(জানকী নাথ বসুর কনিষ্ঠ সন্তান সুভাষ চন্দ্র বসু,কটকে জন্মগ্রহণ করেন, ভারতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনের অন্যতম পুরোহিত "নেতাজী "--তাঁর জীবন আদর্শ থেকে নেওয়া তাঁরই লেখার কিছু অংশ স্মৃতি হিসাবে উল্লেখ করা হল।) ==========
যে আদর্শ আমাদের
সমাজে গত একশো বীরের ধরিয়া আত্মবিকাশের চেষ্টা করিতেছে,আমরা তার পরিচয় সব সময় না পাইতে পারি।যে চিন্তাশীল, যার অন্তদৃষ্টি আছে,শুধু সে ব্যাক্তি বাহ্য ঘটনা--- পরস্পরের অন্তরালে ফল্গুনদীরূপা এই আদর্শের ধারণাকে ধরিয়ে পারে।এই আদর্শ আমাদের যুগধর্ম--- THE idea of the age; ইহার উপলব্ধি হইলে মানুষ বুঝিতে পারে তার পথ কী, তার পথ প্রদর্শক কে?--- প্রত্যেক ব্যাক্তির বা জাতির একটা ধর্ম বা আদর্শ ( idea)আছে ।সে idea বা আদর্শ কে অবলম্বন বা আশ্রয় করিয়া সে গড়িয়া উঠে।সেই ideaকে সার্থক করাই তার জীবনের উদ্দেশ্য এবং সেই idea বা আদর্শ কে বাদ দিলে তার জীবন অর্থহীন ও নিষ্প্রয়োজন হইয়া পড়ে।দেশ ও কালের গণ্ডি মধ্যে আদর্শের ক্রমবিকাশ ও অভিব্যক্তি এক দিনে বা এক বৎসরে হয় না।ব্যাক্তির জীবনে সাধনা যেরূপ বহুবৎসর ব্যাপি হইয়া থাকে,জাতীয় জীবনেও সেইরূপ সাধনা দ্বারা পুরুষানুক্রমে চলিয়া আসে।তাই মনীষিরা বলিয়া থাকেন--- আদর্শ একটা প্রাণহীন, গতিহীন বস্তু নয়। তার বেগ আছে,গতি আছে,প্রাণসন্চারিনী শক্তি আছে।
যে আদর্শ আমাদের সমাজে গত এক বৎসর ধরিয়া আত্মবিকাশের চেষ্টা করিতেছে, আমরা তার পরিচয় সবসময় না পাইতে পারি।যে চিন্তাশীল, যার অন্তদৃষ্টি আছে,শুধু সে ব্যাক্তি বাহ্য ঘটনা--- পরস্পরার অন্তরালে অন্তঃসলিলা ফল্গুনদীর রূপা এই আদর্শের ধারাকে ধরিতে পারে।এই আদর্শ আমাদের যুগধর্ম ---- the idea of the age.; ইহার উপলব্ধি হইলে মানুষ বুঝিতে পারে তার পথ কি,তার পথ প্রদর্শক কে?
কিন্ত এই উপলব্ধি সব সময় হয় না বলিয়া আমরা প্রায়ই ভ্রান্ত পথের দিকে আকৃষ্ট হই এবং ভ্রান্ত গুরুর অনুবর্তী হইয়া থাকি।যদি জীবন গঠন করিতে চাও--- তবে ভ্রান্ত গুরু ও ভ্রান্ত পথের প্রভাব হইতে আত্মরক্ষা করো এবং নিজে আত্মস্থ হইয়া জীবনের প্রকৃত আদর্শ চিনিয়া লও।পুর্বে যে আদর্শ বাংলার ছাত্র সমাজকে অনুপ্রাণিত করিত,তাহা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ। সে আদর্শের প্রভাবে তরুন বাঙালী ষড়রিপু জয় করিবার,স্বার্থপরতা ও সকল প্রকার মলিনতা হইতে মুক্ত হইয়া আধ্যাত্মিক শক্তির বলে শুদ্ধ- বুদ্ধ জীবন লাভের জন্য বদ্ধপরিকর হইত।সমাজ ও জাতি গঠনের মূল--- ব্যাক্তিত্ব বিকাশ। তাই স্বামী বিবেকানন্দ সর্বদা বলিতেন,' man making is my mission. " --- খাঁটি মানুষ তৈয়ারি করাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য। কিন্ত ব্যাক্তি বিকাশের দিকে এত জোর দিলেও স্বামী বিবেকানন্দ জাতির কথা একেবারে ভূলিয়া যান নাই।কর্মবিরতি সন্ন্যাসে অথবা পুরুষকারহীন অদৃষ্টবাদে তিনি বিশ্বাস করিতেন না।রামকৃষ্ণ পরমহংস নিজের জীবনের সাধনার ভিতর দিয়া সর্ব ধর্মের যে সমন্বয় করিতে পারিয়াছিলেন,তাহাই স্বামীজীর জীবনের মূল মন্ত্র ছিল এবং তাহাই ভবিষ্যতৎ ভারতের জাতীয়তার ভিত্তি।
বিভিন্ন জাতির মধ্যে যে বিদ্বেষ- বহ্নি এখনও প্রজ্জ্বলিত আছে,তাহা যদি নির্বাপিত করিতে হয়,তাহা হইলে দেশে দেশে যুব - আন্দোলনের খুব প্রসার হওয়া উচিত। বিভিন্ন জাতির মধ্যে যাহাতে যুদ্ধ- বিগ্রহ না হয় এবং পৃথিবীতে শান্তি যাহাতে স্থাপিত হয়,এই উদ্দেশ্য অনেক দেশের তরুণরা সংঘবদ্ধ হইতেছে।--- এমন অনেক যুদ্ধ হয় যাহা শুধু কুট চক্রান্তের ফল এবং তাহার দ্বারা কোনও জাতির প্রকৃত কল্যাণ হয় না।--- যদি কোনও দিন পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন হয়---- তবে বিশ্বের তরুন সমাজই তাহা স্থাপন করিবে।
আজ ভারতের এই হীন অবস্থা কেন? আছে তো সবই--- প্রকৃতি,সৌন্দর্য, শারিরীক বল,শিক্ষা, দীক্ষা,বীর্য,বিদ্যা- বুদ্ধি-- এর কোনওটির তো অভাব নাই; এসব উপাদান লইয়া আমরা এক নিখুঁত মূর্তি রচনা করিতে পারি,কিন্ত প্রান- প্রতিষ্ঠার আয়োজন কোথায? প্রাণ- প্রতিষ্ঠা হইবে সেইদিন --- যেদিন সমগ্র জাতির মধ্যে মুক্তিলাভের প্রবল আকাঙ্খা জাগরিত হইবে।কোথায সে পুরহিত যে মৃতসন্জীবনী সূধা আহরন করিয়া মুমূর্ষ্ জাতির দেহপিন্জরের মধ্যে প্রাণ- প্রতিষ্ঠা করিতে পারে? যে ব্যাক্তি মুক্তির আস্বাদ পাইয়া,মুক্ত হইবার জন্য এবং জাতিকে মুক্ত করিবার জন্য যে ব্যাক্তি পাগল হইয়াছে,সে ব্যাক্তি অপরকে পাগল করিতে পারে এবং সেই ব্যাক্তি জাতীয়- যজ্ঞের পুরোহিত হইবার যোগ্য। আমাদের এই যুব - আন্দোলন এইরূপ শত সহস্র পুরোহিত সৃষ্টি করূক। এই আমার জাতির কাছে কামনা।---- জয় হিন্দ্--- জয় ভারত মাতা কী জয়)।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে বিনম্র নিবেদন।
**প্রতিবেদক-সেন বিশ্বনাথ **
যে আদর্শ আমাদের
সমাজে গত একশো বীরের ধরিয়া আত্মবিকাশের চেষ্টা করিতেছে,আমরা তার পরিচয় সব সময় না পাইতে পারি।যে চিন্তাশীল, যার অন্তদৃষ্টি আছে,শুধু সে ব্যাক্তি বাহ্য ঘটনা--- পরস্পরের অন্তরালে ফল্গুনদীরূপা এই আদর্শের ধারণাকে ধরিয়ে পারে।এই আদর্শ আমাদের যুগধর্ম--- THE idea of the age; ইহার উপলব্ধি হইলে মানুষ বুঝিতে পারে তার পথ কী, তার পথ প্রদর্শক কে?--- প্রত্যেক ব্যাক্তির বা জাতির একটা ধর্ম বা আদর্শ ( idea)আছে ।সে idea বা আদর্শ কে অবলম্বন বা আশ্রয় করিয়া সে গড়িয়া উঠে।সেই ideaকে সার্থক করাই তার জীবনের উদ্দেশ্য এবং সেই idea বা আদর্শ কে বাদ দিলে তার জীবন অর্থহীন ও নিষ্প্রয়োজন হইয়া পড়ে।দেশ ও কালের গণ্ডি মধ্যে আদর্শের ক্রমবিকাশ ও অভিব্যক্তি এক দিনে বা এক বৎসরে হয় না।ব্যাক্তির জীবনে সাধনা যেরূপ বহুবৎসর ব্যাপি হইয়া থাকে,জাতীয় জীবনেও সেইরূপ সাধনা দ্বারা পুরুষানুক্রমে চলিয়া আসে।তাই মনীষিরা বলিয়া থাকেন--- আদর্শ একটা প্রাণহীন, গতিহীন বস্তু নয়। তার বেগ আছে,গতি আছে,প্রাণসন্চারিনী শক্তি আছে।
যে আদর্শ আমাদের সমাজে গত এক বৎসর ধরিয়া আত্মবিকাশের চেষ্টা করিতেছে, আমরা তার পরিচয় সবসময় না পাইতে পারি।যে চিন্তাশীল, যার অন্তদৃষ্টি আছে,শুধু সে ব্যাক্তি বাহ্য ঘটনা--- পরস্পরার অন্তরালে অন্তঃসলিলা ফল্গুনদীর রূপা এই আদর্শের ধারাকে ধরিতে পারে।এই আদর্শ আমাদের যুগধর্ম ---- the idea of the age.; ইহার উপলব্ধি হইলে মানুষ বুঝিতে পারে তার পথ কি,তার পথ প্রদর্শক কে?
কিন্ত এই উপলব্ধি সব সময় হয় না বলিয়া আমরা প্রায়ই ভ্রান্ত পথের দিকে আকৃষ্ট হই এবং ভ্রান্ত গুরুর অনুবর্তী হইয়া থাকি।যদি জীবন গঠন করিতে চাও--- তবে ভ্রান্ত গুরু ও ভ্রান্ত পথের প্রভাব হইতে আত্মরক্ষা করো এবং নিজে আত্মস্থ হইয়া জীবনের প্রকৃত আদর্শ চিনিয়া লও।পুর্বে যে আদর্শ বাংলার ছাত্র সমাজকে অনুপ্রাণিত করিত,তাহা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ। সে আদর্শের প্রভাবে তরুন বাঙালী ষড়রিপু জয় করিবার,স্বার্থপরতা ও সকল প্রকার মলিনতা হইতে মুক্ত হইয়া আধ্যাত্মিক শক্তির বলে শুদ্ধ- বুদ্ধ জীবন লাভের জন্য বদ্ধপরিকর হইত।সমাজ ও জাতি গঠনের মূল--- ব্যাক্তিত্ব বিকাশ। তাই স্বামী বিবেকানন্দ সর্বদা বলিতেন,' man making is my mission. " --- খাঁটি মানুষ তৈয়ারি করাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য। কিন্ত ব্যাক্তি বিকাশের দিকে এত জোর দিলেও স্বামী বিবেকানন্দ জাতির কথা একেবারে ভূলিয়া যান নাই।কর্মবিরতি সন্ন্যাসে অথবা পুরুষকারহীন অদৃষ্টবাদে তিনি বিশ্বাস করিতেন না।রামকৃষ্ণ পরমহংস নিজের জীবনের সাধনার ভিতর দিয়া সর্ব ধর্মের যে সমন্বয় করিতে পারিয়াছিলেন,তাহাই স্বামীজীর জীবনের মূল মন্ত্র ছিল এবং তাহাই ভবিষ্যতৎ ভারতের জাতীয়তার ভিত্তি।
বিভিন্ন জাতির মধ্যে যে বিদ্বেষ- বহ্নি এখনও প্রজ্জ্বলিত আছে,তাহা যদি নির্বাপিত করিতে হয়,তাহা হইলে দেশে দেশে যুব - আন্দোলনের খুব প্রসার হওয়া উচিত। বিভিন্ন জাতির মধ্যে যাহাতে যুদ্ধ- বিগ্রহ না হয় এবং পৃথিবীতে শান্তি যাহাতে স্থাপিত হয়,এই উদ্দেশ্য অনেক দেশের তরুণরা সংঘবদ্ধ হইতেছে।--- এমন অনেক যুদ্ধ হয় যাহা শুধু কুট চক্রান্তের ফল এবং তাহার দ্বারা কোনও জাতির প্রকৃত কল্যাণ হয় না।--- যদি কোনও দিন পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন হয়---- তবে বিশ্বের তরুন সমাজই তাহা স্থাপন করিবে।
আজ ভারতের এই হীন অবস্থা কেন? আছে তো সবই--- প্রকৃতি,সৌন্দর্য, শারিরীক বল,শিক্ষা, দীক্ষা,বীর্য,বিদ্যা- বুদ্ধি-- এর কোনওটির তো অভাব নাই; এসব উপাদান লইয়া আমরা এক নিখুঁত মূর্তি রচনা করিতে পারি,কিন্ত প্রান- প্রতিষ্ঠার আয়োজন কোথায? প্রাণ- প্রতিষ্ঠা হইবে সেইদিন --- যেদিন সমগ্র জাতির মধ্যে মুক্তিলাভের প্রবল আকাঙ্খা জাগরিত হইবে।কোথায সে পুরহিত যে মৃতসন্জীবনী সূধা আহরন করিয়া মুমূর্ষ্ জাতির দেহপিন্জরের মধ্যে প্রাণ- প্রতিষ্ঠা করিতে পারে? যে ব্যাক্তি মুক্তির আস্বাদ পাইয়া,মুক্ত হইবার জন্য এবং জাতিকে মুক্ত করিবার জন্য যে ব্যাক্তি পাগল হইয়াছে,সে ব্যাক্তি অপরকে পাগল করিতে পারে এবং সেই ব্যাক্তি জাতীয়- যজ্ঞের পুরোহিত হইবার যোগ্য। আমাদের এই যুব - আন্দোলন এইরূপ শত সহস্র পুরোহিত সৃষ্টি করূক। এই আমার জাতির কাছে কামনা।---- জয় হিন্দ্--- জয় ভারত মাতা কী জয়)।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে বিনম্র নিবেদন।
**প্রতিবেদক-সেন বিশ্বনাথ **