[HIDE]তিন জনেই কিছুক্ষণ চুপ চাপ পান করে চললাম। তিন জনের হাতেই সিগারেট এখন। দোলন কিছুক্ষণ পর রাকাকে বলল “রাকা, তুই বিশাল কে ভুলে যা। ও তোর জন্য ঠিক নয়।” রাকা বলল “অনেকবার ভোলার চেষ্টা করেছি। পারছি না। অনেক দিনের প্রেম।” একটা চোখ মারল। আকাশে মেঘ করে আছে। তাও ওর চোখ মারাটা দৃষ্টি এড়াল না। ব্যাপারটা আমি আগেই লক্ষ্য করেছি আর জানতে পেরেছি, তাও না জানার ভান করে বললাম “ রাকার বিশালের ব্যাপারে ব্যথা আছে? রিয়েলি? আমার তো মনে হল বিশালের সুচেতার ওপর ব্যথা।” রাকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “ আই নো।” দোলন বলল “ বিশালের ওপর প্রেমে পড়েছিস সেটা তাও না হয় মেনে নিলাম। তুই তো কৌশিক কেও চিনতিস, ভাগ্যিস ওর প্রেমে পড়িস নি। “ বললাম “কেন? কৌশিকের খারাপটা কোথায় দেখলি?”
রাকা আর দোলন দুজন দুজনের সাথে চোখাচোখি করল। দুজনের ঠোঁটেই হাসি খেলে গেল। দোলন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “ এই টুকু বলি যে ওর বাবা মা আর কাকু কাকিমা, দে আর ইন কাইন্ড অফ গ্রুপ রিলেশন। বুঝলি?” বুঝেছি ঠিকই তাও না বোঝার ভান করে বললাম “ মানে?” দোলন হঠাত আমার দিকে এসে আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বলল “এই জন্য তোকে এত ভালেবাসি। তুই এখনও কত সরল। গ্রুপ রিলেশন মানে হল ওরা চার জন একই বিছানায় শোয়। রোজ না হলেও মাঝে মাঝেই শোয়। বুঝতে পারছিস তো? এটা কৌশিক ভুল করে একবার দেখে ফেলেছিল। একদিন মদ খেতে বসে ভুল করে বলে ফেলেছে। সেই থেকে সবাই জানে। আসলে আমাদের সবার বাড়িতে এত স্ক্যান্ডাল যে কেউ এই নিয়ে কিছু মাইন্ড করে না। “
আমি হেসে বললাম “তার মানে বলতে চাইছিস টাকা, প্রতিপত্তি আর স্ক্যান্ডাল সমার্থক হয়ে গেছে?” ও হেসে বলল “একদম ঠিক ধরেছিস।” একটু পরে রাকার দিকে তাকিয়ে বলল “সংকেত আজ মানুষ হচ্ছে আমাদের পাল্লায় পড়ে। এতদিন ভালো ছেলে ছিল। এইবার মানুষ হচ্ছে। কলকাতা চিনতে পারছে।” আমি আর কিছু বললাম না। মনে মনে বললাম যেদিন তুই আমাকে চিনবি সেই দিন তোর সব হাসি বেরিয়ে যাবে পেছন দিয়ে আর সেই সময় খুব দূরে নয়…
ঘড়ির কাঁটা দেখাচ্ছে রাত দুটো। আমরা ঘাটে ফিরে এসেছি। টাকা মিটিয়ে উঠে পড়লাম। দোলন আমাকে ড্রপ করবে বলে রেখেছিল। কিন্তু আমি কাটিয়ে দিলাম। একটা ট্যাক্সি ধরে নিলাম। ওকে আমার হোটেল চেনানোর কোনও কারণ নেই। মদের নেশায় না থাকলে ও বুঝতে পারত এমন একজন লোকের ছেলে কোনও দিন ওরকম একটা শস্তা ধর্মশালায় থাকতে পারে না। হোটেলে পৌঁছে দেখলাম কাউন্টারে ক্লান্ত মুখে মালিনী আর অন্য মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। চাবি চাইতে মালিনী বলল “ম্যানেজার আপনার সাথে একটু কথা বলবে।” আমি বললাম “ডেকে দিন। একটু তাড়াতাড়ি প্লীজ। ভীষণ টায়ার্ড।”
ম্যানেজার এসে আমাকে এক দিকে নিয়ে গিয়ে বলল “ শুনুন স্যার কিছু মনে করবেন না। সকালের ব্যাপারে কিন্তু আপনার যে হাত আছে সেটা আমরা জানি।” আমি বললাম “প্রমাণ করুণ। আপনাদের সেই গেস্ট আমাকে ফিসিকালি আবিউস করেন নি সেটাও প্রমাণ করুণ।” ম্যানেজার বলল “ আমি সেই কথায় ঢুকতে চাইছি না। জাস্ট রিকোয়েস্ট করছি যে এরকম ব্যাপারে আর না ঢুকলেই ভালো, আপনার জন্য।” আমি বললাম “আপনি কি আমাকে ধমকি দিচ্ছেন?” ও বলল “না স্যার। আপনি আমাদের এখানকার বোর্ডার। আপনার সুরক্ষা আমাদের দায়িত্ব। তাই আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। আর তাছাড়া ওনার ঘরের চাবিটাও কোনও ভাবে মিস প্লেসড হয়েছে, সেই নিয়েও উনি চটে আছেন। কাল আর তেমন কোনও ড্রামা না হলেই ভালো।” আমি বললাম “ওনার চাবি কোথায় গেছে তা আমার জানার কথা নয়। হি মাস্ট বি অ্যাঁ কেয়ারলেস ফুল। আর আমার সুরক্ষা নিয়ে তেমন ভাববেন না। যেমন তেমন হলে আমি ওনার মতন পঞ্চাশটাকে একাই সামলে নেব। ডোন্ট অয়ারি। এইবার আমি আসি। কাল অনেক কাজ আছে। “ মালিনীকে ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম যেন কাল সকালে এসে আমার ঘর থেকে বোতলটা নিয়ে যায়। জানি না আসবে কি না।
সকাল সাতটায় যখন সকালের এক্সসারসাইজ সেরে হোটেলে ঢুকছি তখনই সেই সিকিউরিটির সাথে দেখা যে প্রায় রোজ আমাকে সকালে ফিরতে দেখে ভূত দেখার মতন আঁটকে ওঠে। আমি আজও হেসে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই এস এম এস এলো। সঞ্চিতা ম্যাডাম। “দুপুরের দিকে চলে এসো। কথা আছে। এখানেই খাবে।” আমি রিপ্লাই টাইপ করলাম “ ওকে। আসব। কিন্তু খাব না। এক জায়গায় যাচ্ছি সেখানেই খেয়ে নেব।” রিপ্লাই এলো “তাহলে বিকাল চারটের দিকে এসো। হয়ত তোমাকে আমি সাহায্য করতে পারব।” রিপ্লাই দিলাম “ঠিক আছে। থ্যাংকস ম্যাম।”
খবরের কাগজটা খুলে বসলাম। না, চোখ বুলিয়ে তেমন কিছু পেলাম না। টিভি খুললাম। একটা বাংলা নিউজ চ্যানেল চালিয়ে দিয়ে বাথরুমে স্নান করতে ঢুকে গেলাম। বেরিয়ে এসে দেখি দশটা মিসড কল। দোলন। সকাল সকাল প্রেম উঠলে উঠেছে ন কি? পরের বারের কলটা আসার সাথে সাথে উঠিয়ে নিলাম। দোলনের গলা শুনেই কেমন যেন ধড়াস করে উঠল বুকের ভেতরটা। ও বলল “দাদা আর নেই সংকেত।” আমি বললাম “মানে?” দোলন কাঁদছে সেটা বুঝতে পারছি, ও অনেকক্ষণ ধরে অনেক কিছু বলে চলল যার সারাংশ নিলে এমন দাঁড়ায়। যে গাড়িটা মন্দারমনির দিকে গেছে সেটা কোলাঘাটের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় দের ঘণ্টার জন্য। ওখানে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করেছে, এমন কি মদও খেয়েছে। তারপর সেখান থেকে রওয়ানা দেওয়ার পর পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়ির কন্ট্রোল হারিয়ে একটা মেজর দুর্ঘটনা হয়েছে। সুনীল, শান্তনু, সুচেতা, বিশাল, আরও দুজন যারা শুভর বন্ধু, আর শুভ নিজে সবাই মারা গেছে। শুধু দীপক কোনও ভাবে বেঁচে গেছে। কি ভাবে বেঁচে গেছে কেউ জানে না। ব্যাপারটা ঘটেছে রাত আড়াইটার দিকে।
দীপককে একটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিখাদি নাকি ওখানেই আছে। ওর ডান পাশের পাঁজর ভেঙ্গে গেছে। মাথায় চোট পেয়েছে। কাল যারা যারা শান্তনুর সাথে পার্টিতে ছিল তাদের পুলিশের সামনে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম “দীপক কিছু জানে না, কিভাবে হল ব্যাপারটা।” দোলন বলল “ও ড্রাইভারের পাশে বসে ঘুমাচ্ছিল। শুধু একটাই কথা মনে করতে পেরেছে যে আক্সিডেন্টের পর একটা কালো গাড়ি ওদের গাড়িটার থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে ভেতরে কে আছে কি ব্যাপার সেটা ও জানে না। হতে পারে গাড়িটা ওদের গাড়ির দুর্ঘটনা দেখে দাঁড়িয়ে পরে ছিল। কিন্তু কোনও ফ্যাসাদের ভয়ে সরে পরে ছে। পুলিশ সব কিছু চেক করে বলছে এটা দুর্ঘটনা নয়, জল ঘোলা। গাড়ির ডান দিকের দুটো টায়ারেরই স্ক্রু লুস করে দেওয়া হয়েছিল। প্লাস ব্রেকেও প্রবলেম পাওয়া গেছে। ব্রেক করলেই চাকার ওপর এমন প্রেসার পড়বে যাতে চাকা দুটো পুরো গাড়ি থেকে খুলে আসতে পারে, কিন্তু পুরো সেরকমই হয়েছে কিনা এখনও সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না। সবাই ড্রাঙ্ক ছিল। প্রায় স্পটেই মারা গেছে। “
আমি হাসপাতালের নাম জেনে নিলাম। সেই সাথে কোন থানায় গিয়ে দেখা করতে হবে সেটাও জেনে নিলাম। তবে থানায় আমাদের যেতে হবে না। আমাদের যেতে হবে হাসপাতালে। সকাল দশটার দিকে। সেখানেই পুলিশ থাকবে। এত অদ্ভুত বিপদে পড়া গেল। বললাম “চিন্তা করিস না, দশটার আগেই পৌঁছে যাব।” ফোন রেখে দিলাম। টিভি বন্ধ করে একটু চুপ করে বসে রইলাম। সত্যি একেই বলে মানুষের জীবন। কাল রাতে যাদের সাথে বসে আড্ডা দিলাম, তাদের অনেকে আজ এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে দুর্ঘটনায়। যাই হোক ধীরে ধীরে রেডি হয়ে নিলাম। হাসপাতালটা হোটেল থেকে বেশ দূরে। আমি বেরনোর আগে মালিনী আসতে পারেনি। কিন্তু আমার মাথায় এখন আর মালিনীকে নিয়ে কোনও ভাবনা ঘুরছে না। এখন অন্য চিন্তা ঘুরছে মাথার ভেতরে।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখলাম কলেজের অনেকেই এসেছে। বিশাল ছিল আমাদেরই বন্ধু। দেখলাম সঞ্চিতা ম্যাডামও এসেছেন। আরও অনেক টিচার এসেছেন। পুলিশকে গিয়ে পরিচয় দিতেই আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। দীপকের ঘরের সামনে পুলিশের ভিড়। দোলনের জবানবন্দী নেওয়া হচ্ছে। বা ও পুলিশকে অনেক কিছু বলে চলেছে। যাই হোক আমাকে দেখেই শিখাদি আমার দিকে এগিয়ে এলো। “কাল কি তুই আমাকে ঘরে ছাড়তে এসেছিলিস?” আমি বললাম “হ্যাঁ আমাকে দীপকদা বলেছিল তোমাকে ছেড়ে দিতে। তুমি নিজে ভালো করে হাঁটতে পারছিলে না। সেন্সে ছিলে না তাই।” ওর চোখ দুটো জ্বলে উঠল। আমাকে কিছু একটা বলার আগেই আমি ওকে বললাম “তোমার কি স্মার্ট ফোন আছে?” বলল “হ্যাঁ।” বললাম “ মেইলটা একবার চেক করবে?” ও সেখানেই দাঁড়িয়ে মেইল খুলতে যাচ্ছিল, আমি ওকে বাধা দিয়ে বললাম “ এখানে নয়। সবার থেকে একটু সরে গিয়ে মেইল চেক করো। ইন্টারেস্টিং জিনিস পাবে।”
ও সবার থেকে একটু তফাতে সরে গেল। কিছুক্ষণ পর যখন ফিরে এল তখন ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ওর ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। একজন পুলিশ ওর দিকে এগিয়ে এসে বলল “আপনি আমাদের কিছু বলতে চেয়েছিলেন। তখন আপনার দিকে নজর দিতে পারিনি। এখন বলতে পারেন কি সমস্যা।” ও রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বলল “ না না তেমন কিছু নয়। আমি শুধু জিজ্ঞেস করতাম যে দীপককে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলে ওকে কি নিয়ে যাওয়া যায়?” পুলিশ বলল “এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে?” আমাকে তেমন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি কারণ রাকা আর দোলন ইতি মধ্যে আমার আলিবাই দিয়ে দিয়েছে।
রঞ্জন বাবু আর বেলা ম্যাডামের সাথে ওখানে দেখা হল। মহিলা সত্যিই সেক্সি। বয়স কত হয়েছে সেটা আন্দাজ করা শক্ত। আমার ধারণা বয়স নিশ্চয় পঞ্চাশের কাছাকাছি। তবে শরীরের বাঁধুনি ভীষণ রকম ভালো, আর চেহারাও খুব সুন্দর আর সেক্সি। টাইট শরীর বলতে যা বোঝায়। চামড়ায় এক ফোঁটা ভাঁজ পরেনি কোথাও। যে শাড়িটা পরে এসেছেন সেটা দেখে কেউ বলতে পারবে না যে কিছু ঘণ্টা আগে ওনার ছেলে মারা গেছে। ফুলের কাজ করা পাতলা শিফনের ডিজাইনার শাড়ি। শাড়িটা স্বচ্ছ। শাড়ির নিচে ব্লাউজে ঢাকা ওনার বুক পেট সব কিছুই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে। স্তনের আকার আয়তন বেশ টাইট, মালিনীর মতন কিছুটা।
শাড়ির নিচে একটা গাড় নিল রঙের পিঠ খোলা ব্লাউজ পরে এসেছেন। স্লিভলেস ব্লাউজ। ঠোঁটে গাড় লিপস্টিক লাগানো। ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারলাম যে ওনার নিঃশ্বাসে মদের গন্ধ আসছে। বুঝতে পারলাম অনেক রাত, বা ভোর অব্দি চলেছে পার্টি। মদের গন্ধ এখনও মুখ থেকে মুছে যায় নি। রঞ্জন বাবুর মুখ থেকেও মদের গন্ধ আসছে। কাঁধের ওপর ব্লাউজের স্ট্র্যাপ দুটো যেন দুটো সরু সুতো। ব্লাউজের স্ট্র্যাপের পাশ দিয়ে ভেতরে পরা ব্রায়ের স্কিন কালারের স্ট্র্যাপ চলে গেছে ঘাড়ের ওপর দিয়ে। খোলা পিঠের ওপর দিয়েও স্কিন কালারের ব্রায়ের স্ট্র্যাপের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। শালা কে বলবে যে এনার ছেলে মারা গেছে। রীতিমত মেক আপ করে এসেছেন। শাড়িটা পরেছেন নাভির থেকে প্রায় সাত আঙুল নিচে। হতে পারে যোনী দেশের ঠিক ওপরে শাড়িটা বাধা আছে। স্বচ্ছ শাড়ির ভেতর দিয়ে ওনার গোল বড় নাভিটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পাতলা শাড়িটা এধার অধার সরে গেলে তো কথাই নেই, নাভি সহ পুরো পেটটা নগ্ন হয়ে যাচ্ছে।
উফফ বাঁড়াটা আবার খাড়া হয়ে যাচ্ছে। অর্ধেকের বেশী ক্লিভেজ স্বচ্ছ শাড়ির নিচে নগ্ন হয়ে আছে। তবে শরীরের কোথাও কোনও মেদ নেই। রেগুলার জিম করেন। মসৃণ স্কিন। দোলনের ফিগারটা এনার থেকে আরেকটু ভরাট। উনি যদিও সবাইকে দেখাতে চাইছেন যে উনি ওনার ছেলের বিয়োগে খুবই মর্মাহত, কিন্তু ওনার মুখ দেখে যে কেউ বলে দেবে যে সেটা নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। রঞ্জন বাবু যদিও খুবই ভেঙ্গে পরে ছেন। আর সেটা জেনুইন। ওনার চার পাশে বডি গার্ডের সমাহার। একবার উনি ফিট হয়ে পরে ই যাচ্ছিলেন। বডি গার্ডদেরই একজন ওনাকে ধরে একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিল। সাথে সাথে হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টের একজন কে বলা হল যে জল নিয়ে আসতে। লোক দৌড়ে চলে গেল। নাহ এই নাটক দেখার কোনও মানে হয় না।
আমার নাম ধাম জেনে নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এখানে থাকা না থাকা আমার ওপর। অন্তত বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট খেয়ে আসা যেতেই পারে। বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছি, লিফটের সামনে এসে আবার ধাক্কা একজন লোকের সাথে। না ইনি কোনও ভি আই পি নন। ইনি হাসপাতালের কর্মচারী। ছাপোষা লোক। রঞ্জন বাবুর জন্য জল নিয়ে এসেছেন। গ্লাসের ওপর রাখা ঢাকনাটা এক পাশে সরে যাওয়ায় সামান্য কিছুটা জল বাইরে ছিটকে পরে ছে আমার গায়ের ওপর। আমি সরি বলে জলের ট্রে তা ওনার হাত থেকে নিয়ে ওনাকে বেশ ভুষা ঠিক করে নেওয়ার সময় দিলাম। উনি আবার ভালো করে জলের গ্লাসটা ঢাকা দিয়ে দৌড় মারল রঞ্জন বাবুর দিকে। আমি লিফটে নিচে নেমে গেলাম।
নিচে নেমে দোলনকে একটা কল করে বললাম “ আমি বেরিয়ে যাচ্ছি। আমার এখানকার কাজ হয়ে গেছে। তুইও বাড়ি গিয়ে একটু রেস্ট নে। আর শোন। এটা সময় নয় এই কথা বলার। কিন্তু তবুও বলছি। তুই তোর দাদা কে খুব ভালোবাসতিস। তোর দাদা চলে গেছে। আমি ভীষণ দুঃখিত। জানি না এই ফাঁকা জায়গাটা কিভাবে ভরাট হবে। তবে… এটুকু বলতে পারি, একজন ভালোবাসার মানুষ গেছে, কিন্তু আরেকজন নতুন ভালোবাসার মানুষকে তুই গতকাল পেয়েছিস। গতকাল তুই হাবে ভাবে যা জানতে চেয়েছিলিস, তার উত্তর হল হ্যাঁ। আমারও তোকে খুব পছন্দ। আবারও বলছি তোর দাদার জায়গা কেউ ভরাট করতে পারবে না। হি অয়াস অ্যাঁ ভেরি ভেরি নাইস পার্সন। কিন্তু আমাকে কনসলেসন প্রাইজ হিসাবে নিতে পারিস। জানি এটা এই কথা বলার জন্য ঠিক সময় নয়। বাট দা আনসার ইজ ইয়েস। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা বলতে চাইছিলাম। অন্য ভাবে নিস না। একটু ঠাণ্ডা ভাবে ভেবে দেখ। দীপক ড্রাইভারের পাশে বসেও কিছুই জানে না, এটা কি খুব অ্যাঁক্সেপ্টেবল আনসার। এটা যদি দুর্ঘটনা না হয়ে থাকে তো হতে পারে তোর দাদার মৃত্যুর পেছনে দীপকের হাত আছে। আমি শিওর নই, কিন্তু এটা না ভেবে থাকতে পারছি না। কারণ ওই এক মাত্র লোক যে গায়ে পরে তোর দাদাদের সাথে কাল ভিড়ে গেছিল। আমার গত কালই কেমন যেন সন্দেহ হয়েছিল। জাস্ট জানিয়ে রাখলাম। অন্য ভাবে নিস না আবারও বলছি। তবে এখনই এই নিয়ে মাতামাতি করিস না। পুলিশকে কিছু বলতে হলে একটু রেখে ঢেকে পরে বলিস। এখানে দীপকের অনেকগুলো চামচা দেখলাম। ওরা তোর বাবার ধারে কাছেই ঘোরা ফেরা করছে। কথা বার্তা শুনেই মনে হল যে ওরা দীপকের চামচা। টেক কেয়ার। ” আমি ফোন কেটে দিলাম। ও পুরো সময়টা শুধু শুনে গেল। কিছু বলতে পারল না।
সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করার আগেই একটা এস এম এস ঢুকল। দোলন। “আই লাভ ইউ টু মাই পুচু সোনা। থ্যাংকস ফর ইওর কনসার্ন অ্যাঁবাউট মি। অনেক অনেক কিসি এই সময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তুই যা বোঝাতে চেয়েছিস সেটা আমি বুঝেছি। তুই আমার কনসোলেশন প্রাইজ নস। তুই আমার অ্যাঞ্জেল। মুয়ায়ায়ায়াহ। দীপকের ব্যাপারটা আমারও সন্দেহজনক লাগছে। পরে কল করব সোনা। টেক কেয়ার।” সিগারেটটা শেষ করে একটা ট্যাক্সি ধরতে যাব ঠিক সেই সময় দোলনের কল। “কি ব্যাপার।” ও বলল “ তুই কি বেরিয়ে গেছিস? রাকার সাথে কথা বলে ব্যাপারটা আমি পুলিশকে গোপনে জানিয়েছি। তুই এসে একবার কথা বলতে পারবি?” আমি শান্ত গলায় বললাম “কেন পারব না। তোর জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। লাভ ইউ। আমি আসছি।”
লিফটের সামনে দাঁড়িয়েই বুঝতে পারলাম যে ওপরে কিছু একটা হয়েছে। দৌড়া দৌড়ী শুরু হয়ে গেছে। লিফটে ওঠা আর আমার হল না। সিঁড়ি ভেঙ্গে চার তলায় উঠে যা দেখলাম তাতে এক নিমেষে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। রঞ্জন বাবু যেই বেঞ্চে বসে ছিলেন সেখানেই লুটিয়ে পরে ছেন। ওনার মুখ দিয়ে গ্যাঁজা বেরোচ্ছে। মুখ পুরো নীল হয়ে গেছে। একজন ডাক্তার এসে ঝুঁকে পরে ওনাকে পরীক্ষা করছেন। এক কথায় উনি মারা গেছেন। ডাক্তারের সন্দেহ বিষক্রিয়া। মনে মনে বলতে বাধ্য হলাম হোয়াট দা হেল। এইবার বেলা মুখার্জি কে দেখে মনে হল যে ফাইনালি উনি বিচলিত হয়েছেন স্বামীর এই আকস্মিক মৃত্যুতে। ওনার চোখে জল। এবং এইবার দেখে মনে হল যে সেটা মেকি কান্না নয়। দোলনের কথা আর বলার নয়। ইতি মধ্যে সবাই জেনে গেছে যে দোলন সন্দেহ করে দীপককে। আরেকটা কথা আমি জানতে পারলাম, সেটা হল এই যে, দীপক আগে যদিও রঞ্জন বাবুর জন্য কাজ করত, কিন্তু ইদানিং নাকি ওর বেপরোয়া ভাবের জন্য রঞ্জন বাবুর সাথে ওর কিছু ঝামেলা হয়েছে। রঞ্জন বাবুর বডিটা কোনও মতে ভিড় ঠেলে পোস্ট মর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হল। যেই গ্লাস থেকে উনি জল খেয়েছেন সেটাও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। গ্লাসে এখনও কয়েক ফোঁটা জল অবশিষ্ট। সেটা নাকি পরীক্ষা করে দেখা হবে। স্ট্যান্ডার্ড প্রসেস।
একজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল “তুমি সংকেত?” বললাম “হ্যাঁ।” বলল “একটু আমাদের সাথে এসো।” আমাকে দীপকের ঘরের ভেতর নিয়ে গেল। অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম দোলন যে দীপক কে সন্দেহ করে সেটা জানার পরই দীপকের চামচাগুলো একে একে সরে পরে ছে। এখনও যদিও দুই একজন অবশিষ্ট আছে। আরেকটা ব্যাপার না বলে পারছি না, দীপকের বাড়ির কোনও লোককে দেখতে পেলাম না। ওরা কি জানে না যে দীপকের এই দুর্ঘটনার কথা? দোলন রাকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে। আমাকে পুলিশ জিজ্ঞেস করল “দীপকের সামনেই তুমি খুলে বলবে যে কেন তোমাদের সন্দেহ দীপক এটা করতে পারে। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা?” আমি একটা লম্বা দম নিয়ে গতকাল যা হয়েছে আবার বলে চললাম পুলিশের সামনে। মাঝে দোলন বলল “ বাবার সাথে অনেক দিন ধরেই দীপকের অনেক ঝামেলা চলছে। বাড়িতে এসে শাসিয়েও গেছে কয়েক দিন আগে। এই শুয়োরটাই গতকাল আমার দাদাকে মেরেছে, আর আজ ওরই কোনও লোক যে বাইরে ঘুর ঘুর করছিল, সুযোগ বুঝে বাবাকে বিষ…” আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ও।
দীপক কোনও মতে উঠে বসেছে। ওকে দেখে মনে হবে যেন ও কিছুই বুঝতে পারছে না। আমার বয়ান শেষ হলে আমাকে যেতে বলা হল। আমি বেরিয়ে ই আসছিলাম। কিন্তু কি মনে হতে আমি একবার থেমে গেলাম। ওই পুলিশের সামনেই এগিয়ে গেলাম দীপকের দিকে। পাশে শিখা দাঁড়িয়ে আছে। দীপকের চোখে চোখ রেখে বললাম “দীপকদা তুমি যদি সত্যিই এই দুটো মৃত্যুর পেছনে থাকো তো আমার সাজেশন নাও। সত্যি কথা স্বীকার করে নাও। একজন মিনিস্টারকে মেরে তুমি বা তোমার লোক পার পাবে না। তুমি ওনাকে শাসিয়ে এসেছ? এটা পুলিশের চোখে একটা ভাইটাল এভিডেন্স। ভুলে যেও না রঞ্জন বাবু ভোটে জিতে মিনিস্টার হয়েছেন। ওনার অনেক লোক আছে, যারা বাইরে তোমাকে পেলেই... কথাটা ভালো ভাবে মনের ভেতর গেঁথে নাও।” একটু থেমে বললাম “আমি তোমার জায়গায় থাকলে সুই সাইড করে নিতাম। এই অবস্থায় বেঁচে থাকলে আরও অনেক ভুগতে হবে। তুমি বিছানায় পরে থাকা অবস্থায় বাইরে তোমার কোনও লোক সুযোগ বুঝে রঞ্জন বাবুকে বিষ দিতে পারবে না সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না। এখানে তোমার বিছানায় পরে থাকার অ্যাঁলিবাইটাই তোমার এগেনস্টে যাবে ইনভেস্টিগেশন হলে।” আমি বেরিয়ে গেলাম ঝড়ের মতন। লক্ষ্য করলাম দীপকদা শিখাদির দিকে করুণ মুখে চেয়ে আছে। আর বাকিরা সবাই দীপকদার দিকে তাকিয়ে আছে…
এক সাথে অনেক ঘটনা ঘটে গেলে মাথাটা কেমন যেন ভো ভো করে। আজ সেই রকম অবস্থা। ভোর রাতে এত গুলো ছেলে মেয়ের মৃত্যু। তারপর রঞ্জন বাবুর আকস্মিক মৃত্যু, যেটা শিওরলি খুন। আর হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে আরেকটা খবর পেলাম। এইবার এস এম এস নয়। কল। রাকা। দীপকের ঘরের বাইরে পুলিশ বসিয়ে সবাই বেরিয়ে এসেছিল। হঠাত উপরে একটা দুম করে শব্দ পেয়ে সবাই ছুটে ওপরে গিয়ে দেখে যে দীপক একটা চালু বাজারে পিস্তল দিয়ে সুই সাইড করে নিয়েছে। ঘটনাটা যখন ঘটে তখন ঘরে দীপক একা ছিল। সবার ধারণা শিখাদির সাথে কোনও পিস্তল ছিল না। আর তাছাড়া শিখাদি বেশ কিছুক্ষণ আগেই পুলিশের সামনেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আরেকজন ছেলে দীপকদার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। সেই ছেলেটাকে পুলিশ আটক করেছে। আপাতত অনুমান করা হচ্ছে যে দীপক ওই ছেলেটার কাছ থেকে পিস্তলটা ধার করেছে, আর ঘর খালি হলে সেই পিস্তল দিয়েই সুই সাইড করেছে। ওই ছেলেটা যে একটা মার্কা মারা গুন্ডা সেটা সবাই জানে। রাজনৈতিক কারনে এতদিন ছেলেটার গায়ে হাত দেওয়া যায় নি। কিন্তু আজ যখন মিনিস্টার নিজেই ভিক্টিম, তখন আর রাজনৈতিক গুণ্ডার জীবনের কি দাম!
খবরটা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস আপনা থেকে বেরিয়ে গেল। মনটা কেমন যেন বিষাদে ভরে গেছে এতগুলো মৃত্যুতে। ঘরে ঢুকেই কানে হেড ফোন গুঁজে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। জামা কাপড় খোলার কথাও মাথায় এলো না। আজ এই সময় আমার মালিনীর ঘরে গিয়ে ওর বরের সামনে ওকে ভোগ করার কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে মাথায় শুধু ঘুরছে মৃত্যু, দোলন, দীপক ...এইসব। এখন মালিনীর সাথে এই সব করার কোনও মানে দাঁড়ায় না। কে জানে কখন আবার থানায় ছুটতে হয়। আমি মালিনী কে একটা এস এম এস করে জানিয়ে দিলাম যে ক্লাসের একজনের হঠাত মৃত্যু হওয়ায় সব গোলমাল হয়ে গেছে। এখন তোমার সাথে দেখা করা হবে না। একটু একা থেকে ভাবতে হবে অনেক কিছু। মালিনীর উত্তর এলো মিনিট দুয়েকের মধ্যে। “ কিছু চিন্তা করো না সোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে হোটেলে শান্তনু আর রঞ্জন বাবুর খবর পৌঁছে গেছে। রেস্ট নাও। আর মনে করে লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে দাও।”
আর লাঞ্চ! একটা রেডিও ষ্টেশনে টিউন ইন করে আবার শুয়ে পড়লাম। দেখলাম কয়েকটা মেইলও এসেছে। সেগুলোর ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। মামুলি মেইল যত সব। স্প্যাম। অবশ্য একটা মেল খুব কাজের। লোকাল দালালের কাছ থেকে এসেছে। বাড়ির খবর আছে। ও হ্যাঁ সঞ্চিতা ম্যাডামের সাথে দেখা করার কথা বিকালে। ওনাকে ওই হাসপাতালে দেখেছিলাম বটে, কিন্তু কথা বলার সুযোগ পাইনি। ম্যাডাম কে কি ফোন করে জানিয়ে দেব যে আজকের বদলে আগামীকাল ওনার সাথে দেখা করলে কেমন হয়? আমাদের সবার ওপর দিয়েই আজ অনেক ঝড় ঝাঁপটা চলে গেছে। আজ আর বাড়ির খোঁজে যেতে মন চাইছে না। আরেকটা জিনিস পথে আসতে আসতে জানতে পেরেছিলাম। এটাও জেনেছি একটা এস এম এস থেকে। কলেজের ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে এসেছে এই এস এম এসটা। সারমর্ম হল ঃ সুনীল আর বিশালের মৃত্যুর শোকে আগামীকাল কলেজ বন্ধ। কখন যে চোখ বুজে গিয়েছিল সেটা সঠিক ভাবে বলতে পারব না। ঘুম ভাঙল মোবাইলের রিঙে। এটা রাকা। ঘড়ি বলছে এখন বাজে বিকেল সোয়া দুটো। কল রিসিভ করতেই রাকা এক ধার থেকে অসংলগ্ন ভাবে অনেক কথা বলে যেতে শুরু করল। ওকে আমি থামিয়ে বললাম “দাঁড়া দাঁড়া, এই ভাবে বললে আমি কিছু বুঝতে পারছি না। একটু থেমে থেমে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বল যে আবার কি হয়েছে বা কি জানা গেছে?” ও কয়েক সেকন্ডের জন্য একটু চুপ করে রইল। বুঝলাম মনের ভেতরের চিন্তাগুলোকে গুছিয়ে নিচ্ছে।
তারপর শুরু করলঃ “ এখন অব্দি পুলিশের কাছ থেকে যা জানা গেছে তা হল এই মতন ঃ
১। দোলন এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছে।
২। রঞ্জনবাবু যে বিষের প্রয়োগেই মারা গেছেন সেই বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিঃসন্দেহ। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট আসতে সময় লাগবে। তাহলে ব্যাপারটা আরও খোলসা হবে।
৩। দীপকের ঘরে কোনও ক্যামেরা লাগানো ছিল না। তাই সেই ছেলেটাই দীপককে ওই পিস্তলটা দিয়েছিল কি না সেই বিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছে না। তবে সন্দেহ ওই ছেলেটার ওপরেই। ছেলেটা যদিও দীপক কে পিস্তল দেওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করছে। পিস্তলটা পুলিশ ল্যাবে পাঠিয়েছে।
৪। পিস্তল, জলের গ্লাস, জল সব কিছু ল্যাবে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য।
৫। যে গাড়িতে দুর্ঘটনা হয়েছে সেই গাড়িটাও পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
৬। হাসপাতাল থেকে যত গুলো সি সি টিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে সব বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
৭। কোলাঘাটের কাছেই একটা চেক পয়েন্ট থেকে সিসিটিভি ফুটেজ আনিয়েছে এখানকার পুলিশ।
৮। যেহেতু একজন ভি আই পি মারা গেছেন তাই সব পরীক্ষা নিরীক্ষা যুদ্ধকালীন তৎপরতার সাথে করা হচ্ছে। আশা করা যায় যে বিকালের পর থেকে একে একে সব রিপোর্ট আসতে শুরু করে দেবে।
৯। বডি পুলিশের হাত থেকে ছাড়া হলে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে অনেক লোক ভিড় করে ফেলেছে ইতিমধ্যে। রাজ্যের মিনিস্টার বলে কথা।
কথা আর এগোল না। কল কেটে আবার শুয়ে পড়লাম। তিনটে বাজতে না বাজতেই আবার কল এলো। এবারও রাকা। “শোন তোকে এক্ষুনি একবার থানায় আসতে হবে?” আমি ঢোক গিলে বললাম “কেন? আমি আবার কি করেছি?” রাকা বলল “সেটা ফোনে বলতে পারছি না। তুই কিছু করিসনি কিন্তু পুলিশ একবার তোর সাথে কথা বলতে চাইছে। ভয় পাস না। একবার তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
পাঁচ মিনিটের ভেতর বেরিয়ে পড়লাম। ট্যাক্সি ধরে থানায় পৌঁছাতে লাগল ঠিক কুড়ি মিনিট। ভেতরে ঢুকে দেখলাম দোলন আর বেলা মুখার্জিও সেখানে উপস্থিত। দোলন যেন আমাকে দেখেও দেখল না। সকালের সেই পুলিশ অফিসারও আছেন। আমাকে বসতে বলা হল। বসলাম। সেই অফিসার প্রায় কোনও ভনিতা না করেই শুরু করলেন। “ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ আমরা চেক করেছি। রঞ্জন বাবুর জন্য যিনি জল আনতে গেছিলেন তিনি অনেক দিন ধরে হাসপাতালে কাজ করছেন। যেখানে উনি গ্লাসে জল ঢেলেছিলেন সেখান থেকে ওপরে আসা অব্দি প্রায় পুরো সময়টা বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যাচ্ছে। আমরা দেখতে পেলাম যে উপরে আসার পর একজনের সাথে উনি ধাক্কা খান, লিফটের ঠিক বাইরে। সে কে?” আমি চিন্তা না করেই উত্তর দিলাম “আমার সাথেই উনি ধাক্কা খেয়েছিলেন।” অফিসার বলে চললেন “ তুমি ক্ষণিকের জন্য হলেও জলের ট্রেতা ওনার হাত থেকে নিয়ে নিয়েছিলে। রাইট?” মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম হ্যাঁ। “সেই সময় তুমি সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়েছিলে। জলের ট্রেটা দেখা যাচ্ছিল না। তোমার হাত থেকে ট্রেটা ফেরত নিয়েই উনি দৌড় মারলেন রঞ্জনবাবুর দিকে। রঞ্জনবাবু ওনার কাছ থেকে জল নিয়ে জল খেলেন। তার কিছুক্ষনেইর মধ্যেই ওনার মৃত্যু। “ [/HIDE]
রাকা আর দোলন দুজন দুজনের সাথে চোখাচোখি করল। দুজনের ঠোঁটেই হাসি খেলে গেল। দোলন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “ এই টুকু বলি যে ওর বাবা মা আর কাকু কাকিমা, দে আর ইন কাইন্ড অফ গ্রুপ রিলেশন। বুঝলি?” বুঝেছি ঠিকই তাও না বোঝার ভান করে বললাম “ মানে?” দোলন হঠাত আমার দিকে এসে আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বলল “এই জন্য তোকে এত ভালেবাসি। তুই এখনও কত সরল। গ্রুপ রিলেশন মানে হল ওরা চার জন একই বিছানায় শোয়। রোজ না হলেও মাঝে মাঝেই শোয়। বুঝতে পারছিস তো? এটা কৌশিক ভুল করে একবার দেখে ফেলেছিল। একদিন মদ খেতে বসে ভুল করে বলে ফেলেছে। সেই থেকে সবাই জানে। আসলে আমাদের সবার বাড়িতে এত স্ক্যান্ডাল যে কেউ এই নিয়ে কিছু মাইন্ড করে না। “
আমি হেসে বললাম “তার মানে বলতে চাইছিস টাকা, প্রতিপত্তি আর স্ক্যান্ডাল সমার্থক হয়ে গেছে?” ও হেসে বলল “একদম ঠিক ধরেছিস।” একটু পরে রাকার দিকে তাকিয়ে বলল “সংকেত আজ মানুষ হচ্ছে আমাদের পাল্লায় পড়ে। এতদিন ভালো ছেলে ছিল। এইবার মানুষ হচ্ছে। কলকাতা চিনতে পারছে।” আমি আর কিছু বললাম না। মনে মনে বললাম যেদিন তুই আমাকে চিনবি সেই দিন তোর সব হাসি বেরিয়ে যাবে পেছন দিয়ে আর সেই সময় খুব দূরে নয়…
ঘড়ির কাঁটা দেখাচ্ছে রাত দুটো। আমরা ঘাটে ফিরে এসেছি। টাকা মিটিয়ে উঠে পড়লাম। দোলন আমাকে ড্রপ করবে বলে রেখেছিল। কিন্তু আমি কাটিয়ে দিলাম। একটা ট্যাক্সি ধরে নিলাম। ওকে আমার হোটেল চেনানোর কোনও কারণ নেই। মদের নেশায় না থাকলে ও বুঝতে পারত এমন একজন লোকের ছেলে কোনও দিন ওরকম একটা শস্তা ধর্মশালায় থাকতে পারে না। হোটেলে পৌঁছে দেখলাম কাউন্টারে ক্লান্ত মুখে মালিনী আর অন্য মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। চাবি চাইতে মালিনী বলল “ম্যানেজার আপনার সাথে একটু কথা বলবে।” আমি বললাম “ডেকে দিন। একটু তাড়াতাড়ি প্লীজ। ভীষণ টায়ার্ড।”
ম্যানেজার এসে আমাকে এক দিকে নিয়ে গিয়ে বলল “ শুনুন স্যার কিছু মনে করবেন না। সকালের ব্যাপারে কিন্তু আপনার যে হাত আছে সেটা আমরা জানি।” আমি বললাম “প্রমাণ করুণ। আপনাদের সেই গেস্ট আমাকে ফিসিকালি আবিউস করেন নি সেটাও প্রমাণ করুণ।” ম্যানেজার বলল “ আমি সেই কথায় ঢুকতে চাইছি না। জাস্ট রিকোয়েস্ট করছি যে এরকম ব্যাপারে আর না ঢুকলেই ভালো, আপনার জন্য।” আমি বললাম “আপনি কি আমাকে ধমকি দিচ্ছেন?” ও বলল “না স্যার। আপনি আমাদের এখানকার বোর্ডার। আপনার সুরক্ষা আমাদের দায়িত্ব। তাই আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। আর তাছাড়া ওনার ঘরের চাবিটাও কোনও ভাবে মিস প্লেসড হয়েছে, সেই নিয়েও উনি চটে আছেন। কাল আর তেমন কোনও ড্রামা না হলেই ভালো।” আমি বললাম “ওনার চাবি কোথায় গেছে তা আমার জানার কথা নয়। হি মাস্ট বি অ্যাঁ কেয়ারলেস ফুল। আর আমার সুরক্ষা নিয়ে তেমন ভাববেন না। যেমন তেমন হলে আমি ওনার মতন পঞ্চাশটাকে একাই সামলে নেব। ডোন্ট অয়ারি। এইবার আমি আসি। কাল অনেক কাজ আছে। “ মালিনীকে ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম যেন কাল সকালে এসে আমার ঘর থেকে বোতলটা নিয়ে যায়। জানি না আসবে কি না।
সকাল সাতটায় যখন সকালের এক্সসারসাইজ সেরে হোটেলে ঢুকছি তখনই সেই সিকিউরিটির সাথে দেখা যে প্রায় রোজ আমাকে সকালে ফিরতে দেখে ভূত দেখার মতন আঁটকে ওঠে। আমি আজও হেসে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই এস এম এস এলো। সঞ্চিতা ম্যাডাম। “দুপুরের দিকে চলে এসো। কথা আছে। এখানেই খাবে।” আমি রিপ্লাই টাইপ করলাম “ ওকে। আসব। কিন্তু খাব না। এক জায়গায় যাচ্ছি সেখানেই খেয়ে নেব।” রিপ্লাই এলো “তাহলে বিকাল চারটের দিকে এসো। হয়ত তোমাকে আমি সাহায্য করতে পারব।” রিপ্লাই দিলাম “ঠিক আছে। থ্যাংকস ম্যাম।”
খবরের কাগজটা খুলে বসলাম। না, চোখ বুলিয়ে তেমন কিছু পেলাম না। টিভি খুললাম। একটা বাংলা নিউজ চ্যানেল চালিয়ে দিয়ে বাথরুমে স্নান করতে ঢুকে গেলাম। বেরিয়ে এসে দেখি দশটা মিসড কল। দোলন। সকাল সকাল প্রেম উঠলে উঠেছে ন কি? পরের বারের কলটা আসার সাথে সাথে উঠিয়ে নিলাম। দোলনের গলা শুনেই কেমন যেন ধড়াস করে উঠল বুকের ভেতরটা। ও বলল “দাদা আর নেই সংকেত।” আমি বললাম “মানে?” দোলন কাঁদছে সেটা বুঝতে পারছি, ও অনেকক্ষণ ধরে অনেক কিছু বলে চলল যার সারাংশ নিলে এমন দাঁড়ায়। যে গাড়িটা মন্দারমনির দিকে গেছে সেটা কোলাঘাটের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় দের ঘণ্টার জন্য। ওখানে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করেছে, এমন কি মদও খেয়েছে। তারপর সেখান থেকে রওয়ানা দেওয়ার পর পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়ির কন্ট্রোল হারিয়ে একটা মেজর দুর্ঘটনা হয়েছে। সুনীল, শান্তনু, সুচেতা, বিশাল, আরও দুজন যারা শুভর বন্ধু, আর শুভ নিজে সবাই মারা গেছে। শুধু দীপক কোনও ভাবে বেঁচে গেছে। কি ভাবে বেঁচে গেছে কেউ জানে না। ব্যাপারটা ঘটেছে রাত আড়াইটার দিকে।
দীপককে একটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিখাদি নাকি ওখানেই আছে। ওর ডান পাশের পাঁজর ভেঙ্গে গেছে। মাথায় চোট পেয়েছে। কাল যারা যারা শান্তনুর সাথে পার্টিতে ছিল তাদের পুলিশের সামনে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম “দীপক কিছু জানে না, কিভাবে হল ব্যাপারটা।” দোলন বলল “ও ড্রাইভারের পাশে বসে ঘুমাচ্ছিল। শুধু একটাই কথা মনে করতে পেরেছে যে আক্সিডেন্টের পর একটা কালো গাড়ি ওদের গাড়িটার থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে ভেতরে কে আছে কি ব্যাপার সেটা ও জানে না। হতে পারে গাড়িটা ওদের গাড়ির দুর্ঘটনা দেখে দাঁড়িয়ে পরে ছিল। কিন্তু কোনও ফ্যাসাদের ভয়ে সরে পরে ছে। পুলিশ সব কিছু চেক করে বলছে এটা দুর্ঘটনা নয়, জল ঘোলা। গাড়ির ডান দিকের দুটো টায়ারেরই স্ক্রু লুস করে দেওয়া হয়েছিল। প্লাস ব্রেকেও প্রবলেম পাওয়া গেছে। ব্রেক করলেই চাকার ওপর এমন প্রেসার পড়বে যাতে চাকা দুটো পুরো গাড়ি থেকে খুলে আসতে পারে, কিন্তু পুরো সেরকমই হয়েছে কিনা এখনও সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না। সবাই ড্রাঙ্ক ছিল। প্রায় স্পটেই মারা গেছে। “
আমি হাসপাতালের নাম জেনে নিলাম। সেই সাথে কোন থানায় গিয়ে দেখা করতে হবে সেটাও জেনে নিলাম। তবে থানায় আমাদের যেতে হবে না। আমাদের যেতে হবে হাসপাতালে। সকাল দশটার দিকে। সেখানেই পুলিশ থাকবে। এত অদ্ভুত বিপদে পড়া গেল। বললাম “চিন্তা করিস না, দশটার আগেই পৌঁছে যাব।” ফোন রেখে দিলাম। টিভি বন্ধ করে একটু চুপ করে বসে রইলাম। সত্যি একেই বলে মানুষের জীবন। কাল রাতে যাদের সাথে বসে আড্ডা দিলাম, তাদের অনেকে আজ এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে দুর্ঘটনায়। যাই হোক ধীরে ধীরে রেডি হয়ে নিলাম। হাসপাতালটা হোটেল থেকে বেশ দূরে। আমি বেরনোর আগে মালিনী আসতে পারেনি। কিন্তু আমার মাথায় এখন আর মালিনীকে নিয়ে কোনও ভাবনা ঘুরছে না। এখন অন্য চিন্তা ঘুরছে মাথার ভেতরে।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখলাম কলেজের অনেকেই এসেছে। বিশাল ছিল আমাদেরই বন্ধু। দেখলাম সঞ্চিতা ম্যাডামও এসেছেন। আরও অনেক টিচার এসেছেন। পুলিশকে গিয়ে পরিচয় দিতেই আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। দীপকের ঘরের সামনে পুলিশের ভিড়। দোলনের জবানবন্দী নেওয়া হচ্ছে। বা ও পুলিশকে অনেক কিছু বলে চলেছে। যাই হোক আমাকে দেখেই শিখাদি আমার দিকে এগিয়ে এলো। “কাল কি তুই আমাকে ঘরে ছাড়তে এসেছিলিস?” আমি বললাম “হ্যাঁ আমাকে দীপকদা বলেছিল তোমাকে ছেড়ে দিতে। তুমি নিজে ভালো করে হাঁটতে পারছিলে না। সেন্সে ছিলে না তাই।” ওর চোখ দুটো জ্বলে উঠল। আমাকে কিছু একটা বলার আগেই আমি ওকে বললাম “তোমার কি স্মার্ট ফোন আছে?” বলল “হ্যাঁ।” বললাম “ মেইলটা একবার চেক করবে?” ও সেখানেই দাঁড়িয়ে মেইল খুলতে যাচ্ছিল, আমি ওকে বাধা দিয়ে বললাম “ এখানে নয়। সবার থেকে একটু সরে গিয়ে মেইল চেক করো। ইন্টারেস্টিং জিনিস পাবে।”
ও সবার থেকে একটু তফাতে সরে গেল। কিছুক্ষণ পর যখন ফিরে এল তখন ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ওর ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। একজন পুলিশ ওর দিকে এগিয়ে এসে বলল “আপনি আমাদের কিছু বলতে চেয়েছিলেন। তখন আপনার দিকে নজর দিতে পারিনি। এখন বলতে পারেন কি সমস্যা।” ও রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বলল “ না না তেমন কিছু নয়। আমি শুধু জিজ্ঞেস করতাম যে দীপককে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলে ওকে কি নিয়ে যাওয়া যায়?” পুলিশ বলল “এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে?” আমাকে তেমন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি কারণ রাকা আর দোলন ইতি মধ্যে আমার আলিবাই দিয়ে দিয়েছে।
রঞ্জন বাবু আর বেলা ম্যাডামের সাথে ওখানে দেখা হল। মহিলা সত্যিই সেক্সি। বয়স কত হয়েছে সেটা আন্দাজ করা শক্ত। আমার ধারণা বয়স নিশ্চয় পঞ্চাশের কাছাকাছি। তবে শরীরের বাঁধুনি ভীষণ রকম ভালো, আর চেহারাও খুব সুন্দর আর সেক্সি। টাইট শরীর বলতে যা বোঝায়। চামড়ায় এক ফোঁটা ভাঁজ পরেনি কোথাও। যে শাড়িটা পরে এসেছেন সেটা দেখে কেউ বলতে পারবে না যে কিছু ঘণ্টা আগে ওনার ছেলে মারা গেছে। ফুলের কাজ করা পাতলা শিফনের ডিজাইনার শাড়ি। শাড়িটা স্বচ্ছ। শাড়ির নিচে ব্লাউজে ঢাকা ওনার বুক পেট সব কিছুই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে। স্তনের আকার আয়তন বেশ টাইট, মালিনীর মতন কিছুটা।
শাড়ির নিচে একটা গাড় নিল রঙের পিঠ খোলা ব্লাউজ পরে এসেছেন। স্লিভলেস ব্লাউজ। ঠোঁটে গাড় লিপস্টিক লাগানো। ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারলাম যে ওনার নিঃশ্বাসে মদের গন্ধ আসছে। বুঝতে পারলাম অনেক রাত, বা ভোর অব্দি চলেছে পার্টি। মদের গন্ধ এখনও মুখ থেকে মুছে যায় নি। রঞ্জন বাবুর মুখ থেকেও মদের গন্ধ আসছে। কাঁধের ওপর ব্লাউজের স্ট্র্যাপ দুটো যেন দুটো সরু সুতো। ব্লাউজের স্ট্র্যাপের পাশ দিয়ে ভেতরে পরা ব্রায়ের স্কিন কালারের স্ট্র্যাপ চলে গেছে ঘাড়ের ওপর দিয়ে। খোলা পিঠের ওপর দিয়েও স্কিন কালারের ব্রায়ের স্ট্র্যাপের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। শালা কে বলবে যে এনার ছেলে মারা গেছে। রীতিমত মেক আপ করে এসেছেন। শাড়িটা পরেছেন নাভির থেকে প্রায় সাত আঙুল নিচে। হতে পারে যোনী দেশের ঠিক ওপরে শাড়িটা বাধা আছে। স্বচ্ছ শাড়ির ভেতর দিয়ে ওনার গোল বড় নাভিটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পাতলা শাড়িটা এধার অধার সরে গেলে তো কথাই নেই, নাভি সহ পুরো পেটটা নগ্ন হয়ে যাচ্ছে।
উফফ বাঁড়াটা আবার খাড়া হয়ে যাচ্ছে। অর্ধেকের বেশী ক্লিভেজ স্বচ্ছ শাড়ির নিচে নগ্ন হয়ে আছে। তবে শরীরের কোথাও কোনও মেদ নেই। রেগুলার জিম করেন। মসৃণ স্কিন। দোলনের ফিগারটা এনার থেকে আরেকটু ভরাট। উনি যদিও সবাইকে দেখাতে চাইছেন যে উনি ওনার ছেলের বিয়োগে খুবই মর্মাহত, কিন্তু ওনার মুখ দেখে যে কেউ বলে দেবে যে সেটা নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। রঞ্জন বাবু যদিও খুবই ভেঙ্গে পরে ছেন। আর সেটা জেনুইন। ওনার চার পাশে বডি গার্ডের সমাহার। একবার উনি ফিট হয়ে পরে ই যাচ্ছিলেন। বডি গার্ডদেরই একজন ওনাকে ধরে একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিল। সাথে সাথে হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টের একজন কে বলা হল যে জল নিয়ে আসতে। লোক দৌড়ে চলে গেল। নাহ এই নাটক দেখার কোনও মানে হয় না।
আমার নাম ধাম জেনে নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এখানে থাকা না থাকা আমার ওপর। অন্তত বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট খেয়ে আসা যেতেই পারে। বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছি, লিফটের সামনে এসে আবার ধাক্কা একজন লোকের সাথে। না ইনি কোনও ভি আই পি নন। ইনি হাসপাতালের কর্মচারী। ছাপোষা লোক। রঞ্জন বাবুর জন্য জল নিয়ে এসেছেন। গ্লাসের ওপর রাখা ঢাকনাটা এক পাশে সরে যাওয়ায় সামান্য কিছুটা জল বাইরে ছিটকে পরে ছে আমার গায়ের ওপর। আমি সরি বলে জলের ট্রে তা ওনার হাত থেকে নিয়ে ওনাকে বেশ ভুষা ঠিক করে নেওয়ার সময় দিলাম। উনি আবার ভালো করে জলের গ্লাসটা ঢাকা দিয়ে দৌড় মারল রঞ্জন বাবুর দিকে। আমি লিফটে নিচে নেমে গেলাম।
নিচে নেমে দোলনকে একটা কল করে বললাম “ আমি বেরিয়ে যাচ্ছি। আমার এখানকার কাজ হয়ে গেছে। তুইও বাড়ি গিয়ে একটু রেস্ট নে। আর শোন। এটা সময় নয় এই কথা বলার। কিন্তু তবুও বলছি। তুই তোর দাদা কে খুব ভালোবাসতিস। তোর দাদা চলে গেছে। আমি ভীষণ দুঃখিত। জানি না এই ফাঁকা জায়গাটা কিভাবে ভরাট হবে। তবে… এটুকু বলতে পারি, একজন ভালোবাসার মানুষ গেছে, কিন্তু আরেকজন নতুন ভালোবাসার মানুষকে তুই গতকাল পেয়েছিস। গতকাল তুই হাবে ভাবে যা জানতে চেয়েছিলিস, তার উত্তর হল হ্যাঁ। আমারও তোকে খুব পছন্দ। আবারও বলছি তোর দাদার জায়গা কেউ ভরাট করতে পারবে না। হি অয়াস অ্যাঁ ভেরি ভেরি নাইস পার্সন। কিন্তু আমাকে কনসলেসন প্রাইজ হিসাবে নিতে পারিস। জানি এটা এই কথা বলার জন্য ঠিক সময় নয়। বাট দা আনসার ইজ ইয়েস। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা বলতে চাইছিলাম। অন্য ভাবে নিস না। একটু ঠাণ্ডা ভাবে ভেবে দেখ। দীপক ড্রাইভারের পাশে বসেও কিছুই জানে না, এটা কি খুব অ্যাঁক্সেপ্টেবল আনসার। এটা যদি দুর্ঘটনা না হয়ে থাকে তো হতে পারে তোর দাদার মৃত্যুর পেছনে দীপকের হাত আছে। আমি শিওর নই, কিন্তু এটা না ভেবে থাকতে পারছি না। কারণ ওই এক মাত্র লোক যে গায়ে পরে তোর দাদাদের সাথে কাল ভিড়ে গেছিল। আমার গত কালই কেমন যেন সন্দেহ হয়েছিল। জাস্ট জানিয়ে রাখলাম। অন্য ভাবে নিস না আবারও বলছি। তবে এখনই এই নিয়ে মাতামাতি করিস না। পুলিশকে কিছু বলতে হলে একটু রেখে ঢেকে পরে বলিস। এখানে দীপকের অনেকগুলো চামচা দেখলাম। ওরা তোর বাবার ধারে কাছেই ঘোরা ফেরা করছে। কথা বার্তা শুনেই মনে হল যে ওরা দীপকের চামচা। টেক কেয়ার। ” আমি ফোন কেটে দিলাম। ও পুরো সময়টা শুধু শুনে গেল। কিছু বলতে পারল না।
সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করার আগেই একটা এস এম এস ঢুকল। দোলন। “আই লাভ ইউ টু মাই পুচু সোনা। থ্যাংকস ফর ইওর কনসার্ন অ্যাঁবাউট মি। অনেক অনেক কিসি এই সময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তুই যা বোঝাতে চেয়েছিস সেটা আমি বুঝেছি। তুই আমার কনসোলেশন প্রাইজ নস। তুই আমার অ্যাঞ্জেল। মুয়ায়ায়ায়াহ। দীপকের ব্যাপারটা আমারও সন্দেহজনক লাগছে। পরে কল করব সোনা। টেক কেয়ার।” সিগারেটটা শেষ করে একটা ট্যাক্সি ধরতে যাব ঠিক সেই সময় দোলনের কল। “কি ব্যাপার।” ও বলল “ তুই কি বেরিয়ে গেছিস? রাকার সাথে কথা বলে ব্যাপারটা আমি পুলিশকে গোপনে জানিয়েছি। তুই এসে একবার কথা বলতে পারবি?” আমি শান্ত গলায় বললাম “কেন পারব না। তোর জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। লাভ ইউ। আমি আসছি।”
লিফটের সামনে দাঁড়িয়েই বুঝতে পারলাম যে ওপরে কিছু একটা হয়েছে। দৌড়া দৌড়ী শুরু হয়ে গেছে। লিফটে ওঠা আর আমার হল না। সিঁড়ি ভেঙ্গে চার তলায় উঠে যা দেখলাম তাতে এক নিমেষে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। রঞ্জন বাবু যেই বেঞ্চে বসে ছিলেন সেখানেই লুটিয়ে পরে ছেন। ওনার মুখ দিয়ে গ্যাঁজা বেরোচ্ছে। মুখ পুরো নীল হয়ে গেছে। একজন ডাক্তার এসে ঝুঁকে পরে ওনাকে পরীক্ষা করছেন। এক কথায় উনি মারা গেছেন। ডাক্তারের সন্দেহ বিষক্রিয়া। মনে মনে বলতে বাধ্য হলাম হোয়াট দা হেল। এইবার বেলা মুখার্জি কে দেখে মনে হল যে ফাইনালি উনি বিচলিত হয়েছেন স্বামীর এই আকস্মিক মৃত্যুতে। ওনার চোখে জল। এবং এইবার দেখে মনে হল যে সেটা মেকি কান্না নয়। দোলনের কথা আর বলার নয়। ইতি মধ্যে সবাই জেনে গেছে যে দোলন সন্দেহ করে দীপককে। আরেকটা কথা আমি জানতে পারলাম, সেটা হল এই যে, দীপক আগে যদিও রঞ্জন বাবুর জন্য কাজ করত, কিন্তু ইদানিং নাকি ওর বেপরোয়া ভাবের জন্য রঞ্জন বাবুর সাথে ওর কিছু ঝামেলা হয়েছে। রঞ্জন বাবুর বডিটা কোনও মতে ভিড় ঠেলে পোস্ট মর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হল। যেই গ্লাস থেকে উনি জল খেয়েছেন সেটাও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। গ্লাসে এখনও কয়েক ফোঁটা জল অবশিষ্ট। সেটা নাকি পরীক্ষা করে দেখা হবে। স্ট্যান্ডার্ড প্রসেস।
একজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল “তুমি সংকেত?” বললাম “হ্যাঁ।” বলল “একটু আমাদের সাথে এসো।” আমাকে দীপকের ঘরের ভেতর নিয়ে গেল। অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম দোলন যে দীপক কে সন্দেহ করে সেটা জানার পরই দীপকের চামচাগুলো একে একে সরে পরে ছে। এখনও যদিও দুই একজন অবশিষ্ট আছে। আরেকটা ব্যাপার না বলে পারছি না, দীপকের বাড়ির কোনও লোককে দেখতে পেলাম না। ওরা কি জানে না যে দীপকের এই দুর্ঘটনার কথা? দোলন রাকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে। আমাকে পুলিশ জিজ্ঞেস করল “দীপকের সামনেই তুমি খুলে বলবে যে কেন তোমাদের সন্দেহ দীপক এটা করতে পারে। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা?” আমি একটা লম্বা দম নিয়ে গতকাল যা হয়েছে আবার বলে চললাম পুলিশের সামনে। মাঝে দোলন বলল “ বাবার সাথে অনেক দিন ধরেই দীপকের অনেক ঝামেলা চলছে। বাড়িতে এসে শাসিয়েও গেছে কয়েক দিন আগে। এই শুয়োরটাই গতকাল আমার দাদাকে মেরেছে, আর আজ ওরই কোনও লোক যে বাইরে ঘুর ঘুর করছিল, সুযোগ বুঝে বাবাকে বিষ…” আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ও।
দীপক কোনও মতে উঠে বসেছে। ওকে দেখে মনে হবে যেন ও কিছুই বুঝতে পারছে না। আমার বয়ান শেষ হলে আমাকে যেতে বলা হল। আমি বেরিয়ে ই আসছিলাম। কিন্তু কি মনে হতে আমি একবার থেমে গেলাম। ওই পুলিশের সামনেই এগিয়ে গেলাম দীপকের দিকে। পাশে শিখা দাঁড়িয়ে আছে। দীপকের চোখে চোখ রেখে বললাম “দীপকদা তুমি যদি সত্যিই এই দুটো মৃত্যুর পেছনে থাকো তো আমার সাজেশন নাও। সত্যি কথা স্বীকার করে নাও। একজন মিনিস্টারকে মেরে তুমি বা তোমার লোক পার পাবে না। তুমি ওনাকে শাসিয়ে এসেছ? এটা পুলিশের চোখে একটা ভাইটাল এভিডেন্স। ভুলে যেও না রঞ্জন বাবু ভোটে জিতে মিনিস্টার হয়েছেন। ওনার অনেক লোক আছে, যারা বাইরে তোমাকে পেলেই... কথাটা ভালো ভাবে মনের ভেতর গেঁথে নাও।” একটু থেমে বললাম “আমি তোমার জায়গায় থাকলে সুই সাইড করে নিতাম। এই অবস্থায় বেঁচে থাকলে আরও অনেক ভুগতে হবে। তুমি বিছানায় পরে থাকা অবস্থায় বাইরে তোমার কোনও লোক সুযোগ বুঝে রঞ্জন বাবুকে বিষ দিতে পারবে না সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না। এখানে তোমার বিছানায় পরে থাকার অ্যাঁলিবাইটাই তোমার এগেনস্টে যাবে ইনভেস্টিগেশন হলে।” আমি বেরিয়ে গেলাম ঝড়ের মতন। লক্ষ্য করলাম দীপকদা শিখাদির দিকে করুণ মুখে চেয়ে আছে। আর বাকিরা সবাই দীপকদার দিকে তাকিয়ে আছে…
এক সাথে অনেক ঘটনা ঘটে গেলে মাথাটা কেমন যেন ভো ভো করে। আজ সেই রকম অবস্থা। ভোর রাতে এত গুলো ছেলে মেয়ের মৃত্যু। তারপর রঞ্জন বাবুর আকস্মিক মৃত্যু, যেটা শিওরলি খুন। আর হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে আরেকটা খবর পেলাম। এইবার এস এম এস নয়। কল। রাকা। দীপকের ঘরের বাইরে পুলিশ বসিয়ে সবাই বেরিয়ে এসেছিল। হঠাত উপরে একটা দুম করে শব্দ পেয়ে সবাই ছুটে ওপরে গিয়ে দেখে যে দীপক একটা চালু বাজারে পিস্তল দিয়ে সুই সাইড করে নিয়েছে। ঘটনাটা যখন ঘটে তখন ঘরে দীপক একা ছিল। সবার ধারণা শিখাদির সাথে কোনও পিস্তল ছিল না। আর তাছাড়া শিখাদি বেশ কিছুক্ষণ আগেই পুলিশের সামনেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আরেকজন ছেলে দীপকদার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। সেই ছেলেটাকে পুলিশ আটক করেছে। আপাতত অনুমান করা হচ্ছে যে দীপক ওই ছেলেটার কাছ থেকে পিস্তলটা ধার করেছে, আর ঘর খালি হলে সেই পিস্তল দিয়েই সুই সাইড করেছে। ওই ছেলেটা যে একটা মার্কা মারা গুন্ডা সেটা সবাই জানে। রাজনৈতিক কারনে এতদিন ছেলেটার গায়ে হাত দেওয়া যায় নি। কিন্তু আজ যখন মিনিস্টার নিজেই ভিক্টিম, তখন আর রাজনৈতিক গুণ্ডার জীবনের কি দাম!
খবরটা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস আপনা থেকে বেরিয়ে গেল। মনটা কেমন যেন বিষাদে ভরে গেছে এতগুলো মৃত্যুতে। ঘরে ঢুকেই কানে হেড ফোন গুঁজে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। জামা কাপড় খোলার কথাও মাথায় এলো না। আজ এই সময় আমার মালিনীর ঘরে গিয়ে ওর বরের সামনে ওকে ভোগ করার কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে মাথায় শুধু ঘুরছে মৃত্যু, দোলন, দীপক ...এইসব। এখন মালিনীর সাথে এই সব করার কোনও মানে দাঁড়ায় না। কে জানে কখন আবার থানায় ছুটতে হয়। আমি মালিনী কে একটা এস এম এস করে জানিয়ে দিলাম যে ক্লাসের একজনের হঠাত মৃত্যু হওয়ায় সব গোলমাল হয়ে গেছে। এখন তোমার সাথে দেখা করা হবে না। একটু একা থেকে ভাবতে হবে অনেক কিছু। মালিনীর উত্তর এলো মিনিট দুয়েকের মধ্যে। “ কিছু চিন্তা করো না সোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে হোটেলে শান্তনু আর রঞ্জন বাবুর খবর পৌঁছে গেছে। রেস্ট নাও। আর মনে করে লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে দাও।”
আর লাঞ্চ! একটা রেডিও ষ্টেশনে টিউন ইন করে আবার শুয়ে পড়লাম। দেখলাম কয়েকটা মেইলও এসেছে। সেগুলোর ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। মামুলি মেইল যত সব। স্প্যাম। অবশ্য একটা মেল খুব কাজের। লোকাল দালালের কাছ থেকে এসেছে। বাড়ির খবর আছে। ও হ্যাঁ সঞ্চিতা ম্যাডামের সাথে দেখা করার কথা বিকালে। ওনাকে ওই হাসপাতালে দেখেছিলাম বটে, কিন্তু কথা বলার সুযোগ পাইনি। ম্যাডাম কে কি ফোন করে জানিয়ে দেব যে আজকের বদলে আগামীকাল ওনার সাথে দেখা করলে কেমন হয়? আমাদের সবার ওপর দিয়েই আজ অনেক ঝড় ঝাঁপটা চলে গেছে। আজ আর বাড়ির খোঁজে যেতে মন চাইছে না। আরেকটা জিনিস পথে আসতে আসতে জানতে পেরেছিলাম। এটাও জেনেছি একটা এস এম এস থেকে। কলেজের ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে এসেছে এই এস এম এসটা। সারমর্ম হল ঃ সুনীল আর বিশালের মৃত্যুর শোকে আগামীকাল কলেজ বন্ধ। কখন যে চোখ বুজে গিয়েছিল সেটা সঠিক ভাবে বলতে পারব না। ঘুম ভাঙল মোবাইলের রিঙে। এটা রাকা। ঘড়ি বলছে এখন বাজে বিকেল সোয়া দুটো। কল রিসিভ করতেই রাকা এক ধার থেকে অসংলগ্ন ভাবে অনেক কথা বলে যেতে শুরু করল। ওকে আমি থামিয়ে বললাম “দাঁড়া দাঁড়া, এই ভাবে বললে আমি কিছু বুঝতে পারছি না। একটু থেমে থেমে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বল যে আবার কি হয়েছে বা কি জানা গেছে?” ও কয়েক সেকন্ডের জন্য একটু চুপ করে রইল। বুঝলাম মনের ভেতরের চিন্তাগুলোকে গুছিয়ে নিচ্ছে।
তারপর শুরু করলঃ “ এখন অব্দি পুলিশের কাছ থেকে যা জানা গেছে তা হল এই মতন ঃ
১। দোলন এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছে।
২। রঞ্জনবাবু যে বিষের প্রয়োগেই মারা গেছেন সেই বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিঃসন্দেহ। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট আসতে সময় লাগবে। তাহলে ব্যাপারটা আরও খোলসা হবে।
৩। দীপকের ঘরে কোনও ক্যামেরা লাগানো ছিল না। তাই সেই ছেলেটাই দীপককে ওই পিস্তলটা দিয়েছিল কি না সেই বিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছে না। তবে সন্দেহ ওই ছেলেটার ওপরেই। ছেলেটা যদিও দীপক কে পিস্তল দেওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করছে। পিস্তলটা পুলিশ ল্যাবে পাঠিয়েছে।
৪। পিস্তল, জলের গ্লাস, জল সব কিছু ল্যাবে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য।
৫। যে গাড়িতে দুর্ঘটনা হয়েছে সেই গাড়িটাও পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
৬। হাসপাতাল থেকে যত গুলো সি সি টিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে সব বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
৭। কোলাঘাটের কাছেই একটা চেক পয়েন্ট থেকে সিসিটিভি ফুটেজ আনিয়েছে এখানকার পুলিশ।
৮। যেহেতু একজন ভি আই পি মারা গেছেন তাই সব পরীক্ষা নিরীক্ষা যুদ্ধকালীন তৎপরতার সাথে করা হচ্ছে। আশা করা যায় যে বিকালের পর থেকে একে একে সব রিপোর্ট আসতে শুরু করে দেবে।
৯। বডি পুলিশের হাত থেকে ছাড়া হলে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে অনেক লোক ভিড় করে ফেলেছে ইতিমধ্যে। রাজ্যের মিনিস্টার বলে কথা।
কথা আর এগোল না। কল কেটে আবার শুয়ে পড়লাম। তিনটে বাজতে না বাজতেই আবার কল এলো। এবারও রাকা। “শোন তোকে এক্ষুনি একবার থানায় আসতে হবে?” আমি ঢোক গিলে বললাম “কেন? আমি আবার কি করেছি?” রাকা বলল “সেটা ফোনে বলতে পারছি না। তুই কিছু করিসনি কিন্তু পুলিশ একবার তোর সাথে কথা বলতে চাইছে। ভয় পাস না। একবার তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
পাঁচ মিনিটের ভেতর বেরিয়ে পড়লাম। ট্যাক্সি ধরে থানায় পৌঁছাতে লাগল ঠিক কুড়ি মিনিট। ভেতরে ঢুকে দেখলাম দোলন আর বেলা মুখার্জিও সেখানে উপস্থিত। দোলন যেন আমাকে দেখেও দেখল না। সকালের সেই পুলিশ অফিসারও আছেন। আমাকে বসতে বলা হল। বসলাম। সেই অফিসার প্রায় কোনও ভনিতা না করেই শুরু করলেন। “ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ আমরা চেক করেছি। রঞ্জন বাবুর জন্য যিনি জল আনতে গেছিলেন তিনি অনেক দিন ধরে হাসপাতালে কাজ করছেন। যেখানে উনি গ্লাসে জল ঢেলেছিলেন সেখান থেকে ওপরে আসা অব্দি প্রায় পুরো সময়টা বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যাচ্ছে। আমরা দেখতে পেলাম যে উপরে আসার পর একজনের সাথে উনি ধাক্কা খান, লিফটের ঠিক বাইরে। সে কে?” আমি চিন্তা না করেই উত্তর দিলাম “আমার সাথেই উনি ধাক্কা খেয়েছিলেন।” অফিসার বলে চললেন “ তুমি ক্ষণিকের জন্য হলেও জলের ট্রেতা ওনার হাত থেকে নিয়ে নিয়েছিলে। রাইট?” মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম হ্যাঁ। “সেই সময় তুমি সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়েছিলে। জলের ট্রেটা দেখা যাচ্ছিল না। তোমার হাত থেকে ট্রেটা ফেরত নিয়েই উনি দৌড় মারলেন রঞ্জনবাবুর দিকে। রঞ্জনবাবু ওনার কাছ থেকে জল নিয়ে জল খেলেন। তার কিছুক্ষনেইর মধ্যেই ওনার মৃত্যু। “ [/HIDE]