উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের কাছে এন্টিভাইরাস বা এন্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম নতুন কোনো বিষয় নয়। আপনার কম্পিউটার যদি উইন্ডোজ ১০ অথবা উইন্ডোজের অন্য যেকোনো ভার্সন যেমন উইন্ডোজ ৭ বা উইন্ডোজ ৮ দ্বারা চালিত হয়, তাহলে এর মধ্যে মাইক্রোসফটের নিজস্ব ফ্রি এন্টিভাইরাস বা এন্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার দেয়া আছে।
উইন্ডোজ ডিফেন্ডার নিয়মিত আপডেট করলে বেশিরভাগ ভাইরাস বা ক্ষতিকর সফটওয়্যারের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন আপনার কম্পিটার। সেই সাথে চাইলে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য অন্য একটি থার্ড পার্টি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারও ব্যবহার করতে পারেন। তার আগে জেনে নেওয়া যাক, এন্টিভাইরাসে কী কী ফিচার থাকা জরুরি।
এন্টিভাইরাস সমাচারঃ গুরুত্বপূর্ণ ফিচারসমূহ
উইন্ডোজ এর জন্য সেরা অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার খোঁজার ক্ষেত্রে দেখতে হবে যাতে এটি পিসিকে সুরক্ষিত রাখে, পরিমিত সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহার করে, ব্যবহার করা সহজ হয় এবং প্রয়োজন ব্যতীত যাতে বিরক্তির উদ্রেক না করে। এই পোস্টে আমরা উইন্ডোজের জন্য সেরা কিছু এন্টিভাইরাসের সাথে পরিচিত হব। প্রথমেই একটি আদর্শ এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত তা নিম্নে আলোচিত হল।
কার্যকরিতাঃ অ্যান্টিভাইরাস জানা ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার (অর্থাৎ ক্ষতিকর প্রোগ্রাম) সনাক্ত করে, এবং সার্বক্ষণিক সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। এমনকি এগুলো ক্ষতিকর ওয়েবসাইট এবং সন্দেহজনক লিঙ্কগুলোও খুঁজে বের করে আপনার কম্পিউটারকে সুরক্ষিত রাখে।
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলো ক্ষতিকর প্রোগ্রামের বিরুদ্ধে সুরক্ষা সরবরাহ করতে পারে এবং অপ্রত্যাশিত আচরণ পর্যবেক্ষণ করে। এছাড়াও নতুন এবং এখনও সনাক্ত না হওয়া ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার খোঁজ করাও এন্টিভাইরাস এর কাজ। অতএব, বেছে নিন এমন একটি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার যা মিথ্যা সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি না দিয়ে উক্ত সুবিধাসমূহ প্রদান করবে।
সিস্টেম রিসোর্স এর পরিমিত ব্যবহারঃ আপনি অবশ্যই এমন একটি অ্যান্টিভাইরাস চাইবেন যা আপনার পিসির রিসোর্স এ ঘাটতি তৈরি করবে না। অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করার পর যদি ওয়েবসাইট ওপেন হতে সময় বেশি নেয়, ফাইল কপি করতে প্রত্যাশিত সময়ের বেশি সময় নেয়, তবে আপনার উচিত এর বিকল্প প্রোগ্রাম খোঁজ করা।
মূল্যঃ টাকা দিয়ে ক্রয় করলেই যে সেই এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার আপনাকে যথাযথ সুরক্ষা দিবে এবং ফ্রি সফটওয়্যার কোনো কাজেরই না, সেটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আমাদের এই তালিকার প্রত্যেকটি এন্টিভাইরাসই বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য, কিন্তু যথেষ্ট কার্যকর। আপনি যদি ব্যক্তিগত কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস ইন্সটল করার জন্য এই পোস্টটির সাহায্য নিয়ে থাকেন, তবে তালিকার যেকোনো একটি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
গোপনীয়তাঃ কম্পিউটারের সকল চলমান প্রসেস পর্যবেক্ষণ করাই একটি কার্যকর এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর কাজ। তবে কম্পিউটারে চলমান এই সুরক্ষা ব্যবস্থার আড়ালে সফটওয়্যারটি ব্যবহার্য ডাটা অন্য কোম্পানির কাছে হাতবদল করছে কিনা, তাও নিশ্চিতকরণ জরুরি। এজন্য এন্টিভাইরাসের রিভিউ পড়ে নেওয়া জরুরি।
চলুন জেনে নিই বর্তমান সময়ের সেরা ৫ ফ্রি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সম্পর্কে, যা থেকে আপনি যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
অ্যাভাস্ট ফ্রি এন্টিভাইরাস
এন্টিভাইরাস জগতে অ্যাভাস্ট অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। বিভিন্ন টেস্টিং ল্যাব এর পরীক্ষাতে এটি সেরা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর পরিচয় দিয়েছে। সাইবারক্যাপচার হল অ্যাভাস্ট এন্টিভাইরাস এর অন্যতম প্রধান ফিচার, যা পিসিতে নতুন ফাইল রান করার আগে সেটি স্ক্যান করে নেয়। এছাড়াও অ্যাভাস্ট ফ্রি এন্টিভাইরাসে আরো থাকছে নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ইন্সপেকটর, পাসওয়ার্ড ম্যানেজারসহ আরো অনেক ফিচার। পাশাপাশি অ্যাভাস্ট এন্টিভাইরাস সব ব্রাউজারেই ইউআরএল প্রটেকশন সুবিধা প্রদান করে। তবে অ্যাভাস্টের প্রাইভেসি সেটিংস আপনার কাছে কিছুটা কঠিন লাগতে পারে, এবং এর পেইড কম্পোনেন্টের লিংক ভালো নাও লাগতে পারে।
বিট ডিফেন্ডার ফ্রি এন্টিভাইরাস
ফ্রি এন্টিভাইরাস হিসেবে বিট ডিফেন্ডার ব্যাপক জনপ্রিয়। বিট ডিফেন্ডার অ্যান্টিভাইরাস এর ফ্রি সংস্করণে কমার্শিয়াল বিটডিফেন্ডার অ্যান্টিভাইরাস এর একই কোর অ্যান্টিভাইরাস প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ বিনামূল্যেই পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ লেভেলের সুরক্ষা। ফিশিং সাইট এবং ক্ষতিকর ইউআরএল এর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্যও বিট ডিফেন্ডার পরীক্ষিত। সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য বিট ডিফেন্ডার কনফিগার করা সহজ। তবে আপনি যদি অ্যাডভান্সড ইউজার হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে হয়ত আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ চাইতেই পারেন যা বিট ডিফেন্ডারে আপাতত নেই।
ক্যাস্পারস্কি ফ্রি এন্টিভাইরাস
অনেক ওয়েবসাইটেই ক্যাস্পারস্কি ফ্রি এন্টিভাইরাসকে সেরা ফ্রি এন্টিভাইরাস এর খেতাব দেয়া হয়েছে। তবে আমরা এর ভালো ও খারাপ – উভয় দিক বিবেচনা করে একে তৃতীয় অবস্থানে স্থান দিয়েছি। ক্যাস্পারস্কি এন্টিভাইরাস বিনামূল্যে ফুল-স্কেল ম্যালওয়্যার সুরক্ষা প্রদান করে। আরো থাকছে রিয়েল-টাইম স্ক্যানিং, এন্টি-ফিশিং, ইমেইল স্ক্যানিং, স্পাইওয়্যার প্রটেকশন সহ নানান সুবিধা। এটি আপনার কাছে খুব ব্যাসিক লেভেলের এন্টিভাইরাস মনে হতে পারে, তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এটি যথেষ্ট। এর ইউজার ইন্টারফেস অত্যন্ত সহজ এবং এর ভাইরাস ধরার ক্ষমতা অসাধারণ।
এভিজি এন্টিভাইরাস
এভিজি অ্যান্টিভাইরাস মূলত অ্যাভাস্ট অ্যান্টিভাইরাস এর মত একই অ্যান্টিভাইরাস সুরক্ষা ইঞ্জিন দ্বারা তৈরি। তবে অ্যাভাস্ট এর সাথে যে বোনাস ফিচারগুলো রয়েছে, সেগুলো এভিজি এন্টিভাইরাসে থাকছেনা। ভাইরাস প্রটেকশন, সিস্টেম অপটিমাইজেশন টুল, ম্যালওয়্যার স্ক্যানার প্রভৃতি ব্যাসিক ফিচার এর পাশাপাশি মোটামুটি লেভেলের এন্টি-ফিশিং প্রটেকশন প্রদান করতে পারে এভিজি এন্টিভাইরাস।
অ্যাভিরা ফ্রি এন্টিভাইরাস
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর জগতে অ্যাভিরা একটি পরিচিত নাম। এটি কম্পিউটার থেকে যেকোন ধরনের ম্যালওয়্যার খুঁজে বের করে তা ব্লক করতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য অ্যাভিরা প্রোডাক্ট ইন্সটল এর সুবিধা পাওয়া যাবে সফটওয়্যারটিতে। অ্যাভিরা এন্টিভাইরাসের স্ক্যানিং ইঞ্জিন তুলনামূলকভাবে একটু ধীরগতির। এছাড়াও এটি ক্রোম এবং ফায়ারফক্স ব্রাউজারে বাড়তি নিরাপতা প্রদান করে। তবে এর অতিমাত্রায় পপআপ আপনাকে বিরক্ত করতে পারে।
সঠিকভাবে এন্টিভাইরাস বা এন্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করলে বিভিন্ন ভাইরাস, ম্যালওয়্যার ও র্যানসমওয়্যারের হাত থেকে আপনার ব্যবহার্য কম্পিউটারটিকে নিরাপদে রাখা সম্ভব। কম্পিউটারে যেকোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করার পূর্বে অবশ্যই এর উৎস ও নির্মাতা সম্পর্কে ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে নিন।
সফটওয়্যারের ক্র্যাক ইন্সটল করা থেকে বিরত থাকুন। অধিকাংশ ক্র্যাকড সফটওয়্যার এর ইন্সটলেশন প্যাকেজে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার থাকে।