করোনার দুঃসময়েও বাংলাদেশের তরুণেরা মেলে ধরছেন নিজেদের। নতুন বাস্তবতায়, নতুন উদ্যমে এগিয়েৃ চলছেন। জানান দিচ্ছেন তারুণ্যের অমিত শক্তি। বাংলা নববর্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় তরুণ, যাঁরা এরই মধ্যে দেখিয়েছেন প্রতিভার স্বাক্ষর, তাঁদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ‘ছুটির দিনে’। ১৪২৮ বঙ্গাব্দেও উজ্জ্বল এমন তরুণদের হাজির করেছে ‘ছুটির দিনে’। যার মধ্যে চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে আছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনয়শিল্পী সুনেহ্রা বিনতে কামাল...
সুনেহ্রার সঙ্গে যেটুকু পরিচয়, তাতে একটা ব্যাপার আমার কাছে বেশ পরিষ্কার—তিনি বুদ্ধিমতী প্লাস সৎ। কারণটা জানি না, কিন্তু এই দুইয়ের যোগ ইদানীং আশপাশে খুব বিরল। এমন মানুষ নাকি সত্তরের দশকের বাংলাদেশে অনেক ছিল, তাই ২০২১ সালে সুনেহ্রাকে একটু সেকেলেও বলা যেতে পারে। তবে এদিক থেকে ‘সেকেলে’ হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি বেশ শক্ত।
সুনেহ্রা অনেক কিছু করেন বা বলা যায় অনেক কিছু করতে পারেন। অভিনেত্রী, একটা নামকরা দেশি ব্র্যান্ডের ক্রিয়েটিভ হেড, বিটিভির তালিকাভুক্ত নৃত্যশিল্পী..বহু কিছু। তবু এত কিছুর ভিড়ে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সেটা—ওঁর অভিনয়ের প্রতি সততা। অভিনয় ব্যাপারটায় বেশ একনিষ্ঠ। কাজটাকে ঐকান্তিকভাবে নেন। অনেকেই নেন না বা নিতে চান না কিংবা পরিস্থিতি নাকি নিতে দেয় না বলে এমন বলে থাকেন। তিনি সেটা বলেন না।
ন’ডরাই সুনেহ্রাকে এনে দিয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
সুনেহ্রার কথা অনুযায়ী অভিনয় ওঁর কাছে ‘নেশা’। অনেক বেশি কাজ করতে চান না। কারণ, নেশা একটু ভারসাম্যে থাকাই ভালো। ভালো যুক্তি। ন’ডরাই চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার নিশ্চিতভাবে এ মনোভাবেরই ফল।
সুনেহ্রা আমার তৈরি করা ২০২০ সালের ‘কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প’ আয়োজনের তোমার পাশে হাঁটতে দিও নাটকে অভিনয় করেন। তাঁর বিপরীতে ছিলেন বাশার। অ্যাডকমের সঙ্গে এই প্রজেক্টটা করতে আমার ভালো লাগে, এই সময়ের দর্শক ভালোবাসা ব্যাপারটা কীভাবে নেন, সেটা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা যায়।
সুনেহ্রার সঙ্গে পরিচয় হলো, তাঁর বাসায় একটা হুইলচেয়ারও পৌঁছে দেওয়া হলো এই আশায় যে তিনি যেন নিজের চরিত্রটা সহজাতভাবে করতে পারেন।
বেশ কয়েকবার সিটিং এবং হাফ বেকড স্ক্রিপ্টের রিডিং হলেও বিভিন্ন ব্যস্ততায় বা ব্যস্ততার অজুহাতে পুরো চিত্রনাট্য লেখা হয়নি শুটিংয়ের আগের দিন পর্যন্ত। তাঁদের হাতে পুরো স্ক্রিপ্ট পৌঁছাল আগের রাতে। ওই রাতে পুরো চিত্রনাট্য পাঠ এবং সকাল থেকে শুট। শুটিং আমার কাছে বেশ দুশ্চিন্তার বিষয়। শুটিং শুরু হওয়ার পর চিন্তা প্রায়ই বাড়ে; কারণ, সবই পরিকল্পনার উল্টো দিকে দৌড়াতে থাকে। ময়মনসিংহ রেল কলোনির ভেতর শুট করছি, প্রথম দৃশ্যের শুট। দেখলাম, সুনেহ্রার উপস্থিতি ক্যামেরার সামনে বেশ অর্গানিক (সাবলীল, সহজাত)। ছোটখাটো ফিডব্যাক, কথোপকথন...ধীরে ধীরে জমতে থাকল ব্যাপারটা। ছোট ছোট মুহূর্ত তৈরি হতে লাগল।
দেখলাম, সুনেহ্রা চরিত্রের বাইরে আর কিছুই মাথায় নিচ্ছেন না, চরিত্রে ঢুকছেন এবং ঢুকছেন...। একজন অভিনয়শিল্পীর অনেক গুণই থাকতে হয়, এগুলোর একটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ—সেটা হলো অভিনয়শিল্পীকে প্ল্যানচেটের মিডিয়ামের মতো হতে হয়। যাঁর ওপর আত্মাটা এসে ভর করে, যাঁর মুখ দিয়ে আত্মাটা কথা বলে। এ ক্ষেত্রে আমি বোঝাতে চাইছি, নির্মাতার ভূতটা অভিনয়শিল্পীর ওপর ভর করতে দেওয়ার জন্য তাঁকেও প্রস্তুত হতে হয় মানসিকভাবে। তো সুনেহ্রার ওপর ভর করা গেল। আমাদের ফিল্ম কেমন হলো সেটা দর্শকেরা বলতে পারবে, আমাদের শুটিংয়ে কিছু মুহূর্ত তৈরি হলো, যেটা আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পরে শুনলাম, ও ট্র্যাডিশনাল অ্যাক্টিং প্রতিদিন চর্চা না করলেও প্রায়ই নাকি নিজে কোনো সিন লিখে, নিজেই অভিনয় করে মোবাইলে রেকর্ড করেন সুনেহ্রা। বেশ ইনোভেটিভ অ্যাপ্রোচ।
সুনেহ্রার উপস্থিতি এবং অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের অনেকবার। আমার বিশ্বাস, আরও বহুবার ঘটবে ঘটনাটা।
লেখক: অনম বিশ্বাস, নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার
সুনেহ্রার সঙ্গে যেটুকু পরিচয়, তাতে একটা ব্যাপার আমার কাছে বেশ পরিষ্কার—তিনি বুদ্ধিমতী প্লাস সৎ। কারণটা জানি না, কিন্তু এই দুইয়ের যোগ ইদানীং আশপাশে খুব বিরল। এমন মানুষ নাকি সত্তরের দশকের বাংলাদেশে অনেক ছিল, তাই ২০২১ সালে সুনেহ্রাকে একটু সেকেলেও বলা যেতে পারে। তবে এদিক থেকে ‘সেকেলে’ হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি বেশ শক্ত।
সুনেহ্রা অনেক কিছু করেন বা বলা যায় অনেক কিছু করতে পারেন। অভিনেত্রী, একটা নামকরা দেশি ব্র্যান্ডের ক্রিয়েটিভ হেড, বিটিভির তালিকাভুক্ত নৃত্যশিল্পী..বহু কিছু। তবু এত কিছুর ভিড়ে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সেটা—ওঁর অভিনয়ের প্রতি সততা। অভিনয় ব্যাপারটায় বেশ একনিষ্ঠ। কাজটাকে ঐকান্তিকভাবে নেন। অনেকেই নেন না বা নিতে চান না কিংবা পরিস্থিতি নাকি নিতে দেয় না বলে এমন বলে থাকেন। তিনি সেটা বলেন না।
ন’ডরাই সুনেহ্রাকে এনে দিয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
সুনেহ্রার কথা অনুযায়ী অভিনয় ওঁর কাছে ‘নেশা’। অনেক বেশি কাজ করতে চান না। কারণ, নেশা একটু ভারসাম্যে থাকাই ভালো। ভালো যুক্তি। ন’ডরাই চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার নিশ্চিতভাবে এ মনোভাবেরই ফল।
সুনেহ্রা আমার তৈরি করা ২০২০ সালের ‘কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প’ আয়োজনের তোমার পাশে হাঁটতে দিও নাটকে অভিনয় করেন। তাঁর বিপরীতে ছিলেন বাশার। অ্যাডকমের সঙ্গে এই প্রজেক্টটা করতে আমার ভালো লাগে, এই সময়ের দর্শক ভালোবাসা ব্যাপারটা কীভাবে নেন, সেটা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা যায়।
সুনেহ্রার সঙ্গে পরিচয় হলো, তাঁর বাসায় একটা হুইলচেয়ারও পৌঁছে দেওয়া হলো এই আশায় যে তিনি যেন নিজের চরিত্রটা সহজাতভাবে করতে পারেন।
বেশ কয়েকবার সিটিং এবং হাফ বেকড স্ক্রিপ্টের রিডিং হলেও বিভিন্ন ব্যস্ততায় বা ব্যস্ততার অজুহাতে পুরো চিত্রনাট্য লেখা হয়নি শুটিংয়ের আগের দিন পর্যন্ত। তাঁদের হাতে পুরো স্ক্রিপ্ট পৌঁছাল আগের রাতে। ওই রাতে পুরো চিত্রনাট্য পাঠ এবং সকাল থেকে শুট। শুটিং আমার কাছে বেশ দুশ্চিন্তার বিষয়। শুটিং শুরু হওয়ার পর চিন্তা প্রায়ই বাড়ে; কারণ, সবই পরিকল্পনার উল্টো দিকে দৌড়াতে থাকে। ময়মনসিংহ রেল কলোনির ভেতর শুট করছি, প্রথম দৃশ্যের শুট। দেখলাম, সুনেহ্রার উপস্থিতি ক্যামেরার সামনে বেশ অর্গানিক (সাবলীল, সহজাত)। ছোটখাটো ফিডব্যাক, কথোপকথন...ধীরে ধীরে জমতে থাকল ব্যাপারটা। ছোট ছোট মুহূর্ত তৈরি হতে লাগল।
দেখলাম, সুনেহ্রা চরিত্রের বাইরে আর কিছুই মাথায় নিচ্ছেন না, চরিত্রে ঢুকছেন এবং ঢুকছেন...। একজন অভিনয়শিল্পীর অনেক গুণই থাকতে হয়, এগুলোর একটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ—সেটা হলো অভিনয়শিল্পীকে প্ল্যানচেটের মিডিয়ামের মতো হতে হয়। যাঁর ওপর আত্মাটা এসে ভর করে, যাঁর মুখ দিয়ে আত্মাটা কথা বলে। এ ক্ষেত্রে আমি বোঝাতে চাইছি, নির্মাতার ভূতটা অভিনয়শিল্পীর ওপর ভর করতে দেওয়ার জন্য তাঁকেও প্রস্তুত হতে হয় মানসিকভাবে। তো সুনেহ্রার ওপর ভর করা গেল। আমাদের ফিল্ম কেমন হলো সেটা দর্শকেরা বলতে পারবে, আমাদের শুটিংয়ে কিছু মুহূর্ত তৈরি হলো, যেটা আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পরে শুনলাম, ও ট্র্যাডিশনাল অ্যাক্টিং প্রতিদিন চর্চা না করলেও প্রায়ই নাকি নিজে কোনো সিন লিখে, নিজেই অভিনয় করে মোবাইলে রেকর্ড করেন সুনেহ্রা। বেশ ইনোভেটিভ অ্যাপ্রোচ।
সুনেহ্রার উপস্থিতি এবং অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের অনেকবার। আমার বিশ্বাস, আরও বহুবার ঘটবে ঘটনাটা।
লেখক: অনম বিশ্বাস, নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার