গ্রীষ্ণের মৌসুম চলে এসেছে প্রায়। গরম থেকে বাঁচতে কি করবেন? হাতে যদি একটু সময় পান তাহলে এই গরমের মাঝেও শীতের আমেজ পেতে ঘুরে আসতে পারেন হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ভারতের সিমলা রাজ্য থেকে৷ সিমলার সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে সমস্ত বিশ্বজুড়ে। তবে আজ সিমলার সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে নয়, বরং ভুতুড়ে এক স্থানের সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতেই আমাদের এই আয়োজন৷ আপনি কি জানেন যে সিমলার ভয়ংকর রেলপথ – টানেল নম্বর ৩৩ কে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু অমীমাংসিত রহস্য? আজ আমরা তেমনই এক গল্প বলতে চলেছি…
সিমলার ভয়ংকর রেলপথ – টানেল নম্বর ৩৩ এর অবস্থান
সিমলার বিখ্যাত সুরঙ্গ সিমলা-কালকা সুড়ঙ্গ৷ যার নাম “ টানেল নাম্বার ৩৩ ”৷ টয়ট্রেনে এই ভয়ংকর রেলপথ অতিক্রম করতে লাগে প্রায় দুই মিনিট। সিমলা থেকে কালকা যাওয়ার পথের এই সুড়ঙ্গটিই সবচেয়ে বড়৷ আর এই সুড়ঙ্গটিকে ঘিরেই রয়েছে অনেক ভুতুড়ে কাহিনী৷ বলা হয়ে থাকে যে, এই সুড়ঙ্গের ভিতরে বাস করেন ইংরেজ অফিসার কর্নেল বারোগের আত্মা৷ আপনারা অনেকেই হয়তো একে গুঁজব মনে করে হেলাফেলায় উড়িয়ে দিতে পারেন৷ কিন্তু এই ঘটনাটি একেবারে সত্য৷ ঘটনাটির পিছনেও রয়েছে একটি ইতিহাস৷ চলুন জেনে নেই কি ঘটেছিল এখানে?
ভয়ংকর রেলপথ – টানেল নম্বর ৩৩ এর ইতিহাস
১৮৯৮ সালে এই দীর্ঘতম রেলপথটি নির্মাণ করা হয়েছিলো৷ আর এই টানেল নম্বর ৩৩ নির্মানের দায়িত্বে ছিলেন ইংরেজ অফিসার কর্নেল বারোগ৷ টানেলটি নির্মানের জন্য ব্রিটিশ সরকার একটি নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়েছিলো৷ কর্নেল বারোগ একটি পরিকল্পনা করেন। তিনি টানেল খোঁড়ার জন্যে কাজ শুরু করেন পাহাড়ের দুই দিক থেকেই। উদ্দেশ্য ছিল, দুই দিক থেকে সোজাসুজি খুঁড়তে খুঁড়তে মাঝামাঝি এসে মিলিয়ে দেওয়া। কিন্তু তার হিসেবে একটু গোলমাল ছিলো, ফলে নির্ধারিত সময়ে তিনি টানেল খননের কাজ শেষ করতে পারেন নি। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার তাকে তীব্রভাবে তিরস্কার করে। তার ভুলের কারনে কাজটি শেষ হয়নি বলে তাকে ১ টাকা জরিমানা করা হয়। এত পরিশ্রম ব্যর্থ হওয়ার দায় কর্নেল বারোগ নিজের কাঁধে চাপিয়ে নেন। তারপর থেকে তীব্র মনকষ্টে ভুগতে থাকেন তিনি। এক বিকেলে তিনি বন্দুক হাতে বের হয়ে যান। পাহাড়ের গায়ে, অর্ধসমাপ্ত সেই টানেলের কাছে গিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি। কর্মচারীরা সেখান থেকে তার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে এবং তাকে সেই টানেলের কাছেই সমাধিত করা হয়। তারপর থেকে কর্নেল বারোগ এর আত্মা সেই স্থান আজও পরিত্যাগ করেননি। আজও সেই টানেল জড়িয়ে খেলা করে তাঁর স্মৃতি এবং লোকমুখে কথিত হয় তার অমর আত্মা।
এই ঘটনার পর এই স্টেশনটির নাম রাখা হয়েছে বারোগ স্টেশন৷ যারা এই সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে ট্রেনে চেপে গিয়েছেন তাদের মুখে শোনা যায় যে এই সময় অজানা গলার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। অনেকে বলেন যে এখানে অদৃশ্য কিছু জিনিসের স্পর্শও পাওয়া যায়৷ টানেলের কাছাকাছি বাস করা মানুষেরা বলেছেন যে তারা অনেকেই আলখেল্লা ও হ্যাট পড়া একজন ব্যাক্তিকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন টানেলের ভেতরে। মানুষজন যারাই এই টানেলটিতে হেঁটে একটু ঢুকেছেন, তাদের মনেই অল্পবিস্তর কিছু অনুভব করেছেন। টানেলটির পুরোটাই স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়াল এবং টুপটুপ করে জল পড়ার এক অদ্ভুত আওয়াজ, ঠাণ্ডা হাওয়া আর অদ্ভুত একটা শিরশিরানি ভাব রয়েছে। টানেলটিতে হেঁটে একটু ঢোকার পরেই অন্ধকারটা খুব বেশি করে চেপে বসে। অনেক ভুতে বিশ্বাস না করা মানুষও পুরো টানেলটি হেঁটে যেতে ভয় পাবেন।
সম্প্রতিকালে টানেল নম্বর ৩৩ ভ্রমনের অভিজ্ঞতা
আমাদের এক বন্ধু সম্প্রতি হেঁটে টানেলটি পার হয়েছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা। সিমলা যাওয়ার পথে বারোগ ষ্টেশনে ১০ থেকে ১৫ মিনিট থামে ট্রেন। সেই ফাঁকে তিনি হেঁটে ঢুকেছিলেন সেই টানেলে। তার উদ্দেশ্য ছিলো ছবি তোলা। ক্যামেরা অন করে ভিউ ফাইণ্ডারে চোখ রেখেছেন সবে, হটাতই কোত্থেকে একঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া এসে হাত দুটো কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। বুকটার ভিতর কেমন একটা ভয় গ্রাস করল তাকে। মন শক্ত করে আবার ক্যামেরায় চোখ রাখতেই ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে গেলো। হটাত চারপাশটা কেমন খুব চুপচাপ মনে হল। অনবরত জলের টুপটাপ শব্দটা কেমন যেন গলা চেপে ধরল। ছবি তোলা মুলতুবি রেখে তিনি দৌড়ে পার হয়ে গেলেন টানেলটি।
এই রকমের অভিজ্ঞতা আরও অনেকেরই হয়েছে। তবে খুব বেশি ভয় পাবেন না। কারণ ঐ টানেলে ঢোকার পর আজ পর্যন্ত কারো কোন ক্ষতি হয়েছে বলে শোনা যায় নি। কর্নেল বারোগ নিভৃতচারী, একা থাকতে ভালোবাসেন। কিন্তু কারো ক্ষতি করেন না।
এই ছিলো আমাদের আজকের আয়োজনে। আগামীতে আরও সব ভুতুড়ে ঘটনা নিয়ে হাজির হয়ে যাব। সে পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।