একটা সময় ছিলো যখন হাতঘড়ি, মানিব্যাগ কিংবা পার্স, চশমাকে ব্যক্তিগত জিনিসের তালিকায় ফেলা হতো। এই ক’টি জিনিস ছাড়া মানুষ বাড়ির বাইরে যাবার কথা ভাবতো না। প্রযুক্তির আগ্রাসনে এগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে স্মার্টফোন। সকলের হাতে আছে স্মার্টফোন, বাকিগুলো থাকুক কিংবা না থাকুক। স্মার্টফোন ছাড়া বাইরে বের হওয়াই যাবে না। চশমার অভাব পূরণ করতে না পারলেও মানিব্যাগ আর ঘড়ির অভাব কিন্তু পূরণ করেই দিয়েছে স্মার্টফোন। সবার কাছেই ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি হয়ে উঠেছে অতি প্রিয় একটি বস্তু, সবসময় এর যত্ন নেয়ার প্রতি ঝোঁক দেখা যায় সবার মনেই। হাসিমুখে সদ্য ক্রয়কৃত স্মার্টফোন হাতে মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসা থেকে শুরু করে নতুন কোনো স্মার্টফোন বাজারে এলে নতুনটিকে দিয়ে পুরনোটিকে প্রতিস্থাপন করে ফেলার সময়সীমার মাঝে ঘটে যায় হাজারো ঘটনা। হাজারো ঘটনার সাক্ষী এই স্মার্টফোন।
তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়া এদেশের মানুষের কাছে নতুন। যদিও অনেক বছর হয়ে গেছে স্মার্টফোন এসেছে এদেশের বাজারে, তবু নতুন বলতেই হয়। কেননা সাধারণ মানুষ কেবলমাত্র স্মার্টফোনের বৈশিষ্ট্য দেখেই মুগ্ধ, ভেতরে কী চলছে তা জানার চেষ্টা করেনি খুব বেশি একটা।
একটি অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমের সুরক্ষার বর্ণনা দেবার পূর্বে প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক বলতে হয়। প্লে স্টোর খুবই জনপ্রিয় একটি নাম অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের কাছে। প্লে স্টোর থেকে একটি অ্যাপ ডাউনলোডের সময় বর্ণনাতে লেখা থাকে আপনার ফোনে কোন কোন জায়গায় প্রবেশাধিকার পাবে এই অ্যাপ। ইনস্টল করবার সময় আপনার কাছে অনুমতিও চায়, আপনি না দেখেই হয়তো অনুমতি দিয়ে দেন।
এই ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে সবার সাবধান হওয়া উচিত। বিশ্বাসযোগ্য ডেভেলপার হলে এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া যায়, কিন্তু আপনি যখন অপরিচিত কোনো ডেভেলপারের অ্যাপ ব্যবহার করবেন, তখন এই ছোট ব্যাপারে দৃষ্টি না দিলেই নয়। যেমন ধরুন, স্মার্টফোন ব্যবহার করে ছবি তোলার জন্য আপনি একটি অ্যাপ ইনস্টল করবেন। অ্যাপের কাজ ছবি তোলা, ছবি এডিট করা, অর্থাৎ ধারণকৃত চিত্র নিয়েই এর কাজ সীমাবদ্ধ। আপনার মেমোরী কার্ড, ফটো গ্যালারী সহ ক্যামেরা, খুব বেশি হলে লোকেশনের অনুমতি চাইতে পারে অ্যাপটি। কিন্তু আপনি যে অ্যাপটি চাচ্ছেন, সেটি এ সকল অনুমতির সাথে সাথে আপনার ফোনের কন্টাক্টগুলোর অ্যাক্সেস চাইলে সমস্যা সেখানেই। ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনার কন্টাক্ট পাচার হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের পাল্টা প্রশ্ন হয়তো এমন হতে পারে, “আমার কন্টাক্ট দখলে নিয়ে তারা কী করবে?” বিশ্বাস করুন, প্রযুক্তি জগতের জালিয়াতির ব্যাপারে ধারণা থাকলে আপনি এমনটি বলতেন না।
যা-ই হোক, অ্যান্ড্রয়েডের নিরাপত্তা রক্ষার্থে বেশ কিছু ব্যাপারে সচেতন থাকলেই যথেষ্ট, সেই সচেতন হওয়ার ব্যাপারগুলো নিয়েই চলুন জানা যাক এখন।
১. পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সচেতন হোন
একদিন সকালে আপনি ঘুম থেকে জেগে দেখলেন, পাশের বাসার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে কোনো পাসওয়ার্ড দেয়া নেই। আপনি ইচ্ছে করলেই সেই পাসওয়ার্ডবিহীন নেটওয়ার্কটি ব্যবহার করতে পারবেন। খুশিতে আপনার চেহারার উজ্জ্বলতা বেড়ে গেলো দ্বিগুণ হারে। সব কাজ ফেলে রেখে স্মার্টফোন নিয়ে বসে গেলেন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে। এতদিন এই নেটওয়ার্কে পাসওয়ার্ড ছিলো, আজ কোনো পাসওয়ার্ড নেই!
যদি আপনি সচেতন হয়ে থাকেন, তবে সামান্য হলেও সন্দেহ জাগবে আপনার মনে। সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক এবং আপনার সন্দেহ সত্যি। অপরপাশের মানুষটি আজ ওৎ পেতে আছে নেটওয়ার্কটিকে পাবলিক করে দিয়ে। ব্যবহারকারীদের সকল ডাটা প্রথমে প্রবেশ করে ওয়াই-ফাই রাউটারে। সেই পর্যায়ের জ্ঞান যদি কারো থেকে থাকে, তাহলে রাউটারে প্রবেশ করা ডাটা বিশ্লেষণ করে খুব সহজেই আপনি কী কী করছেন সেগুলো জানা সম্ভব। হয়তো প্রতিদিন কেউ এমন করবে না, হয়তো সবার সাথে এমন করবে না, হয়তবা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কেউ আপনার ক্ষতি করতে চাইতেও পারে। তাই সাবধান করে দেয়া, বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পেলে আগে সেটির সূত্র সম্পর্কে জানুন।
স্পীড যেমনই হোক, ইন্টারনেট জগতে একবার যদি বিপদে পড়েন, আপনার সারাজীবন নিয়েও টান পড়তে পারে। পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে তাই সচেতন হোন। যদি ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে সূত্র সম্পর্কে জানুন। কারা এই ওয়াই-ফাই সুবিধা দিচ্ছে সেটা জানুন। বর্তমানে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট কিংবা ক্যাফেতে এমন পাবলিক ওয়াই-ফাই থাকে। এগুলোতে কর্তৃপক্ষ হয়তো আপনার ক্ষতি করতে চাইবে না, কিন্তু অপর কোনো এক ব্যবহারকারী চাইলেও সেটি করতে সক্ষম। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সেলুলার কোম্পানিগুলো ওয়াই-ফাই সুবিধা দিয়ে থাকে ফ্রী-তে। তাদের সিকিউরিটি সিস্টেম যথেষ্ট শক্তিশালী হবার কথা। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আপনি তাদের নেটওয়ার্ক সুবিধা ব্যবহার করে থাকবেন। এমন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র হলে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারেন।
স্মার্টফোনগুলোতে অনেক সময় এমন ব্যবস্থা থাকে যে পাবলিক ওয়াই-ফাই পেলেই তার সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। এটি পরিবর্তন করুন অতিসত্ত্বর। আপনি ব্যবহার করুন আর না করুন, আপনার ফোনে যে কারো প্রবেশ করা সম্ভব তখন। আর আপনার যদি খুব জরুরী হয় পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করবার, সেটি দিয়ে কোনো ওয়েবসাইটে পাসওয়ার্ড দেয়া কিংবা অর্থ লেনদেন থেকে বিরত থাকুন। মোট কথা, যে তথ্যগুলো ফাঁস হয়ে গেলে আপনার সমস্যা হতে পারে, সেগুলো পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় স্মার্টফোনে লিখবেন না।
২. ফোনে স্ক্রীন লক ব্যবহার করুন
স্ক্রীন লক নেই এমন ফোন আজকাল একদমই পাওয়া যাবে না। অবশ্য যারা বারবার আনলক করতে বিরক্তবোধ করেন, তারা হয়তো স্ক্রীন লক ব্যবহার করেন না। প্রিয় স্মার্টফোনটিকে ভুল হাতে পড়া থেকে রক্ষা করবার সবচেয়ে সহজ রাস্তা হলো এই স্ক্রীন লক। পিন, প্যাটার্ন কিংবা পাসওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমে স্ক্রীন লক করে রাখতে পারেন। এছাড়া নতুন স্মার্টফোনগুলোতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আই স্ক্যানার যুক্ত করা হয়েছে, এগুলো দিয়েও স্ক্রীন লক করা সম্ভব।
আপনার ফোনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে সে রক্ষা করবে। এই লক খুলতে গেলে যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, এতে করে ফোনের সব তথ্যই মুছে যাবে। আপনি ফোন ফেরত পাবেন না, কিন্তু আপনার তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। আপনি ইচ্ছে করলে কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করে সবগুলো অ্যাপ আলাদা আলাদাভাবে লক করে রাখতে পারেন। এতে তথ্যগুলো আরো সুরক্ষিত হলো। স্যামসাংয়ের ডেভেলপ করা এস সিকিউর অ্যাপটি আপনি এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। এস সিকিউর যদি আপনার ডিভাইসে সাপোর্ট না করে, তবে অ্যাপলক নামের অ্যাপটিও ব্যবহার করতে পারেন। এসব আপনি প্লে স্টোরে পেয়ে যাবেন।
৩. স্মার্টফোনের সবগুলো অ্যাপ আপডেট করুন
স্মার্টফোনের অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট করা নিয়ে প্রচন্ড অসেচতন আমাদের দেশের মানুষ। যারা সেলুলার ডাটা ব্যবহার করে, তারা একেবারেই অ্যাপ আপডেট করে না। নতুন কোনো আপডেট এলে সেটি যে শুধু সুন্দর সব নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে তা নয়, অ্যাপের অনেক বাগ ফিক্স করা হয় প্রতি আপডেটে। অ্যাপের নিরাপত্তাকেও জোরদার করা হয়। তাই নিয়মিত স্মার্টফোনের সবগুলো অ্যাপকে আপডেট করুন।
৪. প্লে স্টোর ব্যতীত অন্য কোনো সূত্র থেকে অ্যাপ ব্যবহারে বিরত থাকুন
একটি অ্যান্ড্রয়েড ওএস স্মার্টফোনে ডিফল্টভাবে এমনটি সেট করা থাকে যে, আপনি প্লে স্টোর ব্যতীত অপর কোনো সূত্র ব্যবহার করে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করতে পারবেন না। অন্য কোনো অ্যাপ মার্কেট ব্যবহার কিংবা সরাসরি .apk ফাইল ইনস্টল করতে চাইলে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সেটিংস বদলে নিতে হয়।
আপনি এই কাজটি করা থেকে বিরত থাকুন। একটি অ্যাপের .apk ফাইলকে যদি কেউ মডিফাই করে কোনো ব্যাকডোর রেখে দেয়, যা দিয়ে ব্যবহারকারীর ক্ষতি করা সম্ভব পরবর্তীতে, সেটি কিন্তু আপনি তখন এড়াতে পারবেন না। চেষ্টা করুন প্লে স্টোর ব্যতীত অন্য কোনো সূত্রের অ্যাপ ব্যবহার না করতে। প্লে স্টোর থেকেও চোখ বন্ধ করে ইনস্টল করবেন না। আমাদের দেশের অনেক অসাধু মানুষ রয়েছে যারা নোংরা সব অ্যাপ বানিয়ে প্লে স্টোরে দিয়ে রেখেছে। যতই ইচ্ছা তৈরি হোক, এসব থেকে বিরত থাকুন। কার মনে কী আছে তা কারো জানা নেই। একটি অ্যাপ ইনস্টলের পূর্বে দেখুন সেটি আপনার থেকে কোন কোন জায়গায় প্রবেশাধিকার চায়, রেটিং দেখুন, ডেভেলপার কে সেটি লক্ষ্য করুন, ডেভেলপারকে বিশ্বাস করা যায় কিনা সেটি নিশ্চিত হোন। একটু নিচের দিকে আসলেই অন্যান্য ব্যবহারকারীদের মন্তব্য পাওয়া যাবে, কয়েকটি মন্তব্য পড়ে দেখে নিন তাদের কী মতামত। আপনার মনে হতে পারে, কত ঝামেলা পোহাতে হবে! বাস্তবে এটুকু কাজ করতে আপনার ত্রিশ সেকেন্ডের বেশি লাগবার কথা নয়।
৫. অ্যাপের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করুন
প্রথমেই যে সমস্যাটির কথা বলা হয়েছিলো, অ্যাপ আপনার ফোনের বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করবার অনুমতি চাইবে। আপনি হয়তো আনমনে সেটি দিয়ে দেবেন, লক্ষ্যও করবেন না কী কী অনুমতি দিচ্ছেন। প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ইনস্টল করবার এই এক সুবিধা, ইনস্টলের পূর্বে অ্যাপটি আপনাকে দেখাবে তার কী কী অনুমতি প্রয়োজন। অন্যথায় আপনাকে ইনস্টল করবার পর সেটিংস থেকে জেনে নিতে হবে। আপনি খুব সহজেই সবগুলো অ্যাপকে প্রদত্ত অনুমতি দেখে নিতে পারবেন, ইচ্ছে করলে অনুমতি দেয়া বন্ধ করে দেয়া যাবে। অ্যান্ড্রয়েডের আধুনিক ভার্সনগুলোতে এই সুবিধা রাখা হয়েছে। তাই কোনো অ্যাপ ইনস্টল করবার পূর্বে বারবার নিশ্চিত হয়ে নিন অনুমতিগুলো নিয়ে। তাই বলে আবার কিছু ক্ষেত্রে ভুল ভেবে বসবেন না। যেমন কোনো গেম ইনস্টল করলেন, গেমটি আপনার কন্টাক্টে প্রবেশাধিকার চাইছে। এর পেছনে কারণ রয়েছে। গেমটির ব্যপারে যাতে আপনি আপনার বন্ধুদের জানাতে পারেন, সেজন্যই এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
৬. সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে তথ্য শেয়ারে সতর্ক হোন
স্মার্টফোন হাতে পাবার পর অনলাইন সোশ্যাল জীবনের পরিধি যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আগে তো কষ্ট করে কম্পিউটারে বসে লগ-ইন করতে হতো। এখন আর অত ভাবতে হয় না। হাতের মুঠোয় পুরো সোশ্যাল দুনিয়া। সকালবেলা ঘুম হতে জেগে ওঠা থেকে শুরু করে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সকল তথ্য অনলাইনে বন্ধুদের জানানো চাই-ই চাই! কে কার থেকে কত দামী রেস্টুরেন্টে যেতে পারলো, কে কার থেকে কত বেশি বার বিদেশে ভ্রমণ করতে গেলো এসবই অনলাইন জগতে তুলে ধরা চাই। এ নিয়ে চলে নীরব এক প্রতিযোগীতা।
কিন্তু কখনো আমরা ভাবি না, নীরবে-নিভৃতে অপরিচিত মানুষদের রোষের শিকার হয়ে চলেছি এভাবে আমরা। কেউ হয়তো মনে মনে সুযোগ খুঁজছে, কিংবা বাস্তব জীবনে সুযোগ খুঁজতে গিয়ে সুবিধা করতে না পেরে অনলাইনকেই বেছে নিয়েছে ভাব জমানোর। যত মিষ্টতাই থাকুক একজন মানুষের সাথে, অপরিচিত মানুষমাত্রই অপরিচিত মানুষ। আপনি তিনদিনের জন্য কক্সবাজার গেলেন, পুরো দুনিয়াকে জানিয়ে দিলেন ফেসবুকের মাধ্যমে। যিনি সুযোগ খুঁজছিলেন আপনার বাসায় প্রবেশের, সুযোগের সন্ধান কিন্তু আপনি নিজ হাতে করে দিয়েছেন। এজন্য চেষ্টা করুন সোশ্যাল সাইটে চেক-ইনগুলো যত কম দেয়া যায়। ব্রাউজারে ইনকগনিটো মোড রয়েছে। সেই মোড চালু করে স্পর্শকাতর তথ্যগুলো নিয়ে কাজ করুন, যাতে ফোন কিংবা কম্পিউটার অন্যের দখলে চলে গেলেও সে আপনার ক্ষতি করতে না পারে।
৭. স্মার্টফোনকে ট্র্যাক করার ব্যবস্থা রাখুন
স্মার্টফোন হারিয়ে গেলে কিংবা চুরি হয়ে গেলে ইন্টারনেটের সাহায্যে আপনার ফোনে অ্যাক্সেস করা, সকল তথ্য মুছে ফেলা সহ ফোনের লোকেশন বের করে নেয়া যায়- এমন ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে বেশ কিছু অ্যাপ। মুহূর্তের মধ্যে আপনি আপনার ফোনের লোকেশন খুঁজে পাবেন। যদি ধারণা করেন যে আশেপাশে কোথাও রয়েছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিং বাজার ব্যবস্থা করতে পারবেন। কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলোতে আপনি পূর্বেই নির্দিষ্ট কমান্ড লিখে এসএমএস করলে ফোনের সকল তথ্য মুছে যাবে, লোকেশন পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আপনার কাছে। কপাল ভালো থাকলে আপনি আপনার ফোনটি ফেরত পেতেও পারেন, নতুবা আপনার তথ্যগুলো মুছে দেবার অপশন তো রয়েই গেলো।
গুগলের তৈরিকৃত ফাইন্ড মাই ডিভাইস অ্যাপটি এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। গুগল ম্যাপে আপনাকে রিয়েল-টাইম লোকেশন দেখাবে যদি ফোন চুরি যায়। এছাড়া তথ্যও মুছে দিতে পারবেন সব। অপরদিকে প্রে ইনকর্পোরেটেড তৈরিকৃত প্রে অ্যান্টি থেফটও হিসেব থেকে বাদ দেয়া যায় না। এতে আপনি বাড়তি সুযোগ হিসেবে এসএমএস করে পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট কী-ওয়ার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে ফোনে নানা রকম অপারেশন চালাতে পারবেন। ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে ফাইন্ড মাই ডিভাইস কোনো কাজের নয়। এখানেই প্রে অ্যান্টি থেফটের জয়জয়কার। আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন এতে আপনি ভিন্ন ইন্টারফেস চালু করে দিতে পারবেন। কেউ যদি অ্যাপটিতে প্রবেশ করে, তবে বুঝতে পারবে না এটি কী কাজ করে।
৮. ক্লাউড স্টোরেজে স্মার্টফোনের সকল তথ্যের ব্যাকআপ রাখুন
পুরো লেখা জুড়ে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে স্মার্টফোন চুরি গেলে আপনার স্পর্শকাতর তথ্য যাতে অন্যের হাতে না পড়ে সেজন্য সমস্ত ডাটা মুছে দেয়া হবে। ঘুরে-ফিরে বারবার একই কথা এসেছে। এখন প্রশ্ন রয়ে যায়, অন্যের হাতে নাহয় না গেলো, কিন্তু আপনার এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি, যদি আপনার হাতেই না থাকে, তাহলে কেমন করে হবে?
সেজন্য একটিই রাস্তা খোলা থাকে। সমস্ত তথ্যের ব্যাকআপ রাখুন। আপনি যে স্মার্টফোনই ব্যবহার করে থাকুন না কেন, আপনার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নিশ্চয়ই নিজস্ব ক্লাউড সার্ভিস রয়েছে। সেই ক্লাউডের সাথে ফোনের কন্টাক্ট, নোট, এসএমএস, অডিও-ভিডিও সহ ক্যালেন্ডারের তথ্যগুলো পর্যন্ত আপনি ব্যাকআপ করে রাখতে পারবেন। আর যদি আপনার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ক্লাউড না থাকে, তাহলে গুগল ড্রাইভ তো আছেই সবার জন্য। স্মার্টফোনের সমস্ত তথ্য নিয়মিত ড্রাইভে ব্যাকআপ রাখুন। এতে করে ফোন হারালে কিংবা নতুন ফোন কেনার পর তাতে তথ্য অথবা কন্টাক্টগুলো সেভ করা নিয়ে ভাবতে হবে না। সবকিছু তো অনলাইনে আছেই!
৯. ফোনের সমস্ত ডাটা এনক্রিপ্ট করে রাখুন
আপনার প্রিয় স্মার্টফোনের সমস্ত ডাটা নির্দিষ্ট কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনি এনক্রিপ্ট করে রাখতে পারবেন। এর মাধ্যমে সবকিছু আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে প্রতিবার অবশ্য আপনাকে ব্যবহার করতে হলে ডিক্রিপ্ট করে নিতে হবে। এতে কিছু সময় ব্যয় হয়, যাতে বিরক্তি এসে যাবে। তাই বলা যায়, যারা সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে চান স্মার্টফোন নিয়ে, তাদের জন্যই এই পদক্ষেপ।