ ছিলেন না দ্বিতীয় রামেসিস। পরবর্তী ফারাওরা তাঁকে ‘মহান পূর্বপুরুষ’ হিসেবে সম্মান করেছেন। তা ছাড়া তাঁকে প্রায়ই মিসরের নতুন সাম্রাজ্যের ‘মহান’, ‘সবচেয়ে বিখ্যাত’, ‘সবচেয়ে ক্ষমতাধর’ হিসেবে সম্বোধন করা হতো।
মিসরে দ্বিতীয় রামেসিসের বিশাল ভাস্কর্য, উইকিমিডিয়া কমনস
মহান রাজা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হবেন না, তা কী করে হয়! গবেষকেরা মনে করেন, এত এত সন্তানের জনক হওয়ার পেছনে দ্বিতীয় রামেসিসের একটি সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য ছিল। রামেসিস চেয়েছিলেন, শুদ্ধ রাজকীয় বংশের পুনরুদ্ধার। তিনি তাঁর পুত্রদের প্রশাসনের উচ্চপদে নিয়োজিত করেছিলেন। প্রথম ১২ পুত্রকে শাসক হিসেবে প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায়ই ১২ ছেলের মৃত্যু হয়। অবশেষে তাঁর ১৩তম পুত্র মারনেপতাহ ১২১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিংহাসনে বসেন। তারপরও খুব বেশি লাভ হয়নি, রামেসিসের রাজত্ব ১৫০ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
শেষ বয়সে রামেসিস দাঁতের রোগে ভুগেছেন। শেষে ৯০ বছর বয়সে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। মিসরের ‘ওয়াদি আল মুলুক’ (ভ্যালি অব দ্য কিংস) বলে খ্যাত স্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। পরে সেখান থেকে তার মমি নীল নদের পশ্চিম পাড়ের ‘রয়াল কাশ’–এ স্থানান্তর করা হয় এবং ১৮৮১ সালে সেখানেই তিনি আবিষ্কৃত হন। দ্বিতীয় রামেসিসের মমিটি এখন কায়রোর জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।
দ্বিতীয় রামেসিস শুধু ১৪০ সন্তানের জনক হিসেবেই ইতিহাসের আলোচিত চরিত্র নন। সুপ্রশাসক হিসেবেও তিনি পরিচিত ও সম্মানিত। নাহলে তাঁর সম্মানে তাঁর পরের নয় ফারাও ‘রামেসিস’ নামটি গ্রহণ করতেন কি?
সূত্র: বেস্ট হিস্ট্রি এনসাইক্লোপিডিয়া ও অল অ্যাবাউট হিস্ট্রি বুক অব উইয়ার্ড হিস্ট্রি