বিদেশি অতিথিরা রাষ্ট্রীয় সফরে হাঙ্গেরি আসলে এই হিরোজ স্কয়ারে তাদের গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়
রুদাস জিওজিফোর্দোতে পা রাখার পর ক্যাতিসিয়া বলল, ‘চলো, আগে দুপুরের খাবার সেরে নেওয়া যাক।’ গুগল ম্যাপ দেখে ক্যাতিসিয়া একটা ট্র্যাডিশনাল হাঙ্গেরিয়ান রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করল।
রেস্টুরেন্টের মেন্যু কার্ডটা হাতে নিতে ক্যাতিসিয়া আমাকে বলল, ‘গুলাশ ট্রাই করি, কী বলো। আমাদের দেশের নামের সঙ্গে গুলাশ শব্দটি ওতপ্রোতভাবে লেগে আছে। ইউরোপে এর থেকে স্পাইসি খাবার তুমি আরেকটি খুঁজে পাবে না।’
দুপুরের খাবারে ফিশ গুলাশ; হাঙ্গেরির সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে গুলাশ একটি
পেচে থাকতেও কয়েকবার আমার গুলাশ খাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে গুলাশ হচ্ছে একধরনের স্টু জাতীয় খাবার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গরুর মাংস দিয়ে গুলাশ তৈরি করা হয়। তবে সেদিন আমরা ফিশ গুলাশ নিয়েছিলাম।
ক্যাতিসিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, বিফ গুলাশ থাকতে আজকে ফিশ গুলাশ কেন? ক্যাতিসিয়া বলল, ‘বছরে প্রায় ৩৬৫ দিন বিফ গুলাশ রান্না করা যায়, কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে নির্দিষ্ট কিছুদিন ছাড়া ফিশ গুলাশ রান্না করা যায় না। আর ফিশ গুলাশ রান্না করতে হলে নির্দিষ্ট একধরনের কার্প–জাতীয় মাছের প্রয়োজন হয়। হাঙ্গেরি যেহেতু একটি ল্যান্ডলকড কান্ট্রি, তাই আমাদের সঙ্গে সাগরের কোনো সংযোগ নেই। এ কারণে মাছের জন্য আমরা লেকগুলোর ওপর নির্ভরশীল। আবার জেলেরা সব সময় মাছ ধরার সুযোগও পায় না। এ কারণে বাড়িতে কিংবা রেস্টুরেন্টে সবস ময় ফিশ গুলাশ রান্না করার সুযোগ হয় না।’
অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে গুলাশ পার্শ্ববর্তী দেশ স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, চেক রিপাবলিক, স্লোভেনিয়া, অস্ট্রিয়া, সার্বিয়া কিংবা ইউক্রেনের মতো দেশগুলোতেও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। হাঙ্গেরিয়ানদের খাদ্যাভ্যাসে প্যাপরিকার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় লক্ষ করা যায়। গুলাশের সঙ্গেও প্রচুর পরিমাণে প্যাপরিকা যোগ করা হয়। যেকোনো খাবারে প্যাপরিকা যোগ করলে সেটি টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে। আমাদের দেশীয় মরিচের মতো প্যাপরিকাতে তেমন ঝাল নেই। এ কারণে ক্যাতিসিয়া গুলাশকে ইউরোপের সবচেয়ে স্পাইসি খাবার বললেও আমার কাছে তেমন একটা ঝাল মনে হয়নি।
খাবারের টেবিলে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ক্যাতিসিয়ার সঙ্গে কথা হয়। ক্যাতিসিয়া কিছু আক্ষেপ নিয়ে বলে, ‘এশিয়া বা আফ্রিকা থেকে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ উচ্চশিক্ষা কিংবা কাজের সন্ধানে হাঙ্গেরি আসছে; আর আমরা হাঙ্গেরিয়ানরা এ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’ এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘কেন তোমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ? তোমাদের একটি সুন্দর রাজধানী শহর রয়েছে, ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরেও তোমরা অনেক এগিয়ে। তারপরেও তোমাদের মধ্যে কেন এত হতাশা?’
ক্যাতিসিয়া বলে, ‘বুদাপেস্ট কিংবা অস্ট্রিয়ার সীমান্তবর্তী হাঙ্গেরিয়ান শহরগুলোকে দিয়ে তুমি হাঙ্গেরিকে বিবেচনা করতে পারবে না। রাজধানী বুদাপেস্ট ও অস্ট্রিয়ার সীমান্তবর্তী শহরগুলোর সঙ্গে হাঙ্গেরির অন্যান্য অঞ্চলের পার্থক্য দিন ও রাতের মতো। মানচিত্রে হাঙ্গেরি একক দেশ হলেও বাস্তবে এখানে দুটি দেশ রয়েছে। নামেই আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন; কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে কোনো অংশে আলাদা নয়। বুদাপেস্ট ও অস্ট্রিয়ার সীমান্তবর্তী শহরগুলোর মানুষের জীবনযাত্রার মান এত উন্নত যে গোটা অঞ্চলকে আলাদা দেশ হিসেবে বিবেচনা করা উত্তম। এ অংশকে বাদ দিলে হাঙ্গেরির চেহারা অনেক ক্ষেত্রে রুগ্ণ।
জাতীয় সংসদের মতো বুদা ক্যাসেলেও সবসময় নিরাপত্তারক্ষীবাহিনীকে গার্ড দিতে দেখা যায়
এ জন্য হাঙ্গেরির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অরবান ভেক্টরের ব্যাপক সমালোচনাও করল।এমনকি অরবানকে বর্তমান যুগের নাৎসি আখ্যা দিতেও ছাড়ল না ক্যাতিসিয়া; বরং বলল, ‘অরবানের পলিসি এ দেশের মানুষের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবোধের জন্ম দিচ্ছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির অর্থনৈতিক দুর্দশা ও মুদ্রাস্ফীতির জন্যও তিনি দায়ী।’
রেস্টুরেন্টে খেতে এসে একটা বিষয় লক্ষ করলাম। রেস্টুরেন্টে খেতে আসা অন্য কাস্টমারেরাও ছিলেন হাঙ্গেরিয়ান। তাই তাদেরকে কাছ থেকে দেখার আরও একটি সুযোগ হলো। সেদিক থেকে একটা অভিজ্ঞতার কথা না বললে নয়। পোশাক-আশাকে হাঙ্গেরিয়ানরা বেশ সরল। অন্তত এ দিক থেকে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের বিলাসিতার ছাপ দেখা যায় না। তবে সিগারেটের প্রতি হাঙ্গেরিয়ানদের আসক্তি প্রবল এবং আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, হাঙ্গেরিতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অধিকমাত্রায় ধূমপায়ী। হাঙ্গেরির পথে-প্রান্তরে এ ধরনের চিত্র প্রায় দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিক একসঙ্গে সময় অতিবাহিত করছেন। স্বামীর হাতে কিংবা প্রেমিকের হাতে সিগারেট না থাকলেও স্ত্রীর হাতে কিংবা প্রেমিকার হাতে ঠিকই জ্বলন্ত সিগারেট থাকে।
স্ট্যাচু অব লিবার্টির সামনে লেখক
দুপুরের খাবার শেষে আমরা আবার হাঁটতে শুরু করি। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সিটাডেল। বাংলাদেশের মতো হাঙ্গেরির বেশির ভাগ জায়গা সমতল। তাই দেশটিতে বড় কোনো পাহাড়ের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তারপরেও হাঙ্গেরিতে কয়েকটি উচ্চতম পাহাড়ের মধ্যে গিলার্ট হিল অন্যতম। গিলার্ট হিলের উপরিভাগে সিটাডেলের অবস্থান। সিটাডেল হচ্ছে বুদাপেস্টের সর্বোচ্চ বিন্দু; সেখান থেকে পুরো বুদাপেস্ট শহরকে একনজরে দেখা যায়। বুদা ক্যাসেলের মতো পুরো গিলার্ট পাহাড় বেয়ে সিটাডেল পর্যন্ত পৌঁছাতে মানসিকভাবে চাঙা থাকা জরুরি।
গিলার্ট হিলের পাদদেশে আসতে না আসতেই ক্যাতিসিয়া আমাকে ওপরের দিকে তাকানোর জন্য নির্দেশ দিল। আমিও তাই ওপরের দিকে তাকালাম। দেখলাম, ব্রোঞ্জের তৈরি একটি ভাস্কর্য বুদাপেস্ট শহরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার দুই হাত ওপরে উঠানো, হাত মুঠো করে ধরা পামপাতা। ক্যাতিসিয়া ভাস্কর্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, ‘এ ভাস্কর্যের সঙ্গে জুড়ে আছে আমাদের স্বাধীনতা ও সংগ্রামের ইতিহাস। দূর থেকে যখন এ ভাস্কর্যের দিকে আমাদের চোখ পড়ে, তখন মনে হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রাণ হারানো হাঙ্গেরিয়ানদের দুই হাত তুলে সে আশীর্বাদ জানাচ্ছে। আমরা তখন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। আমরা এ ভাস্কর্যের নাম দিয়েছি লিবার্টি স্ট্যাচু।’
সিটাডেল থেকে দেখা যায় পুরো বুদাপেস্ট শহরকে
সিটাডেলে পৌঁছাতে লিবার্টি স্ট্যাচুর পাশে ব্রোঞ্জের তৈরি আরও দুটি স্ট্যাচুর দেখা পেলাম। এমনকি পুরো গিলার্ট পাহাড়ের ঢালজুড়ে আরও কয়েকটি ভাস্কর্য রয়েছে, যেগুলো হাঙ্গেরির ইতিহাসের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পর্কিত। প্রথম দিকে আমার কাছে সিটাডেলকেও ফোরট্রেস মনে হয়েছে। এমনকি লিবার্টি স্ট্যাচুর ঠিক পেছনে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি কামানও রাখা হয়েছে। ক্যাতিসিয়া বলল, ১৯৬৫ সালে হাঙ্গেরির সাধারণ মানুষ যখন কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয়, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে একদল সেনা এসে সিটাডেল দখল করে এবং আন্দোলনরত জনসাধারণের ওপর গোলাবর্ষণ করে।
সিটাডেল থেকে এক অসাধারণ আবহে পুরো বুদাপেস্ট শহরকে অবলোকন করা যায়। সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে পুরোনো বাড়িঘর, গাছপালায় ঘেরা চমৎকার এক শহর। শহরের মধ্যভাগ বরাবর বয়ে চলেছে দানিয়ুব নদী। নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত ছুটে চলছে হলুদ রঙের ট্রাম। বিকেলের সোনালি রোদে নদীর অন্য পারের বিল্ডিংগুলো চকচক করে উঠছে।
প্রায় এক হাজার বছরের পুরাতন গির্জা ম্যাথিয়াস চার্চ, পুরো বুদাপেস্টে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন চার্চের একটি
সিটাডেল থেকে ক্যাতিসিয়ার সঙ্গে চলে আসি সেন্ট গ্যালেন টারে। সেখান থেকে ট্রামে আমাদের প্রথম গন্তব্য দিয়াক ফেরেঙ্ক টার। রাতের বেলায় দিয়াক ফেরেঙ্কটার অত্যন্ত জমজমাট হয়ে ওঠে। বুদাপেস্টের বেশির ভাগ পাব ও নাইট ক্লাব এই দিয়াক ফেরেঙ্ক টারে।
মূলত সেন্ট স্টিফেন ব্যাসিলিকা দেখার জন্য আমাদের দিয়াক ফেরেঙ্ক টারে আসা। হাঙ্গেরিয়ানদের কাছে সেন্ট স্টিফেন ব্যাসিলিকা ক্যাথলিক খ্রিশ্চিয়ানিটির এক পবিত্র প্রতীক হিসেবে সমাদৃত। যাঁরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুণগ্রাহী, তাঁদের কাছে সেইন্ট স্টিফেন ব্যাসিলিকা হচ্ছে এক আদর্শ স্থান। কয়েক শ বছরের পুরোনো ভবন, পাথুরে পথ চিরে যাওয়া ট্রাম, আলো–আঁধারি রেস্তোরাঁ, কফি শপ, ভেসে আসে পিয়ানো বা ভায়োলিনের সুর, বহুজাতিক পর্যটকদের ছবি তোলার হিড়িক—সব মিলিয়ে সেন্ট স্টিফেন ব্যাসিলিকার আশপাশ সব সময় প্রাণময়। ক্যাতিসিয়ার ভাষায়, পুরো বুদাপেস্ট ঘুমালেও দিয়াক ফেরেঙ্কটার কখনো ঘুমায় না।
সেন্ট স্টিফেনস ব্যাসিলিকা
দিয়াক ফেরেঙ্ক টার থেকে আমরা মেট্রোতে চেপে যাই ম্যাক্সিকোই উতচারে। ম্যাক্সিকোই উতচা থেকে কয়েক গজ হাঁটলেই কাঙ্ক্ষিত হিরোজ স্কোয়ার। বুদাপেস্টের মেট্রো সার্ভিস সত্যি অসাধারণ। এম ওয়ান, এম টু, এম থ্রি ও এম ফোর—এই চারটি লাইনেই বুদাপেস্টে সব মেট্রো পরিষেবা পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে এম ওয়ান সবচেয়ে পুরোনো। ১৮৯৬ সালে চালু হওয়া এ পাতাল রেলওয়ে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। মেট্রো যখন দিয়াক ফেরেঙ্কটার থেকে ম্যাক্সিকোই উতচারে যাত্রা শুরু করলে, ক্যাতিসিয়া আমাকে বলল, ‘রাকিব, মনে করো তুমি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো পাতাল রেল পথ ধরে যাচ্ছ। তাই প্রতিটি মুহূর্তকে অনুভব করার চেষ্টা করো।’
একটা মেট্রো লাইন যে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হতে পারে, সেটা আগে কখনো ভাবিনি। এমনকি এ লাইনে যেসব মেট্রো যাতায়াত করে, সেগুলোও বেশ পুরোনো। তবে কিছুক্ষণ পরপর মেট্রোর শব্দে বিরক্তির উদ্বেগ হলেও ঐতিহ্যের কথা ভেবে পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে বেগ পেতে হলো না।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বুদাপেস্টের এম-০১ পাতাল রেলওয়ে, এই পাতালরেল চালু হয় ১৮৯৬ সালে
হিরোজ স্কোয়ার বুদাপেস্টের প্রধান পাবলিক স্কোয়ারগুলোর একটি। প্রকৃতপক্ষে এটা হচ্ছে একটি স্ট্যাচু কমপ্লেক্স। ৮৯৫ সালে কার্পেথিয়ান বেসিনে পা রাখা প্রথম সাত গোত্রপ্রধান ও হাঙ্গেরির ইতিহাসের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার ভাস্কর্য দিয়ে এ স্ট্যাচু কমপ্লেক্স সাজানো হয়েছে। প্রচলিত মিথ অনুযায়ী, এ সাতটি গোত্র থেকে হাঙ্গেরিয়ানদের আবির্ভাব ঘটেছে; যদিও এ বিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ভাস্কর্যগুলো পাথরের তৈরি। হাঙ্গেরিতে অবস্থিত বেশির ভাগ বিদেশি দূতাবাসের অবস্থান হিরোজ স্কয়ারের আশপাশে। বিদেশি অতিথিরা যখন হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তখন তাদেরকে হিরোজ স্কয়ারে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
হিরোজ স্কোয়ারের চারপাশে এক চক্কর দিতে দিতে কাকের ডানার মতো সন্ধ্যা নেমে আসে। চারপাশের পরিবেশ একেবারে নিথর, দিন শেষে কর্মব্যস্ত মানুষ ক্লান্তিকে সঙ্গী করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। কেন জানি কানের ভেতরে এক বিষাদের সুর প্রতিধ্বনিত হলো। বুঝতে আর বাকি রইল না যে ক্যাতিসিয়াকে বিদায় জানানোর সময় এসেছে। অনেকটা ভারাক্রান্ত মনে আমি ও ক্যাতিসিয়াকে একে অপরকে বিদায় জানাই।
ক্যাতিসিয়া বলে, ‘সামারে একবার বুদাপেস্টে এসো। আমি তোমাকে থার্মাল বাথগুলো ঘুরিয়ে দেখাব। আমাদের দেশে সি–বিচ নেই। তবে এসব থার্মাল বাথ কোনোভাবে সি–বিচের থেকে কম নয়। গ্রীষ্মকালে থার্মাল বাথের পানিতে গোসল করার মধ্য দিয়ে যে পরিতৃপ্তি পাওয়া যায়, তা বলে শেষ করা সম্ভব নয়।’
৮৯৫ সালে কার্পেথিয়ান বেসিনে পা রাখা প্রথম সাত গোত্রপ্রধানের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য
তাকে বিদায় জানিয়ে আমি ফেরার পথ ধরে ভাবতে থাকি, আর কোনো দিন তার সঙ্গে দেখা হবে কি না। হাঙ্গেরি নিয়ে এখন আর কোনো ক্ষোভ আমার নেই। এর কৃতিত্ব অবশ্যই ক্যাতিসিয়ার। চমৎকার একটি দিন উপহার দিয়ে তার দেশের প্রতি আমার নেতিবাচক মনোভাবকেই কেবল দূর করেনি, বরং আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধও করেছে বৈকি। (শেষ)
* লেখক: রাকিব হাসান | দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।