devilsdong
Member
ইভ্যালি
ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, শুধু গ্রাহকদের কাছে তাদের দেনার পরিমাণ ৩১১ কোটি টাকা। আর মোট গ্রাহকের সংখ্যা ২ লাখ ৭ হাজার ৭৪১। এ হিসাব গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত। তিন দফায় তথ্য দেওয়ার দ্বিতীয় দফায় গ্রাহকদের কাছে দেনার পরিমাণ ও গ্রাহকসংখ্যা জানানোর শেষ সময় ছিল আজ।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ আজ রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব তিন দফায় দিতে বলা হয়েছিল। আজ একটি জবাব এসেছে।
প্রথম দফায় সম্পদ ও দায়ের পরিমাণের তথ্য ইভ্যালি ১৯ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল। আর তৃতীয় দফায় কোম্পানিটিকে ‘মার্চেন্টদের কাছে দেনার পরিমাণ, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দায় পরিশোধের সময়বদ্ধ পরিকল্পনা’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জানাতে হবে আগামী ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
এক পৃষ্ঠার জবাবে আজ ইভ্যালি জানিয়েছে, একজন গ্রাহক এক বা একাধিক ক্রয়াদেশ (অর্ডার) দিয়ে থাকেন। গ্রাহকদের অধিকাংশই ইভ্যালির মোট কার্যকাল দুই বছর ছয় মাসে বিভিন্ন ক্রয়াদেশ দিয়েছেন এবং সফলভাবে পণ্য সরবরাহও পেয়েছেন।
ইভ্যালি বলেছে, সরবরাহ কার্যক্রমে ইভ্যালি নিজস্ব গুদাম থেকে বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষ বা সরবরাহ কোম্পানির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। তবে মোট সরবরাহের সামান্যই, অর্থাৎ ১২ থেকে ১৫ শতাংশ এভাবে সরবরাহ করা হয়। ক্রয়াদেশ করা বাকি পণ্যের সিংহ ভাগ মূলত বিক্রেতা বা সরবরাহকারী তাদের নিজ দায়িত্বে সরবরাহ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর ওপর তারা নির্ভরশীল। পরে ওই সরবরাহ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভিন্ন সরবরাহ কোম্পানি পাঠালে তা ইভ্যালির সিস্টেমে সরবরাহ দেখানো হয়।
ইভ্যালি আরও জানিয়েছে, সরবরাহের এই নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের (সরবরাহকারী ও সরবরাহকারী কোম্পানি) ওপর নির্ভরতা থাকে। এসব ক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো কারণে পণ্য না পেলে তাঁরা যদি সরাসরি নির্দিষ্ট বা সহনশীল সময়ের মধ্যে ইভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগ না করেন, ইভ্যালি তখন সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নেন।
এ পর্যন্ত ৭০ লাখের বেশি ক্রয়াদেশের পণ্য সফলতার সঙ্গে সরবরাহ হয়েছে এবং ভোক্তাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক বজায় আছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে ইভ্যালি। বলেছে, ‘কিছুসংখ্যক গ্রাহক পণ্য পাননি, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে পর্যাপ্ত সময় ও অনুকূল পরিবেশ পেলে ছয় মাসের মধ্যে ওই সব ক্রয়াদেশসহ সব ক্রয়াদেশের বিপরীতে পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হব। এ পরিবেশ তৈরিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অগ্রণী ভূমিকার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এক মাস আগে ইভ্যালি একবার তিন মাস, একবার চার মাসে সব ক্রয়াদেশের পণ্য সরবরাহ করবে বলে গণমাধ্যমে দেখা গেছে। এখন বলা হচ্ছে ছয় মাস। জবাবে অন্যের ওপর দায় চাপানোর একটা চেষ্টাও দেখা গেছে ইভ্যালির।
যোগাযোগ করলে আজ ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
সম্পদ ও দায়
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত সপ্তাহে দাখিল করা সম্পদ ও দায়ের হিসাব দিয়ে ইভ্যালি জানিয়েছিল, তাদের মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল কোম্পানিকে দিয়েছেন। বাকি ৫৪৩ কোটি টাকাই কোম্পানিটির চলতি দায়।ইভ্যালির হিসাব অনুযায়ী, দায়ের বিপরীতে এর চলতি সম্পদ রয়েছে ৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর সম্পত্তি, স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি মিলিয়ে রয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। মোট ১০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার এ দুটির যোগফলকে দেখানো হচ্ছে স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে। মোট দায় ৫৪৩ কোটি টাকা থেকে এই অঙ্ক বাদ দিলে বাকি থাকে ৪৩৮ কোটি টাকা, যাকে ইভ্যালি বলছে তার অস্থাবর সম্পত্তি। বিবরণী মেলাতে ইভ্যালি দেখিয়েছে অস্থাবর সম্পত্তি ৪৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ৪২৩ কোটি টাকা হচ্ছে ইভ্যালির ব্র্যান্ড মূল্য, আর ১৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা হচ্ছে অদৃশ্যমান সম্পত্তি। কোম্পানিটি নিজের ব্র্যান্ড মূল্য নিজেই নির্ধারণ করেছে।