সাম্য, শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামের মূল পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হলো রমজান মাসের সিয়াম পালন। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত—এই সাক্ষ্য দান করা যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ্ বা মাবুদ বা উপাস্য নেই, আর নিশ্চয় হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজ করা এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করা।’ (বুখারি, হাদিস: ৭, পৃষ্ঠা: ১৬)। সংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ তথা তাকওয়ার মাস রমজান। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারেরা তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যে রূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিও; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।
পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান। মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারিমে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বর্ণনা করেন, ‘রমজান মাস, এ মাসে মানুষের দিশারি, সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নিরূপণকারী হিসেবে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে সওম পালন করে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।
রমজানের উদ্দেশ্য তাকওয়া। তাকওয়া অর্থ আল্লাহর ভয়। আল্লাহর ভয়ে সব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। সংযম অবলম্বন করা। এই সংযম সব শ্রেণি–পেশার মানুষের জন্য। ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা অতি মুনাফার লোভ সংযত করবেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি থেকে বিরত হবেন। ভোক্তা ও ক্রেতারা অহেতুক অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকবেন। সরকার ও প্রশাসন শুধু রাজস্ব বাড়ানো আর অর্থকরী ব্যবস্থার পরিবর্তে জনকল্যাণে ব্রতী হবে। তবেই রমজানের উদ্দেশ্য সফল হবে। রহমতের অফুরন্ত ধারা প্রবাহিত হবে। মাগফিরাত ও নাজাত লাভ হবে।
রমজান মাস উপবাস পালনের মাস। যাতে ধনীরা অভাবী মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারেন। কিন্তু আমরা রমজানকে ভোজের আয়োজনে পরিণত করি। পানাহারের প্রতি এত বেশি মনোযোগী হই, যাতে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। সামর্থ্যবানেরা এত বেশি বাজার করেন, এতে গরিব মানুষ কেনার সুযোগ পায় না, যা রমজানের শিক্ষার ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সহমর্মিতার এ মাসে আমাদের আশপাশে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যাঁরা অভাবী আছেন, তাঁদের ইফতার ও সাহ্রির ব্যবস্থা করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ইমানদার নয়, যে পেট ভরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে (মুসলিম)।’
আল্লাহর রহমত সর্বকালে সর্বত্র বর্ষিত হতে থাকে; পবিত্র রমজান মাসে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ফলে রোজা, নামাজ, তিলাওয়াত, দান–সদকা, ফিতরা, জাকাত, জিকির-আসকার যাবতীয় ইবাদত অনুশীলন ও তাকওয়া অর্জন সহজ হয়।
রোজাদারকে পানাহার করানোর বিশেষ ফজিলত রয়েছে। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ সাহাবারা বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোঁক পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না (মুসনাদে আহমাদ)।’
আল্লাহর রহমত সর্বকালে সর্বত্র বর্ষিত হতে থাকে; পবিত্র রমজান মাসে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ফলে রোজা, নামাজ, তিলাওয়াত, দান–সদকা, ফিতরা, জাকাত, জিকির-আসকার যাবতীয় ইবাদত অনুশীলন ও তাকওয়া অর্জন সহজ হয়।
সাওম বা রোজা পালনের পাশাপাশি তাকওয়া তথা খোদাভীতি সদা মনে জাগরূক রাখতে হবে। সংযম, সহমর্মিতা, সমবেদনা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করতে হবে। তবেই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ নিশ্চিত হবে।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম