হাফ প্যাডেল সাইকেল, হাফ প্যান্ট, হাফ ডিম---আমাদের 'অর্ধেক জীবন' কবেই ফুরুত!
এই তিনটিতেই উত্তরণের গন্ধ আছে। শৈশব থেকে কৈশোরে, নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উত্তরণ। কিন্তু এখন উত্তরণের সিঁড়ির ভোল বদল হয়েছে। আমি এখন কাউকে হাফ প্যাডেল সাইকেল চালাতে দেখি না। কারণ তার দরকার হয় না। আগে সব সাইকেল ছিল যথেষ্ট উঁচু। সেই সাইকেলে ফাইভ-সিক্সে পড়া বালকরা উঠলে পা প্যাডেল অব্দি পৌঁছত না। ফলে তাকে বিস্তর এ-পাশ ও-পাশ করতে হতো। তারপর একদিন তার পা ঠিক প্যাডেল ছুঁয়ে ফেলত। মানে সে বড় হয়েছে। তার পায়ের বুড়ো আঙুলের মাথা ছুঁয়ে ফেলেছে বড় হওয়ার সিঁড়ি। প্ৰথম চুম্বনের চেয়ে তা কম রোমাঞ্চকর ছিল না। এই ফুল প্যাডেলের আগের ধাপ হাফ প্যাডেল। এ অনেকটা পূর্বরাগের মতো। এক হাতে মধ্যিখানের রড আর এক হাতে হ্যান্ডেল ধরে দেহটা ত্রিভঙ্গ অবস্থায় রেখে পা ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে যে সুখের বিন্দুতে পৌঁছতাম আমরা তা ইতিহাসে 'হাফ প্যাডেল' যুগ বলে পরিচিত। এখন বাজারে হরেক কিসিমের সাইকেল। ছোট, বড়, মাঝারি। এখন আর দেহ বেঁকাতে হয় না। সাইকেল নিজেই চালকের সুবিধার্থে বেঁকে বসে আছে। ফলে হাফ প্যাডেলের মতো একটা সাব-অল্টার্ন চারুকলা কালের নিয়মেই হারিয়ে গেছে ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয়। এবং কৈশোরে উত্তীর্ণ হওয়ার দু'চাকার শিরশিরানিও একই সঙ্গে দূর আকাশে বিলীন।
এই হাফ প্যাডেলের কস্টিউম ছিল হাফ প্যান্ট। বারমুডা নামক কুৎসিত পোশাকটি তখনও সাগর পেরিয়ে এই লুঙ্গি-অধ্যুষিত দেশে পা রাখেনি। হাফপ্যান্ট মানে হাফপ্যান্ট। তার পিছনে ক্ষান্তিহীন পথ চলার স্মারক হিসেবে দুটো ফুটো থাকলে তা হতো আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বোঝানোর পক্ষে একটা হাফ সামন্ততান্ত্রিক বোলচাল। আমাদের নিম্নাঙ্গের পোশাক তখন বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েতের মতো স্পষ্ট দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল--হাফ প্যান্ট ও ফুল প্যান্ট। পৃথিবীর সকল ইতিহাস আসলে হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্টে উত্তরণের ইতিহাস। বারমুডা, থ্রি-কোয়ার্টারের মতো মধ্যস্বত্বভোগীর কোনও জায়গাই ছিল না সেখানে। হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্ট মানে প্রেমপত্রের জন্য কলমে কালি ভরা, আকুল শ্রাবণে কারও জন্য একা পথ চেয়ে থাকা।
এবং হাফ ডিম। এটা কেন খেতে হতো তা বোঝানোর জন্য পুঁথি ঘাঁটার দরকার নেই। সুতো দিয়ে যেন পূর্ণিমার চাঁদ দু'ফালি করে দিত মা-কাকিমারা। ঠিক লাইন অফ কন্ট্রোলে সুতো না-পড়লে ভাগটা সমান হতো না। তখন কুসুমের ভাগ নিয়ে ভাই-বোনের সীমান্ত-সংঘর্ষও ছিল অনিবার্য।
সে বড় সুখের সময় নয়। সে বড় দুখের সময়ও নয়। সে ছিল পূর্ণিমার চাঁদ আধাআধি হওয়ার সময়। দু'ভাগে অবিরল জ্যোৎস্না। সেই জ্যোৎস্নাপ্রান্তরে মহীনের ঘোড়াগুলোর মতোই ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের 'অর্ধেক জীবন।'
আচ্ছা সেই হাফ টিকিট , হাফ চা ...........
বেটার হাফ, সিনেমা হলের হাফ টাইমের বাদাম সব মাফ করে হারিয়ে গেছে জীবন থেকে।
(সংগৃহীত)
এই তিনটিতেই উত্তরণের গন্ধ আছে। শৈশব থেকে কৈশোরে, নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উত্তরণ। কিন্তু এখন উত্তরণের সিঁড়ির ভোল বদল হয়েছে। আমি এখন কাউকে হাফ প্যাডেল সাইকেল চালাতে দেখি না। কারণ তার দরকার হয় না। আগে সব সাইকেল ছিল যথেষ্ট উঁচু। সেই সাইকেলে ফাইভ-সিক্সে পড়া বালকরা উঠলে পা প্যাডেল অব্দি পৌঁছত না। ফলে তাকে বিস্তর এ-পাশ ও-পাশ করতে হতো। তারপর একদিন তার পা ঠিক প্যাডেল ছুঁয়ে ফেলত। মানে সে বড় হয়েছে। তার পায়ের বুড়ো আঙুলের মাথা ছুঁয়ে ফেলেছে বড় হওয়ার সিঁড়ি। প্ৰথম চুম্বনের চেয়ে তা কম রোমাঞ্চকর ছিল না। এই ফুল প্যাডেলের আগের ধাপ হাফ প্যাডেল। এ অনেকটা পূর্বরাগের মতো। এক হাতে মধ্যিখানের রড আর এক হাতে হ্যান্ডেল ধরে দেহটা ত্রিভঙ্গ অবস্থায় রেখে পা ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে যে সুখের বিন্দুতে পৌঁছতাম আমরা তা ইতিহাসে 'হাফ প্যাডেল' যুগ বলে পরিচিত। এখন বাজারে হরেক কিসিমের সাইকেল। ছোট, বড়, মাঝারি। এখন আর দেহ বেঁকাতে হয় না। সাইকেল নিজেই চালকের সুবিধার্থে বেঁকে বসে আছে। ফলে হাফ প্যাডেলের মতো একটা সাব-অল্টার্ন চারুকলা কালের নিয়মেই হারিয়ে গেছে ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয়। এবং কৈশোরে উত্তীর্ণ হওয়ার দু'চাকার শিরশিরানিও একই সঙ্গে দূর আকাশে বিলীন।
এই হাফ প্যাডেলের কস্টিউম ছিল হাফ প্যান্ট। বারমুডা নামক কুৎসিত পোশাকটি তখনও সাগর পেরিয়ে এই লুঙ্গি-অধ্যুষিত দেশে পা রাখেনি। হাফপ্যান্ট মানে হাফপ্যান্ট। তার পিছনে ক্ষান্তিহীন পথ চলার স্মারক হিসেবে দুটো ফুটো থাকলে তা হতো আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বোঝানোর পক্ষে একটা হাফ সামন্ততান্ত্রিক বোলচাল। আমাদের নিম্নাঙ্গের পোশাক তখন বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েতের মতো স্পষ্ট দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল--হাফ প্যান্ট ও ফুল প্যান্ট। পৃথিবীর সকল ইতিহাস আসলে হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্টে উত্তরণের ইতিহাস। বারমুডা, থ্রি-কোয়ার্টারের মতো মধ্যস্বত্বভোগীর কোনও জায়গাই ছিল না সেখানে। হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্ট মানে প্রেমপত্রের জন্য কলমে কালি ভরা, আকুল শ্রাবণে কারও জন্য একা পথ চেয়ে থাকা।
এবং হাফ ডিম। এটা কেন খেতে হতো তা বোঝানোর জন্য পুঁথি ঘাঁটার দরকার নেই। সুতো দিয়ে যেন পূর্ণিমার চাঁদ দু'ফালি করে দিত মা-কাকিমারা। ঠিক লাইন অফ কন্ট্রোলে সুতো না-পড়লে ভাগটা সমান হতো না। তখন কুসুমের ভাগ নিয়ে ভাই-বোনের সীমান্ত-সংঘর্ষও ছিল অনিবার্য।
সে বড় সুখের সময় নয়। সে বড় দুখের সময়ও নয়। সে ছিল পূর্ণিমার চাঁদ আধাআধি হওয়ার সময়। দু'ভাগে অবিরল জ্যোৎস্না। সেই জ্যোৎস্নাপ্রান্তরে মহীনের ঘোড়াগুলোর মতোই ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের 'অর্ধেক জীবন।'
আচ্ছা সেই হাফ টিকিট , হাফ চা ...........
বেটার হাফ, সিনেমা হলের হাফ টাইমের বাদাম সব মাফ করে হারিয়ে গেছে জীবন থেকে।
(সংগৃহীত)