What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শেক্‌সপিয়ারের বসতভিটায় (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
বেশ কয়েক বছর আগে অ্যাভন নদীর তীরে বিশ্বনন্দিত সাহিত্যস্রষ্টা উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের বসতবাড়িতে পা রাখার সুযোগ হয়েছিল লেখকের। বিস্ময়, কৌতূহল আর শ্রদ্ধায় মাখামাখি ছিল দিনভরের সেই বিচরণ। ছিল নতুন আবিষ্কারের পুলকও। আজ ২৩ এপ্রিল। শেক্‌সপিয়ারের জন্মের দিন, একই সঙ্গে প্রয়াণের দিনও। আজও অবিকল সেই ভ্রমণস্মৃতি। তারই অবিরল আনন্দে স্মরণের, শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রয়াস লেখকের।

LLGukjC.jpg


এই বাড়িতেই জন্ম শেক্‌সপিয়ারের, ছবি: উইকিপিডিয়া

ইংল্যান্ড ভ্রমণের প্রস্তুতি পর্ব থেকেই একটা বিশেষ দর্শনীয় স্থান দেখার ব্যাকুলতা বাড়ছিল। সেটা হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, বিখ্যাত ইংরেজ কবি ও সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের বসতভিটা। এ স্বপ্ন পূরণে আমায় যেতে হয়েছে ঢাকা শহর থেকে ইংল্যান্ডের ‘স্ট্রাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন’ শহরে। ইংল্যান্ডের পশ্চিমের এ শহরে তিনি জন্মেছেন এবং প্রায় ৪০০ বছর ধরে ঘুমিয়ে আছেন এখানকার হোলি ট্রিনিটি চার্চে; পৃথিবীর তাবৎ সাহিত্যপ্রেমীর ঈশ্বর কিংবা সাহিত্যের ঈশ্বর যিনি। সাহিত্যের পণ্ডিতেরা তাঁকে নাম দিয়েছেন ‘বার্ড অব অ্যাভন’, অর্থাৎ অ্যাভনের চারণকবি। হাটে, মাঠে, ঘাটে, স্থানে স্থানে ঘুরে ঘুরে যেসব কবি কাব্যচর্চা করেন; তাঁদের বলা হয় চারণকবি। তিনি সেই নাট্যকার, যাঁর নাটক পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যকবার মঞ্চস্থ হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁর ভক্তরা।

Kx4EagZ.jpg


স্ট্রাটফোর্ড স্টেশন, ছবি: উইকিপিডিয়া

সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে ঘণ্টা দুয়েক লাগল ট্রেনে শেক্‌সপিয়ারের শহর ‘স্ট্রাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন’ পৌঁছাতে। অ্যাভন নদীর পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে স্ট্রাটফোর্ড। তাই তো এর নাম ‘স্ট্রাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন’। অ্যাভন নদীর তীরে জন্মেছেন এই কিংবদন্তি; যে নদী সাক্ষী তাঁর শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যের। বেশ ছিমছাম, পরিপাটি একটা শহর। এমনটা তো দেখিনি আগে!

ywzhiNr.jpg


এই সেই অ্যাভন নদী, ছবি: উইকিপিডিয়া

একপশলা বৃষ্টি হলো কি হলো না টের পেলাম না; রাস্তা খানিক ভেজা কিন্তু মাথার ওপর গ্রীষ্মের সূর্য, বেশ কড়া। ইউরোপে এমন দিন পর্যটকদের আরাধ্য। ট্রেন থেকে নেমে কেবল একটি রাস্তা চোখে পড়ল। পা বাড়ালাম সে পথে। না, কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হয়নি। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, তিনিও তো হেঁটেছেন এই পথেই? আমি যেমন করে হাঁটছি।

হাঁটতে হাঁটতে মিনিট দশ কি পনেরো, পৌঁছে গেলাম শেক্‌সপিয়ারের পৈতৃক বাড়ি, যে বাড়িতে তিনি জন্মেছেন। দেখার সুবিধার্থে প্রথমে যেতে হয় পৈতৃক বাড়িতে। লাল রঙের ইংরেজি বর্ণে লেখা রয়েছে ‘দ্য শেক্‌সপিয়ার সেন্টার’। সামনে বেশ প্রশস্ত আর খোলামেলা টিকিট কাউন্টার। টিকিট নিল ২৩ পাউন্ড। এই এক টিকিটেই তিনটি বাড়ি দেখব। পুরোনো বাড়ি, অর্থাৎ তাঁর পৈতৃক বাড়ি; নতুন বাড়ি, অর্থাৎ যেটা তিনি কিনেছিলেন এবং তাঁর কন্যা সুজানার বাড়ি। টিকিট কাউন্টার–সংলগ্ন তিন-চারটি কক্ষ, আসলে কক্ষ নয়, সংগ্রহশালা বা জাদুঘর। জাদুঘরের প্রবেশমুখেই শেক্‌সপিয়ারের আবক্ষমূর্তি। সম্মানে মাথা নত হয় আমার! চলার গতি হ্রাস পায়! মনে মনে বলি, ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার/ চরণ-ধূলার তলে।/ সকল অহংকার হে আমার/ ডুবাও চোখের জলে।’

Tl4sq7b.jpg


ফার্স্ট ফোলিও

পাশের কক্ষে প্রবেশ করলাম। এ কী বিস্ময় আমার সম্মুখে! ‘ফার্স্ট ফোলিও’! ফার্স্ট ফোলিও হলো উইলিয়ামের সব ট্র্যাজেডি, হিস্ট্রি আর কমেডি নাটকগুলোর প্রথম সংকলন; বিশেষজ্ঞরা এর নাম দিয়েছেন ‘ফার্স্ট ফোলিও’। ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী বইগুলোর মধ্যে এটি একটি। এতে স্থান পেয়েছে ৩৬টি নাটক। ১৬২৩ সালে এই বিখ্যাত সংকলন প্রকাশিত হয়। সময় যত বেড়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা তত বেড়েছে, গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে, ইংরেজি সাহিত্যে প্রভাব বেড়েছে।

tdslWVG.jpg


খাবার টেবিল: সেই সময়ের মতো করেই সাজানো

এই সংগ্রহশালা বিভিন্ন নথি, চিত্র, নানান উপাদান সংগ্রহ ও প্রদর্শনের মাধ্যমে উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের পারিবারিক এবং সে সময়কার বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। দেয়ালে টাঙানো বাঁধাই করা বিভিন্ন দলিলাদি থেকে সে সময়কার স্থানীয় বাজারব্যবস্থা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। শেক্‌সপিয়ারের পিতা দস্তানা বা গ্লাভস বা হাতমোজা তৈরি করতেন; সেগুলো স্থানীয় যে বাজারে (সে বাজারের নাম ‘মার্কেট ক্রস’) বিক্রি হতো, তার তথ্যাদি নিখুঁতভাবে বর্ণিত আছে সংগ্রহশালায়।

সংগ্রহশালা থেকে বের হলেই একটি মাঝারি আকারের বাগানসহ উঠান এবং সঙ্গে কাঠের দোতলা বাড়ি। ষোলো শতকের কাঠের বাড়ি। বিল্ডিংটি স্থাপত্যশিল্পের দিক থেকে অসামান্য নয়। এই দোতলা বাড়িটিই মূলত তাঁর পিতার বাড়ি ও পরিবারের আবাসস্থল ছিল। এ বাড়িতেই জন্মেছেন তিনি। তাঁর জন্মের সঠিক তারিখ নিয়ে তথ্যবিভ্রাট রয়েছে, তবে তাঁর জন্মের পর ব্যাপ্টিজম সম্পন্ন হয় ২৬ এপ্রিল, ১৫৬৪। ব্যাপ্টিজম বিষয়টি হলো আমাদের দেশের আকিকার মতো একটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। সাধারণত জন্মের দু–তিন দিন পর এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হয়। সে হিসাবে তিনি জন্মেছে ২৩ এপ্রিল।

NXhwQsX.jpg


শেক্‌সপিয়ারের পৈতৃক বাড়ির সামনে লেখক; এখানেই তিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন

এ বাড়িতেই বড় হয়েছেন, বিয়েও করেছেন এ বাড়িতেই। স্ত্রী অ্যানিকে নিয়ে পাঁচ বছর এই পৈতৃক বাড়িতে অবস্থান করেছেন। ১৫৮২ সালে শেক্‌সপিয়ারের বয়স যখন ১৮ তখন তিনি ২৬ বছর বয়সী অ্যানির প্রেমে পড়েন। বিয়েতেও কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি শেক্‌সপিয়ারকে। সে সময়কার আইনবলে তিনি সাবালক নন ১৮ বছর বয়সে, তাই। শুধু তা–ই নয়, বেশ তাড়াহুড়ো করে অ্যানিকে বিয়ে করতে হয়েছিল। কারণ, অ্যানির বিবাহ–পূর্ব গর্ভধারণ। বুঝলাম, বিবাহ-বহির্ভূত সন্তান সে সমাজে গ্রহণযোগ্য ছিল না। আবার ৪০০ বছর পরের এ আধুনিক সমাজেও ব্যাপারটা অসমাদৃত কিংবা অগ্রহণযোগ্য। আরও বুঝলাম, সময় বদলায় কিন্তু সংস্কার, প্রথা এসব খুব একটা বদলায় না।

সে যাহোক, আমি ঘরের আসবাব দেখতে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। আলমারি, বসার চেয়ার, শোবার খাট এবং খাটের ওপর ছড়িয়ে রাখা হয়েছে সে সময়কার আদলে তৈরি পোশাক, সে সময়কার খাবার টেবিল এবং তাতে সাজানো খাবার পরিবেশনের সরঞ্জামাদি। বড় অগ্নিকুণ্ডগুলো ইট ও পাথরের তৈরি। নিচতলার ঘরের মেঝে পাথরের। পুনঃসংস্কার করতে করতে সব উপকরণের মূল স্টাইল বা আদল ধরে রাখার চেষ্টা হয়েছে।

IFfRFmq.jpg


রাখা আছে শেক্‌সপিয়ারের খাট

মৌলিকত্ব রক্ষার চেষ্টা ছিল প্রাণান্ত, এটি বিলক্ষণ স্পষ্ট। আমার শৈশবে আমার গ্রামের বাড়িতে দেখেছি, খাটের সঙ্গে লাগানো থাকত চারটি কাঠের স্ট্যান্ড চার প্রান্তে, মশারি টাঙানোর সুবিধা হয় বৈকি এতে। শেক্‌সপিয়ারের পৈতৃক বাড়িতেও তা–ই অবশিষ্ট আছে। অপেক্ষাকৃত অন্ধকার কক্ষের কোনায় কোনায় মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর আলোকিত করে রাখা হয়েছে দর্শনার্থীর সুবিধার্থে।

3vWOqzv.jpg


সংরক্ষিত উনুন

সে সময়কার আদলে তৈরি উনুন, কয়লা জ্বলছিল তাতে। বাড়ির দোতলায় উঠতে গিয়ে সিঁড়িটাকে বেশ অপ্রশস্ত আর আঁটসাঁট মনে হয়েছে। দোতলায়ও বেশ কয়েকটি কক্ষ। একটি কক্ষে জানালার ধারে একটি তিনপেয়ে টেবিল, তার ওপর কলমদানি আর কলম। কলম? কলম তো নয়, সে তো পাখির পালক! এই টেবিলে বসেই লিখতেন এই কিংবদন্তি।

একসময় ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে এসে দাঁড়ালাম। বেশ গাছগাছালি ভরা, সবুজ আর সবুজ। এবার শেক্‌সপিয়ারের নতুন বাড়ি যাব। নাট্যকার হিসেবে তিনি যখন যথেষ্ট সম্পদশালী হয়ে ওঠেন, তখনই কেনেন স্ট্রাটফোর্ডের সবচেয়ে বড় বাড়িটি, নাম তার ‘নিউ প্লেস’। যেই না উঠানের কোণে একটি সরু পথ দিয়ে বেরোব, সেখানে আরেক বিস্ময়! দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের রবীন্দ্রনাথ! রবীন্দ্রনাথের একটি ভাস্কর্য। ভাস্কর্যের পাশেই একটি মাঝারি আকারের বিলবোর্ড, তার বর্ণনা পড়ে শেক্‌সপিয়ারের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগসূত্র বোঝার চেষ্টায় মেতে উঠলাম খানিক্ষণ।

nKK2E1X.jpg


রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যের পাশে লেখক

জানলাম, ১০০ বছর আগে (১৯১৬ সালে) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি কবিতা লিখেছিলেন ‘শেক্‌সপিয়ার’ শিরোনামে। ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনের এক অনুষ্ঠানে সে কথা স্মরণ করে রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেন, ব্রিটেনের শেক্‌সপিয়ারের তিন শতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির অনুরোধে শেক্‌সপিয়ারের ৩০০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি এটি রচনা করেছিলেন। সেদিন তিনি আরও উল্লেখ করেন, এটি তিনি শিলাইদহে বসে লিখেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ডে কর্মরত ভারতীয় হাইকমিশনার শেক্‌সপিয়ারের জন্মভিটায় রবীন্দ্রনাথের একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এই সেই ভাস্কর্য, যা স্থাপিত হয়েছে ১৯৯৫ সালে।

6HwI0Z9.jpg


সেই সময়ে শেক্‌সপিয়ার পরিবারের ব্যবহৃত পোশাকের রেপ্লিকা

দেখতে গিয়েছিলাম শেক্‌সপিয়ারের বাড়ি, কিন্তু দেখা মিলল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও। দেখে গর্ব হলো। শেক্‌সপিয়ারের পৈতৃক বাড়ির উঠানে বাগানের এক কোনায় রবীন্দ্রনাথ। একটু খুঁজে নিতে হবে, শিগগির ধরা দেবেন না। না, এটা ঠিক ইউটিউবে রবীন্দ্রনাথের গান শোনার মতো নয় ব্যাপারটা। ইউটিউবে গানের কলি লিখে দিলেই যেমন চটজলদি চলে আসে, ব্যাপারটা সে রকম নয়। বাগানের ঠিক কোন কোণে তিনি আছেন, খুঁজে নিতে হবে।

রবীন্দ্রনাথকে ছেড়ে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। হাঁটছি, সঙ্গে আমার মতো আরও পর্যটক। ২২ নম্বর চ্যাপেল স্ট্রিটে এসে থামলাম কয়েক মিনিটের মধ্যে। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কবির নিজের কেনা বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে হাজির আমি। ব্রোঞ্জের ফটকে লেখা, ‘I bid a hearty welcome’. ফটকের ভেতর থেকে প্রকাণ্ড এক বাগান আমাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। বাগানে প্রবেশের পূর্বেই ওক কাঠে তৈরি প্রায় অর্ধবৃত্তাকার এক দীর্ঘ বেঞ্চি। জনা পঁচিশেক মানুষ অনায়াসে বসতে পারবে এই বেঞ্চিতে।

ttnVpZf.jpg


কবির নিজের কেনা বাড়ি নিউ প্লেস

বাড়ি কেনার পর বাগানটি নিজ হাতে গড়েছিলেন তিনি, দুই শতাধিক ফুলের গাছ আছে সেখানে। বাগানে ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য, যেগুলো আসলে তাঁর বিভিন্ন নাটকের চরিত্রকে উপস্থাপন করছে। কিছু ভাস্কর্যে শেক্‌সপিয়ারের বিভিন্ন নাটকের সংলাপ খোদাই করে লেখা হয়েছে। বাড়িটি তুলনামূলকভাবে বেশিই অভিজাত মনে হয়েছে আমার। ২০টি কক্ষ এ বাড়িতে, ১০টি ফায়ারপ্লেস! ভাবা যায়! বাড়ির একেকটি কক্ষ যেন ইতিহাসের একেকটি প্রামাণ্যচিত্র। ১৯ বছর এ বাড়িতে থেকেছেন তিনি, তাঁর দেহত্যাগও ঘটেছে এ বাড়িতেই।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, এ বাড়ি থেকে বের হতে মন চাইছিল না। তবু নিউ প্লেস থেকে বের হলাম। কাছেই শেক্‌সপিয়ারকন্যা সুজানার বাড়ি। শেক্‌সপিয়ারের আরও দুটি সন্তান ছিলেন, যাঁরা খুব অল্প বয়সে মারা গেছেন, শেষ পর্যন্ত সুজানা পিতার সান্নিধ্যে ছিলেন। শেক্‌সপিয়ারের জামাতা ছিলেন চিকিৎসক জন হল। সে সময়ে চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর বেশ কিছু বইও লেখেন জন হল, যা সমাদৃতও হয়।

dWMfm96.jpg


শেক্‌সপিয়ারকন্যা সুজানার বাড়ির প্রবেশ মুখ

সুজানার বাড়ি দর্শনে গেলে সেখানকার গাইড সে গল্পগুলোই করে যাচ্ছিলেন আমাদের সঙ্গে। এ ছাড়া সুজানার বাড়িতে তাঁর স্বামী জন হল এবং সেই সময়ের চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে একটি প্রদর্শনী রয়েছে। মৃত্যুর পর শেক্‌সপিয়ারের সব সম্পত্তির মালিক হন সুজানা এবং সুজানার মৃত্যুর পর তাঁর সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন সুজানার কন্যা এলিজাবেথ। এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তাঁর কোনো সন্তান না থাকায় সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন শেক্‌সপিয়ারের বোন জোয়ান হার্ট। ১৮৪৭ সালে হার্টের পরিবারের পক্ষ থেকে ‘শেক্‌সপিয়ার বার্থপ্লেস ট্রাস্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান শেক্‌সপিয়ারের সব সম্পত্তি কিনে নেন। এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানই সবকিছু পরিচালনা করছেন।

এই মান্যবরের সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মধ্যে আছে ৩৯টি নাটক, ১৫৪টি সনেট, ২টি দীর্ঘ কবিতা, কয়েকটি বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের কবিতা। তাঁর নাটকগুলোকে তিনি তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন—ট্র্যাজেডি, কমেডি ও হিস্ট্রি। যেগুলো এই তিন ভাগের একটিতেও খাপ খায়নি, তাদের তিনি নাম দিয়েছেন ‘প্রবলেম প্লে’।

MwuBe3I.jpg


সেই ট্রিনিটি চার্চ: এখানেই হয়েছে তাঁর ব্যাপ্টিজম আর এখানেই রয়েছেন তিনি চিরনিদ্রায় শয়ান, ছবি: উইকিপিডিয়া

ইংল্যান্ডের জাতীয় কবির উপাধি পেয়েছেন। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারকেও মুগ্ধ করেছেন এই খ্যাতিমান। তাঁর নাটক যুগ যুগ ধরে এতটাই জনপ্রিয় আর প্রাসঙ্গিক যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই নাটকগুলো মঞ্চস্থ হয়।

TRe17n4.jpg


গির্জার বাগানের শেক্‌সপিয়ারের সমাধি, ছবি: উইকিপিডিয়া

আজ ২৩ এপ্রিল। শেক্‌সপিয়ারের জন্মের দিন, একই সঙ্গে প্রয়াণের দিনও। আমার কেবল মনে বাজছে—
‘আজি প্রণমি তোমারে চলিব, নাথ, সংসারকাজে
তুমি আমার নয়নে নয়ন রেখো অন্তরমাঝে!!’

লেখক: মহুয়া রউফ | গবেষক ও পরিব্রাজক এবং সদস্য, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, কোটসওল্ডস ইনফরমেশন অ্যান্ড টুরিস্ট গাইড
 
এক একটি ভ্রমণ যেন হাজারো মৃত ইতিহাসকে জাগিয়ে তোলে
 

Users who are viewing this thread

Back
Top