পলাশীর যুদ্ধ শেষ। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরিবারকে বন্দী করে আনা হলো ঢাকায়। নির্দেশ মিরনের। বজরায় করে জিনজিরা প্রাসাদে নিয়ে আসা হলো তাঁদের। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার স্ত্রী লুত্ফা, মেয়ে উম্মে জোহরা, খালা ঘসেটি বেগম ও মা আমেনা বেগম বজরার যাত্রী। ঢাকায় তখন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌকা ও ঘোড়া। কেমন ছিল তখনকার ঢাকা? সেটাই তুলে এনেছেন মামুনুর রশীদ তাঁর নাটক ‘জিন্দাবাহার’-এ। আজ থেকে বিটিভিতে প্রচারিত হবে এটি।
আজ থেকে বিটিভিতে প্রচারিত হবে ‘জিন্দাবাহার’, ছবি : বিটিভির সৌজন্যে
এখনকার ঢাকা মানেই সারি সারি দালান। ঘিঞ্জি বসতি। জ্যামের শহর। অথচ এই ঢাকা ছিল একসময় জৌলুশে ভরা। কীভাবে পুরোনো ঢাকাকে নিয়ে এই নাটক লেখার ধারণাটি জন্ম নিল, জানালেন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের একটি চিন্তা ছিল। সেই চিন্তাটা ফলপ্রসূ হলো প্রথমা প্রকাশনের আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার “নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা” বইটি পড়ার পর।
নাটকটি লিখেছেন মামুনুর রশীদ, ছবি: সংগৃহীত
বইটি পড়ে সিরাজ-উদ-দৌলার প্রতি আমার যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল, তা পরিষ্কার হলো। এরপর ভাবলাম, এটি একটি নাটকীয় গল্প। এটিকে তুলে ধরা যায়। সেই সঙ্গে মনে হলো, তখন ঢাকা কেমন ছিল, সেটাও তুলে আনা যায়।’
নাটকটির নির্মাতা ফজলে আজিম জুয়েল, ছবি: ফেসবুক থেকে
সেই সূত্র ধরেই সেই সময়ের ঢাকাকে পর্দায় আনার পরিকল্পনা করেন তিনি। কারণ, বিভিন্ন লেখায় ঢাকার ইতিহাস উঠে এসেছে বটে কিন্তু ঢাকা নিয়ে ফিকশন নেই বললেই চলে। মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এই শহর নিয়ে অনেক ফিকশন হয়নি। ইতিহাসের গবেষণা আছে। তখন আমার মনে হলো, একটা ফিকশন করা যেতে পারে। এরপর আমি ঢাকা নিয়ে অনেক বই সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করলাম। অনেক তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে লিখতে শুরু করলাম। যার ফলাফল “জিন্দাবাহার”।’
তারকাবহুল ৫২ পর্বের এই ধারাবাহিক সপ্তাহে প্রতি রবি, সোম ও মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে, ছবি : বিটিভির সৌজন্যে
তারকাবহুল ৫২ পর্বের এই ধারাবাহিক সপ্তাহে প্রতি রবি, সোম ও মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ নিজেও। আছেন লুৎফর রহমান জর্জ, আজাদ আবুল কালাম, আহমেদ রুবেল, অনন্ত হীরা, শতাব্দী ওয়াদুদ, শাহ আলম দুলাল, সমু চৌধুরী, রোজী সিদ্দিকী, মুনিরা বেগম মেমী, নাজনীন চুমকি প্রমুখ।
নাটকটি পরিচালনা করেছেন নির্মাতা ফজলে আজিম। তিনি বলেন, ‘২০০ কি ৩০০ বছর আগের ইতিহাস নিয়ে বাংলা নাটক কিংবা টেলিভিশনে সেভাবে কাজ হয়নি। সে সময়ের ঢাকা আমাদের কাছে অনেকটাই অজানা। দীর্ঘ এই ধারাবাহিকের মধ্য দিয়ে এ সময়ের দর্শকেরা অষ্টাদশ শতাব্দীর ঢাকাকে জানতে পারবেন। শেষ নবাবের মৃত্যুর পর আট বছর কারাবন্দী ছিলেন নবাবের আপনজনেরা। আমরা এই আট বছরের গল্পটাই দেখাব।’
দীর্ঘ এই ধারাবাহিকের মধ্য দিয়ে এ সময়ের দর্শকেরা অষ্টাদশ শতাব্দীর ঢাকাকে জানতে পারবেন, ছবি : বিটিভির সৌজন্যে
নাটক লেখার পর শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়। সেই সময়কে তুলে আনতে করা হয় গবেষণা। কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল এটি নির্মাণে। নাটকটির নাট্যকার মামুনুর রশীদ জানান, বেশ কঠিন ছিল সেই সময়কে তুলে ধরা। কারণ, এই সময়ে পুরোনো ঐতিহ্যগুলো আর আগের মতো নেই। পোশাক, প্রপস, এমনকি সেই সময়ের বজরা নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে।
দীর্ঘ এই ধারাবাহিকের মধ্য দিয়ে এ সময়ের দর্শকেরা অষ্টাদশ শতাব্দীর ঢাকাকে জানতে পারবেন, ছবি : বিটিভির সৌজন্যে