What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

স্তন্যদায়ী মায়েদের জ্ঞাতার্থে (1 Viewer)

Nirjonmela

Administrator
Staff member
Administrator
Joined
Mar 1, 2018
Threads
2,764
Messages
23,552
Credits
905,869
Pistol
Crown
Thread Title Style (One)
Profile Music
2efyWyn.gif


প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানব শিশু অপেক্ষাকৃত অসহায় অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। পরিবার পরিজন বিশেষ করে মায়ের পরিচর্যায় এই শিশুটি পরবর্তীতে বেড়ে ওঠে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রূপে।

এই বেড়ে ওঠার পেছনে মায়ের দুধের অবদান অপরিসীম। এটি এমনই এক সুষম খাদ্য যা ১ম ৬ মাস খাওয়ালে সে সময়ে অন্য কোনো খাবার, পানীয়, মধু, চালের গুঁড়ো, সুজি, চিনির পানি, এমন কি সাধারণ পানিসহ কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই।

মাতৃস্তনে ১ম যে দুধ আসে তার নাম শাল দুধ। এটি হালকা হলুদ বর্ণের, আঠালো, পরিমাণে কম। এটি শিশুর প্রথম খাবার এবং প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে। এতে প্রচুর প্রোটিন ও ভিটামিন থাকে। পরিমাণে কম হলেও এতে আছে এৎড়ঃিয ঋধপঃড়ৎ যা শরীরকে সুগঠিত করে। আছে এমন সব উপাদান যা রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। ফলে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কান পাকা, মেনিনজাইটিস, এলার্জি বা এক্সিমা কম হয় বা হলেও তাড়াতাড়ি আরোগ্য লাভ করে।

শাল দুধ অনেকটা জোলাপের মতো কাজ করে পেট পরিষ্কার করে ফলে শিশুর জন্ডিস কম হয়। ভিটামিন এ থাকার কারণে অন্ধত্ব দূর হয়। শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়িয়ে দিয়ে হাড়ের গঠন মজবুত করে। মুখ মন্ডলের হাড় ও মাংসপেশি সুগঠিত হয়। এ ছাড়া শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে শিশুর ওছ বা বুদ্ধি ধার ১০ মাত্রা বৃদ্ধি করে।

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যদি বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ দেয়া হয় তবে গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যায় এবং প্রসব পরবর্তী রক্তপাত কম হয়। ফলে মায়ের রক্ত স্বল্পতা তৈরি হয় না এবং জরায়ু খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। প্রসবের পরবর্তী আধঘণ্টার মধ্যে যারা শিশুকে বুকের দুধ দেন তাদের দুধ তৈরি ও দুধ খাওয়াতে পরবর্তীতে অসুবিধা কম হয় এবং তারা অনেক দিন পর্যন্ত বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারেন।

১ম ৬ মাস পর্যন্ত মা যদি শিশুকে রাতদিন শুধু বুকের দুধ খাওয়ান তবে তা শতকরা ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে এ শিশুরা যদি বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য কোনো কিছু খায় বা ৬ মাসের আগে মাসিক ফিরে আসে বা বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাসের বেশি হয় তবে তা কার্যকর নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে কপারটি, মিনিপিল, ইনজেকশন, কনডম বা ক্ষেত্র বিশেষে স্থায়ী বন্ধাকরণ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মা বেশিরভাগ সময় শিশুর সঙ্গে কাটায়। ফলে মা ও শিশুর মাঝে ১টি নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। অন্যথায় শিশুর সঙ্গে মায়ের ১টা দূরত্ব তৈরি হয় যা কারোই কাম্য নয়।

মায়ের বুকের দুধ এবং কৌটার দুধের (বিকল্প দুধ) তুলনামূলক অবস্থান :

বিকল্প দুধে সবসময় রোগজীবাণু বহন করার ভয় থাকে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণ ও বর্জনের সমন্বয়ে তৈরি হয় কৌটার দুধ। এতে অর্থ ব্যয় হয়। সময়ের অপচয় ঘটে। রাসায়নিক ও অজৈব পদার্থ থেকে যেতে পারে। এ ছাড়া বোতল বা নিপল পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত করাও বেশ কষ্টসাধ্য।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে জন্মের পর থেকে যারা শিশুদের বিকল্প দুধ পান করিয়েছেন মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুর তুলনায় তাদের ডায়রিয়া ২৫ গুণ বেশি এবং শ্বসনতন্ত্রের ইনফেকশন এ মৃত্যর সম্ভাবনা ৪ গুণ বেশি।
গরুর দুধে আয়রন থাকলেও মাতৃদুগ্ধের মতো তা শোষণ হয় না। মায়ের দুধের আয়রন শতকরা ৫০ ভাগ আর গরুর দুধের আয়রন শতকরা ১০ ভাগ কাজে লাগে।
গরুর দুধে ভিটামিন সি থাকে না। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে বলে শিশুর কোনো কোনো সময় খিঁচুনি তৈরি হতে পারে।
গুরুর দুধের অতিরিক্ত অমিষ থাকে যা শিশুর অপরিপক্ব কিডনি দিয়ে বের হয়ে যাওয়া কঠিন। এ ছাড়া হজমও কষ্টকর। গরুর দুধ, মধু, গ্লুকোজ দিলে হজম হতে বেশি সময় লাগে। অনেক সময় পেট ফেঁপে থাকে। শিশু দেরিতে খেতে চায়। পায়খানা শক্ত হয়, প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পায়।
গরুর দুধ বেশি খেলে প্রায়ই শরীরে পানি জমে ফলে শিশুটিকে মোটা সোটা দেখা যায়।
অন্য দিকে মায়ের বুকের দুধ এ সব ঝামেলামুক্ত এবং নিরাপদ। তাছাড়া অর্র্র্র্র্থ সাশ্রয়ের কথা যদি বিবেচনা করি তবে স্তন্যদায়ী মায়ের বাড়তি খাবারের পেছনে যে খরচ হয় তা কৌটার দুধের খরচের তুলনায় অনেক কম।
তাছাড়া কৌটার দুধ তৈরিতে প্রয়োজন হয় জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানি, পাশাপাশি সঠিক নিয়মে তৈরি করাও জানতে হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

* প্রসবের ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা পর স্তনে প্রচুর দুধ তৈরি হয়। মাতৃ দুগ্ধ তৈরি কখনোই স্তনের গঠন বা আয়তনের ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে চৎড়ষধপঃরহ এবং ড়ীুঃড়পরহ নামক ২টি হরমোনের ওপর। এ ছাড়া মায়ের মানসিক অবস্থা এবং নিয়মিত বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো এ ক্ষেত্রে দায়ী।
* মাতৃস্তনের বোঁটা ও বোতলের বোঁটা বা চুষনি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির বলে শিশুরা বিভ্রান্ত হয়। বোতলের দুধ মুখে দিলেই টপটপ করে দুধ আসে। অথচ বুকের দুধ টানতে শিশুকে বেশি পরিশ্রম করতে হয় তখন আর মায়ের দুধ খেতে চায় না।
* শিশুরা যতবার খেতে চায় ততবার এবং যতক্ষণ খেতে চায় ততক্ষণ খাওয়াতে হবে। মোটা মুটি দিনে-রাতে ৮ থেকে ১২ বার খেতে দিতে হবে।
* প্রসবের পর কিছু দিন দুধ খাওয়ানোর সময় জরায়ুতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, পানির পিপাসা লাগতে পারে, অন্য বুক দিয়ে দুধ ঝরতে থাকে- এর সবই স্বাভাবিক। দুধ খাওয়ানোর আগে শরবত বা পানি খেয়ে নেবেন।
* মায়ের বুকে শিশুর সংস্থাপন ও সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। মা শিশুকে কোলে নিয়ে নিশ্চিন্তে আরাম করে বসবেন। হেলান দিয়ে পিঠের পেছনে ১টি বালিশ নেবেন যেন কোমর বাঁকা না হয়। হাতের নিচে ১টি বালিশ নেবেন।
* শুয়ে খাওয়াতে শিশুকে পুরোপুরি মায়ের দিকে ঘুরিয়ে যথাসম্ভব বুকের কাছে টেনে নিতে হবে যেন শিশুর পেট মায়ের পেটে এবং শিশুর বুক মায়ের বুকে লেগে থাকে। শিশুর মাথা, ঘাড়, শরীর যেন ১ সরল রেখায় থাকে। ঘাড় বাঁকা অবস্থায় শিশু আরাম করে খেতে পারে না।
* সিজারিয়ান মা যেভাবে আরাম পান সেভাবে বসে বা শুয়ে খাওয়াবেন। প্রয়োজনে সেলাই এর জায়গার ওপর বালিশ দিয়ে বা বসার অবস্থায় হাঁটুর ভাঁজের নিচে বালিশ দিয়ে আরামদায়ক পোশাক পরে বসবেন।
* বুকের বোঁটা শিশুর ওপরের ঠোঁটে কয়েকবার লাগাবেন। তাতে শিশু বড় হা করবে। বোঁটার চারদিকের কালো অংশে দুধ জমা থাকে। শুধু বোঁটা মুখে দিলে পেট ভরবে না এবং মাও বোঁটায় ব্যথা পাবেন। তাই বোঁটার চার পাশের কালো অংশসহ মুখে দিতে হবে।
* ঘাড়ের নিচে হাত দিতে পারেন তবে মাথায় নয়। মনে রাখবেন শিশু দুধ টানে তারপর পান করে অতপর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার জন্য থামে। তাই অনেক মা শিশুটি কিছু সময় চুপ করে থাকলে মনে করেন পেট ভরে গেছে। তাই বুক ছাড়িয়ে নেন। এটি ঠিক নয়।
* জোর করে স্তন ছাড়াতে নেই যদি মাঝে উঠতে হয় তবে আঙুল ঠোঁটের পাশ দিয়ে ঢুকিয়ে দিলে শিশু ধীরে ধীরে ছেড়ে দেবে।
* শিশুর দুধ খাবার শব্দ অনেক সময় বাইরে থেকে শোনা যায়। দুধ খাওয়ানোর পর শিশু পরিতৃপ্ত থাকবে এবং কান্নাকাটি করবে না।
* তাড়াহুড়া করে খাওয়াতে চাইবেন না। এতে হরমোন কাজ করতে পারে না প্রয়োজনে বাটি চামচে খাওয়ানো যেতে পারে।

স্তন্যদায়ী মায়ের পুষ্টি :

বাংলাদেশি মহিলাদের প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২২০০ কিলোক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়। স্তন্যদায়ী মায়ের অতিরিক্ত প্রয়োজন হয় ৫০০ থেকে ৭০০ কিলোক্যালরি। প্রতিদিনের খাবার থেকে ৫০০ কিলোক্যালরি এবং বাকি ২০০ কিলোক্যালরি শরীরে জমানো চর্বি থেকে সরবরাহ হয়।

কিভাবে খাবারের মাধ্যমে এই ৫০০ কিলোক্যালরি পূরণ সম্ভব
অতিরিক্ত-১ মুঠো চালের ভাত ২৪০ কিলোক্যালরি
১/২ মুঠো ডাল ১২০ কিলোক্যালরি
১ মুঠো সবজি ১ চামচ তেল ৫০ কিলোক্যালরি
হলুদ ফলমুল ৯০ কিলোক্যালরি
মোট= ৫০০ কিলোক্যালরি

হলুদ ফলমুলের মধ্যে পাকা আম, গাজর, মিষ্টি কুমড়া উল্লেখযোগ্য। ভিটামিন এ আয়রন ব্যবহারে সহায়তা করে। আমলকী, বাতাবি লেবু, কামরাঙ্গা, পেয়ারা, ভিটামিন সি- আয়রন শোষিত হতে সাহায্য করে। ছোট মাছ, শাক সবজি, কচু শাক, মুলা, ডিম, দুধে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। সম্ভব হলে মাছ মংস ডিম দুধ খেতে হবে।
মায়ের অপুষ্টির কারণে বুকের দুধের পরিমাণ ও গুণগত মান কমে যায়। ১ম ৬ মাসে মা প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১০০০ সিসি দুধ তৈরি করেন। কিন্তু অপুষ্টিতে ভোগা মা ৫০০ সিসির বেশি দুধ তৈরি করতে পারেন না।

তখন শিশুর ওজন কমে যায়। শিশুর পুষ্টিরও বৃদ্ধি ব্যহত হয়।

অন্ধকুসংস্কার, পুষ্টি জ্ঞানের অভাব, দারিদ্র্য, পারিবারিক অসহযোগিতা, স্তন্য দায়ী মা নিজে না খেয়ে অন্যদের মাঝে খাবার বিতরণের সংস্কৃতি, অতিরিক্ত পরিশ্রমের সবই আমাদের বর্তমান সমাজ চিত্র। মায়েরা যেখানে কাজ করেন- তার কর্ম ক্ষেত্রটিও মাতৃবান্ধব নয়। শিশুকে খাওয়ানোর পরিবেশ তারা পায় না। এর পর আছে গুঁড়ো দুধের বাজার, প্রচার। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্নভাবে জনসাধারণ, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করে মাকে প্রলুব্ধ করে। মায়ের দুধের প্রচার অভিযানের ক্ষেত্রে এটি ও আরেকটি অন্তরায়।

জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণ এবং আইনের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান, স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, দাইসহ তৃণমূল পর্যায়ের যারা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত তাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জনসাধারণের মাঝে এ সব তথ্য পৌঁছে দিতে প্রচার মাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

আমাদের সবার সমবেত প্রচেষ্টায় আমাদের আগামী প্রজন্ম তৈরি হবে সুস্থ, সবল, উন্নত জাতি হিসেবে।

ডা. নওশিন শারমিন পুরবী
বিভাগীয় প্রধান গাইনী ও রেজিস্টার

আনোয়ার খান মর্ডাণ হাসপাতাল, ঢাকা
 
প্রত্যেক মায়ের জন্য দরকারি লেখা। সবার পড়া উচিত।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top