দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুরুতে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে দ্বিধা থাকলেও এখন অনেকেই টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন। টিকাকেন্দ্রগুলোতে সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধাসহ বয়স্ক মানুষের ভিড় বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বড় কোনো অঘটন বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি। মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারও কারও হয়েছে, যা স্বাভাবিক। এ জন্য কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতেও হয়নি।
সামনে যাঁরা টিকা নিতে আগ্রহী, তাঁদের মধ্যে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, আর হলে তা কীভাবে সামাল দেবেন, তা জেনে রাখা ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনসহ (সিডিসি) অন্য সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কী বলছে, চলুন জেনে নিই।
যে ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক
সিডিসি বলছে, বর্তমানে ব্যবহৃত ফাইজার, বায়োএনটেক ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাগুলোতে ইনজেকশন দেওয়ার স্থানে মৃদু ব্যথা ও ফুলে যাওয়া, মাথাব্যথা, অবসাদ, কাঁপুনি, জ্বরের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর বাইরে টিকা নেওয়া কিছু মানুষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিজ্ঞানীরা লিপিবদ্ধ করে যা পেয়েছেন, তা দুর্লভ। এসব হচ্ছে, মাংসপেশি ও সন্ধিতে ব্যথা, ইনজেকশনের স্থানে র্যাশ বা দানা, স্থানীয় লসিকা গ্রন্থি (যেমন বগলের) ফুলে যাওয়া।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো মৃদু আর অন্য যেকোনো টিকার ক্ষেত্রেও হতে পারে। এগুলো কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। আরও দুটি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে যে বয়স্কদের চেয়ে বরং অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ইমিউন রেসপন্স কিছুটা দুর্বল হয়ে আসে, বরং কম বয়স্কদের ইমিউন সিস্টেম টিকার পর ভালো প্রতিক্রিয়া দেখায়। আর এর অর্থ হলো টিকার পর মৃদু বা সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়েছে।
টিকা নিতে প্রস্তুতি
- টিকার জন্য নিবন্ধন করার পর মনে মনে প্রস্তুতি নিন। পরবর্তী কয়েক দিন দূরে কোথাও বেড়ানো বা ভারী কোনো কার্যক্রম বা অনুষ্ঠানের আয়োজন না করাই ভালো। পর্যাপ্ত বিশ্রাম যাতে মেলে, সেই ব্যবস্থা নিয়ে রাখুন।
- যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, আগে দেখে নিতে পারেন। ডিপ ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশনে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সংক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শর্করা খুবই অনিয়ন্ত্রিত থাকলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
- আপনার কোনো ওষুধে বা ইনজেকশনে আগে তীব্র প্রতিক্রিয়া হওয়ার ইতিহাস আছে কি না, তা জানিয়ে রাখুন। নিবন্ধনপত্রে সঠিক মেডিকেল হিস্ট্রি দিন।
- ব্যথা হলে সাধারণ প্যারাসিটামল বা ওভার দ্য কাউন্টার ব্যথানাশক (যেমন আইবুপ্রফেন) গ্রহণ করতে পারেন। তবে টিকা দেওয়ার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্যারাসিটামল বা নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টি ইনফ্লামাটেরি খাওয়ার দরকার নেই। এতে টিকার কার্যকারিতায় প্রভাব পড়তে পারে। কেবল প্রয়োজন হলেই পরে গ্রহণ করুন।
- টিকা দেওয়ার দিন বা পরদিন, বিশেষ করে যদি অবসন্নতা বা ক্লান্তি বোধ হতে থাকে, তবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। দরকার হলে এক দিন ছুটি নিন। শুয়ে থাকুন, তবে মাঝেমধ্যে উঠে সামান্য হাঁটাহাঁটি করুন। প্রচুর পানি পান করুন।
- কারও কারও টিকা দেওয়ার ৫ থেকে ১০ দিন পর ওই স্থানে র্যাশ হতে পারে। এটি বিলম্বিত অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টি হিস্টামিন খেতে পারেন।
- টিকা দেওয়ার পর টিকাকেন্দ্রের বিশ্রামকক্ষে ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অকারণে ছোটাছুটি করবেন না। অতিরিক্ত মানসিক চাপও নেবেন না। এ সময় পানি পান করুন।
- কোনো খারাপ লাগা বা সমস্যায় কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবী, কর্তব্যরত চিকিৎসক বা নার্সকে অবহিত করুন। প্রতিটি টিকাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার সব উপকরণ থাকে। খুব স্বল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে তীব্র মাত্রার অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া বা অ্যানাফাইলেক্সিস হওয়ার রেকর্ড আছে, তা–ও আবার কেবল ফাইজার-বায়োএনটেক টিকার ক্ষেত্রে (আমাদের দেশে দেওয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা)। অ্যানাফাইলেক্সিস হলে কী করতে হবে, তার প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি টিকাকেন্দ্রগুলোতে আছে।
- টিকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে ১৬২৬৩ নম্বরে কল করে পরামর্শ পাওয়া যাবে।