যক্ষ্মা এখনো আমাদের দেশে বড় একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। যক্ষ্মার জীবাণু কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। আমাদের চারপাশে অনেক মানুষই যক্ষ্মার জীবাণু বহন করে চলেছে। কেউ জেনে, কেউ না জেনে।
যক্ষ্মা যে কারোরই হতে পারে। যক্ষ্মা রোগীর কাছাকাছি থাকেন এমন ব্যক্তি, যেমন পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক, নার্স বা সেবা-শুশ্রূষাকারীর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যক্ষ্মার জীবাণু চারদিকেই আছে। চারপাশের পরিবেশে, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে যক্ষ্মার জীবাণু। বাতাসে শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ছড়ায় বলে আমরা যে কেউ যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকি। কিন্তু অনেক সময় এই জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকে, এর উপসর্গ প্রকাশিত হয় না মানুষের শরীরে। বছরের পর বছর যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে সুপ্ত অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। পরবর্তী সময়ে কোনো এক নাজুক সময় এই সুপ্ত যক্ষ্মা শরীরে সক্রিয় যক্ষ্মায় রূপ নিতে পারে। আর তখনই সব উপসর্গ ও জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই সুপ্ত যক্ষ্মার নাম ‘ল্যাটেন্ট টিবি’।
ধারণা করা হয়, সারা বিশ্বে এক-তৃতীয়াংশ জনগণ এ রকম সুপ্ত যক্ষ্মায় আক্রান্ত। এর মধ্যে ১০ শতাংশ যেকোনো সময় সক্রিয় রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যখন কোনো কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, যেমন এইডসে (এইচআইভি) আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কেমোথেরাপি পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি, অপুষ্টি, কিডনি রোগ, মাদক সেবন, বার্ধক্য, দীর্ঘ মেয়াদে স্টেরয়েড বা ইমিউনোথেরাপি ওষুধ সেবন, গর্ভাবস্থা ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্ত যক্ষ্মা পূর্ণ লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পায়। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি সংক্রামকও হয়ে ওঠেন।
সুপ্ত যক্ষ্মার চিকিৎসা সাধারণত কম সময়ের হয়ে থাকে এবং এতে সক্রিয় যক্ষ্মার চিকিৎসার তুলনায় কম অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। ৮৫ শতাংশ সক্রিয় বা লক্ষণ প্রকাশকারী যক্ষ্মা ফুসফুসে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ফুসফুসের আবরণী, লসিকাগ্রন্থি, মস্তিষ্ক ও এর আবরণে, অন্ত্র, হাড় বা ত্বকেও হতে পারে এই যক্ষ্মা।
কখন সন্দেহ করবেন
তিন সপ্তাহের অধিক সময় ধরে কাশি (শুকনো কিংবা কফযুক্ত), কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে আবার না–ও যেতে পারে, বুকে ব্যথা, ওজন হ্রাস, অবসাদ, অরুচি, সন্ধ্যায় হালকা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর (৯৯-১০১ ডিগ্রি) থাকতে পারে আবার না–ও থাকতে পারে, রাতে ঘাম ইত্যাদি উপসর্গ হলে আমাদের দেশে অবশ্যই যক্ষ্মা সন্দেহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। এ ছাড়া শরীরে যেকোনো জায়গায় লসিকাগ্রন্থির স্ফীতি, মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, পেটব্যথা, বুকে বা পেটে পানি জমা, খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে পড়া ইত্যাদিও ফুসফুসবহির্ভূত সক্রিয় যক্ষ্মার ভিন্ন উপসর্গ।
যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত যক্ষ্মার পরীক্ষা করা উচিত।
যক্ষ্মা হলেও রক্ষা আছে
একসময় বলা হতো যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। এখন এ কথাটি আর খাটে না। চিকিৎসায় যক্ষ্মা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়। দুই ধরনের চিকিৎসা প্রচলিত। এক পদ্ধতিতে ছয় মাস ধরে ওষুধ খেতে হয়। আরেক পদ্ধতিতে আট-নয় মাস ধরে ওষুধ খাওয়ানো হয়। নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করলে আর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
চাই প্রতিরোধ
যক্ষ্মা প্রতিরোধে জন্মের পরপর প্রতিটি শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। তাই রাস্তাঘাটে হাঁচি-কাশির বেগ এলে মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত বা টিস্যু ব্যবহার করে তা যথাযথ স্থানে ফেলা উচিত। যেখানে–সেখানে কফ–থুতু ফেলা উচিত নয়।