বলিউডে এক দশক পার হয়ে গেছে অভিনেত্রী জারীন খানের। কিন্তু আজও ভালো অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাননি তিনি। পর্দায় এত দিন শুধু নেচেগেয়ে মাতিয়েছেন। তবে দর্শক এবার পেল এক অন্য জারীনকে।
সম্প্রতি অনলাইনে মুক্তি পেল জারীন খান অভিনীত ছবি ‘হাম ভি অ্যাকেলে তুম ভি অ্যাকেলে’। ছবিতে জারীনের অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। আর তাই খুশিতে ডগমগ এই বলিউড অভিনেত্রী। তবে তাঁর বুকে জমে আছে বহু চাপা অভিমান। প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল সাক্ষাৎকারে সেসব অভিমানের যেন ভাগ দিলেন তিনি। জারীন বলেন, ‘আজ আমার অভিনয়ের প্রশংসা হচ্ছে, খুবই খুশির কথা। কিন্তু এত দেরিতে আমি নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেলাম। অবশেষে আমি নিজের অভিনয় দক্ষতাকে মেলে ধরতে পারলাম। ব্যতিক্রমী এবং সাহসী এক চরিত্রের মাধ্যমে নিজেকে ভালো অভিনয়শিল্পী প্রমাণ করলাম। এখানে শুধু মেকআপ চড়িয়ে নাচ-গান করিনি। আশা করি, এই ছবির পর আমার সম্পর্কে মানুষের ধারণা কিছুটা বদলাবে। আমাকে অন্য চোখে দেখবে তারা। আমার সম্পর্কে অনেকের ধারণা, আমি শুধু সুন্দর। আমি অভিনয় জানি না। এই ধারণাটা এবার ভাঙবে।’ ‘হাম ভি অ্যাকেলে তুম ভি অ্যাকেলে’ ছবিতে এক সাহসী চরিত্রে জারীনকে দেখা গেছে। মানসী নামের এক প্রাণবন্ত তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নিজের অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে জারীন বলেন, ‘ছবিতে “মানসী” মোটাসোটা এক বিন্দাস মেয়ে, যে খেতে খুব ভালোবাসে। জিরো ফিগারের ধার ধারে না। তাই আমাকে চরিত্রের প্রয়োজনে ওজন একটু বাড়াতে হয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম, আমাকে যেন পর্দায় মানসীর মতোই লাগে। এই ছবিতে আমি নামমাত্র মেকআপ করেছি। আর সত্যি বলতে, মানসী চরিত্রটা করতে আমার খুব একটা অসুবিধা হয়নি। আমার বিশেষ কোনো প্রস্তুতি লাগেনি। কারণ ব্যক্তিগত জীবনে আমি মানসীর মতো টমবয় মার্কা।’
জারীন খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
হরিশ ব্যাস পরিচালিত ছবিটি প্রথমে সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ লকডাউনের কারণে নির্মাতারা ছবিটি ওটিটিতে মুক্তি দিয়েছে। তবে এ নিয়ে এতটুকু হতাশ নন জারীন। তিনি ছবির মুক্তির প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই করোনার সময় ছবিটা মুক্তি পেয়েছে, এটাই বড় কথা। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের কাছে যেন ছবিটা পৌঁছায়। ওটিটিতে মুক্তির পর অসংখ্য মানুষের কাছে ছবিটা পৌঁছে গেছে। ব্যস, আর কী চাই।’
সালমান খানের সঙ্গে ‘বীর’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল জারীনের। বলিউডে পা রাখামাত্রই শরীর নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। ‘মোটা’ বলে জারীনকে নানাভাবে উপহাস করেছেন অনেকে। ‘বডি শেমিং’-এর প্রসঙ্গ উঠতেই স্মিত হেসে তিনি বলেন, ‘ফিল্মে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আমি বডি শেমিংয়ের শিকার। “বীর” মুক্তির পর অনেকে বলেছিল আমি অনেক মোটা। তখন কেউ শরীর নিয়ে কিছু বললে খারাপ লাগত। ক্যারিয়ার শুরুর আগে আমার ওজন ছিল ১০০ কেজি। ৫০ কেজি ঝরানোর পরও আমাকে শুনতে হয়েছে, আমি মোটা। তবে এখন আর এসব খারাপ লাগে না। আমি বলতে চাই, একজন অভিনেত্রীকে তাঁর অভিনয়ক্ষমতা দিয়ে বিচার করা উচিত। তাঁর ওজন, উচ্চতা, বর্ণ—এসব দিয়ে বিচার করা ঠিক নয়। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এসবই দেখা হয়। ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় বড় মানুষ বডি শেমিং নিয়ে নানা কথা বলেন। কিন্তু তাঁরাই তাঁদের ছবিতে রোগা-পাতলা নায়িকা নেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে দেখনদারি আর দ্বিচারিতা অনেক বেশি।’
জারীন খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
বলিউডের তথাকথিত রূপসী নায়িকা হিসেবেই জারীনের পরিচয়। তাঁর সৌন্দর্যে কুপোকাত হতো অনেকেই। তবে এই সৌন্দর্য জারিনের ক্যারিয়ারের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি তিনি বেশি সুন্দর বলে ছবি থেকে বাদও পড়েছেন। এ নিয়ে হতাশার সুরে জারিন বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরু থেকে প্রত্যাখ্যানকে মাথা পেতে নিয়েছি। তাই এসব এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, আমি বেশি সুন্দর, এই অজুহাতে আমাকে সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি নাকি কোনো সিরিয়াস ধরনের চরিত্রের সঙ্গে মানানসই নই।’
‘হাম ভি অ্যাকেলে তুম ভি অ্যাকেলে’ ছবিতে মজার রোড ট্রিপ আছে। এ প্রসঙ্গে জারীন বলেন, ‘জানেন, আমি রোড ট্রিপ দারুণ ভালোবাসি। একটু সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে ট্রিপে বেরিয়ে যাই। মুম্বাই থেকে গোয়া বা চণ্ডীগড় থেকে মানালি। আমি রোড ট্রিপের ওপর একটা শো করতাম। জিপ নিয়ে সারা ভারত ঘুরে বেরিয়েছি তখন।’
জারীন খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
লকডাউনের কারণে এখন ঘরবন্দী জারীন। গত বছর লকডাউনের শুরুতে মজার সব ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। এমনকি এক ভিডিওতে তাঁকে ঘর মুছতে পর্যন্ত দেখা গেছে। তবে এবারের লকডাউন নিয়ে বেশ বিরক্ত জারিন। তাঁর একাধিক প্রকল্পের কাজ বন্ধ। তিনি বলেন, ‘দুটো পাঞ্জাবি, একটা হিন্দি ছবি, আর একটা সিরিজের শুটিং লন্ডনে হওয়ার কথা ছিল। গত বছর থেকে আমরা অপেক্ষা করছি। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। কবে যে আবার কাজ শুরু করতে পারব। এরই মধ্যে “পাতাল পানি” নামের এক ভৌতিক-হাসির সিরিজের কাজ শেষ করেছি। কিন্তু করোনার কারণে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ বন্ধ আছে।’
করোনাকালে নানা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছেন জারীন। তারই মধ্যে নিজেকে ইতিবাচক রাখার চেষ্টা করেছেন এই বলিউড নায়িকা। এ প্রসঙ্গে জারীন বলেন, ‘আমি খুবই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। লকডাউনের মধ্যে আমার নানা মারা গেছেন। মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। তারই মধ্যে নিজেকে পজিটিভ রাখার চেষ্টা করছি। আমরা প্রত্যেকে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই নিজেদের নানা সমস্যায় জর্জরিত। অবসাদ ঘিরে ধরছে প্রায় সবাইকে। তাই এই সময়ে সবাই একে অপরের পাশে থাকার চেষ্টা করুন। আর ছোট ছোট জিনিসের মধ্যে আনন্দ খোঁজার প্রয়াস চালান।’