What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শূন্য খাঁচা - কলির কেষ্ট (1 Viewer)

Kolir_kesto

Banned
Joined
Feb 19, 2023
Threads
2
Messages
75
Credits
2,410
[[১]]

-স্যার আপনার কফি !! স্যার !!
-ওহ সারা ! সরি একটু অন্য মনস্ক ছিলাম!
-কি ভাবেন এতো ছাইপাশ সব সময়? রোজ অফিস থেকে ফিরে এই জানালার ধারে বসে থাকেন ? আপনার সাথে আজ চার বছর আছি অথচ রোজই একই কাজ! কখনো ঘুরতে জান না কোথাও, এতো করে বলেও আপনাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারিনা!! সারার কথায় অভিমানের ছাপ!
-আসলে কি জানো সারা?আমাদের বাঙালীদের কাছে বসন্ত কালটা ভেরি বিউটিফুল!বছরের হিসাবে বসন্ত বার বার ফিরে আসলেও, জীবনে মাত্র একটি বারই বসন্ত আসে।আর সেটা যদি কখনো জীবন থেকে চলে যায় তো আর কখনো ফিরে আসেনা।
-আই নো স্যার! আপনারা খুব ইমোশনাল! বাট আই লাইক দিস বাঙালী ম্যান!!
-হা,হা,হা তোমার কথায় না হেসে পারলাম না। এতোই যখন বাঙালী পছন্দ তখন একটা বাঙালী ছেলে দেখে বিয়ে টা করে নেও না।

-ধুর আপনার শুধু এক কথা!!
-সারার মুখটা লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেল! আসলে বিধাতা সব মেয়ে জাতিকেই খুব যত্ন করে গড়েছেন! পৃথিবীর যে কোন দেশের যে কোন ধর্মের যে কোন ভাষার মেয়েদের ভিতর কিছু জিনিস একই ভাবে লক্ষ্য করা যায়। মাতৃত্ব সুলভ আচরণ,বিয়ের কথা শুনলে একটু লজ্জা পাওয়া, সে যতো মর্ডান মেয়েই হোক,ভালো করে লক্ষ্য করলে এগুলা চোখে পড়ে!

-স্যার একটা কথা বলি ??
-এতোক্ষণ এগুলোই ভাবছিলাম সারার কথায় সম্বিত ফিরলো। হা বলো কি বলবে?
-স্যার আপনি বিয়ে করবেন না ?
-কেন মেয়ে দেখছো ? মজা করে বললাম আমি!
-না স্যার তা না! আর আপনি বললে এই লন্ডনে কি মেয়ের অভাব, তাছাড়া আপনি চাইলে আমি,,,,! বলেই থেমে গেল সারা!
-কি ? আমি বলে থেমে গেলে?!
-কিছু না স্যার! আমার কথার উত্তর কিন্তু পেলাম না !
-সারা মুখে না বললেও আমি জানি ও কি বলতে যেয়ে থেমে গেছে।মেয়েটা দেখতে খারাপ না একেবারে বিদেশিদের মত সাদা চামড়ায় মোড়া বস্তার মত না, একটু অন্যরকম গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা, মেদহীন শরীর, চোখে মুখে বুদ্ধিমত্তার ছাপ স্পষ্ট! কি এমন দেখেছে আমার মত ৪০ বছরের বুড়োর ভিতর কি জানি! কিন্তু আমি যে অপারগ। আমার খাঁচাটা যে খুব বড় না, সেখানে মাত্র একটা পাখিই রাখা যায়!! আমার চুপ থাকা দেখে সারা আমায় বলে উঠলো।
- স্যার ভুল কোন প্রশ্ন করলাম?
-আরে না! আসলে এই বয়সে আর ওসব চিন্তা নেই। তাছাড়া শ্বাস বিনা দেহের কি দাম আছে বলো?!
-আচ্চা স্যার একটু বেশিই প্রাইভেট প্রশ্ন করি?
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই সারা প্রশ্নটা করলো।স্যার আপনি এতো দক্ষ একজন মানুষ, লন্ডনের সবচেয়ে দামী কোম্পানিতে নেভেল আর্কিটেকচার হিসেবে আছেন, আপনি চাইলে যে কোন মেয়েকে কাছে পেতে পারেন। এমনকি আমি চার বছর আপনার সাথে আছি, কিন্তু কখনো আমার দিকেও হাত বাড়াননি, প্রথমে আমিও আপনাকে অন্য ছেলের মত ভেবেছিলাম, কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম! আপনি ছুটিতে কখনো বাড়িতেও জান না। সব মিলিয়ে বুঝতে পারি আপনার অনেক কষ্টের একটা অতীত আছে,আমাকে সেটা বলবেন স্যার ?? প্লিজ!!
এতোগুলা কথা একনাগরে বলে সারা থামলো।
-দেখো সারা অতীতকে ভুলে থাকাই উত্তম!
-সরি স্যার! আমি বুঝে গেছি,আপনাকে অতীত মনে করিয়ে দুঃখ দিতে চাই না।ওকে স্যার আপনি থাকেন,আমি বরং এখন যাই।সারা যেতে উদ্দত্ত হলো।
-শোন!!!
আমার কথায় আবার ফিরে তাকালো সারা!
-দেখ আমার জীবনের কথা আমি কাউকে শেয়ার করিনি, আমার পরিবার আর দু এক জন বন্ধু ছাড়া! আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় কাউকে নিজের কথা গুলো বলতে, হয়ত নিজে একটু হালকা হতাম, কিন্তু জানো তো এই কর্পোরেটের যুগে কাউকে নিজের কষ্টের কথা বলা মানে তার কাছে ছোট হওয়া। বাট আই এ্যাম শিওর তোমাকে বলা যায়। বাট তোমার কি ভালো লাগবে, এই যুগে দাঁড়িয়ে এক ম্যাদা মাড়া ইমোশনের কথা , প্রেমের কথা, নির্ভেজাল ভালবাসার কথা। এখন তো প্রেম মানে, দু দিন এদিক ওদিক ঘোরা,পার্কে ডেট,তারপর রেষ্টুরেন্ট,তারপর হয়ত কোন ফাঁকা ফ্লাট!

তারপর একে অপরকে তৃষ্ণার্ত পাখির ন্যায় একে অন্যের শরীরের রস পান করবে।তারপর ছুড়ে ফেলবে খালি কলসকে আর অন্য অধিক মিষ্টি রসের সন্ধানে বেরিয়ে পরবে। কখনো আবার উর্বর ভূমিতে রসের ধারা ছড়িয়ে বীজ বপন করে ফেলবে নিজের অজান্তে, বীজ থেকে অংকুরিত হবে চারা আর শেষে সেই চারা অথ্যাৎ মাংস পিন্ডের জায়গা হবে কোন ডাস্টবিনে।

এত গুলা কথা বলতে বলতে জানিনা কেন খুব ঘেমে গেছি, যদিও রুমে এসি চলছে। সারা গ্লাসে জল এনে ধরলো আমার সামনে। এক চুমুকে জলটা শেষ করে গ্লাসটা ওর হাতে ফিরিয়ে দিলাম!
-স্যার এটা সত্য আপনার এখানে আসার আগে আমিও অনেকটা স্বাধীন ছিলাম, কয়েক জনের সাথে আমি বেড শেয়ারও করেছি। কিন্তু জানেন স্যার শরীর জুড়ালেও, মনটা কেন জানি শূন্য লাগতো।আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আমি আজ চার বছর কারো সাথে বেড শেয়ার করিনি। কিন্তু আপনার সান্বিধ্য আমার মনকে শীতল করে ,তাই আপনার এতো কাছে থাকি,কিন্তু আপনাকে সম্মান করি তাই কখনো সীমা লঙ্ঘন করিনি।কিন্তু আপনি চাইলে আমি সেটা যে কোন মুহূর্তে করতে পারি। তাই আমি শুনবো সেই অতীত ,সেই অতীতের ভিতর কি আছে,যে কিনা আমার মত এক ফুটন্ত লাভাকে পাশে পেয়েও ছুতে পর্যন্ত চায়নি।

-ওকে,তোমাকেই বলবো,কিন্তু আজ না ! সামনের উইকেন্ডে দুদিন ছুটি আছে জানো তো, তখন বলবো, এখন যাও তো খুব ক্ষুধা লাগছে। বলে হেসে ফেললাম। সারাও হাসতে হাসতে চলে গেল।
 
[[২]]

আসুন আমরা পরিচয় পর্বটা সেরে নেই আমি শুভেন্দু রায় ,ডাকনাম শুভ,বর্তমানে আমি লন্ডনের একটা জাহাজ প্রস্তুত কারক কোম্পানিতে চীফ আর্কিটেকচার হিসেবে কর্মরত। একটু আগে যার সাথে কথা বলছিলাম,ওর নাম সারা গোমেজ,বয়স এই ২৮ কি ৩০ হবে। আমার সেক্রেটারি, আমি এই কোম্পানিতে আট বছর যাবত আছি,আর সারা পাঁচ বছর,গত চার বছর যাবত আমি আর সারা একই ফ্লাটে থাকি,এজন্য আবার আমাদের সম্পর্কটা অন্য রকম ভাববেন না।

আসলে ওর আপন বলতে ওর একটা প্রতিবন্ধী ছোট ভাই ছাড়া কেউ নেই,ভাইটা একটা প্রতিবন্ধী মিশনে থাকে,মাঝে মাঝে সারা যেয়ে দেখা করে আসে, "সারা বা ওর ভাইয়ের বিষয়ে এর বেশি এখানে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা নেই।" আগে আমি একাই থাকতাম,সারার একা থাকা আর খরচ আরো কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপারে একা থাকাটা একটু সমস্যা হচ্ছিলো,অফিসে সব সময় আমার পাশাপাশি থাকাতে ওর সম্পর্কে কিছু ধারণা ছিলো।কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না। সারা নিজেই একদিন ওর সমস্যার কথা বললো,আর আমার বাসায় থাকতে চাইলো,আর অফিসের মত বাসার কাজেও সাহায্য করার ইচ্ছে পোশণ করলো।আসলে শহরীয় ভাষায় যাকে বলে লিভ টু গেদার। আমি একটু আমতা আমতা করেছিলাম,কারণ আমাদের বাংলাতে এসব ভাবাও পাপ,কিন্তু এ দেশে সেটা জল ভাত।ফাইনালী সারা আমার বাসায় থাকা শুরু করলো,আমার লাভ হলো অফিসের পর কথা বলার একটা সঙ্গী আর রান্নার কষ্টটা দুর হলো। ওটা সারাই করে দুজনের টা এক সাথে।

প্রথম প্রথম আমি একা ব্যাচেলর ভেবে আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু বার বার আমার সাড়া না পেয়ে ও বুঝে গেছিলো। আমাকে শরীরের মৌহ জালে ও জড়াতে পারবেনা। তারপর দেখতে দেখতে ওর সাথে এই চার বছর।

ওর সাথে আমার কথোপকথোন ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা আর ইংরেজির মিশ্রনে।এই চার বছরে আমাদের দেশের প্রতি ওর সুপ্ত প্রেম আর জানার আগ্রহে আমার কাছ থেকে কিছু বাংলা ভাষাও রপ্ত করেছে। কিন্তু গল্পে সমস্ত কথা বার্তা বাংলাতেই উপস্থাপন করা হবে।

-স্যার খাবার রেডি!!
-হ্যাঁ আসি!আচ্ছা তোমাকে না বলেছি বাসায় স্যার স্যার না করতে এই শব্দটার উপর ঘৃণা ধরে গেছে!
-কি করবো স্যার অভ্যাস হয়ে গেছে।
-ওকে তুমিও বসে যাও।
খাওয়া শেষে সারা বললো স্যার আর কিছু লাগবে? কেন কোথাও যাবা ?
-না হালকা একটু নিবো!
-ওহ !!ওকে নো প্রব্লেম।

মানে ও একটু ড্রিংক করবে। আমি বাধা দেই না। সবারই একটা নিজস্ব লাইফ আছে। আমি ওসব খাই না। জাষ্ট সিগারেট ছাড়া।আমিও রুমে এসে জানালার ধারে আরামদায়ক চেয়ারটা টেনে নিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে বসলাম। জীবনটাও সিগারেটের মত জ্বলতে জ্বলতে একদিন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

সিগারেট টানতে টানতে কতো কথা মনে পরে, ছেলেবেলা, দেশের কথা, মা বাবা কথা। কতো দিন ওদের দেখিনি।না এবার একবার দেশে যেতে হবে। এই বিদেশ আর ভালো লাগেনা।

আর সর্বপরি মনে পরছে,তার কথা যে আমাকে ফাঁকি দিয়েছে। আমার বুকের পাজর, আমার ভালবাসা
 
[[৩]]

সিগারেটটা শেষ করে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরলাম,তার আগে সারার রুমে এক বার উঁকি দিলাম, ডিংক করে বেহুশ হয়ে পরে আছে বিছানায়,কিসের কষ্ট ওর কে জানে ? অবশ্যই এদেশে কষ্ট লাগেনা, ছেলে বুড়ো সবাই খায়।
পরনে হাফ প্যান্ট আর টি শাট, যেটা আবার আলুথালু ভাবে শোবার জন্য উপরে উঠে গিয়ে নাভি কুন্ডকে অনাবরত করে রেখেছে। না আর তাকিয়া থাকা ভালো দেখায় না,নিজের রুমে এসে শুয়ে পরলাম। সারাটা সপ্তাহ মোটামুটি কাজের একটু চাপ গেলো, আসলে এ বছর থারটি ফার্স্ট নাইট সোমবার পড়েছে আর রবিবার তো এমনিতেই ছুটি,তাই আগামী সপ্তাহে দু দিন অফিস অফ, তাই একটু চাপ আরকি।

রাতের খাবার শেষ করে জানালার ধারে বসে সিগারেট টানছি।সারা ঢুকলো রুমে ,স্যার কাল কিন্তু সেই দিন মনে আছে তো ?
-তোমার তো দেখছি তর সইছেনা! হা মনে আছে। কিন্তু কাল তো তোমাদের সব থেকে বড় উৎসবের দিন, সো সেখানে ইনজয় না করে,আমার গল্প শুনবে ??
-প্রতি বছর তো আনন্দ করিই! এবছর না হয় আপনার গল্প শুনবো!
-ওকে! তো যাও ঘুমিয়ে পড়ো!
-ওকে স্যার ! আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন। গুড নাইট
-গুড নাইট!
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সারা চলে গেল!সত্যি মেয়েটা পাগল!

পরদিন অফিস নাই তাই লেট করে ঘুম থেকে উঠলাম।উঠে দেখি সারা উঠে পড়েছে।কি ব্যাপার এতো তাড়াতাড়ি উঠে পড়ছো ?
-এমনিতেই স্যার ঘুম ভেঙ্গে গেল।তাছাড়া আপনার অতীত জানার জন্য ব্যাকুল। সো তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নিন।

আমার ওর জানার আগ্রহকে অসম্মান করার কোন ইচ্ছা নেই।তাই তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিয়ে খেতে বসলাম।খাওয়া শেষ করে রুমে এসে সিগারেট জ্বালিয়ে এক লম্বাটান দিলাম।কিছুক্ষণ পর সারা এলো। আমি ও উঠে গিয়ে বিছানায় বসে হেলান দিয়ে বসলাম,আর সারা আমার পায়ের দিকে বিছানায় বসলো।আমি নতুন আর একটা সিগারেট ধরিয়ে এক টান দিয়ে বলতে শুরু করলাম,আমার অতীত জীবনের কথা!!!!!
 
[[৪]]

তখন আমি KUET এ পড়ি প্রথম বর্ষের ছাএ।এমনিতে বরাবর আমি পড়াশোনায় ভালো।সব সময় ক্লাসে ফার্স্ট হতাম,আমাদের পরিবারটা ছিলো উচ্চ মধ্যবিত্ত,মা বাবা ছোট বোন আর আমি এই চার জন।যদিও টাকা পয়সার খুব বেশি সমস্যা নাই।কিন্তু এই বয়সে বাবার কাছ থেকে হাত খরচের টাকা চাইতে একটু লজ্জা করে। তাই একটা টিউশনি ধরলাম।মোটামুটি দিন ভালই কাটছে।আজ পঁচিশ বসন্ত পেরিয়ে গেলো কিন্তু এখনো কোন মেয়ের সান্নিধ্য পেলাম না।আসলে পাইনি বললে ভুল হলে,ভগবানের কৃপায় চেহারা একটা পেয়েছি,আর ভালো মেধা,তাই মেয়ে তুলতে তেমন কোন সমস্যা নাই।কিন্তু বিধি বাম মনটা রয়ে গেছে সেকেলে।তাই চাকচিক্কো মেয়ে আসেপাশে পেয়েও কিছুই করিনি।আসলে পঁচা সামুকে পা কাঁটতে চাইনা।আমার বন্ধুদের সবার প্রেমিকা আছে কিন্তু আমি জানি ওগুলা বেশির ভাগ ওয়ান টাইম প্লেটের মত।

আমি তো এমন চাইনা,আমি যাকে চাই চোখ বুঝলে আমার চোখে ভাসে,সেই মায়াবি ভাসা ভাসা কাজল‌ কালো চোখ,কপালে লাল টিপ,হালকা গোলাপি ঠোঁট,খোপা করে বাঁধা চুল,কিন্তু কেন জানিনা,আমার কল্পনাতে কখনো তার ওই চাঁদ মুখের দর্শন পেলাম না।

আর কতো শুয়ে থাকবি সন্ধ্যা বেলা শুতে নেই!মা ঘরে সন্ধ্যা বাতি দিতে দিতে বললো।এই শুরু হলো মায়ের শাসন!!আরে বাবা কখন শুয়ে থাকলাম এই মাএই তো টিউশন থেকে এলাম।হুম আর ছাফাই গাইতে হবেনা। এখন যা ফ্রেস হয়ে নাস্তা দিচ্ছি খেয়ে পড়তে বস।মায়ের এই জিনিসটা খুব ভালো লাগে,এতো বড়ো হয়ে গেছি অথচ এখনো বলে বলে পড়তে বসায়।মা আমাকে নাস্তা দিয়ে চলে গেল,কারণ মা এখন পুজায় বসবে,বাবার ব্যবসা তাই ফিরতে রাত হয়।

নাস্তা শেষ করে পড়ার টেবিলে বসলাম,আজ কাল পড়তে ভালো লাগেনা কেন জানি,মনটা কেমন অস্থির লাগে।ধুর ভালো লাগছে না।কিছুদিন পরে ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষা,বাট পড়তেই মন বসে না।পরদিন কলেজ গিয়ে শুনি পরীক্ষার আর ১৫ দিন মাএ বাকি।আর বন্ধুরা একটা প্লান করেছে পরীক্ষার পর ঘুরতে যাওয়ার,আমার এমনিতে সমস্যা নাই কিন্তু এবারের ব্যাপারটা আলাদা কারণ ওরা এবার দেশের বাইরে যেতে চায়।কিন্তু টাকার ব্যবস্থা হয়ত হয়ে যাবে।একটা মাএ ছেলে কখনো বেশি আবদার করিনি চাইলে না করতে পারবে না।বাট দেশের বাইরে কি যেতে দিবে।আমাকে চিন্তিত দেখে দেবু বললো,কি ব্যাপার এতো কি ভাবছিস।প্রেমে টেমে পরিছিস নাকি??
-আরে না রে ভাই। ভাবছি বাইরে যেতে দেবে কিনা!?
-হুম দেখ বাসায় বলে।আমরা তো সবাই যাচ্ছি।
তো কোথায় যাবি ঠিক করেছিস তোরা,আমি দেবু কে প্রশ্ন করলাম!দেবু উত্তর দেবার আগেই মিঠু বললো নেপাল!! উরে বাপ নেপাল!তো কে কে যাচ্ছে?মিঠু গোটা দশ জনের নাম বললো।তাদের এমনিতে চিনি বাট ওতো ক্লোজ না ওদের সাথে।কলেজে দেবু আর কলেজ ও কলেজের বাইরে,মিঠুই আমার কাছের বন্ধু।কলেজ শেষে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম।আমি সিটিং বাসেই যাতাযাত করি,এতে খরচটা একটু কমে।

বাসায় এসে মাকে বললাম,মা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,দেখি তোর বাবাকে বলে,আগে পরীক্ষাটা তো শেষ হোক।যাক বাঁচা গেলো,বাবাকে বলা আমার পক্ষে সম্ভব না,এমনিতে বাবা রাগিনা কিন্তু তবুও কেমন ভয় ভয় করে।মা যখন দায়িত্ব দিয়েছে ঠিক বাবাকে ম্যানেজ করে নিবে।সব চিন্তা দুরে ঠেলে পড়ায় মনোযোগ দিলাম,কিন্তু কেন জানি মন বসাতে পারছিনা।দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে এলো।খাওয়া ঘুম বাদ দিয়ে শুধু পড়া পড়া,যথারীতি পরীক্ষা শেষ হলো।উফ যা ধকল গেল কয়দিন।পরীক্ষা মোটামুটি হয়েছে।রাতে খাবার টেবিলে বাবা জিজ্ঞেস করলো,
-তোমার পরীক্ষা কেমন হলো ?
-হুম মোটামুটি!
-মোটামুটি কেন?তোমাকে তো আর অন্য কাজের কথা বলিনা।শুধু পড়া ছাড়া সেটাতেও মোটা মুটি হলে চলবে!?
আমি কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে খেতে থাকি।বাবার প্রশ্নের মুখে যখন আমি দিশেহারা তখন মা দেবীর দুর্গার মত এসে আমায় রক্ষা করলেন!আহ খাবার টেবিলে ছেলেটাকে এভাবে বলছো কেন?খেতে দেবেতো ওকে।সারা দিন তোমার ব্যবসা,মাস গেলে টাকা দিয়েই খালাশ ছেলের ভালো মন্দ চাওয়া পাওয়ার খোঁজ রাখ?
বাবা বললেন তার জন্য তো তুমি আছো!

বাবা মায়ের এই মিষ্টি ঝগড়াটা দারুন উপভোগ করি আমি।বাবা আবার গম্ভীর গলায় বললেন,তা তোমার মা বলছিল কোথায় নাকি যেতে চাচ্ছো তোমরা?আমি মাথা নিচু করেই বললাম হা নেপাল!
বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন তারপর বললেন,,
-কে কে যাচ্ছো?
-আমি আমার বন্ধুদের নাম বললাম,তার ভিতর বাবা শুধু মিঠুকে চেনে।
-ওহ!কতো দিনের জন্য!
-সেটা ঠিক হয়নি,কিন্তু হয়ত দিন পাঁচেকের জন্য।
আচ্ছা যাবার আগে সব খোঁজ খবর নিয়ে যেয়ো।আর খরচ কেমন আগে ভাগে বলো,তোমার মার কাছ থেকে নিয়ে নিয়ো!!আমার আর খুশি ধরে না,বাবা যে এতো সহজে রাজি হবে ভাবতেই পারিনি।আমি খুশিতে তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে উঠে পরলাম।আর রুমে এসে মিঠুকে ফোন করে সব বললাম।ও শুনে খুশি হলো।ঠিক হলো আগামী সপ্তাহে আমরা রওনা দিবো।এক সপ্তাহ পর আমরা সব এক জায়গায় হয়ে প্রাকৃতির অভয় অরণ্য নেপালের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।আমরা যখন কাঠমুন্ডু তে নামলাম তখন বিকাল হয়ে গেছে।আগে থেকেই এজেন্সির মাধ্যমে হোটেল বুক করা ছিলো।আমরা সেখানে ৫ দিন ছিলাম।প্রচুর ঘোরাঘোরি করলাম কয়দিন।নতুন নতুন খাবারের স্বাদ পেলাম।দেশে ফেরার আগের দিন আমরা সবাই বাসার সবার জন্য কেনাকাঁটা করতে বের হলাম।সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত,আমি ও কিনলাম মা বাবা আর কাছের কিছু মানুষের জন্য।হঠাৎ রেশমের কাজ করা একটা নীল রং এর চাদরের উপর চোখ গেল,দেখেই পছন্দ হয়ে গেল,আর এমন টা মনে হচ্ছিলো এটা শুধু বিশেষ কোন মানুষ কেই দেওয়া যেতে পারে।দাম জানতে চাইলে দোকানি আঁটশো রুপি বললো।দামটা বেশি কি কম সেটা জানি না,কারণ এর আগে এসব কিনিনি,কিন্তু এটা মনে হলো এতো সুন্দর চাদর আমাদের দেশে দু হাজারের কাছাকাছি দাম নিশ্চয়ই হবে।তাই কথা না বাড়িয়ে ওই দামেই কিনে নিলাম।যথারীতি পর দিন দেশে ফিরলাম দারুন এক অভিজ্ঞতা হলো।

বাসায় ফিরে সবাই কে সবার গিফট দিলাম।চাদর দেখে মা বললো এটা কার জন্য?দিবো একজনকে।মা আর কথা বাড়ালো না,চলে গেল।কিন্তু এটা আমি কাকে দিবো সেটা নিজেই জানিনা।

আবার শুরু হলো সেই গতানুগতিক জীবন সকালে ভার্সিটি বিকালে টিউশনি।কিছু দিন পর রেজাল্ট দিলো,রেজাল্ট দেখে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা,ফার্স্ট ক্লাস তো দুরে থাক আর একটু হলেই সেকেন্ড ক্লাসটাও মিস হয়ে যেতো।আমার সারা জীবনে এতো খারাপ রেজাল্ট কখনো হয়নি।স্বাভাবিক ভাবে হতাশ হয়ে পড়লাম।মনটা খারাপ হয়ে গেল,কলেজ শেষ না করেই বাসায় ফিরলাম।এসে দেখি মা আমার রুমটা পরিষ্কার করছে।আমি ঢুকতেই বললো,,কিরে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি??
-এমনিতেই ভালো লাগছে না।
-শরীর খারাপ লাগছে নাকি?
-না!তুমি এদিক এসো তো,বলে মায়ের হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালাম,তারপর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে বললাম,দাও একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
-দেখো পাগলে কান্ড!কি হয়েছে রে বাবা ?বল আমাকে??
-আমার রেজাল্ট ভাল হয়নি মা!
ধুর বোকা ছেলে এ জন্য কেউ এমন করে।একবার খারাপ হয়েছে তো কি হয়েছে।কেউ কি বার বার বিজয়ী হয়।এবার ভালো করে পড়িস সব ঠিক হয়ে যাবে।তা হা রে শুভ চাদরটা কাকে দিবি বলছিলি,তো দিলি না তো?!
-ধুর কাকে দিবো সেটাই বুঝতে পারছিনা কিন্তু বিশেষ কাউকে দিতে ইচ্ছা করছে।
মা মৃদু হেসে বললো বুঝেছি,ছেলে বড় হয়ে গেছে বৌমা খুঁজতে হবে।আমি লজ্জায় মায়ের কোলে মুখ লুকালাম।
 
[[৫]]

পরদিন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাড়ালাম!প্রতিদিন এখান থেকেই বাসে উঠে কলেজ যাই।কিন্তু আজ বাসের দেখা নাই,যা দু একটা আসছে ভীড়ে ভর্তি। আমার থেকে একটু দুরে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে এতোক্ষন খেয়াল করিনি।
মোটামুটি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা হলুদ রং এর একটা কামিজ পরে আছে একটু রোগা দেখতে,আমি আর বিশেষ নজর দিলাম না কারণ সেটা ভালো দেখায় না।মেয়েটাও বোধহয় বাসের জন্য ওয়েট করছে আর বার বার ঘড়ি দেখছে।এবার একটা বাস আসতেই আমি দৌড়ে উঠতে গেলাম সাথে মেয়েটাও দৌড়ে উঠতে গেল,যদিও এই বাসটাতেও প্রচুর ভীড়।কিন্তু মেয়েটা ঠিক জায়গা পাচ্ছিলো না উঠার ততোক্ষণে আমি উঠে দাড়িয়েছি বাসের দরজাতে!

এবার একটা সুরেলা কষ্ঠ ভেসে এলো আমার উদ্দেশ্যে।ভাইয়া আমাকে একটু উঠতে দিন না প্লিজ!!মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কি মনে হলো,এ অনুরোধ রাখতে আমি বাধ্য। অগত আমি বাস থেকে নিচে নেমে মেয়েটাকে উঠার সুযোগ দিলাম,কিন্তু মেয়েটা উঠার একবার চেষ্টা করতেই কিসে যেন হোচট খেয়ে পরে গেল,আর তার সাথে বাসটাও ছেড়ে দিলো।আমি দৌড়ে মেয়েটার কাছে গিয়ে বললাম,এই আপনার লাগেনি তো? ততোক্ষণে ও নিজেই উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো না না,তেমন কিছু না।আমি দেখলাম তেমন মেজর কিছু হয়নি,জাষ্ট পরে গেছে।এবার মেয়েটা আমার উদ্দেশ্য বললো ধন্যবাদ!
-কি জন্য?
-এই যে আপনি নেমে আমাকে উঠতে দিলেন!
-কিন্তু আপনি তো উঠতেই পারলেন না বরং পরে গেলেন। আসলে এই বাস ওয়ালা গুলাও যা হয়েছে।

এবার ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞাসা করলাম তো কোথায় যাবেন আপনি?মেয়েটা জবাব দিলো কলেজ যাচ্ছিলাম,আজ একটা ইমপর্টেন্ট ক্লাস ছিলো।সেটা আমার ও ছিলো বাট একটা ক্লাস মিস হয়ে গেল ঘড়ি দেখে বুঝলাম।আমি আবার মেয়েটিকে বললাম কোন কলেজে পড়েন?
মেয়েটি বললো মহিলা কলেজ!!ওহ তারমানে তো আমার কলেজ পাস করে আপনাকে যেতে হবে!!আমি KUET (Khulna University & Engineering Technology)এ যাবো!!তো এখন যা বাস আসবে হয়ত ভীড়ই হবে,তাছাড়া লেট হয়ে যাবে,আমি রিক্সা করে চলে যাবো আপনি চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন!!কথাটা বলে আমি উত্তরের আশায় মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।কি যেন ভাবলো মেয়েটা,হয়ত ভাবছে আমার সাথে যাওয়া ঠিক হবে কিনা!? তারপর বললো ওকে চলেন।

আমিও রিক্সা ডেকে নিলাম।দুজনে মাঝে একটু ফাঁকা রেখে বসার চেষ্টা করলাম।এখনো পর্যন্ত আমাদের সেভাবে পরিচয় হয়নি,আমিই জিজ্ঞাসা করলাম আপনার নামটা কিন্তু জানা হলো না মিষ্টি হেসে বললো অরুনিমা,,!অরুনিমা সাহা সবাই অরু বলেই ডাকে!!ওহ নাইস নেইম!আমি শুভেন্দু রায়।ওহ আপনার নামটাও সুন্দর!!এই প্রথম কোন মেয়ের এতো কাছাকাছি আমি।ভিতরে ভিতরে হালকা কাঁপছি।আবার কিছুক্ষনের নিরবতা,আমিই প্রশ্ন করলাম,তো কিসে পড়েন ?
-অর্নাস প্রথম বর্ষ !
-কোন বিষয়ে?
-ইংরেজি!
-ওহ দারুন তো।
-তো আপনি ??
আমি নেভেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ এবার দ্বিতীয় বর্ষ!
ওয়াও আপনরার বিষয়টাও কিন্তু দারুন।এভাবেই টুকরো কথার মধ্যেই রিক্সা আমার ক্যাম্পাসের সামনে চলে এসেছে,আমাকে নামতে হবে।কিন্তু এক অদ্ভুত মায়ায় আমাকে টানছে মেয়েটার দিকে।বুঝে উঠতে পারছিনা কি করবো,এই কি শেষ দেখা আমাদের!!না আমাকে কিছু একটা করতে হবে,এতো ভালো তো আগে কখনো লাগেনি।এসব ভাবতে ভাবতে রিক্সা থেকে নেমেই বলে বসলাম ,আপনার মোবাইল নম্বরটা কি দেওয়া যাবে??আমার কথাতে অরু কিছু সময় চুপ থেকে বললো হুম যেতে পারে,যদি না আপনি ডিস্টার্ব না করেন!আমিও হা সূচক মাথা নারালাম,তারপর দুজনের নম্বর আদান প্রদান হলো।আমি ওর নম্বরটা অরু দিয়েই সেইভ করলাম।তারপর ওকে বিদায় জানিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে পা বাড়ালাম।

এরপর কেটে গেছে অনেকটা সময় প্রায় ছয় মাস,আমি এর ভেতর একবার ও অরুকে ফোন করিনি,অরুও আমাকে কখনো কল করেনি।আমার একটা বদ অভ্যাস ছিলো,ফোনের পুরাতন নম্বর ডিলিট করা,সেটা আজও করি কিন্তু কেন জানিনা,ওর নম্বরটা ডিলিট করতে পারিনি।

সেদিন ছিলো দেবি আগমনের বার্তা মহালয়ার দিন। রাতে খাওয়া শেষ করে শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় মোবাইলে একটা মেসেজ এলো শুভ মহালয়া!!আমি মেসেজটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আমি ভাবতেই পারিনি এমনটা হবে। দীর্ঘ ছয় মাস পার হয়ে গেছে,এরপরেও সে অরু আমাকে মনে রাখবে।এতোটা আশা করিনি আমি।আমিও একটা মেসেজ করলাম।কিন্তু আর কোন রিপলে এলো না। সেদিন রাতে ঘুমেরা আমাকে ফাঁকি দিলো।শুধু ভাবছি এই প্রথম কোন মেয়ে আমাকে মেসেজ করলো।

দেখতে দেখতে পুজা এসে গেল অষ্টমীর দিন সকালে সাহস করে অরুকে কল দিলাম প্রথমবার কল হতেই রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে এক মিষ্টি সুরেলা কষ্ঠ ভেসে এলো, বাবা!!আপনিতো মশাই বিরাট মানুষ,কল করতে মানা করেছি বলে,ছয় মাসেও কল দিলেন না!আমি মেসেজ না দিলে হয়ত এ জীবনে আর কথাই হতো না। এবার আমি সত্যি লজ্জায় পরে গেলাম।
না আসলে কোন মেয়ের সাথে এভাবে কখনো কথা বলিনি তো তাই।এরপর অনেকটা সময় ধরে কথা হলো অরুর সাথে,বলে রাখি এই কথার ভিতরেই আমরা আপনি থেকে তুমি তে নেমে এসেছি,আর এটাও জানতে পারলাম আমার বাসা থেকে ওর বাসা ১০ মিনিটের রাস্তা রিক্সাতে,ও যদি রিক্সায় যাতাযাত করে তাহলে আমার বাসার সামনে দিয়েই যেতে হয়।

আমি অরুকে অষ্টমী পুজার পর বিকালে দেখা করার কথা বললাম,কিন্তু ওর বাবা বের হতে দিবেনা বলে ও দেখা করতে পারবেনা বললো। কিন্তু ও বললো ও গান শেখে আর ওর গানের ক্লাস প্রতি শুক্রবার,তখন দেখা করা যেতে পারে।আমরা ওই দিনই দেখা করবো,এই কথা দিয়ে সেদিনের মতো ফোন রাখলাম।
 
[[৬]]

ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে পরেছি,শুক্রবার যেন আসতেই চাচ্ছেনা।এর মাঝে আর একদিন কথা হয়েছে ফোনে অরুর সাথে,তারপর সেই কাঙ্ক্ষিত দিন এলো শুক্রবার অরুর বলা জায়গাতে পৌছে গেলাম,তখন সকাল ৮ টা কিন্তু অরুর দেখা নেই।প্রায় কুঁড়ি মিনিট অপেক্ষা করার পর অরু এলো।একটা গোলাপী রং এর কামিজ পরেছে,চোখে হালকা কাজলের রেখা,তার জন্য চোখ দুটো আরো টানা টানা লাগছে,সব মিলিয়ে ছয় মাস আগে দেখা অরুর থেকে আজকের অরু যেন এক উৎচ্ছল হাসিখুশি মিষ্টি ফুটন্ত এক পদ্ম!অরু কাছে আসতেই আমিই প্রথম কথা বললাম,এতো দেরি হলো আসতে??ও একটু লাজুক ভাবেই বললো সরি গো!ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়ে গেছে।চলো ও দিকটায় একটা কফি শপ আছে ওখানে যেয়ে বসে কথা বলি।তারপর দুজন কফি শপে বসে নিজেদের কথা শুরু করলাম,,অরুই প্রথমে বললো,তো কেমন ছিলে এতো দিন??
-খারাপ না।কিন্তু সত্যি বলতে তুমি এতো দিন পরে কল করবে ভাবতে পারিনি।
-কি করবো,তুমি তো সত্যবাদী যুধিষ্টির।কথা দিয়েছিলে কল করবেনা।তাই আমিই করলাম।
-আমি বিনয়ী ভাবে বললাম থ্যাংকস!!
অরু একটু বাঁকা ভাবে তাকিয়ে বললো কেন ??
-না,এই যে তুমি কল না করলে তো এখন এই কফি শপে আসাই হতো না।একটা কথা বলবো??
-হুম!এতে জিজ্ঞাসা করার কি আছে!!
-আমি কোন ভনিতা না করেই বললাম,তোমাকে কিন্তু আজ দারুন সুন্দর লাগছে!!সাথে সাথে অরুর মুখে লাল আভা দেখা দিলো।
-থ্যাংকস!!
সেদিনের মত আরো কিছুক্ষণ সময় কাঁটিয়ে আমরা যার যার বাসায় ফিরে আসি।বাসায় এসে এক অস্থিরতা কাজ করছে বার বার অরুর কাজল কালো চোখ দুটো ভেসে উঠছে।এই কি সেই মেয়ে যার জন্য আমি এখনো কুমার !তা না হলে কলেজে এতো মেয়ে আছে কই তাদের দেখে তাদের সাথে কথা বলে তো এমন হয়নি,আমার যে কি হচ্ছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত লেখক আমি নই।কিন্তু পাঠকগন হয়তো এতোটুকু বুঝতে পারছেন,মনের মত শ্রেয়ষীর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাকে পাবার আসা মনে আসলে ঠিক যেমন হয় আমার অবস্থা এখন তেমন।না আর অপেক্ষা না যা করার আমাকে শীঘ্রই করতে হবে।

সন্ধ্যা থেকে ছটফট করছি কখন রাত হবে,আর অরুর সাথে কথা বলবো,আমার এতোটাই অস্থির লাগছে কোথাও ঠিক ভাবে বসতে দাঁড়াতে ইচ্ছা করছেনা। এসব দেখে মা একবার জিজ্ঞাসা করে গেছে শরীর খারাপ লাগছে কিনা।কিন্তু মাকে কি করে বলি,মা গো তোমার ছেলে তার মনের মানুষকে খুঁজে পেয়েছে।রাতের খাবারের পর আর অপেক্ষা না করে অরুকে ফোন দিলাম,রিং বেজে নো এ্যানসার। অন্য সময় হলে হয়ত কল দিতাম না,কিন্তু আজ যে আমায় দিতেই হবে,দ্বিতীয় বার আবার কল দিতে অরু ধরলো,ওর কষ্ঠ শুনেই আমার সব ছটফটানি থেমে গেল,কি বলবো,আর বুঝে উঠতে পারছিনা,তাই স্বাভাবিক হবার জন্য রাতে খেয়েছে কিনা? কি করতেছিলো এসব প্রশ্ন করলাম,তারপর মনে সাহস নিয়েই বললাম,তোমাকে একটা কথা বলতে চাই!?
-হুম বলো কি কথা!!?
-দেখো অরু উত্তর যেটাই হোক সরাসরি বলবে!!
-আরে বাবা!!আগে কথাটা তো বলো?
-আমি বড় করে এক নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম,দেখো আমি আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের সাথে সেভাবে কথাই বলিনি।কিন্তু আমি ফিল করি মাঝে মাঝে কোন একজনকে কিন্তু কে সে আমি জানিনা,কিন্তু কারো সঙ্গ পেতে আমারো খুব ইচ্ছা করে কিন্তু আমি যেভাবে চাই তেমন মেয়ে আমার চোখে পরেনি।বাট তোমাকে দেখার পর আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমিই সেই!!আমরা এখন বন্ধু আছি,আমি আরো একটু কাছাকাছি আসতে চাই।দেখো এর বেশি আর বলতে পারবো না,ছেলে বলে তো এমন না যে একটুও লজ্জা নাই তা না।তাই যা বোঝার বুঝে নাও!!এতো গুলো কথা একসাথে বলে আমি দম নিয়ে চুপ করে গেলাম।। আর ওপাশ থেকে অরু এক অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।।ওর হাসি আমাকে আরো অস্থির করে তুললো অথচ আমি চুপ করে থাকলাম ওর উত্তরের আশায়।

প্রায় এক মিনিট পর ওপাশ থেকে মিষ্টি করে বললো,ভীতুর ডিম একটা,সোজা কথাটা কতো ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বললে।আমি কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বললাম আমি মোটেও ভীতু না প্রথমবার এটা তাই।।ও বাবা তুমি কি রাজ্যের মেয়েদের প্রোপোজ করে বেরাবা নাকি??এই বলে অরু একটু চুপ করে গেল,হয়ত আমার কথা গুলা ভাবছে।আমার কি হলো মনে হলো শরীরের এক অদৃশ্য শক্তি আর মনে অঢেল সাহস সঞ্চার হলো।তাই নরম স্বরে ওকে ডাকলাম,,,
-অরু!!!!!!
-হুম!!!!!!!
-উইল ইউ ম্যারি মি???
দুপাশেই সুনশান নিরবতা!!কেউ কোন কথা বলছিনা।নিরবতা ভেংগে আমিই বললাম কি হলো?উত্তর দিলেনা যে!!
তুমিতো আমার অতীত বর্তমান এমনকি আমার সম্বন্ধে কিছুই জানো না।তবুও সরাসরি বিয়ের কথা বলছো!একটু বেশিই ফার্স্ট হয়ে যাচ্ছো না তুমি?উত্তর আমার রেডিই ছিলো তাই বললাম,দেখো অরু তোমার সাথে দেখা করে এবং মন খুলে কথা বলে,আমার যা জানার জেনে গেছি।তোমার অতীত নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই।তুমি কিছু বলতে চাইলে শুনবো কিন্তু আমার জানার আগ্রহ নেই। তুমি আমার কাছে বর্তমান আর আমি সেটা নিয়েই থাকতে চাই।আর যদি বলো ভবিষ্যতের কথা সেটা না হয় দু'জনেই ঠিক করে নিবো।আর বাকিটা ঈশ্বর জানে।

হুমম,উম্ম ওকে তোমার সাথে চলতে আমার খারাপ লাগবেনা।
অরুর কথা শুনে এবার আমিও হেসে দিলাম,আমার মতোই বাঁকা করে উত্তর দিলে!!এবা
 
[[৭]]

ওয়াও!!স্যার আপনাদের শুরুটা কিন্তু দারুণ ছিলো।সারা উৎচ্ছাসিত ভাবে বললো।কিন্তু ম্যাডামের সাথে একটা ব্যাপারে আমি একমত!!আমি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকালাম সারার দিকে!!!
কি বলতে চায় মেয়েটা,আর অরুর সাথে কিসে ও একমত!! আমার অমন দৃষ্টি আর হাভা মার্কা মুখ দেখে,হাসতে হাসতে সারা বললো আপনি সত্যি একটা ভীতুর ডিম!!আমি কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বললাম ও তাই না যাও আর গল্পই বলবো না।
-এমা না না স্যার!!রাগ করছেন কেন?আমি তো মজা করছিলাম!!কিন্তু একটু পরে স্যার সেই কখন থেকে চেপে রেখেছি রিলিস করতে হবে,না হলে পেট ফেটে যাচ্ছে।আমি ওর কথায় হেসে বললাম ওকে যাও। সারা বাথরুমের দিকে দৌড় দিলো।আমি ও প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে নিলাম।একটু পর সারা এলো,ওহফ বাঁচা গেল,জানেন স্যার বাথরুম করার মত শান্তি দুনিয়াতে আর কোন কিছুতেই নেই।এবার শুরু করুন স্যার।
আরে একটু ওয়েট করো,আমিও তো সেই কখন থেকে বকে চলেছি,আমাকেউ একটু রিলিফ দাও।

তারপর থেকে শুরু হলো দুজনের পথ চলা।রোজ সকালে ওর ফোনে আমার ঘুম ভাংতো,তারপর কিছু সময় কথা বলে শুরু হতো আমাদের প্রতিদিনের পথ চলা।আর রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের ফোনে কথা শুরু হতো,এমনো হয়েছে কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে গেছে,তবুও আমাদের কথা শেষ হয়নি।অরুর সাথে কথা বলে ওর পরিবার সম্পর্কে জানতে পারলাম,ওর বাড়িতে মা বাবা আর একটা ছোট বোন,ওদের কোন ভাই নাই,ওই বড় আর বোনটা ছোট,আন্টি বাড়িতেই থাকেন,আর আঙ্কেল মানে ওর বাবা ডিফেন্সের এক উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা,তাই ওদের খুব সব কিছু মেনে চলতে হয়।একটু এদিক ওদিক হলেই সেই আর্মির মেজাজ।

তাই আমাদের খুব বেশি দেখা করার সুযোগ নেই,কারণ কলেজ ফাঁকি দিয়ে দেখা করার ইচ্ছা আমাদের কারো নেই।সব ভেবে ঠিক করলাম প্রতি শুক্রবার ওর গানের ক্লাস,আর গানের ক্লাস শেষে আমরা দুজনে দেখা করবো।আমরা রাতে যতোই কথা বলি,আমরা নিজেদের পড়াশোনার ব্যাপারে দুজনেই সচেতন।কারণ প্রেমের বিয়ে বেশিরভাগ পরিবারেই সমস্যা সৃষ্টি করে।তাই আমাদের নিজেদের কে এমন একটা পজিশনে নিয়ে যেতে হবে,যেন অন্তত কথা বলার একটা সুযোগ থাকে,আর সেটার জন্য ভালো পড়াশোনাটা ভীষন ভাবে জরুরি।

এভাবেই চলে যাচ্ছিলো আমাদের দিন,সপ্তাহে একদিন মাএ দেখা করা,আর তার জন্য আমরা দুজনেই অধীর আগ্রহে দিন গুনতাম।পরে যখন গানের ক্লাস শেষে দেখা করে দুজনে কোথাও যেয়ে বসতাম,আমাদের তেমন কোন কথা থাকতো না,শুধু দুজন দুজনকে দেখে যেতাম।কারণ কথা তো আমরা ফোনেও বলতে পারি,তাই আমরা শুধু দেখতাম,আমরা কথা বলার সময় আমাদের ঠোট কেমন নড়ে,আমরা হাতটা কিভাবে নাঁড়াই,হাসলে আমাদের দেখতে কেমন লাগে,এক কথায় আমাদের বডি ল্যাংগুয়েজ কেমন হয়।পাঠকরা হয়ত ভাববেন ডেটিং এ গিয়ে কেউ কি এমন করে,নিশ্চয় আমি গুল মারছি কিন্তু এটাই সত্য!!

দেখতে দেখতে আমার ফাইনাল বর্ষে উঠার পরীক্ষা আর অরুর ২য় বর্ষের পরীক্ষা এসে গেল,কয়েকটা দিন আমাদের রাতের কথা বলা একটু কমে গেল,দুজনেই ব্যস্ত।কিন্তু শুক্রবার দেখা করাটা আমরা বন্ধ করিনি।অবশেষে পরীক্ষা শেষ হলো।কাল আবার শুক্রবার,দেখা করার দিন সকালে অরুকে কল দিলাম ও ধরলো না,হয়ত ব্যস্ত থাকতে পারে,আমি সময় মতো ওর গানের স্কুলের ওখানে চলে গেলাম,কিন্তু অরুর দেখা নাই,স্কুল ছুটি হয়ে গেল সবাই চলে যাচ্ছে কিন্তু তাদের ভিতর অরুকে দেখলাম না।খুব চিন্তা হচ্ছে কি করি এখন!!বার বার কল করছি কিন্তু এখন ফোন বন্ধ বলছে।অগ্রহ বাসায় ফিরে এলাম,কিছুই ভালো লাগছেনা,সপ্তাহে এই একটা দিনই আমাদের দেখা হয়।

তখন রাত আটটা কি নয়টা বাজে দেখলাম অরু কল করেছে,আমি সাথে সাথে রিসিভ করে বললাম কি হয়েছে তোমার??তুমি ঠিক আছো তো??
ওপাশ থেকে শান্ত গলায় বললো হা গো আমি ঠিক আছি।
-তাহলে আজ আসো নি কেন??
-আসলে সকাল থেকে শরীরটা ভালো ছিলো না।এখন ভালো আছি তাই তোমাকে কল করলাম।সরি সোনা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি।
-না না সরি বলার কিছু নাই।কি হয়েছিলো সেটা বলো আগে?!আমি অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করলাম!
-কি বলবো আসলে,আমার মাঝে মাঝে এমন হয়,খুব দুর্বল লাগে,মাঝে মাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি,আবার ঠিকও হয়ে যাই।
-বলো কি!!ডাঃ দেখাও নি??
-হুম অনেক দেখিয়েছি,কিন্তু ওনারা বলে কোন সমস্যা নাই। বেশি বেশি খেতে বলে।তুমিই বলো বেশি খেলে মোটা হয়ে যাবো না।বলেই হাসতে লাগলো পাগলের মত।কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বললো,জানো তোমাকে না খুব দেখতে ইচ্ছা করছে!! বলেই কাঁদতে শুরু করলো!!
-অরু সোনা প্লিজ কেঁদোনা!!আমার ও তো তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে,কিন্তু উপায় কোথায়।

আমি ওকে সান্তনা দিবো কি আমিও কেঁদে চলেছি ওর সাথে,সেই রাতে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কোন রকমে নিজেদের কে বুঝ দিয়ে ঘুমাতে গেলাম।সকালে ঘুম থেকে উঠলাম,পরীক্ষা শেষ তাই কলেজ কিছুদিন অফ আছে। নাস্তা করে বসে আছি,এমন সময় মোবাইলে একটা কল এলো,অচেনা নম্বর!কে হতে পারে এসব ভাবতে ভাবতে কলটা ধরে কানে দিলাম। হ্যালো!!!ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি বাচ্চা বাচ্চা কন্ঠ,শুভ দা বলছো!!
-হা বলছি!আপনি কে ??
-আমি অনামিকা!
অনামিকা!অনামিকা কে হতে পারে!!আমি স্মৃতিচারণ করতে লাগলাম,না মনে পরছেনা!!
-কি গো চিন্তে পারলে না।কি করে চিনবে বলো।তুমি তো একটা ফল নিয়েই পরে আছো,পাশে যে আরো ফল আছে সেদিকে কি তোমার খেয়াল আছে।।
এতো ভারি মুশকিলে পরলাম!!কে হতে পারে!!আবার ওপাশ থেকে বললো থাক বাবা বেশি টেনশন দিলে আবার আমার দিদিই কষ্ট পাবে।
আমি তোমার একমাএ শালী! এবার চিনছো??

এতোক্ষণে বুঝলাম ও অরুর ছোট বোন!বাবা ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।সরি তোমায় চিনতে পারিনি।থাক আর বেশি চিনে কাজ নেই।নাও দিদির সাথে কথা বলো।আর একটা কথা তোমাকে তুমি করে বলেছি বলে মাইন্ড করো না,আমি এভাবেই বলবো,একমাএ শালী বলে কথা।বলেই হাসতে হাসতে অরুর কাছে ফোনটা দিয়ে দিলো।

-কি মিষ্টার শালীর কাছে ঘোল খেয়ে গেলে??
-সে কি আমার দোষ!!তুমিও তো ওর নাম বলেছিলে ছুটকি!
-ধুর তুমিও না,আরে বাবা ওটাতো আমি ওকে আদর করে ডাকি।যাই হোক শোন তুমি এখন একটু আমাদের বাসায় আসতে পারবে??
-তোমাদের বাসায়!!বলির পাঠা হতে!!?
-আরে শোন আগে,তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে,তাই কম্পিউটারের সি ড্রাইভের সব ফাইল ডিলিট করে দিয়েছি,এখন আর ওটা ঠিক ভাবে কাজ করছে না।ওদিকে ছুটকি পিসি অন করতে পারছেনা তাই,চিল্লাচ্ছে তখন আমি ওকে আর মা কে বলেছি,আমার পরিচিত একজন আছে কুয়েটে পড়ে,বললে তাকে ডেকে ঠিক করে নিতে পারি।সো নো মোর লেট,প্লিজ বেবি,কামন ফার্স্ট!!হা হা রাখছি বাই।আমি ঠিকানা টেক্স করে দিচ্ছি।বলে ফোন রেখে দিলো।

উফ কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা,যাক এমন হলে ভবিষ্যতে আমারই লাভ।একটু পরেই মেসেজ আসলো অরুর ফোন থেকে।আমিও দেরি না করে বেড়িয়ে পরলাম।ওদের বাসায় যেতে ১৫ মিনিট লাগলো।ওদের বাসায় যেয়ে বেল বাজাতে দরজা খুললো একটা ১৬ কি ১৭ বছরের মেয়ে,চেহারায় অরুর মুখের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে দেরি হলো না আমার যে এটাই আমার দুষ্ট শালী,আমাকে দেখেই বললো শুভদা!?আমি মাথা নাড়ালাম!অরু নেই? থাকবে না কেন!সবাই আছে, উম্মহ যেন তর সইছেনা!!আমি আর কোন বাক্য ব্যয় করলাম না।দু বোন দু রকম একটা চুপচাপ আর একটা যেন ধানি লঙ্কা,বাড়ি মোটামুটি বিশাল, ছিমছাম গোছানো।আমাকে সোজা নিয়ে গেল ওদের বেড রুমে যেখানে কম্পিউটার থাকে,রুমে ঢুকে দেখি অরু বসে আছে,আমাকে দেখেই ছুটে আসতে গেল পরক্ষনে ছুটকিকে দেখে থেমে গেল।শালীও আমার কম যায়না শুভদা তোমরা বরং কথা বলো,নতুন জামাই বলে কথা আমি একটু জল মিষ্টি নিয়ে আসি।আমি ধরা খেয়ে গেছি তাই ঢোক গিললাম,অরুও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,ছুটকি এবার অরুকে উদ্দেশ্য করে বললো,তোর আবার কি হলো রে দিদি,আসতে যেয়ে ওমন ব্রেক মারলি,আমি সবই বুঝি ওতো লজ্জা পেতে হবেনা,এখন তোরটা ম্যানেজ করে দিচ্ছি,পরে আমার যখন হবে তুই আমারটা একটু দেখিস।তবে রে দুষ্টু খুব পেঁকেছিস তাই না,দাঁড়া বলে অরু ছুটকিকে ধরতে গেল,কিন্তু ছুটকি ততক্ষণে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে।এখন রুমে শুধু আমি আর অরু,ছুটকি চলে যেতেই অরু আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো,জানো আমার কি কষ্ট হচ্ছিলো তোমাকে দেখতে না পেরে।((পাঠকগন এটা সেই সময়ের কথা যখন মোবাইলের ভিডিও কলিংটা আমাদের দেশে এতো এভেইলেবল ছিলো না))
কবে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে শুভ,আমি যে তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারিনা। ওর ফুপিয়ে কান্না পেয়ে যাবার অবস্থা কিন্তু এই পরিস্তিতিতে যেটা করলে অঘটন ঘটে যাবে,বাসায় এখনো কে কে আছে সেটাই জানিনা!
 
[[৮]]

আমি ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম,দেখ সোনা এমন বাচ্চাদের মত কাঁদলে চলে, দেখো কষ্ট তো আমারও হয়,কিন্তু কি করবো বলো,পড়াশোনা শেষ করে জব করতে না পারলে তো,তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারিনা,দেখো আমার আর স্টাডি শেষ হতে মাস ছয়েক বাকি আছে,সো আজ থেকে আমাদের প্লান হলো আমরা আগামী এক বছরের ভিতর বিয়ে করবো,প্লিজ আমাকে এতোটুকু সময় দাও।আর এর ভিতর তোমারও পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে।
ঠিক আছে কিন্তু এই এক বছরের ভিতর যা করার করবে!!অরু ফুপাতে ফুপাতে বললো।আচ্ছা বাবা তাই হবে।

এই যে স্যার ম্যাডাম এমন জোড়া লেগে থাকলে হবে,মাএ মা জিজ্ঞাসা করলো কে আসতে চাইলো এসেছে কিনা?আমি বলে আসলাম এই মাএ এলো তাই নাস্তা নিয়ে যাচ্ছি,এখন যদি উনি এসে দেখেন তোমরা শঙ্খ লাগার মত জরিয়ে আছো,কি হবে সে খেয়াল আছে। অনামিকা কখন এসেছে আমরা কেউ খেয়াল করিনি,কথা গুলা ও ভুল বলেনি,ওর কথা শোনা মাএই অরু আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দুরে সরে গেছে।
না তোমাদের নিয়ে পারা যাবেনা দেখছি,শেষে আমাকেই কেস খাওয়াবে,নাও এখন এগুলো খাও আর কাজে লেগে পরো বাপু।পাঁক্কা ঠাকুমাদের মত করে ছুটকি বললো।আমি ও নাস্তা খেয়ে,পিসিটার কাছে বসলাম,কি সমস্যা আগে থেকেই জানা তাই বেশি সময় লাগলো না।

বের হতে যাবো তখন আন্টি ভিতরে আসলো,অরু উনার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো।ভদ্র মহিলা আমার মায়ের বয়সী আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম!বেঁচে থাকো বাবা।আজ কাল তো এসব উঠেই গেছে।আমাকে বসতে বলে অরু আর অনামিকা কে একটু বাইরে যেতে বললো,ওরা চলে যেতেই উনিও বসলেন,আমি ভিতরে ভিতরে টেনশনে ভুগছি শুনেছি মায়েদের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় না উনি কি কিছু বুঝতে পেরেছেন!!এসব ভাবার মাঝেই উনি প্রশ্ন করলেন!
-তো বাবা কি করো তুমি??
-আমি মানে,,আমি পড়াশোনা করি কুয়েটে ফাইনাল সেমিষ্টার!
-ওহ খুব ভালো বাড়িতে কে কে আছে তোমার?
-আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর মা বাবা আর আমি!!
তোমার কি টেনশন লাগছে ভাবছো আন্টি খুব কড়া।বলে একটু হাসলেন সে হাসিতে এক পবিএতার ছাপ।দেখো বাবা মেয়ে যখন হয়েছে বিয়ে দিতেই হবে আজ অথবা কাল,অরুনিমা নিজে পছন্দ করবে এমনটা ভাবিনি,তবুও ওর পছন্দ যদি ভালো হয় সেখানে আমার কোন অমত নেই তারপরও ওর বাবা ডিফেন্সে আছে একটু কড়া মেজাজের তাই উনার উপর কথা বলার কোন প্রশ্ন ওঠে না, কিন্তু সেই সময় যদি মনে হয় তুমি যোগ্য তখন হয়ত আমি তাকে তোমার কথা বলতে পারি। কিন্তু এর বেশি কিছুনা,তোমাকে এখানে আসতে বলার সময় অরু এমন ভাবে তোমার কথা বলছিলো,তখনি আমি বুঝেছি,মায়ের চোখ তো।কিন্তু তুমি হয়ত জানো ও মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পরে এটাই চিন্তার বিষয়,কিছু খেতে চায় না,কি যে করি মেয়েটাকে নিয়ে। এতোটুকুই বলার ছিলো বাবা এর বেশি কিছু তোমাদের বলার নেই আমার।।

আমি চুপচাপ উনার কথা শুনছি,এখন কিছু একটা না বললে খারাপ দেখায়।আপনি ঠিকই ধরেছেন আন্টি।আর আমি যোগ্য হয়েই আপনার কাছে আসবো,তার আগে না। শুধু আপনি আজ যে সাহায্যের কথা বললেন সেটা আর আপনার আশির্বাদ আমাদের সাথে থাকলেই হবে।তারপর ওনাকে প্রনাম করে অরুর সাথে চোখাচোখি দুটো কথা বলে বেরিয়ে আসলাম।

একদিকে ভালো লাগা,অন্য দিকে চিন্তা,ভালোলাগা এই যে অন্তত ওর পরিবারের একজনকে তো ব্যাপারটা জানানো হলো।আর চিন্তা হলো আমি যোগ্য হলেও আন্টি কতটুকু সাহায্য করতে পারবে।সেদিন রাতে অরুর সাথে কথা বলার সময় জানতে পারলাম পরে আন্টি ওকে আর তেমন কিছু বলেনি কিন্তু আমাকে আন্টির পছন্দ সেটা কিছুটা বুঝতে পারছে ও।

এভাবেই কেঁটে যাচ্ছে আমাদের দিন,সপ্তাহে একদিন করে দেখা করা।কিন্তু এখন দেখা করতে গেলে আমি ওর জন্য গিফট হিসেবে অন্য কিছুনা খাবার নিয়ে যাই,এই ধরুন কখনো ফল,না হয় ভালো কোন খাবার যেটা শরীরের জন্য ভালো।দেখা করে গল্প করতে করতে আমি নিজে হাতে ওগুলো ওকে খাইয়ে দিই।ও নিজেও পরে অবাক হয় যে এতো গুলা খাবার ও এতো অল্প সময়ের ভিতর খেয়ে ফেলেছে।আসলে আন্টি সেদিন বলার পর থেকে আমি এই প্লানটা করেছিলাম,যেহেতু ডাঃ বলেছে শরীরে কোন রোগ নাই, শুধু বেশি বেশি খেতে ‌হবে তাই আমি সপ্তাহে এই সময় টুকু গল্পের ছলে ওকে খাইয়ে দিই।

মাস শেষে টিউশনির টাকা হাতে পেয়ে অরুকে না জানিয়েই একজন ভালো ডা. এর এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখলাম পরের শুক্রবারের জন্য,পরের শুক্রবার ওকে ঘুরতে নিয়ে যাবার নাম করে ডাঃ এর কাছে নিয়ে গেলাম,অরু তো অবাক আমার কান্ড কারখানা দেখে, একটু রাগও দেখালো,তখনকার মতো চুপ থাকতে বললাম যা বলার পরে বলো।ডাঃ এর কাছে ওর ব্যাপারে সব বলা হলো,ডাঃ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,ম্যাডাম উনি আপনার কে হন?অরু করুণ ভাবে আমার দিকে তাকালো।ওর করুন মুখ দেখে আমিই বললাম,আসলে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিছুদিন পরই বিয়ে,ওর একটু সমস্যা তাই নিয়ে আসলাম।ডাঃ কিছুক্ষণ দুজনের দিকেই তাকিয়ে থাকলো।তারপর বললো দেখুন এমনিতে আপনার কোন সমস্যা নাই।একটু শরীরচর্চা আর বেশি করে খেতে হবে।একবারে না পারেন অল্প অল্প করে খাবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।তাছাড়া ম্যাডাম ভাগ্য করে এমন স্বামী যখন পাচ্ছেন তখন আর আপনার চিন্তা কি!!?

ডাঃ এর ওখান থেকে বের হয়ে এলাম দুজন,নাও এবার কি শাস্তি দিবে দাও,আমি প্রস্তুত!!
ভালবাসি তোমায় শুভ,অন্নেক ভালবাসি!!!
এতো ভালবাসলে শাস্তি কোথায়?তোমায় শাস্তি দিলে যে আমার পাপ হবে,ডাঃ কি বললো শুনলে না,ভাগ্য করে পেয়েছি গো তোমায়!!
তাই হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দিবো না!!!বলতে বলতে অরুর চোখ দুটো ভিজে উঠলো।
আমিও অরুর চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে বললাম আমিও কখনো ছেড়ে যাবো না সোনা,প্লিজ আর কেঁদো না।
শোন শুভ এক বছর না আমরা আট মাস পরে বিয়ে করবো! ঠিক আছে।আমি ও অবাক ওর কথা শুনে,এক সপ্তাহ আগে ঠিক করলাম এক বছর আর আজ বলছে আট মাস।কি কথা বলছো না কেন !??হুমম,আচ্ছা তাই হবে।

আমার লক্ষী সোনা,এই জানো তো পরের সপ্তাহে আমার জন্ম দিন।কি বলো!!তাই?হুম তো সেদিন কি দিবে আমায়??তুমি কি চাও বলো??অরুর ছোট উত্তর তোমাকে!!!আর কিচ্ছুনা। তাই বললে হয় আমাদের সম্পর্কের ভিতর এই তোমার প্রথম জন্ম দিন বলে কথা!! আচ্ছা যা ইচ্ছা দিও।এখন চলো দেরি হলে আমার বাসায় সমস্যা হবে।আজ ডাঃ দেখানোর জন্য একটু দুরে আসতে হয়েছিলো,তাই বাসে উঠলাম, খুব ভীড় বাসে কিছুটা বাধ্য হয়ে উঠলাম,না হলে দেরি হয়ে যাবে কিন্তু বসার সিট পেলাম না,মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত সিট গুলাও পুরুষের দখলে।এখানে বলে কোন লাভ নেই।এটাই নিয়ম হয়ে গেছে।অরু ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারছে না,আমার চোখের সামনেই কেউ কেউ নেমে যাওয়া,সরে দাড়াবার ছলে ইচ্ছা করেই ওর নিতম্ব ছুঁয়ে যাচ্ছে।অথচ মনে হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত কিন্তু এই ভীড়ে সেটা বলার মত কোন অবস্থা নেই। নিজের বোন নেই,তাছাড়া কোন মেয়েকে নিয়ে বাসে উঠার অভ্যাস নেই।না ব্যাপারটা আমার চরম খারাপ লাগার জায়গায় চলে গেল।কিন্তু অরু শান্ত ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে,হয়ত ওর এটা রোজকার অভ্যাস। নিজেকে তথা পুরুষ সমাজকেই গালি দিতে ইচ্ছা করলো।বাস স্টপেজ আসতেই কোন মতে দুজনে নেমে পরলাম।তারপর দুজনে চুপচাপ হেটে চলেছি কারো মুখে কোন কথা নেই।

-কি ব্যাপার মুখ ভার করে আছো কেন?প্রথম প্রশ্ন অরুই করলো।
-তুমি আর কাল থেকে বাসে যাবে না কলেজে।
-কেন?? কি হয়েছে??
-সেটা আমি মুখে বলতে পারবো না!
-ওহ বুঝেছি ওই কিছু বাজে লোকের কথা বলছো তো?ওটা শুধু আমি না প্রায় সব মেয়েদের ওটা ফেস করতে হয়।আগে প্রতিবাদ করতাম কিন্তু কোন লাভ হয়না।এখন ওসব অভ্যাস হয়ে গেছে গাঁয়ে মাখিনা।
-তবুও ও বাসে আর যাবে না।
-সবাই কে রিক্সায় পাঠাতে পারবা তুমি??পুরুষের মনের কালি দুর না হলে এটা হতেই থাকবে।

অরুর এই প্রশ্নের উত্তর সত্যি আমার কাছে নেই।আমি জানি সোনা সেটা আমার একার পক্ষে সেটা সম্ভব না।তবুও তুমি আর যাবে না।
কিন্তু তাহলে রিক্সাভাড়া তো ওনেক হয়ে যাবে,
হুম সেটা বাসায় যেয়ে ভেবে ঠিক করবো।এখন বাসায় যাও না হলে বেশি দেরি হয়ে যাবে।
 
[[৯]]

বাসায় এসে একটা কথাই বার বার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে কি করা যায়?!রিক্সায় যাতায়াত করলে অনেকটা বেশি খরচ হবে,আর আমার বাসা থেকে কলেজ পায়ে হেটে যেতে ৫০ মিনিট মত লাগবে।সব ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিলাম,অরুকে রিক্সায় যাতায়াত করাবো,আর আমি কিছুদিন পায়ে হেঁটে কলেজ যাবো,যতো দিননা আর একটা টিউশনি পায়।রাতে ফোনে অরুকে এসব কিছু বললাম না শুধু বললাম তোমার কাছে তো যাতায়াত ভাড়া থাকে কিছু আর আমি কিছু দিবো সেটা দিয়ে তুমি রিক্সা করে কলেজ যাবে।

অরুর একটু না না করলেও আমার জেদের কাছে হার মেনে রাজি হলো।পরদিন থেকে শুরু হলো আমার ৫০ মিনিট পায়ে হেঁটে কলেজ যাওয়া,আর টিউশনি খোঁজা,আগেই বলেছি রিক্সা করে গেলে অরুকে আমার বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে হয়,তাই কখনো দুজনের কলেজ যাবার সময় মিলে গেলে,অরু আমাকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিতো,তারপর আমাকে ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিয়ে ও চলে যেত ওর কলেজে।এভাবেই চলছিলো তারপর পরের সপ্তাহে অরুর জন্মদিন!কি দেওয়া যায় ওকে ভাবতে ভাবতে নেপাল থেকে আনা চাদরের কথা মনে পরলো।সত্যি তো অরুর থেকে স্পেশাল আর কেউ থাকতে পারেনা আমার জন্য।হা হয়ত ওর জন্যই এতোদিন রেখে দিয়েছি,ওটাই দিবো ওকে।

অরুর জন্মদিনের দিনটা ছিলো সোমবার যথারীতি আমাদের দেখা করাটা একটু সমস্যার তাই এই প্রথম আমরা ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।আমি অরুর জন্য ছোট্ট একটা কেক আর একটা লাল গোলাপ নিয়ে গেছিলাম,আর আমার পছন্দের নীল চাদরটা।মোটামুটি শীত শীত পরছে যদিও পুরোপুরি ভাবে শীত আসেনি।সমস্যা কি পরে পরবে এটা।
সোমবার সকাল বেলা অরু আমাকে বাসার সামনে থেকে রিক্সায় তুলে নিলো,তারপর দুজনে রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম সোজা নদীর পাড় যেটা আমার কাছে সব সময়ের জন্য স্পেশাল জায়গা।সকাল বেলা তেমন কোন মানুষজন নেই।বিকাল থেকে লোকে ভরে যায় জায়গাটা।

দুজনে বেঞ্চ বাদ দিয়ে সবুজ ঘাসের উপর বসলাম,সকালের সূর্যের আলো নদীর বুকে পরতেই জল যেন চিকচিক করছে,কখনো বাতাসে ঢেউ খেলে যাচ্ছে আমারই ভালবাসার হাসির ন্যায়।দুরে রুপসা ব্রীজটা ছোট লাগছে,তারনিচে হাজারো নারিকেল গাছের মেলা সব মিলিয়ে অপূর্ব লাগছে।আসলে সত্যি বলতে ভালবাসার মানুষটা সাথে থাকলে সব কিছুই ভালো লাগে।

-জানো খুব ভালো লাগছে!কতো দিন এভাবে কোথাও বসিনি!! হঠাৎই অরু বললো।
-হুম আমারও কিন্তু আরো বেশি ভালো লাগছে তুমি সাথে আছো তাই।
আমি ওর জন্য আনা গোলাপটা ওর হাতে দিয়ে বললাম শুভ জন্মদিন ময়নাপাখি!!
-ওয়াও থ্যাংকু!!সোনা,আর ওটায় কি?
বলে আমার হাতের প্যাকগুলার দিকে ইশারা করলো।
-এটা ছোট একটা কেক! আসলে রাতে তো আর আমরা এক হতে পারবো না তাই এই সকালেই নদীর পাড়ে আমরা কেক কাটবো।চলো চলো শুরু করো।

সেদিন সকাল বেলা আমরা নদীর পাড়ে কেক কেটে অরুর জন্মদিন পালন করি।কেক কাটার পর আমি ওর জন্য আনা চাদরটা দিই।চাদরটা দেখেই ও খুশিতে নেচে এঠে,উফ কি দারুন দেখতে আর সফট।
-থ্যাংকু সোনা।কবে কিনলে গো?
আমাদের সম্পর্ক শুরুর আগে আমি নেপাল গেছিলাম ওখান থেকে এনেছিলাম,তারপর আমি তখন চাদর কেন্দ্রীক সব ঘটনা বললাম,অরু সব শুনে আরো খুশি।এই একটু উঠে দাঁড়াও তো!
-কেন???
আরে বাবা বলছি তো দাড়াও!আমি দাঁড়াতেই অরু নিচু হয়ে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো,ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো আমি প্রথমে কিছুই বলতে পারিনি।

-কি করলে এটা?
-ওমা কেন!তোমায় প্রনাম করলাম।
-সেটাই তো বলছি কেন?
-ও মা!!স্বামীতে প্রথম কিছু দিচ্ছে আমাকে,আর আমি তাকে প্রণাম করবো না!!!
-এখনো তো হয়নি!!
-সেটা তুমি ভাবতে পারো আমি না বুঝেছো,বাকি তো আছে সাত পাক আর সিঁদুর দেওয়াটা।
-যাক এযুগেও তাহলে এসব ভাবা যায়।আমি মজা করে বললাম।
-দেখো এযু্গ সেযুগ না ভালবাসা সব যুগেই এক।পার্থক্য শুধু ভালবাসার পাত্রের,আর মনের চাহিদার।

গল্প করতে করতে কখন দুপুর গরিয়ে গেছে খেয়াল করিনি, এবার উঠতে হবে।সেদিন বাসায় আসতে আসতে অরু বললো আমরা কবে বিয়ে করছি??
-কেন!সেদিন না ঠিক করলাম আট মাস পর!!
-না আট মাস না সাত মাস পর,আমরা বিয়ে করবো!!
-দেখো সোনা সেটা তো আমিও চাই,কিন্তু এভাবে দিন কমালে,আমি সব কিছু ম্যানেজ করবো কি করে।
-অরুর ছোট উত্তর "" জানি না""!!!


দুদিন পর বাসায় বসে আছি মা রান্না করছে,না অন্তত মাকে জানিয়ে রাখা ভালো,তাই মায়ের কাছে গিয়ে বললাম কি রান্না করো?
সেতো টেবিলেই দেখতে পাবা।এমনিতে তোমরা বাপ বেটায় কতো খোঁজ রাখো আমার,তা কি মতলব সেটা বলো।মায়ের কন্ঠে অভিমানের সুর।আসলেই তো সেই একঘেয়েমী জীবন মায়ের,বাবা সারা দিন ব্যবসা আর আমি ও কলেজ আর বাইরে ঘোরাঘুরি।

আসলে মা একটা কথা বলার ছিলো,কিন্তু কিভাবে যে বলি। অতো সংকোচ থাকলে বলতে এলি কেন?না মানে আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি!!এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু মায়ের দিকে কান খাঁড়া করে দাড়িয়ে আছি কি বলে শোনার জন্য।
-সে আমি জানি!!
-মা কি করে জানলো!!আমি বিড়বিড় করে বলছি হয়তো বা সেটা মা বুঝে ফেলছে তাই বললো।
-আমার ছেলে আমি জানবো না, ড্রয়ারে চাদর নেই,যে ছেলে ফোনই হাতে নিতো না সে এখন রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোন কানে রাখছে,এগুলা তো আর এমনি এমনি না।
-তুমি যখন জেনেই গেছো তাহলে তোমার কি মতামত??
-আমি তাকে দেখলামই না,তো কি করে মত দিবো।কিন্তু একটা কথা শুনে রাখ আমার কোন মেয়ে নেই তাই তুই এমন কাউকে আমার সামনে আনিসনা যাকে আমি মেয়ে বলে মানতে পারবো না,এমনি সেও আমাকে মায়ের মত দেখতে পারবেনা।
-সে বিষয়ে তুমি নিশ্চিত থাকো। বলে আমি এক দৌড়ে আমার রুমে এসে অরুর একটা ছবি আমার কাছে ছিলো সেটা নিয়ে গিয়ে মা কে দেখালাম।মা কিছুক্ষণ ছবিটা ভালো করে দেখে বললো আমার ছেলে পছন্দ করেছে সে মেয়ে কি দেখতে খারাপ হবে!!কথাবার্তা ব্যবহার কেমন সেটাই দেখতে হবে।পরে একসময় আমার সাথে কথা বলিয়ে দিস,এখন যা রান্না করতে দে।আমিও কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলাম,একটাই স্বস্তি যে মায়ের মুখ দেখে যা বুঝলাম অরুকে মায়ের খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু প্রকাশ করছেনা আমার সামনে।
 
[[১০]]

একদিন বিকাল বেলা অরুর সাথে মাকে ফোনে কথা বলিয়ে দিলাম,কিন্তু সত্যি বলছি পাঠকগণ ওদের দুজনের ভিতর কি কথা হয়েছে আমি জানিনা,সেদিন আমার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ছাদে চলে গেছিলো,কথা শেষে জানতে চাইলেও আমাকে কিছু বলেনি,আর অরুর কাছ থেকেও কোন কথা উদ্ধার করতে পারিনি,ইদানিং লক্ষ্য করছিলাম মা ফোনে কার সাথে যেন কথা বলে,আসলে আমি তাতে খারাপ কিছু সন্দেহ করিনি,কিন্তু আমার মন বলছিলো মা এবং অরু দুজনেই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছে।একদিন সুযোগ বুঝে মায়ের মোবাইলের কল লিষ্ট চেক করি,আর আমার সন্দেহ সত্যি হয় মা অরুর সাথেই কথা বলে অর্থাৎ দুয়ে দুয়ে চার মা আর অরুর সম্পর্কটা পাকাপোক্ত হয়ে গেছে।আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

এরপর কেঁটে গেছে অনেকটা সময় প্রতি সপ্তাহে একবার করে দেখা হয়।তেমন বলার মত বিশেষ কোন ঘটনা ঘটেনি।প্রতিদিনই আমাদের ফোনে কথা হয়,আমাদের বিয়ে করার সময়সীমা কমতে কমতে পাঁচ মাসে এসে ঠেকেছে এরই মধ্যে।দেখতে দেখতে ফাইনাল সেমিষ্টারের পরীক্ষা চলে এলো, আমার আর এখন আগের মত অসস্তি লাগেনা,অরু আসার পর যেন জীবনে গতি এসেছে প্রথম বর্ষে রেজাল্ট খারাপ হলেও দ্বিতীয় বর্ষে আমি আশানুতিক রেজাল্ট করি।কয়েকটা দিন খুব চাপ গেল পরীক্ষার জন্য।এই কয়দিন অরুর সাথেও সেভাবে কথা বলতে পারিনি।কথা বললেই অরুর সেই এক কথা আর ভালো লাগছেনা,কবে বিয়ে করবে।আমিও তো চাই কিন্তু মাএ পরীক্ষা শেষ হলো,এখন রেজাল্ট না বের হলে ভালো জবের চেষ্টাও করতে পারছিনা।

কপাল ভালো ছিলো প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার দিন ভার্সিটিতে ঘোষণা করা হলো, আগামীকাল কলেজে ফ্রি জব ক্যাম্পিং হবে।আগ্রহীরা তাতে সরাসরি অংশগ্রহন করতে পারবে।আসলে ভালো ভালো ভার্সিটি গুলোতে এমন হয় রেজাল্ট বের হবার আগেই এখানে কর্মী নিয়ে থাকে কিছু কোম্পানী কারণ এখানকার ৯০ শতাংশ ছাএ ছাএীই মেধাবী আর রেজাল্ট বের হবার আগেই জব এই জন্য সবাই চান্সটা নেয়।ঘোষণা শুনে খুশিই হলাম কারণ অরুর জন্য আমার জবটা ভীষণ ভাবে দরকার।পরদিন সেভাবে প্রিপারেশন নিয়ে পৌছে গেলাম,মোটামুটি ৩০০ জনের মত অংশ নিচ্ছে,কতজন নিবে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।প্রথমে প্রাথমিক ভাবে একটা লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলো সেখান থেকে অর্ধেকের বেশি বাদ দিয়ে সরাসরি ভাইভা নেওয়া শুরু করলো,সেখান থেকে কয়েকজনকে সরাসরি বাদ দেওয়া হলো আর কয়েকজনের সিভি রেখে দেওয়া হলো পরে কল করবে বলে।আমার সিভিটাও রাখা হলো। এখন আর কিছু করার নাই, উনাদের ফোন কলের অপেক্ষা করা ছাড়া।


প্রায় দশ দিন পর একটা অচেনা নম্বর থেকে কল এলো ফোন ধরতেই,,,
-হ্যালো!মিষ্টার শুভেন্দু রায় বলছেন??
-হা,বলছি!আপনি কে বলছেন??
-আমি স্টার আর্কিটেকচার এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিঃ থেকে বলছি।আপনি যে জব ক্যাম্পিং এ অংশ গ্রহন করেছিলেন।
-ওহ হা হা,বলুন!
-আমরা আপনাকে জব অফার করছি!আমরা আপনাকে বেসিক ৩০ হাজার টাকা মাসিক বেতন অফার করছি,আপনি জবটি করতে চাইলে আগামী রবিবার আমাদের অফিসে যোগাযোগ করবেন।কিন্তু শর্ত একটাই দুই বছরের ভিতর আপনি বেটার জব পেলেও এটা ছাড়তে পারবেন না।বলে ফোন রেখে দিলো।

আমি তো খুশি পাগল হওয়ার মত অবস্থা সব কিছু এতো ভালো ভাবে হয়ে যাবে ভাবিনি। যদিও দু বছরের শর্ত সেটাও সমস্যা না দু বছরের পর নাহয় বেটার কিছু দেখবো,আপাতত অরুর বাড়িতে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য একটা কিছু ব্যবস্থা তো হলো।বেসিক ৩০ তারমানে সব মিলিয়ে ৪০ পাবো।দৌড়ে গিয়ে মাকে জানালাম গিয়ে দেখি সেখানে বাবাও বসে আছে,আজ আর ভয় না দুজনের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম,
-কি রে কি হলো?মা বললো
-আমার চাকরি হয়ে গেছে মা ৪০ হাজার টাকা বেতন।
লক্ষ্য করলাম মা বাবা দুজনেরই মুখটা খুশিতে ভরে উঠলো।আমি আর ওখানে না দাঁড়িয়ে রুমে এসে অরুকে ফোন দিলাম।অরু তো শুনে খুশিতে কেঁদেই ফেললো।

পরদিন যথা সময়ে অফিসে জয়েন করলাম,মোটামুটি ভালোই অফিসটা,সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি,মাকে বলেছি বিয়ের কথা মা বলেছে বাবার সাথে কথা বলবে এই ব্যাপারে। ওদিকে অরুর মা আর ছোট বোন ছাড়া কেউ জানে না। একদিন অরু ফোন করে বললো বাড়িতে ওর জন্য বিয়ের সমন্ধ আসছে,কেউ ডাঃ কেউবা প্রফেসর,শুনে তো আমার মাথায় বাজ পরলো‌।আমি সেদিনই অফিস থেকে ফিরে আন্টিকে কল করলাম,আন্টি অরুর বাবার সাথে কথা বলে আমাকে জানাবে বলে ভরসা দিলেন ঠিকই কিন্তু আমার মন মানতে চাচ্ছিলো না।

পরের শুক্রবার সকালে অরুর সাথে দেখা করে ফেরার পথে মিঠুকে কল করে ঢেকে নিলাম,
কি ব্যাপার বন্ধু খুব তো মজায় আছো নতুন চাকরি মারকাটারি গার্লফ্রেন্ড।
-ধুর মজা করিসনা,টেনশনে আছি তাই তোকে ডাকলাম।
-কি ব্যাপার বলতো?তোকে সত্যি অন্য রকম লাগছে।
-আমি মিঠুকে অরু আর আমার বিয়ের ব্যাপারের সব কথা খুলে বললাম।সবশুনে মিঠু বললো তো এতো চিন্তার কি আছে? তোর হবু শাশুরী তো রাজি আছে!
-দেখ ভাই,সমস্যা কিছুই না আবার অনেক কিছু,আমার যোগ্যতা নিয়ে তো কোন সমস্যা নাই কিন্তু তুই তো জানিস অনেক ফ্যামিলিই প্রেমের বিয়েতে সম্মতি দেয় না,সে ছেলে যতোই যোগ্য হোক না কেন!!
-সেটা তুই ঠিক বলেছিস।মিঠু সিগারেট টানতে টানতে বললো দিবি একটান??
-তুই জানিসনা আমি খাইনা।
-তো যাই হোক কি করতে চাচ্ছিস?
-দেখ আমি ভাবছি ওর পরিবারের মতের জন্য ওয়েট করবো কিছুদিন কিন্তু যদি দেখি বেচাল তাহলে কোর্টম্যারেজ করবো!তো সমস্যা হবেনা তো??
-আরে কিসের সমস্যা আমরা বন্ধুরা আছিনা।মিঠু ওর ৩৬ ইষ্ণি বুকের ছাতি ফুলিয়ে বললো।
মিঠুর সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরলাম।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top