শিশুর অ্যালার্জিক রাইনাইটিস একটা দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জিজনিত রোগ। নাসিকার অভ্যন্তরে ঝিল্লি বা মিউকাস পর্দায় প্রদাহের কারণে এটা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় বা জন্মের প্রথম বছরে মা যদি ধূমপান করেন, তাহলে সন্তানের এই রোগ বেশি হয়। সিজারিয়ান ডেলিভারি, অ্যালার্জিক পরিবেশ, খাবার ও জীবাণু এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পরিবারে মা, বাবা বা অন্য কারও এ ধরনের অ্যালার্জির ইতিহাস থাকলে, শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক চুলকানো, সঙ্গে চোখ লাল এবং হঠাৎ হঠাৎ হাঁচির প্রকোপ—এসবই হলো অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের প্রধান উপসর্গ। একটু বেশি বয়সী শিশু নাকের এই অ্যালার্জিতে নাক ঘষে (অ্যালার্জিক স্যালিউট)। কোনো কোনো শিশুর নাকের ওপর আড়াআড়ি দাগ, কারও আবার চোখের নিচে কালো কালো বৃত্তের মতো ছোপ পড়ে। চার–পাঁচ বছর বয়সী অনেক শিশু নাক ডাকে, মুখ হা করে শ্বাস নেয়। এতে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এসব শিশুর অনেকে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে না।
অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে ভোগা শিশুদের অনেকে আবার অ্যালার্জিজনিত অন্যান্য রোগ যেমন সাইনোসাইটিস, কানপাকা, টনসিলের সংক্রমণ ও একজিমা রোগে ভোগে। এসব শিশুর অনেকে হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে ভোগা শিশুদের সপ্তাহে চার দিনের বেশি কিংবা পরপর চার সপ্তাহ রোগের উপসর্গ থাকতে পারে। তবে মৃদু অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে আক্রান্ত শিশুর স্বাভাবিক ঘুমে, লেখাপড়ায় তেমন একটা সমস্যা হয় না।
যা করবেন
রোগ শনাক্ত করতে সুনির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ছয় বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার ইমিউনোগ্লোবিউলিন ই, ইঁদুর, তেলাপোকা ও অন্যান্য সন্দেহজনক অ্যালার্জেন পরীক্ষা অন্যতম।
শিশুর এই রোগ যে যে মৌসুমে বাড়ে, তা নির্দিষ্ট করতে হবে। যে যে পরিবেশ বা খাবার দায়ী, তা–ও চিহ্নিত করা জরুরি। কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ, বিছানা, বালিশ, কার্পেটে থাকা জীবাণু, ফুলের রেণু, ঘাস, ধুলাবালুর সংস্পর্শে এলে সমস্যা বাড়ে কি না, তা অনুসন্ধান করতে হবে।
অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে আক্রান্ত শিশুকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং নাক-কান-গলা ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।