আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে ভরপুর ম্যাচে টাইব্রেকারে রাশিয়াকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ২১তম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা আর ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টানো ম্যাচে দুই দল সমান তালে লড়াই করেছে। তবে ভাগ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি স্বাগতিকরা। টাইব্রেকারে জয়ে ১১ জুলাই দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মোকাবেলা করবে ক্রোয়েশিয়া।
গতকাল নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলের সমতায় শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে উভয় দলই ১টি করে গোলের দেখা পায়। ১২০ মিনিটের খেলা ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে। এখানে রাশিয়ার ফেডর এসমোলভের শট আটকে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডেনিয়েল সুবাসিচ। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার কোভাসিচের শট আটকে দেন রাশিয়ার গোলরক্ষক ইগর আকিনফেভ। এ ছাড়া রাশিয়ার হয়ে গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে শট নেন মারিও ফার্নান্দেজ। ফলে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নেয় রাশিয়া। কিন্তু একবারও পেরোতে পারেনি গ্রুপপর্বের বাধা। তবে নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ^কাপের ২১তম আসরে যেন একের পর এক চমক দেখাতে থাকে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে শেষ আটে উঠে তারা। এ ছাড়া প্রথম রাউন্ডে সৌদি আরব ও মিসরকে হারিয়েছেন কোচ স্টানি স্লাভ চেরশেসভের শিষ্যরা। অন্যদিকে ১৯৯৮ সালের পর তিনটি বিশ^কাপে অংশ নিলেও শেষ চারে উঠতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। তাই গতকালের ম্যাচে জয়ের মধ্য দিয়ে ক্রোয়েশিয়া ও রাশিয়া দুদলের সামনেই ছিল দীর্ঘদিন পর সেমিফাইনালে উঠে নিজ দেশের সমর্থকদের আনন্দের বন্যায় ভাসানোর সুযোগ। শেষ ষোলোতে ডেনমার্কের মতো দলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পান লুকা মড্রিচরা। এ ছাড়া গ্রুপপর্বের তিনটি ম্যাচেও জয় পান কোচ জ্ল্যাতকো ড্যালিচের শিষ্যরা। যেখানে আর্জেন্টিনার মতো শক্তিশালী দলও নাস্তানাবুদ হয় মড্রিচদের কাছে। তাই নিশ্চিত ফেভারিট হিসেবেই কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটিতে খেলতে নেমেছিল ক্রোয়েশিয়া।
অলিম্পিয়াস্কি স্টেডিয়ামে এদিন ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল রাশিয়া। এ সময় ডি-বক্সের ভেতরে বল পেয়েও গোলমুখে শট নিতে পারেননি রুশ ফরোয়ার্ড আলেকজান্ডার গোলোভিন। এর ৫ মিনিট পর আন্তে রেভিচের শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন রাশিয়ার গোলরক্ষক ইগর আফিনফেভ। ম্যাচের ১৩ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে সহজ এক গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচটিতে পেনাল্টি কিক থেকে গোল করে রাশিয়াকে সমতায় ফেরানো ডিজওভা। এরপর আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে খেলা। যেখানে মাঝমাঠ নিজেদের দখলে রেখে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে ক্রোয়েশিয়া।
অন্যদিকে পাল্টা আক্রমণে গোলের সুযোগ তৈরি করে রাশিয়াও। এমনই এক সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচের ৩১ মিনিটে স্বাগতিকদের এগিয়ে নেন ফরোয়ার্ড ড্যানিশ চেরিশেভ। এ সময় মাঝমাঠ থেকে আর্তেম জুভাকে বল বাড়িয়ে সামনে এগোন চেরিশেভ, আর্তেম ফের বল পাঠান চেরিশেভের দিকে। ফের বল পেয়ে ক্রোয়েশিয়ার কয়েকজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার জোরালো এক শট নেন চেরিশেভ। বাঁ কোণা দিয়ে বল ক্রোয়েশিয়ার জালে জড়ালে উল্লাসে মেতে উঠে পুরো গ্যালারি। এটি রাশিয়া বিশ^কাপে চেরিশেভের চতুর্থ গোল।
সমতায় ফিরতে বেশিক্ষণ লাগেনি ক্রোয়েশিয়ার। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে মারিও মানজুকিচের বাড়ানো বল থেকে গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান স্ট্রাইকার আন্ড্রেজ ক্রামারিজ। এরপর প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ১-১ গোলের সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল। বিরতি থেকে ফেরার পর আরো ছন্দ আসে উভয় দলের খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সে। ম্যাচের ৫৯ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত ক্রোয়েশিয়া। এ সময় রাশিয়ার ডি-বক্সের ভেতরে জটলার মধ্যে বল পেয়ে গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন ওইঙ্গার ইভান পেরিসিচ। কিন্তু তার শট গোলরক্ষক ইগর আকিনফেভকে পরাস্ত করলেও গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফলে নিশ্চিত একটি গোল থেকে বঞ্চিত হয় জ্ল্যাতকো ড্যালিচের শিষ্যরা। এরপর বাকী সময়ে আর কোনো গোল না হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অবশেষে অতিরিক্ত সময়ের দশম মিনিটে কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পায় ক্রোয়েশিয়া। এ সময় লুকা মড্রিচের কর্নার কিক থেকে ভেসে আসা বলে হেড দিয়ে রাশিয়ার জালে বল পাঠিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে নেন ডিফেন্ডার ডোমাগো ভিদা। তবে ম্যাচের ১১৫ মিনিটে গোল করে স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান মারিও ফার্নান্দেজ। এরপর আর গোল না হলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। স্বাগতিকরা টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে।