What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected স্রষ্টা কোথায় থাকেন! (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
102
Messages
12,128
Credits
112,288
Calculator
Calculator
Mosque
Calculator
LittleRed Car
LittleRed Car
স্রষ্টা কোথায় থাকেন!
লেখকঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আলী (ফেসবুক হতে সংগৃহীত)





স্রষ্টা ঠিক কোথায় থাকেন? মির্জা গালিব যখন আয়েশ করে সুরা পান করতেন তখন কি স্রষ্টা দেখতেন না?এই পৃথিবীর যতগুলো গণিকালয়ে নিষিদ্ধতার চর্চা হয় তার আশেপাশে কি স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই?পৃথিবীর সকল শোষকের পাশে কি স্রষ্টা অবস্থান করেন না?

কোথায় থাকেন স্রষ্টা?বোধয় আকাশে কোথাও? হতে পারে একটা গাছের ডালে,কোনো পাখির ডানায়,কিংবা মাটির গভীরে অথবা এই শহরের কোনো গলিতে স্রষ্টা অবস্থান করছেন।আমি খুব সম্ভবত প্রবলভাবে বিশ্বাস করতাম স্রষ্টা বোধয় উপাসনালয়ে থাকেন।কিন্তু যেদিন আমি দেখলাম, নিজের পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা এক লোক উপাসনালয় থেকে উপাসনা শেষে হাসিমুখে বেরিয়ে আসছে আমি সেদিন বুঝেছি ঐ লোকের জন্যে স্রষ্টা উপাসনালয়ে নেই।লোকটার ধারণা হয়েছে নিজের পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসে উপাসনালয়ে নিয়ম করে ঝুঁকে পড়লেই স্রষ্টাকে পাওয়া যাবে।আদতে স্রষ্টা কোথায় থাকেন? আমি স্রষ্টাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি এই নগরের প্রতিটা প্রান্তে।

কিছুদিন আগের ঘটনা,রাস্তার এক নেড়ি কুকুরের পা পুরোদমে থেঁতলে গেছে।যে গাড়িটা ঐ কুকুরটার পা থেঁতলে দিয়েছিলো সেই গাড়িটা কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে সাইড করে দাড়ালো।দরজা খুলে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলো ১৮/১৯ বছর বয়েসী একটা মেয়ে।কুকুরটার সামনে এসে যখন বসলো, কান্নার বেগ আরো বাড়িয়ে দিলো।ততক্ষণে কুকুরের পা থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে।ড্রাইভারকে ডেকে বললো, আপনি সাবধানে গাড়ি চালাবেন না?এটাও তো একটা প্রাণ,একটা জীব।তার কি বাঁচার অধিকার নেই? নাকি নেই বলে মনে করেন?
মেয়েটা কুকুরটাকে স্বযত্নে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির দিকে দৌড়াতে শুরু করলো।ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলো পশু হাসপাতালের দিকে গাড়ি চালাতে।সেদিন আমি স্রষ্টাকে খুঁজে পেলাম।খুঁজে পেলাম ঐ মেয়েটার হৃদয়ে।সে তো স্রষ্টারই সেবা করছে।স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন,
'বহুরুপে সম্মুখে তোমার,ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।'

একদিন জন্জালে ভরা পথ ধরে হেটে যাচ্ছিলাম গন্তব্যে।পাশ থেকে এক পাগল ধরনের লোক একটা দশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললো,যা আমার জন্যে কলা-রুটি কিনে নিয়ে আয়।আমি থতমত খেয়ে গেলাম এবং ভাবলাম একটা দৌড় দেই।পরক্ষণেই আমার মন বদলে গেলো।আমি চুপচাপ টাকাটা নিলাম এবং একটা কলা আর রুটি কিনে আনলাম।এসে দেখি সেই লোকটা হাওয়া হয়ে গেছে।ভাবলাম কলা-রুটি ফেলে দেবো কিনা।খাবার নষ্ট হবে বলে রেখে দিলাম আর পুনরায় হাটতে লাগলাম।কিছুদূর গিয়ে গন্তব্যের কাছাকাছি আসতেই এক বৃদ্ধা এসে মিনতি করলো, বাবা কিছু খাবার কিন্না দাও।অনেক বেলা ধইরা না খাওয়া।

আমার কাছে টাকা ছিলো না কিন্তু হাতে কলা-রুটি ছিলো।আমি সেগুলোই বৃদ্ধার হাতে দিলাম।বৃদ্ধা বললো,মাথাটা ঝুঁকাও বাবা।আমি মাথা ঝুঁকালাম আর তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।হৃদয়টা কেনো জানি শীতলতায় ভরে উঠলো।কিন্তু এই ক্রেডিট আমার নয়।একজন অভুক্ত মানুষের খাবার দ্বিতীয় আরেকজন মানুষকে দিয়ে দিলাম।মনে একটা প্রবল অপরাধবোধ জাগ্রত হল।আমি পকেটে টাকা নিয়ে পুনরায় পূর্বের স্থানের দিকে হাটা শুরু করলাম।হয়তো ঐ লোকটা কলা-রুটির অপেক্ষায় বসে আছে।

গিয়ে দেখি সত্যিই তিনি বসে আছেন।আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন।বললেন,আমার পাশে বস।আমি সাহস করে বসলাম তার পাশে।তিনি বললেন,টাকা এনেছিস খাবার কেনার জন্য?খানিকটা বিস্মিত হলাম।ভেবে নিলাম কাকতালীয় ভাবে হয়তো মিলেছে ওনার কথা।তাছাড়া পাগল লোক কত কিছুই না বলবে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললেন,কলা-রুটির দোকানে পুনরায় যাবি।এবার লোকটাকে আপাদমস্তক খেয়াল করবি।খেয়াল করবি ওর দোকানটাকেও।এসে আমাকে জানাবি।আমি যন্ত্রের মত লোকটার কথা শুনলাম।গিয়ে দেখলাম, সফেদ টুপি মাথায় দোকানী বসে আছে।চেহারায় মোটামুটি একটা পরিচ্ছন্ন ভাব।দোকানটাও বেশ বড় এবং নানান আইটেমে সমৃদ্ধ।বিক্রি বেশ ভালোই বলা চলে।

ফিরে এসে লোকটার সামনে দাড়ালাম।উনি বললেন খানিক আগে যে বৃদ্ধাকে খাবার দিয়েছিস,ওনি ঐ দোকানীর মা।মাস তিনেক আগে নিজের মাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কীভাবে জানলেন? প্রশ্নটা করলাম কারণ আমার মনে সংশয় ছিলো।একটা অপরিচিত লোক আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে হয়তোবা নিজের দরবেশত্ব জাহির করতে চাইছে।

তিনি মুচকি হাসলেন।বললেন,এই শহরের অনেক কিছুই আমি জানি।আমি এটাও জানি তুই পথে পথে স্রষ্টাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিস।কীভাবে জানি সেটা প্রকাশ করা এই মুহূর্তে জরুরি নয়।তোকে ছোট্ট একটা উদাহারণ দেখালাম মাত্র।একটা বৃহৎ খাবারের দোকানের যে মালিক তার বৃদ্ধ মা তোর কাছে খাবার ভিক্ষে করেছে।এই শহরের এরকম একটা নোংরা সত্য আমি জানতাম, আজ তোকেও জানালাম।

তো এটার সাথে স্রষ্টাকে খুঁজে পাবার কি সম্পর্ক?দোকানীর মত হাজার হাজার মানুষ তো এই শহরে ভাসমান।ওদের প্রত্যেকের চরিত্রেই ওরকম নোংরা দাগ আছে।

লোকটি বললেন,চমৎকার বুঝেছিস।প্রত্যেকের চরিত্রে দাগ থাকার পরেও তারা মনে করে স্রষ্টা তাদের সাথেই আছেন।ভুলের উপর থেকেও তারা নিজেদের শোধরানোর নূন্যতম চেষ্টা করে না।যেন তারা চাইলেই স্রষ্টাকে পেয়ে যাবে।তারা চাইলেই স্রষ্টা তাদের আশা পূর্ণ করে দেবেন।লোকের পয়সা মেরে খাওয়া ঠিকাদার, রোগীর রোগকে জিম্মি করে অবৈধ উপার্জন করা ডাক্তার কিংবা নার্স, মসজিদ,মন্দির,গির্জায় প্রার্থনারত অসংখ্য ধর্ম ব্যবসায়ী,স্বেচ্ছায় পতিতাবৃত্তি করা পতিতা,অন্যায়কে বুকে লালন করা শাসক প্রত্যেকেই মনে করে স্রষ্টা তাদের একান্ত বাধ্যগত।তারা চাইলেই স্রষ্টা মুহূর্তেই তাদের দিকে ঝুঁকে পড়বেন।

অথচ প্রত্যেকটা গল্প হতে পারতো ভিন্নরকম।প্রত্যেকটা গল্পই হতে পারতো অনন্য সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।আপন আপন উপাসনালয়ে প্রার্থনারত প্রত্যেকটা মানুষ দুহাত তুলে স্রষ্টাকে খুঁজে পেতে পেতে চাইতে পারতো পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ভালো হোক।কিন্তু তুই কখনোই বলতে পারবি না উপাসনালয়ে উপাসনা করা শতভাগ মানুষ অহিংস।আর অহিংস না হলে স্রষ্টাকে কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না।আমার মনে হয় স্রষ্টা থাকেন মানুষের হৃদয়ে।যার হৃদয় গভীরে যত বেশি আলো,স্রষ্টা তার ঠিক ততোধিক নিকটবর্তী।

রোগীকে জিম্মি না করে তার সেবা করাকে যদি কোনো ডাক্তার স্রষ্টাকে খুঁজে পাবার পবিত্র রাস্তা হিসেবে বিবেচনা করতো তবে স্রষ্টা তার কাছে নিশ্চয়ই আসতেন।আসতেন ভিন্নরুপে।নার্সের বেলায় ঐ একই কথা।শাসক যদি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতো তবে স্রষ্টাকে খুঁজে পেতো শোষিতের হাসির মধ্যে।কিন্তু শাসক নিজেকেই স্রষ্টা মনে করে।ক্ষমতার আসনে বসে ভেবে নেয় আমিই সুপ্রিম পাওয়ার,স্রষ্টার সমতুল্য।

তাহলে আপনি কি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবেন স্রষ্টা আছেন কোথায়? আমি প্রশ্ন করলাম তাঁকে।

তিনি বললেন, হয়তো স্বর্গে কিংবা নরকে।হতে পারে এখানে অথবা অন্য কোনো জায়গায়।আমি ঠিক জানি না।পড়িস নি শেখ ফজলুলের সেই কবিতা-

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।

স্রষ্টা হয়তো স্বর্গ-নরকের মত মানুষের মাঝেই আছেন।

আমি হেসে বললাম,আপনি কি বলতে চান মানুষের মাঝেই স্রষ্টা আছেন!আপনি পড়েন নি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা?তিনিই তো বলেছেন-

আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি-
তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।

লোকটি বললেন,মানুষের ভেতর যেমন কুকুর আছে,তেমনি মানুষের ভেতর মানুষও আছে।সেখানে আছে স্নেহ,মমতা,ভালোবাসা,যত্ন,আত্মমর্যাদা।এসব আছে বলেই এখনো তুই নিশ্চিন্তে স্রষ্টাকে খুঁজে বেড়াতে পারছিস।যদি মানুষের মাঝে মানুষ না হতো তবে স্রষ্টাকে খোঁজার সুযোগ তুই পেতি না।খুঁজতে থাক।খুঁজতে খুঁজতে একদিন হয়তো স্রষ্টাকে পেয়ে যাবি।তারপর তিনি উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেটে চললেন।ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছেন যেন।আমি চিৎকার করে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি কোনো দরবেশ?

ক্ষণিকের জন্যে তিনি দাড়ালেন এবং আমার দিকে ফিরে চাইলেন।বললেন, দরবেশ কখনো বলে বেড়ান না তিনি দরবেশ।আমি মানুষ।এই শহরের অলিতে-গলিতে দুঃখ কুড়িয়ে বেড়াই।বৃদ্ধার দুঃখ,পতিতার দুঃখ,পঙ্গুর দুঃখ,শিশুর দুঃখ।আর সবগুলো দুঃখ গভীর রাত্তিরে আমার কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে।আমি সহ্য করি,অশ্রু ঝরাই এবং পুনরায় দুঃখ কুড়াই।

খানিক বাদে লোকটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।বোধয় হাওয়া তাঁকে গ্রাস করেছে।আমার হাতের কলা-রুটি দেখে একটা পথশিশু এগিয়ে এসেছে।আমি তার হাতে কলা-রুটি দিলাম।

মনে পড়লো সফেদ টুপির সেই দোকানীর কথা।এটা কি তার সন্তান? দুঃখ কুড়ানো লোকটাক পুনরায় খুঁজে পেলে ভালো হতো।জিজ্ঞেস করে নিতাম আমার হৃদয়ে স্রষ্টা আছেন নাকি নেই,নাকি আমিও ভুলের উপর অনড় থেকে স্রষ্টাকে খুঁজতে থাকা একক স্বত্তা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top