সিনেমা-সিরিজের দৃশ্যে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে দেখা যায় শক্তিশালী সেতু। ভয়ংকর সেই দৃশ্য দেখে আমরা অনেকে আঁতকে উঠি। বাস্তবেও সেতু ধসে পড়ার এমন ঘটনা রয়েছে, ইতিহাস ঘাঁটলে যার ভয়াবহতা আজও আমাদের স্তব্ধ করে দেয়। এখানে থাকছে সেতু ধসের পাঁচটি ঘটনার বিবরণ।
সেতুতে মালবাহী জাহাজের ধাক্কা, যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮০ সালের ৯ মে। সকালবেলা। আকস্মিক চিৎকারে ফ্লোরিডার টাম্পা উপসাগরের চারপাশ ভারী হয়ে ওঠে। সানশাইন স্কাইওয়ে ব্রিজের নিচ দেয়ে যাচ্ছিল মালবাহী জাহাজ এমভি সামিট ভেঞ্চার। কুয়াশা, প্রবল বৃষ্টি এবং তীব্র বাতাসের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর দুটি কলামের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ১ হাজার ২০০ ফুট লম্বা দক্ষিণমুখী স্প্যান ভেঙে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে নদীতে পড়ে যায় ছয়টি গাড়ি, একটি পিকআপ এবং একটি বাস। ৩৫ জন মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করেন।
মোরান্দি সেতুতে বজ্রপাত, ইতালি
ইতালির আধুনিককালের অন্যতম শৈল্পিক নকশার একটি স্থাপনা মোরান্দি সেতু। ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট তীব্র বজ্রপাতে ধসে পড়ে এই সেতু। যেসব টাওয়ারের ওপর সেতুটি ছিল, ঝোড়ো আবহাওয়ায় তার একটি ভেঙে পড়ে। এটির ওপর থাকা কোনো কোনো গাড়ি প্রায় ৩০০ ফুট নিচে গিয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নিহত হন ৪৩ জন এবং আহত হন ১৬ জন।
মাটিধসে ভাঙল রেলসেতু, নিউজিল্যান্ড
১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর, বড়দিনের আগের রাত। সময় তখন ১০টা ২১ মিনিট। ২৮৫ জন যাত্রী নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন থেকে অকল্যান্ডগামী ট্রেন ওয়াংগাহু নদীর রেলসেতুর ওপর দিয়ে যাত্রা শুরু করে। গন্তব্য টাঙ্গিওয়াই। তার ঠিক মিনিট কয়েক আগেই রুয়াপেহু পর্বতের আগ্নেয়গিরি থেকে কাদামাটি উদ্গিরণ হতে থাকে। মাটিধস রেলসেতুর এক অংশে তীব্রভাবে আঘাত করে। রেলের ছয়টি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে নদীতে পড়ে যায়। যাত্রী ও রেলের কর্মীসহ মারা যান মোট
১৫১ জন।
অঁজে সেতুর ভয়াবহতা, ফ্রান্স
১৮৫০ সালের ১৬ এপ্রিল। একটা ভয়ংকর ঝড় আঘাত হানে ফরাসি শহর অঁজেসে। এই শহরে অবস্থিত মেন নদীর ওপর ঝুলন্ত অঁজে সেতুর ওপর দিয়ে প্রায় ৫০০ ফরাসি সৈন্যের একটি বহর কুচকাওয়াজ করতে করতে যাচ্ছিলেন। সৈন্যদের ছন্দোবদ্ধ পা ফেলার সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাসের চাপ যুক্ত হয়ে দুলে ওঠে সেতুটি। সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়ে নদীতে। মারা যান ২২৬ জন।
৪ হাজার মানুষের সলিলসমাধি, পর্তুগাল
ইতিহাসের ভয়াবহতম সেতু ধসের ঘটনা ঘটে পর্তুগালের পোর্তো শহরে, পেনিনসুলা যুদ্ধের সময়। দিনটি ছিল ১৮০৯ সালের ১২ মার্চ। এদিন নেপোলিয়ানের সৈন্য দল পোর্তো শহরে আক্রমণ করে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ সেদিন সেই আক্রমণ থেকে বাঁচতে পন্তে দা বার্কা (নৌকার সেতু) দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে। ২০টি নৌকা সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে ইস্পাত দিয়ে নির্মিত সেতুটি অতিরিক্ত ওজনের ফলে মুহূর্তে ধসে পড়ে। পর্তুগালের সাধারণ নাগরিক ও ফরাসি সৈন্য মিলে প্রায় চার হাজার মানুষ দৌরো নদীতে ডুবে মারা যান।
* কবীর হোসাইন | সূত্র: হিস্ট্রি