ব্যাপক সমালোচনা ও চাপের মুখে অবশেষে করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের শতাধিক দেশে ও যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট আইন প্রণেতাদের চাপের মুখে বাইডেন প্রশাসন গত বুধবার রাতে ওই সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্লেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী বললেও এখনই এই উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে না। কারণ এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ডাব্লিউটিও সদস্য দেশগুলোর আরো সময় লাগবে।কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, কভিডের টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ দাবি জানিয়ে আসছে। এই মহামারির মধ্যে সবাই যাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ সহজে তৈরি করে জনগণকে সুরক্ষা দিতে পারে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য থেকেই এ দাবি করা হচ্ছে। মেধাস্বত্ব ছাড় পেলে টিকার উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানো যাবে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে সুলভ মূল্যে তা সরবরাহ করা যাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো মনে করে, পেটেন্টসহ নানাভাবে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিধিগুলো মহামারি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় টিকা ও অন্যান্য পণ্যের ব্যাপক আকারে উৎপাদনের পথে বড় বাধা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই করোনার টিকা সবার কাছে পৌঁছাতে একে ‘গ্লোবাল পাবলিক গুডস’ (বৈশ্বিক জনগণের সম্পদ) হিসেবে ঘোষণার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।
বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই মেধাস্বত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে। তবে বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল কভিডের টিকার স্বত্বে ছাড় দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের গত বুধবার রাতের ঘোষণায় বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা হলেও টিকা বা ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস এক টুইট বার্তায় বাইডেনের ঐতিহাসিক ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। তবে ওষুধ কম্পানিগুলো এর বিরোধিতা করে জোর দিয়ে বলছে, ‘পেটেন্ট’ প্রধান বাধা নয়। এই উদ্যোগের ফলে উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ওষুধ প্রস্তুতকারক ও সমিতিগুলোর আন্তর্জাতিক ফেডারেশন বাইডেনের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে টিকার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা মেধাস্বত্ব ছাড় দেওয়ার দাবিতে সরব ছিল। এর বিরোধিতাকারী ওষুধ কম্পানিগুলোর যুক্তি, স্বত্ব ছাড় দিলে কাঙ্ক্ষিত ফল না-ও মিলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই গত বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশেষ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা’ নেওয়ার জন্য ডাক আসে, তাতে সাড়া দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিলেও এখনই এই উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে না। এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ডাব্লিউটিও সদস্য দেশগুলোর সময়ের প্রয়োজন হবে বলে তিনি সতর্ক করেন।
এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিডের টিকার মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্তে বিশ্বের দুই শীর্ষ ওষুধ উৎপাদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মডার্নাসহ কভিড-১৯ টিকার উদ্ভাবক কম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়েছে।