What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review সুপারস্টারের বায়োপিকে’ ইন্ডাস্ট্রির ভেতর-বাহির (1 Viewer)

ApXIabE.jpg


‘মেকআপ খুব খারাপ জিনিস, মেকআপ দিলে মানুষের চেহারা বদলায় যায়’
এই সংলাপটিতেই ‘মেকআপ’ ছবির থিম উঠে এসেছে। মেকআপের আড়ালে যে প্রকৃত মানুষটি থাকে মেকআপের কৃত্রিমতায় পর্দায় তাকে রহস্যজনক লাগে। সেই রহস্যের গল্প তুলে ধরতেই অনন্য মামুনের নতুন ছবি ‘মেকআপ’ (২০২১)।

অনন্য মামুন দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে বেশ আলোচিত/সমালোচিত নাম। তাঁর নতুন ছবি ‘মেকআপ’ মুক্তি পেয়েছে। এ ছবিতে তার অন্যান্য ছবির তুলনায় বড় আকারে সাবজেক্ট ভেরিয়েশন চোখে পড়েছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পেছনের গল্পকে তিনি তুলে ধরেছেন। সিলভার স্ক্রিনের রঙিন জগতের আড়ালে যে অন্ধকার সমাজের একটা চিহ্নই থাকে সেই গল্প বলেছেন। নিঃসন্দেহে এটা ভালো সাবজেক্ট। ছবির সেন্সর আটকে দেয়া হয়েছে প্রদর্শনযোগ্য নয় উল্লেখ করে তারপর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘আই থিয়েটার’-এ মুক্তি দেয়া হয়েছে।

ছবির ফিনিশিং এবং শুরুর কিছু সময় বাদে যতক্ষণ দর্শক সচেতনভাবে ছবিটি দেখবে একজন সুপারস্টারের ছায়া খুঁজে পাবে। কে সে? প্রশ্নের উত্তরটা খুব সহজেই পেয়ে যাবে দর্শক যদি এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে তাদের ধারণা বা জানাশোনা থাকে। তার ব্যক্তি ও চলচ্চিত্র জীবন দুটোকেই ছবির গল্পে আনা হয়েছে। দর্শক খুব সূক্ষ্মভাবে ছবির গতি এগিয়ে যাবার সাথে সাথেই একটা বায়োপিকের গন্ধ পেয়ে যাবে নিশ্চিতভাবে।

vLVn3k6.jpg


একজন সুপারস্টারের ক্যারিয়ার দর্শক গড়ে দেয় কিন্তু ইমেজ তাকেই বজায় রাখতে হয়। ইমেজ বজায় রাখার জন্য স্ট্রং পার্সোনালিটি দরকার পড়ে। সুপারস্টারের মধ্যে যদি সেটা না থাকে তাহলে তাকে সমালোচিত হতে হয়। অনন্য মামুন খুব সাহসিকতার সাথে দেখিয়েছেন একটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘ সময় কোনো সুপারস্টার একক আধিপত্য রাখলে তার অ্যাফেক্ট কি হতে পারে। সুপারস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করেছে সময়ের সাহসী অভিনেতা তারিক আনাম খান। তাঁর ছবির সিলেকশন বয়সের কাছে যেন হার মানছে প্রতিনিয়ত। চ্যালেঞ্জ নেয়ার মতো মনোভাব তাঁর আছে। তাঁর মুখে ‘এই খান না থাকলে এ ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক আগেই তালা ঝুলত’ সংলাপটি খুবই সাহসী ছিল বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিকে তুলে ধরার জন্য। তারপর তাঁর স্টারডমের পেছনে অপ্রিয় কিছু গল্প চলে আসতে থাকে সেগুলো কি ছবি দেখতে দেখতে দর্শক জানতে পারবে। একটা চরিত্র যখন বলে-‘আপনি যে ফ্রি কিকে গোল দিয়ে দেবেন তা তো জানতাম না’ এটা অপ্রিয় কিছুকে আরো ধারালো করে তোলে। দুই নায়িকা নিপা রিয়েলি আর পায়েল মুখার্জি সুপারস্টারের গল্পকে মূল থেকে তুলে ধরেছে দর্শক যেটা অনেকটাই কানেক্ট করতে পারবে।

ছবির মেকানিজম ছিল দারুণ। একটা মেয়ে কিভাবে নায়িকা হবার স্বপ্ন দেখে একদম গোড়া থেকে দেখানো হয়েছে। ‘এই ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে মেয়ে ধরার ফাঁদ’ এমন একটা সংলাপই যথেষ্ট ইন্ডাস্ট্রির পেছনের কিছু অপ্রিয় সত্যকে তুলে ধরতে। নায়িকা হতে চাইলে গিভ অ্যান্ড টেক পলিসির পাশাপাশি ভালো মেকার, প্রোডিউসারও যে ভূমিকা রাখে তাও এসেছে গল্পে। কিভাবে ফিল্মের রঙিন দুনিয়ায় ঢোকার পর জীবনের ধরণ পাল্টে যায় নায়িকা রিয়েলিকে দিয়ে সেটা বোঝানো হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির ইন্টারনাল পলিটিক্স, নারীলোভী মানসিকতা, সুপারস্টারের নিজস্ব স্টাইলে কাজ করার মানসিকতা, ডিরেক্টর-প্রোডিউসারের শুটিং জটিলতা, নেগেটিভ পাবলিসিটির গুরুত্ব, টিআরপি ফ্যাক্টর এগুলো একদম ধাপে ধাপে উঠে এসেছে ছবিতে। এই মেকানিজমটা ছবিটিকে পরিপূর্ণ ছবি করে তুলেছে।

Kq5Xom1.jpg


সুপারস্টারের ভূমিকায় তারিক আনাম খানের অভিনয় অসাধারণ। ক্যারিয়ার হ্যান্ডেল করতে টেকনিক অ্যাপ্লাই করার মাধ্যমগুলোতে প্রফেশনালিজম গুরুত্ব পেয়েছে তার চরিত্রে। বাস্তবে যা ঘটে ঠিক তাই। রোশানের ভয়েস অসাধারণ কিন্তু অভিনয়ে দুর্বলতা আছে বিশেষ করে কান্নার অভিনয় ন্যাচারাল না। নায়িকা রিয়েলির অভিনয় প্রথম ছবি হিসেবে ভালোন্দের মিশেলে ছিল। চটপটে অভিনয়ে যতটা পেরেছে সিরিয়াস অভিনয়ে দুর্বলতা অনেক। পায়েল মুখার্জীর ওভারঅ্যাকটিং ছিল কিছু। বাদবাকি চরিত্রগুলো প্রয়োজন মোতাবেক।

ছবির গান উল্লেখ করার মতো কিছু ছিল না। শুরুর দিকে ‘নসীব’ ছবির ‘তোমাকে চাই আমি আরো কাছে’ গানের সাথে নাচটা ছবির যত গান আছে সবগুলোর চেয়ে এন্টারটেইনিং ছিল। সিনেমাটোগ্রাফি, কালার গ্রেডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এসব মানসম্মত। নেগেটিভ দিকের মধ্যে নায়িকা রিয়েলির জীবনের প্রথম অংশের সাথে পরে আর কোনো কানেকশন দেখানো হয়নি এটা চোখে পড়ার মতো ভুল ছিল। নায়িকা নির্বাচন আরো ভালো হলে ছবিটি অন্যকিছু হতে পারত। প্রথমদিকে কিছু অপ্রয়োজনীয় সিকোয়েন্স ছিল।

‘ইন্ডাস্ট্রি চলে হিরোদের জন্য হিরোইনরা সেখানে একটা মাসালা’ এই সংলাপটি মূলত শুধু ‘মেকআপ’ ছবির জন্যই যে পারফেক্ট তা নয় এটা কিন্তু এই উপমহাদেশে বিশেষ করে ঢালিউড, টলিউড, বলিউড তিন ইন্ডাস্ট্রির একটা রিয়েলিটিকেই মিন করেছে। নায়কনির্ভর ইন্ডাস্ট্রির চেহারা তুলে ধরতে সংলাপটি সেরা ছিল।

14MHJHI.jpg


অনন্য মামুনের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, কমার্শিয়াল ছবিকে কমার্শিয়াল মেকিং-এ তুলে ধরা। ছবিকে ছবির মতো মনে হওয়া যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেকে পারছে না এখন তিনি এ কাজটা ভালোভাবে করেন। ফিল্মের টোন ঠিক রাখাটা তাঁর ভালো দিক। ‘মেকআপ’ তাঁর বর্তমান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটা রিয়েল স্টোরি হয়ে থাকল এটাও প্রশংসনীয়।

রেটিং – ৭.৫
 

Users who are viewing this thread

Back
Top