What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শ্রীনিবাস রামানুজনঃ একজন প্রতিভাধর ক্ষণজন্মা গণিতবিদ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
vZyuZOI.jpg


গণিতবিদের কথা এলে আমাদের মনে প্রথমেই আসে পিথাগোরাস, নিউটন, আর্কিমিডিস, ইউক্লিড, অয়লার, গাউস প্রমুখের নাম। অথচ আমাদের উপমহাদেশের অসামান্য এক গণিদবিদ রয়েছেন যার কথা আমরা অনেকেই জানিনা। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে জন্ম নেওয়া এই গণিতবিদের নাম শ্রীনিবাস রামানুজন। আধুনিক বীজগণিতের কর্ণধার এই ক্ষণজন্মা মনীষীর জীবন আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়।

রামানুজন জন্মেছিলেন ১৮৮৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশের ইরেভদ শহরের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। বাবা শ্রীনিবাস ইয়োঙ্গার ছিলেন সামান্য একজন দোকানদার এবং মা ইরোদ ছিলেন গৃহিণী। রামানুজনের পর তার মায়ের আরো তিন সন্তান জন্মেছিল কিন্তু তারা কেউই বেশিদিন বাঁচে নি। তাই মায়ের আদর-যত্ন একটু বেশিই পেতেন তিনি।

পাঁচ বছর বয়সে তাকে প্রথম বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। শুরু থেকেই পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করতে থাকেন তিনি। রামানুজনের মস্তিষ্ক ছিল তীক্ষ্ণ এবং সবকিছু সহজে মনে রাখতে পারতেন। সে সময়েই পাইয়ের মান বা যেকোন অংকের বর্গমূলের মান দশমিকের পর বহু ঘর পর্যন্ত অনায়াসে বলে দিতে পারতেন তিনি। সময় গড়ানোর সাথে সাথে রামানুজনের মেধার খবর আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

১৯০৩ সালে রামানুজনের এক বন্ধু তাকে জি এস কারের লেখা ‘সিনপসিস অব এলিমেন্টারি রেজাল্ট ইন পিওর এন্ড এপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স’ বইটি দেন। কোনো প্রকার সহায়ক সূত্র ছাড়াই রামানুজন এই বইয়ের বিভিন্ন গাণিতিক সূত্রগুলোর সত্যতা পরীক্ষা করেন। বইটিকে রামানুজনের ‘প্রতিভা জাগানিয়া গ্রন্থ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তিনি গবেষণা করতে থাকেন অয়লারের ধ্রুবক আর বার্নোলির সংখ্যা নিয়ে।

স্কুলে ভালো ফলাফল করায় কুম্বাকোনাম সরকারি কলেজে বৃত্তি পেয়ে পড়তে যান রামানুজন। কিন্তু গণিত নিয়ে এত বেশি মেতে ছিলেন যে অন্য বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন নি আর। যার ফলে অন্য সব বিষয়ে রামানুজনের ফলাফল ছিল খুবই বাজে। খারাপ ফলাফলের কারণে বৃত্তি বাতিল হয়ে যায় তার।

lKN9yNd.jpg


মাঝে ১৯০৯ সালে এপ্রিলে মায়ের পছন্দে দশ বছর বয়েসী এস জানকী আম্মালকে বিয়ে করেন ১৯ বছরের রামানুজন। মা ভেবেছিলেন বিয়ে দিলে ছেলে হয়তো সংসারি হবে। কিন্তু বিয়ে রামানুজনের মাথা থেকে গণিতের ভূত নামাতে পারে নি।

সে সময় ভারতের গণিত সমিতি ‘জার্নাল অব দ্য ইন্ডিয়ান ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি’ প্রকাশ করে। রামানুজন ভাবেন এরা হয়ত তার কাজের মূল্যায়ন করতে পারবে। ১৯১১ সালে রামানুজন সর্বপ্রথম তার প্রতিভা সমগ্র ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরেন। বার্নলির সংখ্যার বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাঁর প্রথম নিবন্ধ প্রকাশিত হয় সে জার্নালে। একই বছর ‘সাম প্রোপার্টিজ অব বার্নলিস নাম্বার্স’ নামে তার প্রথম দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। একই ধারাবাহিকতায় পরের বছরও তার দুটি প্রবন্ধ এবং গাণিতিক সমস্যার সমীকরণ প্রকাশিত হয়।

সে সময় কেবল টিউশনি করিয়েই চলত রামানুজনের টানাটানির জীবন। ১৯১২ সালে জীবন ধারণের জন্য মাদ্রাজ বন্দর ট্রাস্টের হিসাব রক্ষকের কাজও করেন কিছুদিন। অর্থের অভাব থাকলেও গণিতের প্রতি ভালোবাসা কখনো কমে নি। তাই হিসাব রক্ষকের কাজের পাশাপাশি গণিত নিয়ে কাজও সমানতালে চালিয়ে গেছেন।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি অর্জনে ব্যর্থ রামানুজন যখন কোনো বৃত্তি পাচ্ছিলেন না শেষমেষ ব্রিটিশ গণিতজ্ঞদের কাছে চিঠি লিখে নিজের প্রতিভার কথা জানান দেওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি । রামানুজনের এমন এক চিঠি গিয়ে পড়ে বিখ্যাত গণিতবিদ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জি এইচ হার্ডির কাছে। ১১ পাতার সে চিঠিতে রামানুজন তার আর্থিক দূরাবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি ১২০টি গাণিতিক হিসাব ও ফলাফল পাঠান।

ZJS4bfZ.jpg


অধ্যাপক জি এইচ হার্ডি

ঝানু গণিতবিদ হার্ডি রামানুজনের অসামান্য কাজ দেখেই বুঝে ফেলেন তার মেধার দৌড়। রামানুজনের সেই চিঠিতে হার্ডি দেখতে পান শতবর্ষ ধরে ইউরোপের গণিতবিদেরা যেসব সমস্যার সমাধান খুজছেন সেগুলোর বেশকিছুর সমাধান করে ফেলেছেন এই তরুণ। রামানুজনের চিঠি হার্ডি যান আরেক গণিতজ্ঞ লিটলউডের কাছে। দুজন মিলে সত্যতা যাচাই করে বুঝতে পারেন রামানুজনের কেরামতি।

১৯১৩ সালে হার্ডির চেষ্টায় কেমব্রিজে আমন্ত্রণ পান রামানুজন। তাকে ইংল্যান্ডে আনার প্রক্রিয়াটি মোটেও সহজ ছিল না। কারণ রামানুজন ছিল কলেজ ড্রপআউট। সেই সাথে তখনকার দিনে ব্রাহ্মণদের সাগরপাড়ি দিলে জাত যাবে এমন কুসংস্কার প্রচলিত ছিল ভারত সমাজে। যাইহোক শেষমেশ সে অবস্থা কাটিয়ে কেমব্রিজে যান তিনি। ১৯১৮ সালের ১৩ অক্টোবর প্রথম ভারতীয় হিসেবে ট্রিনিট্রি কলেজের ফেলোশিপ পান রামানুজন।

কেমব্রিজে আসার কিছুদিন পর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এ সময় গণিত নিয়ে তাঁর কাজে কিছুটা ভাটা পড়ে। ১৯১৭ সাল নাগাদ ব্রাহ্মণ নিরামিষ ভোজী রামানুজন খাবারের সমস্যায় ও আবহাওয়াজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকদের মতে ছোটবেলা থেকেই রামানুজনের শরীরে জন্ডিসের জীবাণু ছিল যা লন্ডনে আসার পর তার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। খারাপ শারীরিক অবস্থা নিয়েই তিনি কাজ করতে থাকেন। হাতেনাতে স্বীকৃতিও পেয়ে যান। ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি লন্ডন ম্যাথম্যাটিকাল সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৮ সালে তিনি অভিজাত বিজ্ঞানীদের নিয়ে গড়া “রয়াল সোসাইটির” সদস্য মনোনীত হন।

w8n9nSY.jpg


কেমব্রিজে রামানুজন

১৯১৯ সালের ১৩ মার্চ অসুস্থ শরীর নিয়ে মাদ্রাজে ফেরত আসেন রামানুজন। মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও গণিতকে আঁকড়ে রাখেন তিনি। চালিয়ে যান তার গবেষণা। সে সময়কার তার গবেষণা করে পাওয়া সূত্র ও ফলাফলগুলো নোটবুকে টুকে রাখতেন তিনি। মৃত্যুর পর পাওয়া গেছে এমন চারটি নোটবুক। সেসবের সহায়তা আজও নেন গণিতবিদেরা।

কতটা গণিত পাগল ছিলেন রামানুজন তার নমুনা দেওয়া যাক। ইংল্যান্ডে অসুস্থ থাকাকালীন একবার রামানুজনকে দেখতে গিয়েছিলেন হার্ডি। সে সময় তাঁকে রামানুজন ট্যাক্সির নম্বর জিজ্ঞেস করে। হার্ডি তাকে জানায় এটি একটি মামুলি সংখ্যা ‘১৭২৯’। রামানুজন তখন বলেন এটি মোটেও সাধারণ সংখ্যা না।

এটি হল সবচে ছোট সংখ্যা যাকে দুটি ধনাত্মক সংখ্যার ঘনকের যোগফল হিসেবে দুইভাবে প্রকাশ করা সম্ভব।

অর্থাৎ

১৭২৯= ১^৩ + ১২^৩ = ৯^৩ + ১০^৩

শত বছরেরও বেশি সময় পূর্বে ১৯১৪ সালে জামানুজন তার প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ‘পাই’ সংক্রান্ত কিছু সূত্র হিসেব কষে দেখান কোন ক্যালকুলেটর ছাড়াই। অবাক করা বিষয় হল বর্তমানের হিসাবের অনেক কাছাকাছি ছিল রামানুজনের সেই হিসাব।

এক সময় তিনি পাইয়ের অনন্তধারা উদ্ভাবন করেন। আরো নিখুঁতভাবে পাই এর মান বের করার কৌশল উদ্ভাবন করেন। মূলত সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে কাজ করলেও গাণিতিক বিশ্লেষণ, আবৃত ভগ্নাংশ ও অসীম ধারা নিয়েও প্রচুর কাজ করে গেছেন রামানুজন। হার্ডির সাথে একত্রে কাজ করেছেন উচ্চতর যৌগিক সংখ্যাসমূহের বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এছাড়া তার অবদান ছিল গণিতের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শাখা ফাংশনেও। গামা ফাংশন, মডুলার ফাংশন, রামানুজনের অবিচ্ছিন্ন ভগ্নাংশসমূহ, ডাইভারজেন্ট সিরিজ ও হাইপারজিওমেট্রি নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩৯০০ গাণিতিক সমীকরণ নিয়ে কাজ করেছেন গণিতের এই প্রবাদপুরুষ ।

xR8A2am.jpg


রামানুজনের জীবনী ভিত্তি করে বানানো চলচ্চিত্র ‘দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি’

১৯২০ সালের ২২ ডিসেম্বর মাত্র ৩২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান এই অসামান্য গণিতবিদ। প্রতিবছর ভারত সরকার দিনটিকে ‘জাতীয় গণিত দিবস’ হিসেবে পালন করেন।

রামানুজনের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘কালেক্টেড পেপার্স অব শ্রীনিবাস রামানুজন’। ১৯২৭ সালে যা প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তার ৩৭টি প্রবন্ধের সংকলন ছিল এটি। ১৯৯১ সালে জীবনী লেখক রবার্ট কানিগেল ‘দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি’ নামে রামানুজনের জীবনী নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালে বইয়ের নামেই পরিচালক ম্যাথিউ ব্রাউন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। রামানুজনকে নিয়ে আগ্রহী পাঠক সিনেমাটি দেখতে পারেন।
 
মুভিটা দেখা হয়নি। এখন দেখার ইচ্ছা বেড়ে গেল!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top