What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সুন্দর বনের চির সুন্দরেরা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Pwfh7Si.jpg


পাখির কলতানে যখন সকাল হলো, কুয়াশা তখনো পুরোপুরি কাটেনি। তার ভেতরই শুরু হলো জল বাওয়া। ঘণ্টা দেড়েক চলার পর পাতলা হতে হতে ফের ভারী হয়ে উঠল কুয়াশা। খানিক বিরতি দিয়ে ফের এগোতে থাকল জাহাজ। পাথারঘাটার বিপরীতে সুপতি খালে জাহাজ যখন ঢুকল, তখন পৌনে দশটা বেজে গেছে। ঘণ্টা চারেকের পথে এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৪ ঘণ্টা সময়।

ফের নোঙর ফেলল জাহাজটা। পেছনে বেঁধে রাখা স্পিডবোটের দড়ি খোলা হলো। নদী ছেড়ে খাল ধরে বনের ভেতরে ছুটল সুপতি ফরেস্ট অফিসের দিকে।

শরণখোলা রেঞ্জ অফিসে গভীর বনে ঢোকার অনুমতি পেতে দেরি হলো না। স্পিড বোট ফিরে এল দুজন উর্দি পরা গার্ড নিয়ে।

OF1wcx7.jpg


সুপতির আকাশে গাঙচিল।

জাহাজের গায়ে এসে ভিড়ল মজিবর শিকদারের ইঞ্জিন নৌকা। খুলনা থেকে একাই এই নৌকা ভাসিয়ে গত সন্ধ্যায়ই সুপতি খালে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ডাব, ভেটকি মাছসহ আরও সব প্রয়োজনীয় সাপ্লাই।

টানা ১৫ ঘণ্টা নৌকা ভাসিয়ে এসেছেন মজিবর। তারপর সারা রাত নৌকাতেই কেটেছে তার। একা একা। বড় একটা পলিথিনের নিচে লেপটা এখনো বিছিয়ে রাখা।

সাপ্লাই তুলে শুরু হলো সুপতি খাল বেয়ে দক্ষিণ যাত্রা। কোত্থেকে একটা গাঙচিল উড়ে এল। ডানা দুটো সোনালি। বুকের নিচটা সাদা। তার মানে, জীবনানন্দ দাশের সেই সোনালি ডানারই চিল এটা। ঝুলে রইল চোখের সামনে। জাহাজ থেকে বড়জোর হাত পনেরো দূরে। একটু ডানা ঝাপটে ভারসাম্য ঠিক করে। পরক্ষণে টাইটানিক স্টাইলে ডানা ছড়িয়ে কিছুক্ষণ ঝুলে থাকে শূন্যে। ফের ডানা ঝাপটে ঠিক করে নেয় ভারসাম্য।

জাহাজের সঙ্গে যেমন, তেমনি পানির স্তরের সঙ্গেও দূরত্ব একই রেখে উড়তে থাকে দলছুট গাঙচিলটা। রোটরের ঘূর্ণিতে জাহাজের পেছনে যে উত্তাল তরঙ্গ, তাতেই নজর নিবদ্ধ চিলের। অলস ওড়াটা তার শিকারের প্রস্তুতি। পানিতে ছোঁ মারার গতিটা ক্ষিপ্র। তবে খুবই হিসাব কষে মাপা ড্রাইভ। যেন আলতো ঠোঁটে পানিতে চকিত চুমু খেয়ে আগের জায়গায় ফিরে আগের মতোই উড়ছে।

অনেক সময় ধরে পেছন পেছন ঝুলে রইল চিলটা। ছবি তোলার সময়ও দিল। তারপর ঘুরে উড়ে গেলো সুপতি খালের উজানে। একটু পর আর একটা ছোট চিল এল বটে, কিন্তু বেশিক্ষণ থাকল না।

খালের পানি ঘোলা। দুপাড়ে পানির কিনারা ধরে গোলপাতার ঝোপ। প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে। গোলের লম্বা পাতা খড়ের মতো ঘর ছাওয়ার অন্যতম উপাদান। তাই গরিবের টিন বলা হয় এগুলোকে। কাঁচা গোল ফল খাওয়া যায় তাল শাঁসের মতো। কিন্তু পেকে গেলেই খাওয়ার অযোগ্য। গোলপাতার ডাল কাটার মৌসুম এখন। নির্ধারিত করের বিনিময়ে পুরো মৌসুমের ডাল-পাতা কাটার অনুমতি নিয়ে এসেছেন মাঝিরা। পাড়ে নৌকা ভিড়িয়ে গোলগাছ কাটতেই ব্যস্ত তাঁরা।

ওগুলোর পেছনে সুন্দরী, গরান, গেওয়ার ঘন বন। কোথাও কোথাও সরু নালার মতো খাঁড়ি সেঁধিয়ে গেছে বনের ভেতরে।

বনের মাথায় আর খালের ওপর ঝুলে থাকা কুয়াশা আরও ফিকে হতে শুরু করল। চোখের সামনে এবার অনেক দূর পর্যন্ত দৃষ্টি চলে। দুপাশে ক্রমশ দূরে সরতে থাকল তীর। পাড়ের পলিতে একটা সাদা বক। এক ঠ্যাংয়ে ঠায় বসে শিকারের আশায়। লম্বা ঠ্যাংয়ের মাপা পদক্ষেপে পজিশন পাল্টে নিল। জাহাজের ইঞ্জিনের শব্দে মনোযোগে কোনো ব্যাঘাতই ঘটল না তার।

একটু সামনে দুটো চিত্রা হরিণ। পানি নেমে বেরিয়ে পড়া চকচকে পলিতে খাবার খুঁজছে। ইঞ্জিনের শব্দে মুখ তুলে জাহাজটাকে দেখল একনজর। পরক্ষণেই মুখ নামিয়ে নিজের কাজে মন দিল।

3Xjh6Lw.jpg


পলি জমা পাড়ে রোদ পোহাচ্ছে কুমির।

এরপর বেশ কিছু সময় কোথাও কোনো নড়াচড়া নেই। জাহাজের মৃদু গুঞ্জন ছাড়া আর কোনো শব্দও নেই। হঠাৎ একটা কুমির দেখা গেল পাড়ে। নিশ্চল পড়ে থেকে রোদ পোহাচ্ছে। নদী থেকে ভারী শরীর টেনে পাড়ে তোলার দাগ স্পষ্ট ফুটে আছে নরম পলিতে।

ভালো করে দেখানোর জন্য পাড়ের কাছে এগিয়ে গেল জাহাজ। আকারে বিশাল। পিঠ আর ঘাড়ে কাঁটার সারি। মাথার ওপরে ছোট ছোট দুই চোখ। ক্রমশ সরু চোয়াল। শরীর আর মাথার গড়নে বয়সের ছাপ। কুমিরটা বুঝি একপলকের জন্য চোখ মেলল কেবল। কিন্তু পাত্তা দিল না। ভারী শরীরের কোথাও আর কোনো নড়াচড়া নেই। যেন কিছুতেই আয়েশ হারাতে রাজি নয় সে।

শীতকালে এভাবেই নদী বা খালের পাড়ে উঠে রোদ পোহায় এরা। ভেজা কাদা মাটিতে নির্জীবের মতো পড়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তবে অধিকাংশ সময় কাটে পানিতে। ডাঙ্গার চেয়ে জলেই অধিক ক্ষিপ্র মাংসাশী কুমির।

একটা পর আর একটা কুমির চোখে পড়ল। তারপর আর একটা। প্রথমটার চেয়ে আকারে ছোট। ঘুমও মনে হয় খুব গভীর ছিল না। জাহাজের শব্দ পেতেই ধীর লয়ে নেমে গেল পানিতে।

ঘণ্টা দুআড়াইয়ে সাগরে পড়ল জাহাজ। অদূরে কচিখালী জেটি। পরিত্যক্ত। কাছেই দুটি বন্য শূকর। পলিতে পা ডুবিয়ে খালে মুখ নামিয়ে পানি খাচ্ছে। গাট্টাগোট্টা কালো শরীরে বেজায় শক্তি ওদের। প্রায়শই বাঘের সঙ্গে লড়ে। কিন্তু শেষ তক পরাজিত হয়ে বাঘের পেটেই যায়।

জাহাজের দিকে মুখ তুলেও চাইল না শূকর দুটো। আরও সামনে এগিয়ে নোঙর ফেলল জাহাজ।
 
সুন্দরবনে একবার গিয়েছিলাম, আবার যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা।
 
সুন্দরবন এ এডভেঞ্চার আসলেই খুব রোমাঞ্চকর
 

Users who are viewing this thread

Back
Top