শুভ-অশুভ
সেদিন রাজার মেজাজ খুব খারাপ ছিলো। দরবারে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রজাদের সাথে মত পার্থক্য দেখা দেয়াতে এমন অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। মন ভালো করার উপায় হিসাবে রাজা শিকারে যাবার মনোঃস্থির করলেন। সিপাহসালার আর উজিরকে জানিয়ে দিলেন, বৈকালিক শিকারের জন্য যেনো সব আয়োজন ঠিক করে রাখা হয়। মধ্যাহ্ন ভোজের পর পরই রাজা শিকারে বেরিয়ে পড়বেন। কথা মতো সৈন্য সামন্ত সব তৈরীই ছিলো। কিন্তু রাজা শিকারের উদ্দেশ্যে বেরোতেই সামনে নাসিরিদ্দীন হোজ্জাকে দেখতে পেলেন। "শিকারে যাবার পথে হোজ্জাকে দেখলে আমার শিকার ভাগ্য খারাপ হয়ে যায়। হোজ্জা যেনো আমার দিকে চোখ তুলে না তাকায়। আর তাকে চাবুক পেটা করে আমার রাস্তা থেকে হঠাও..." রাজা খুব রাগত স্বরেই সিপাহসালারকে কথা ক'টি বললেন।
রাজার আদেশ বলে কথা। সিপাহসালার সাথে সাথেই সৈন্যদের হুকুম দিলেন, হোজ্জাকে চাবুকপেটা করে যেনো রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। উৎসুক সৈন্যরা কাজে নেমে পড়লো হুকুম পাবার সাথে সাথেই। চাবুক মেরে হোজ্জাকে রাস্তা থেকে তাড়িয়ে দিলো তারা। রাজা বীর দর্পে শিকারের উদ্দেশ্যে ছুটে চললেন।
শিকার খুব ভালো হয়েছে। রাজা বেজায় খুশী। অনেকদিন পর ভালো শিকার করাতে সকালে ঘটে যাওয়া দরবারের সব কথা তিনি ভুলে গেলেন। সেই সাথে হোজ্জার সাথে খারাপ আচরণের কথাটিও মনে পড়ে গেলো। ব্যাপারটি নিয়ে শুরুতে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও কিছুক্ষন পরই হোজ্জার জন্য অনুশোচনা হতে পাগলো। তখনি রাজা পেয়াদা দিয়ে হোজ্জাকে ডেকে আনলেন।
হোজ্জা রাজ প্রাসাদে আসার পর রাজা তাকে বললেন, "আমি সত্যিই দুঃখিত, হোজ্জা। ভেবেছিলাম- তুমি অশুভ। আসলে তুমি তা নও। শিকারে যাবার আগে তোমাকে দেখার পর আমি আজ ভালো শিকার করেছি।"
রাজার কথা শুনে হোজ্জা বললো। " আপনি আমাকে দেখার পর ভালো শিকার করছেন, আর আমি আপনাকে দেখার পর চাবুক পেটা খেয়েছি। কে যে কার শুভ-অশুভ বুঝলাম না !